তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (৩৬)

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (৩৬)

সিলেট ভ্রমণ নবনীর জীবনের অন্যতম আনন্দময় ভ্রমণ ছিলো। জাফলং ভিউ পয়েন্টে গিয়ে নবনীর মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। মে থেকে জুলাই মাস হচ্ছে জাফলং ভ্রমণের অন্যতম সময়। কিন্তু নবনীরা যখন গিয়েছে তখন অক্টোবর মাস।তাই টিভিতে যেমন জলে টইটম্বুর নদী দেখে মন পুলকিত হতো নবনীর এখন এরকম হলো না।মেঘ নবনীর মন খারাপ বুঝতে পেরে বললো, “আগামী বছর আমরা আবার আসবো নবনীতা।তখন আমাদের একটা নতুন পরিচয় থাকবে।আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী হয়েই আসবো।”

চারদিকে শুধু পাথর আর পাথর।পাথরের উপর দিয়ে হাটতে গিয়ে অসাবধানতার জন্য নবনী পায়ে চোট পেলো।

তবুও ভ্রমণটা আনন্দময় লেগেছে সবাই মিলে একসাথে থাকায়।নবনীর মনে পড়ে গেলো সিড়ি বেয়ে ভিউ পয়েন্টে নামার সময় সব কিছুই ঠিক ছিলো।অস্থায়ী দোকানগুলো থেকে সবাই ইন্ডিয়ান,বাংলাদেশি অনেক কিছু কিনেছে প্রয়োজনীয় অথবা অপ্রয়োজনীয় সবকিছুই।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় মেঘলা গোঁ ধরলো তাকে শৈবাল কোলে করে নিয়ে আসতে হবে উপরে।সে হেটে উঠতে পারবে না।
শফিক আহমেদ এবং আসমা বেগম শৈবালকে বললেন,”নে নে,মেঘলাকে কোলে তুলে নে।”

আসমা বেগম বললেন, “আহারে,আমার পুতুলের কোমল পা জোড়া ব্যথা করছে বুঝি।খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে কি তামাশা দেখস না-কি শৈবাল ওকে কোলে নে।”

মাসুমা বেগম বিরক্ত হলেন।রেগে গিয়ে বললেন,”এখানে এতো আহ্লাদীপনা দেখাতে হবে না।পাগল নাকি?এতো মানুষ এখানে,আর শৈবাল কি-না মেঘলাকে কোলে নিয়ে হাটবে?এই মেয়ের ওজন কি কম না-কি? নিম্নে ৭০ কেজি হবে।”

মেঘলা নাকি সুরে বললো,”৭০ নাঁ তোঁ মাঁ,৬৬ কেঁজিঁ।”

শৈবাল কিছুটা লজ্জা পেলো কিন্তু আসমা বেগমের চোখ রাঙ্গানি দেখে বাধ্য হয়ে মেঘলাকে কোলে তুলে নিলো।
ফাল্গুনী,চৈতী, সাব্বির,শিমলাসহ বাকী সবাই শিষ বাজাতে লাগলো এটা দেখে।

মাসুমা বেগম রাগ হয়ে বললেন,”নিজের মেয়ের দুঃখ তো বুঝলে,এবার তোমার ছেলেকে বলো নবনীকে কোলে নিতে।এমনিই বেচারি পাথরের সাথে লেগে চোট পেয়েছে পায়ে।ওর তো আরো বেশি অসুবিধা হচ্ছে হাটতে।”

মেঘ আগেই বলে উঠলো, “বান্দা হাজির মা।নবনী,লাফ দিয়ে কোলে উঠে পড়ো তো। অনেক দিনের শখ তোমাকে কোলে নিয়ে হাটার।এক সুযোগে ইচ্ছে পূর্ণ করে নিই।”

নবনী ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো, “না না,তা লাগবে না।আমি হাটতে পারছি।”

মেঘ চোখ মে/রে বললো, “এরকম সুযোগ হাতছাড়া করতে নেই।”

শফিক আহমেদ বললেন,”অসুবিধা কিসের?নে মেঘ,ওকে কোলে নে।”

নবনী প্রায় কেঁদে ফেলবে এরকম করে বললো,”না স্যার,আমি হাটতে পারছি।প্লিজ এরকম করতে বলবেন না।”
শফিক আহমেদ বললেন,”লজ্জা পেও না মা।আমাকে স্যার বলবে না খবরদার। বাবা বলার প্রাকটিস করো।আর এই হাঁদারামকে যতো খুশি খাঁটিয়ে নাও।আমরা কেউ-ই কিছু মনে করবো না। ”

