তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ২৮ [কাহানী মে আয়া টুইস্ট]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র আরহামকে এসেই জড়িয়ে ধরে। নিজের পাক্তনকে এইভাবে দেখে স্হীর হয়ে দাড়িয়ে যায় মেহেভীন। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র এখানে কি করে এলো?অভ্রকে আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই আশা করেনি, তা তাদের চোখ-মুখেই স্পষ্ট। মেহেভীন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার মনে অনেক প্রশ্নের বিস্তার ঘটতে থাকে। আরহামকে অভ্র এসে জড়িয়ে ধরলো কেন? তাহলে কী আরহাম ও অভ্র পূর্বপরিচিত? অভ্র আরহামকে জড়িয়ে ধরেই বললো,
‘ এইসব কি ব্রো? এখনো নিজের ভাইয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবি? সেই একটা বিষয় নিয়ে এখনো এতো রাগ পুষে রেখেছিস? এখন তো এইসব ছাড় প্লিয। ‘
আরহাম কোন প্রতিক্রিয়া করলো না। অভ্র এইবার আরিয়ানের কাছে গিয়ে বললো,
‘ কি হলো? সবসময় তো আমাকে দেখে তুই সবার আগে এসে, টাইট করে হাগ করিস। আজ কি হলো?
বুঝেছি অভিমান হয়েছে। ওকে আমিই করে নিচ্ছি। ‘
অভ্র কথাটি বলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। মেহেভীন অবাকের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেলো। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানের ভাই? কীভাবে সম্ভব? মেহেভীনকে কখনো তো আরহাম কিংবা আরিয়ান বলেনি তাদের অভ্র নামক কোন ভাই আছে।
অভ্র আরিয়ানকেও ছেড়ে দিলো। অভ্র তার দুই চাচাতো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কখনো ভাবেনি চট্টগ্রামে এসে এইভাবে তোদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। কিরে ভাই তোরা এখনো চুপ করে থাকবি? আমি বুঝতে পারছি না। বড়দের মধ্যে যা হোক, কিন্তু আমরা কেন আমাদের মধ্যে এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে চলবো বলতো? ‘
‘ দূরত্ব সবসময় তোর পক্ষ থেকেই ছিলো অভ্র। আমরা কখনো তোর সাথে দূরত্ব বাড়াতে চাইনি। ‘
আরহাম কাঠকাঠ গলায় অভ্রের প্রশ্নের উত্তর দিলো।
অভ্র স্মিত হেসে বলল, ‘ তা আমি জানি। তোরা আমাকে কতটা ভালোবাসিস। সেইটাও জানি,কিন্তু
আমিই বা কি করবো? আমি বাধ্য হয়েই একপ্রকার এইভাবে দূরত্ব বাড়িয়েছি।তোরা তো জানিস মা কে আমি কতটা ভালোবাসি।
মায়ের জন্যে যে আমি কত কিছু করেছি,তা শুধু আমিই জানি। ‘
শেষের কথাটি অভ্র আস্তে করেই বললো।
আরিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,
‘ কি বললি ভাইয়া তুই? ‘
‘ না মানে আসলে আমি বলতে চাইছিলাম যে,আমি পরে তোদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু পারেনি। আচ্ছা এইবার তো বাদ দে এইসব অভিমান ইয়ার। লেটস গো বাদ্রারস গিভ মি সাম হাগস। ‘
অভ্র কথাটি বলেই আরহাম ও আরিয়ানকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। আরহাম ও আরিয়ানও আর রাগ করে থাকতে পারলো না, তারাও জড়িয়ে ধরলো তাদের ভাইকে। অভ্র জড়িয়ে ধরতেই, তার চোখ গেলো তার অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটির দিকে। যার জন্যে সে এতোদিন ধরে ছটফট করছিলো। মেহেভীন বুঝতে পেরেছে, অভ্র তাকে দেখে ফেলেছো। মেহেভীনের পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। অভ্র আরহাম ও আরিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে ধীর গলায় বলে,
‘ মেহেভীন? ‘
অভ্রের কথা শুনে আরহাম ও আরিয়ান মেহেভীনের দিকে তাকায়। মায়রাও ততক্ষনে চলে আসে। আরিয়ান মেহেভীনের কাছে গিয়ে, মেহেভীনকে নিয়ে এসে অভ্রের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
‘ তুই মেহেভীনকে কি করে চিনিস ভাই? ‘
‘ কিন্তু তার আগে বল? মেহেভীন তোদের কি হয়? ‘
মেহেভীনের সাথে আরহামকে দেখেই মায়রা চিনে ফেললো, আরহাম একবার ভার্সিটিতেও এসেছিলো। এখন তার মনে পড়লো অভ্রের ফোনে সে একবার আরহামের ছবি দেখেছিলো, তাই সেদিন আরহামকে তার চেনা মনে হচ্ছিলো। অভ্র আবারো মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি হলো বললি না যে, মেহেভীনকে কি করে চিনিস তোরা? ‘
মেহেভীনের তো জান যায় যায় অবস্হা । মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরহামের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে।
এখন কি বলবে আরহাম?আরহাম সবাইকে অবাক করে দিয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে হাঁসিমুখে বললো,
‘ আমার ওয়াইফ। মিসেস মেহেভীন আরহাম হাসান তালুকদার। ‘
আরহামের কথাটা শুনেই পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে যায়। মায়রারও বিশ্বাস হতে কষ্ট হচ্ছে যে মেহেভীনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যদিও তার বেশ খুশি লাগছে। অভ্র শুধু নিষ্পলকভাবে মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কানে এখনো আরহামের কথাটি বেজে চলেছে। মেহেভীন জানে অভ্র এখন তার উত্তরের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মেহেভীনও আরহামের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,
‘ হুম আমি এখন মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। এইটাই আমার পরিচয়। ‘
রুশা ও তাহসানরাও ততক্ষনে ফিরে আসলো হোটেলে। রুশার কানে কথাটি আসতেই, সে স্তব্ধ হয়ে রইলো।
মেহেভীন খেয়াল করলো অভ্র ঠিক কাঁদছে না। তার চোখ ছলছল হয়ে রয়েছে। আরিয়ানের চোখ এইবার মায়রার দিকে গেলো। আরিয়ান মায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না যে? ‘
মায়রা স্মিত হেসে জবাব দিলো,
‘ আমি হচ্ছি মিসেস অভ্র আহমেদ। ‘
আরিয়ান হাত তালি দিয়ে বললো,
‘ বাহ কতটা দূরত্ব হয়ে গেলো যে, অভ্র ভাই তু্ই বিয়ে করলি অথচ আমরাও জানি না। ‘
অভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ আরহাম ও যে বিয়ে করেছে সেই খবরও তো আমরা পেলাম না। ‘
‘ মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেলে, অনেক কিছুই গোপনীয় থেকে যায়। বিয়ের বিষয়টাও তার মধ্যে অন্যতম। ‘
আরহামের কথায় অভ্র আর কিছু বললো না। অভ্র কখনো ভাবতে পারেনি মেহেভীন তার ভাইয়ের বউ হবে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে আনমনে হাসে। যা কারো নজরে পড়লো না। অভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীনের চোখে ঘৃণা উপচে পড়ছে তার জন্যে। মেহেভীন ইচ্ছে করেই আরহামের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আমার না শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি এখন রুমে যাবো। ‘
রুশা নিষ্প্রানের মতো দাড়িয়ে আছে।তাহসান রুশার অবস্হা বুঝতে পেরে, এগিয়ে এসে বললো,
‘ আরহাম তুই বলছিস টা কি? আমাকে একটু খুলে বলবি তো? ‘
আরহাম তাহসানকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
‘ তোকে যা বলার আমি পরে বলছি। আগে মেহেভীনকে ঘরে দিয়ে আসি। তারপর তোকে যা বলার বলবো। আমার বউ সবার আগে। যতই হোক একটা মাত্র বউ আমার। নকল হলেও বউ তো।’
শেষের কথা আরহাম ঠাট্টার সুরে আস্তে করে মেহেভীনের কানে বললো। মেহেভীন হেসে দেয়। আরহাম মেহভীনের হাত ধরে সকলের সামনে উপরে নিয়ে যায়। রুশা মুখ চেপে দৌড়ে নিজের রুমের দিকে যায়। তাহসান রুশার পিছন পিছন চলে যায়। অভ্রের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে যেন। সে কিছুতেই হজম করতে পারছে না ব্যাপারটা।
________
আরহাম মেহেভীনকে রুমে এনে, ওষুধের বক্স থেকে একটা ওষুধ বের করে মেহেভীনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘ জাস্ট স্টুপিড মেয়ে একটা তুমি। টাইম মতো ওষুধ টাও খেতে পারো না। ‘