নবনীর ভয়ার্ত মুখ দেখে সবাই হেসে ফেললো। মাসুমা বেগম গৌরবের ভঙ্গিতে বললেন,”ভদ্র মেয়ে বলে তোমার মেয়ের মতো বেহায়াপনা করতে চায় নি।ছি ছি,আমার তো মাঝেমাঝে সন্দেহ হয়,এই ছেলেমেয়ে দুটো আমার পেট থেকে হয়েছে কি-না! নাকি হাসপাতালে বাচ্চা অদলবদল হয়ে গেছে। ”

শৈবাল মেঘলাকে কিছুদূর নিয়ে ধপ করে ফেলে দিলো নিচে।তারপর হয়রান হয়ে নিজেও বসে পড়লো। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, “তুই মানুষ না-কি আস্ত জলহস্তী মেঘলা? দেখে তো মনে হয় ফুঁ দিলে উড়ে যাবি।ওখান থেকে কি পাথর কয়েকটা গায়ে বেঁধে নিয়েছিস না-কি?আমার তো আরেকটু হলেই দম বন্ধ হয়ে যেতো। ”

মেঘলা ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,”বাবা,এই বিয়ে ক্যান্সেল। শৈবাল আমাকে কোল থেকে ফেলে দিয়েছে। ”

শফিক আহমেদ মাথা নেড়ে বললেন,”ভেরি ব্যাড শৈবাল। ”

মাসুমা বেগম যথেষ্ট বিরক্ত হলেন স্বামীর এরকম ব্যবহারে। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলেন। এরকম করার জন্য শফিক আহমেদকে একটা উচিত শিক্ষা দিবেন ভেবেও ঠিক করলেন।

উপরে আসতেই দেখলেন শীলপাটা বিক্রি হচ্ছে।একটা শীলপাটা কিনে মাসুমা বেগম শফিক আহমেদকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,”গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাবে তুমি এটা।শৈবাল যদি তোমার মেয়েকে এতটা পথ কোলে তুলে নিয়ে আসতে পারে তবে তুমিও পারবে এইটুকু পথ বয়ে নিতে।আমাকে তো আর কোলে নিতে হচ্ছে না,আপাতত এটা কোলে নাও।”

মুখ চুন করে শফিক আহমেদ স্ত্রীর কথা মেনে নিলেন।হাশেম আলী আর রাবেয়া বেগম এদের কর্মকাণ্ড দেখে হেসেই মরে যাচ্ছে।

চৈতালী ভাইকে ডেকে ফিসফিস করে বললো, “আপার কপাল ভীষণ ভালো তাই না ভাইয়া। দেখ না,কি মজার একটা পরিবারের বউ হতে যাচ্ছে আপা।”

ফাল্গুনী বললো, “দুঃখের পর সুখ আসে এটা তো চিরন্তন সত্যি।আপা একটা সময় ভীষণ কষ্ট পেয়েছে,এজন্য দেখ আল্লাহ আপার কপালে এখন কতো সুখ লিখে রেখেছে।”

সাব্বিরের দুই চোখ জলে ভরে গেলো বড় বোনের কথা ভাবতেই।আপা না থাকলে তারা সবাই সেই কবেই ভেসে যেতো। আপা-ই তো শক্ত হাতে তাদের হাল ধরেছে।
সাব্বির ভাবছে সে কি কখনো আপার মতো করে পারবে সবার হাল ধরতে।শেষ বয়সে বাবা মা’কে আদর যত্ন করে রাখতে পারবে তো?আপার এতো কষ্টের মূল্য সে যথাযথভাবে দিতে পারবে তো?

সিলেট ফেরার পথে সবাই মিলে তামাবিল বর্ডার দেখে এলো। হাশেম আলী আর রাবেয়া বেগম যা দেখছেন তাতেই মুগ্ধ হচ্ছেন।
বাড়ির চৌহদ্দির ভিতরে বাস করা রাবেয়া বেগম আর গ্রামে একটা ছোট চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা হাশেম আলীর কাছে এ যেনো এক অন্য দুনিয়া।
আল্লাহর দুনিয়ায় দেখার মতো এতো কিছু আছে অথচ তারা জানতো-ই না এসব।রাবেয়া বেগম যাই দেখছেন তাতেই উচ্ছ্বসিত হয়ে হাশেম আলীকে ফিসফিস করে বলছেন,”দ্যাখেন দ্যাখেন,কি সুন্দর তাই না?আল্লাহ দুনিয়া এতো সুন্দর কইরা বানাইছে?
আমার কেমন আচানক লাগতাছে সবকিছু দেইখা।”

হাশেম আলীর দুই চোখ আনন্দে ভিজে যাচ্ছে বারবার। জীবনে এতো আনন্দ তিনি কখনো পান নি।স্রষ্টার এতো সুন্দর সৃষ্টি দেখে হাশেম আলী বারবার ভাবছেন,”ওই আল্লাহ না জানি কত্তো সুন্দর।”

অফিসের লোকদের সাথে একজোট হয়ে আলাদা ঘুরলেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তামিম নবনীকে দেখছিলো।কি আশ্চর্য, এখনো বুকের ভেতর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।নবনী তার নয় এটা তামিমের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।ওই তো দেখা যাচ্ছে নবনীকে। গাঢ় সবুজ রঙের থ্রিপিস পরনে নবনী।গায়ে সাদা একটা পাতলা চাদর।কানে সবুজ পাথরের ছোট একজোড়া দুল পরা। তামিম মুগ্ধ হয়ে দেখছে।এ যেনো সবুজ বনে ফুটে থাকা একটা সাদা গোলাপ।
গ্রীক দেবীদের মতো অপূর্ব সুন্দর নবনী।মেরিল দেওয়া ঠোঁটজোড়া ভেজা-ভেজা।এক সময় এই অধরযুগলের উপর তামিমের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো। কেনো তখন একবার ভালো করে দেখে নি তামিম।আজ বহুদিন পর একটা অন্যায় ইচ্ছে মাথাচাড়া দিচ্ছে।ওই ঠোঁট জোড়ায় একটা গাঢ় চুম্বনের স্বাধ জাগছে।

আর পারছে না তামিম।নিজেকে ভীষণ পাগল পাগল লাগছে তার আজ।

তামিমের আড় চোখের নজর মেঘের চোখ এড়ালো না।তামিমের সামনে থেকে আড়াল করার জন্যই যেনো মেঘ বারবার নবনীর পাশ ঘেঁষে দাড়াচ্ছে।
নবনী এতে করে ভীষণ বিব্রত হচ্ছে। লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে মেঘ বারবার তার আশেপাশে থাকায়।

————–

জাফলং ট্যুর নবনীর জীবনের অন্যতম মধুর একটা স্মৃতি।জাফলং ছাড়া ও আরো অনেক জায়গায় ঘুরেছে সবাই মিলে। নিজের বাবা মা হবু স্বামী সবাইকে নিয়ে এক আনন্দময় সময় কাটিয়ে নবনীরা বাসায় ফিরেছে গতকাল। এখনো মনের মধ্যে ট্যুরের সেই রেশ রয়ে গেছে।এক অনিন্দ্য ভালোলাগায় নবনীর মন ভরে আছে। হালকা শীত শীত লাগছে,মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে এরকম এক আরামদায়ক ওয়েদারে নবনী মায়ের হাতে সেলাই করা কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে আছে। স্বপ্নে মেঘের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখনো জাফলং এ।আজকের সকালটা কেমন অলস অলস লাগছে নবনীর। বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।জানালার পর্দা ভেদ করে সকালের কাঁচা সোনা রোদ এসে উঁকি দিয়েছে রুমে।আরামদায়ক আলস্যে নবনী চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

রোদের উঁকিতে বাহিরে কুয়াশা মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে।রাস্তা থেকে ভেসে আসছে গাড়ির হর্ণ,হকারের ডাক,সবজিওয়ালার হাঁক।
হঠাৎ করেই নবনীর মনে হলো সে ভীষণ সুখী। কেনো এরকম মনে হলো নবনী জানে না।প্রিয় মানুষকে আপন করে পাচ্ছে বলেই কি এরকম মনে হচ্ছে?