কথাটা বলেই আরহাম বক্সটা বেডের এক পাশে রাখে। মেহেভীন ওষুধ টা খেয়ে নেয়। মেহেভীন আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আরহাম সাহেব আপনি আছেন না সবসময়ই? আমার যত্ন নেওয়ার মানুষ। আমার নিজের যত্ন নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ‘
মেহেভীনের কথায় আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন গলাটা খাকারি দিয়ে বললো,
‘ মানে বলছিলাম কি মায়রা আপু আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র সেই সুবাধে অভ্র ভাইয়াকে প্রায় আমাদের ভার্সিটিতে দেখিছিলাম,কিন্তু অভ্র নামক যে আপনাদের কোন ভাই আছে, তা জানতাম না তো। ‘
আরহাম খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মেহেভীনের মনে হাজারো প্রশ্ন এসে ঝটলা পাঁকাচ্ছে। সেসব প্রশ্ন সব অভ্রকে ঘিড়েই৷ আরহাম ধীর গলায় বললো,
‘ অভ্র সম্পর্কে আমার ছোট চাচার ছেলে হয়। মানে আমার চাচাতো ভাই। ছোট চাচা এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পরে,কোন এক কারণে ছোট মা অর্থাৎ অভ্রের মা আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কোন একটা কারণে ছোট মা আমাদের পুরো পরিবারকে ঘৃণা করে। কিন্তু কেন কে জানে? অভ্র এবং আমি সমবয়সী ছিলাম। অভ্র ছোটবেলা থেকেই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করতো। অভ্র একপ্রকার লুকিয়েই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো, কিন্তু ছোট মা দুবছর আগে যখন আমাদের মধ্যে এখনো সম্পর্ক আছে কথাটি জেনে যায়। তখন অভ্রকে বাধ্য করে যেন আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে। অভ্র ও আমাদের সাথে সম্পুর্ন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাই আমরাও আর যোগাযোগ রাখিনা। আজ ভাগ্যক্রমে চট্টগ্রামে অভ্রকে দেখে আমরা আর নিজেদের অভিমানটাকে ধরে রাখতে পারলাম না। ‘
মেহেভীন এইবার আস্তে ধীরে সবটা বুঝতে পারলো। তার খালামনি অর্থাৎ আরহামের ছোট মা তালুকদার বাড়ি থেকে কোন এক কারণে বেড়িয়ে, তার বাড়িতে মেহেভীনকে আশ্রয় দিয়েছিলো। এতোটা বছর ধরে তার খালা তার শ্বশুড় বাড়ির কথাও কখনো বলেনি এমনকি মেহেভীন জানতেও চাইনি। যদিও মেহেভীন জানতো অভ্রের দুই চাচাতো ভাই আছে, কিন্তু তাদের নাম যে আরহাম এবং আরিয়ান সে সম্পর্কে তার অবগতি ছিলো না। এমনকি মেহেভীন তার অতীতের কথা আরহাম ও আরিয়ানের কথা বললেও, অভ্রের নাম একবারও উচ্চারণ করেনি। তাই অভ্র যে মেহেভীনের প্রাক্তন তা আরহাম কিংবা আরিয়ান কেউই জানে না। আরহামের ফোন বেজে উঠায়, সে বাইরে চলে গেলো। মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো কিচ্ছুক্ষন আগের কথা যখন আরহাম তাকে সকলের সামনে তার বউয়ের মর্যাদা দিয়েছে। মেহেভীনের অধরের কোণে এতো কিছুর পরেও, প্রাপ্তির হাঁসির ফুটে উঠলো। সে কখনো আশা করেনি আরহাম তাকে এইরকম একটা সম্মান দিবে। সত্যি আরহাম এবং অভ্র দুই ভাই হয়েও, তাদের মধ্যে কত তফাৎ। একজন শুধু কষ্ট দিতে পারে আরেকজন নিয়ে যেতে পারে সুখের রাজ্যে। এতোদিন পরে অভ্রকে দেখে মেহেভীনের মনে পড়ে গেলো সেই ভয়ংকর অতীত।
মেহেভীন আয়নার সামনে দাড়িয়ে আপনমনে বিড়বিড় করতে লাগলো,
‘ মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার। নাইস নেম! ‘
মেহেভীন মাথায় ভয়ংকর এক খেলার ভূত চেপে বসলো। যার পরিণতি ঠিক কি হবে জানেনা মেহেভীন। তখনি মেহেভীন শুনতে পায় দরজা বন্ধ করার আওয়াজ। মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে দেখে……
চলবে……কী?
[ ধামাকায়ায়ায়া টা কেমন লাগলো 🐸]
[ পরীক্ষা শেষ না হতেই আরেকটা পরিক্ষার আগমন ঘটবে কয়েকদিন পর। মানে বার্ষিক পরীক্ষা 🙂। মানে বুঝতেই পারছেন কতটা প্রেশারের মাঝে আছি। তার মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট। গল্প লিখতে হয় ঠান্ডা মাথায়, সেখানে তাড়াহুড়ো করে লিখছি। তাই কিছু জায়গায় এলোমেলো হতে পারে। আশা করি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]