নবনী বের হলো বাহিরে যাবার জন্য।রাবেয়া বেগমের বানানো কাঁথা সেল করার জন্য নবনী একটা পেইজ খুলেছিলো,পেইজে ইদানীং বেশ ভালো রেসপন্স পাচ্ছে নবনী।হাতের কাজের জিনিসপত্র এখনো মানুষ সাদরে গ্রহণ করে,এর গ্রহণযোগ্যতা এখনো আছে দেখে নবনীর ভীষণ ভালো লাগলো।
কাঁথার কয়েকটা অর্ডার পেন্ডিং। ৭ জন গ্রাহক অগ্রীম টাকা ও পাঠিয়ে দিয়েছে। নবনী বের হলো তাই গ্রাহকদের কাস্টমাইজেশন অনুযায়ী কাপড়, সুতা কিনতে।নবনীর ভীষণ ইচ্ছে সুই-সুত এবং রং তুলির একটা উদ্যোগ নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাবার।নিজের আলাদা একটা পরিচয় গড়ার।

কেনাকাটা করে নবনী যখন ফিরছিলো লিফটম্যানের থেকে জানতে পারলো লুবনার বিয়ে ঠিক হয়েছে। শুনে নবনী খুশি হলো।
বাসায় ফিরে মা বাবাকে বললো। কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।
শুধু রাবেয়া বেগম এটুকু বললেন,”মেয়েটার ভবিষ্যৎ ভালো হোক।ওর মায়ের মতো শাশুড়ী যেনো না জোটে।”

হাশেম আলী বিরক্ত হয়ে বললেন,”এসব কেমন কথা কও।বাদ দেও তো রাবেয়া।এইসব ভুইলা যাও।”

নবনী একটু ভেবে বললো, “বাবা,ওই বাসা থেকে আমাকে যে সব গহনা দেওয়া হয়েছে,যে টাকা বাবা আমাকে দিয়েছেন, আমি টাকা,গহনা সব ফিরিয়ে দিতে চাই ওদের।”

হাশেম আলীর মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো মেয়ের কথা শুনে। আনন্দিত হয়ে বললেন,”এই কথাটা আমার মাথায় অনেক দিন ধরে ঘুরতেছিলো রে মা।কিন্তু বলি নাই কিছু তবুও।ভাবলাম তুই ভালো বুঝবি এসব ব্যাপারে। ফিরিয়ে দে মা।”

রাবেয়া বেগম বললেন,”কেনো দিবে?
এগুলো ওর শ্বশুর ওর দিছে,এসব কি ওই পোলার দেওয়া না-কি? ওরা কি পারবে আমার মেয়ের জীবনের সেই সময়গুলান ফিরত দিতে?আমার মেয়ের জীবন যে ওরা নষ্ট করছে,এরকম হাজারটা গহনা দিয়ে কি তা ফিরতে দিতে পারবে?”

হাশেম আলী নরম স্বরে বললেন, “আমার মাইয়ার জীবনের দাম দেওনের ক্ষমতা কি ওগো আছে?আমার মাইয়া কি ফেলনা না-কি যে ওগো এসব তুইচ্ছ্য জিনিসের মায়া করমু আমরা? ”

রাবেয়া বেগম বললেন, “ওই কুটনী মহিলার মুখের উপর ছুইড়া মারবি সব গিয়া।”

নবনী হেসে ফেললো মায়ের কথায়।

দরজা খুলে নবনীকে দেখেই তাহেরা বেগম যেনো শক খেলেন।নড়াচড়ার ক্ষমতা ও হারিয়ে ফেললেন তিনি।তামিম দুপুরের খাবার খাচ্ছে বসে।দরজা খোলার শব্দে পিছনে ফিরে তাকিয়ে নবনীকে দেখে চমকে গেলো তামিম ও।মুহুর্তের জন্য মনে হলো নবনী বুঝি ফিরে এসেছে আবার।
নবনী তাহেরা বেগমকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে বললো, “সেদিন যাওয়ার সময় আমাকে যেসব গহনা বাবা দিয়েছিলো তার সব এখানে আছে।আপনি একটু চেক করে দেখুন সব ঠিক আছে কি-না। আর এই যে টাকাগুলো, এগুলো ও বাবা আমাকে দিয়েছিলো আপনাদের অজান্তে। সব ফিরিয়ে দিতে এলাম।লুবনার বিয়ে শুনেছি। আপনাদের তো রীতি আছে এসব মেয়ের বাড়ি থেকে এসব দিতে হয়।না হলে মেয়ের বাবা মা’কে ফকির ভাবে সবাই।
দোয়া করি,লুবনাকে যেনো শ্বশুর বাড়িতে কোনো গঞ্জনা সইতে না হয়।সবার আদরে বড় হয়েছে, অল্প আঘাতেই নয়তো ভেঙে পড়বে।”

আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে নবনী চলে গেলো। তামিমের কাছে কেমন স্বপ্নের মতো লাগলো।

গহনাদি পেয়ে তাহেরা বেগমের কিছুটা সাহস বেড়ে গেলো। নবনীর বলে যাওয়া কথাগুলো গায়ে লাগালেন না।এসব বিক্রি করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে।মহা ধুমধামে মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন এই ভেবে তাহেরা বেগম ভীষণ খুশি হলেন।

পরদিন অফিসে যাবার পর নবনীর ভীষণ লজ্জা লাগতে লাগলো। সবাই এতোদিন তাকে যেভাবে দেখতো আজকে সবাই অন্যরকম করে দেখছে।
আড়ষ্ট হয়ে নবনী নিজের ডেস্কে এলো। এইটুকু আসতেই নবনীর হার্টবিট বেড়ে গেলো। হাত পা কাঁপতে লাগলো।
নবনীর মনে পড়লো,বিয়ের পর কিভাবে সে অফিস করবে?
তখন তো লজ্জায় সে মরেই যাবে।

দুপুরে ক্যান্টিনে যাবার পর নবনী শুনতে পেলো কয়েকজন আড়ালে কানাঘুষা করছে,”কেমন করে মেঘ স্যারকে পটিয়ে নিলো দেখলি?”
অন্য একজন বললো, “ডিভোর্সি মেয়েদের এতো দাম বাবা!অথচ আমরা ভার্জিন হয়েও দেখ,কপালে কোনো ছেলেই জুটে না।”

একজন বললো, “একবার তামিম স্যার,এবার তো রাঘব বোয়াল উঠেছে বঁড়শিতে।একেবারে একটা কোম্পানির মালকিন হবে! ”

নবনীর কান্না এলো এসব শুনে।নিজের মনকে নিজে প্রশ্ন করলো,”আমি কি আসলেই এরকম কিছুর লোভে পড়ে মেঘকে ভালোবেসেছি?
তবে কি আমি নিজের স্বার্থের জন্য বিয়ে করতে যাচ্ছি?সবার এই মনোভাব আমার সম্পর্কে?
আল্লাহ তুমি তো জানো আমার মনে এরকম কোনো লোভ ছিলো না। ”

টেবিলে মাথা রেখে নবনী ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো,সবার মুখ বন্ধ করতে হবে নিজের যোগ্যতা দিয়ে।আমিও সবাইকে দেখিয়ে দিবো আমি কোনো কিছুর লোভে পড়ে এরকম করি নি।

নিতু ঠিক করলো তামিমকে সে আরেকটা সুযোগ দিবে।নিজের বেহায়া মন বারবার ছুটে যাচ্ছে তামিমের কাছে।বারবার তামিমকে ভেবে যাচ্ছে।ফোন নিয়ে তামিমকে কল দিলো প্রেগন্যান্সির খবর জানাতে।

একবার, দুইবার, তিনবার….

কল বাজতেই লাগলো। তামিম সকালে ফাইল দিতে এসে নবনীকে দেখলো মেঘের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।এরপর থেকেই তামিমের মাথায় আগুন জ্বলছে যেনো।অসহ্য লাগছে সবকিছু তামিমের।টেবিলে থাকা সব ফাইল ছুঁড়ে ফেলে দিলো নিচে।
চারবারের সময় তামিম কল রিসিভ করে বললো, “কেনো কল দিয়েছিস তুই?আমার জীবন থেকে তো চলে গেলি,আমি এখন একটু শান্তিতে আছি।আমার শান্তি সহ্য হয় না তোর?”

প্রবল আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নিতু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে বললো,”আমি প্রেগন্যান্ট তামিম। ”

তামিম একটা নোংরা গালি দিয়ে বললো, “যার সাথে শুয়ে পেট বানাইছস,তারেই বল।আমার কাছে আর কোনো দিন কল দিবি না।আমাকে শান্তিতে থাকতে দে।আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই।এই জীবনে আমার কাউরে লাগবে না।”

ফোন রেখে নিতু চোয়াল শক্ত করে বসে রইলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “মুক্ত করে দিলাম তোরে।সুখে থাকিস ভালো থাকিস বাসা বেঁধে নতুন নীড়ে।”

চলবে………

রাজিয়া রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here