তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব-২৯

তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব-২৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অভ্র দরজা বন্ধ করে দিয়ে, এক এক পা করে মেহেভীনের দিকে এগিয়ে যায়। মেহেভীন বুঝতে পারছে না অভ্র হঠাৎ তার রুমে কোন উদ্দেশ্য এসেছে। অভ্রকে এগিয়ে আসতে দেখে মেহেভীন শুকনো ঢুগ গিলতে থাকে। তবুও পিছায় না। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে নিজের স্হানে। অভ্র মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে,
‘ তুই আদোও বিয়ে করেছিস মেহু?
‘কেন শুনতে পেলে না? নীচে আরহাম কি বললো? আজকাল কি তুমি কানেও কম শুনছো অভ্র? ‘
মেহেভীনের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় অভ্র। অভ্র বললো,

‘ দেখ মেহু…’

অভ্রের কথার মাঝে ফড়ন কেটে, মেহেভীন গলায় বিরক্তির সুর এনে বললো,

‘ কল মি ভাবি মিঃ অভ্র আহমেদ। ভূলে যাবেন না আমি আপনার এখন প্রাক্তন স্ত্রী কিংবা কাজিন নই। আমি এখন থেকে সম্পর্কে আপনার বড় ভাবি হই। আমি যতটুকু জানি আরহাম সাহেব আপনার থেকে
দুই -তিনমাসের বড়। সে হিসেবে আপনি এখন আমার দেবর এবং আমি আপনার ভাবি। আমি আশা করবো আরিয়ানের মতো আপনিও আমাকে ভাবির সম্মানটুকু দিবেন। মিঃ অভ্র আহমেদ ওরফে আমার দেবরজ্বী। ‘

অভ্রের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।
তার এতোই রাগ হচ্ছে সে পারলে এখন মেহেভীনের গলাটাই টিপে দেয়। অভ্র নিজের রাগটুকু সংযত করতে না পেরে, মেহেভীনের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

‘ তুই জানতি আরহাম আমার ভাই হয় তাইনা? ইচ্ছে করে বিয়ে করেছিস বদলা নিতে চাস তুই আমার কাছে মেহেভীন? ঠিক চাইছিস টা কি তুই? আমাকে বলবি? ‘

অভ্রের করা এইসব রাগ দেখেই মনে মনে পৌচাশিক আনন্দ পাচ্ছে মেহেভীন। মেহেভীন ঠোটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে ‘ আহ মাগো ‘ বলে চিৎকার করে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে অভ্র মেহেভীনকে ছেড়ে দেয়। আরহাম ও আরিয়ান ও রুমে ঢুকে। আরহাম মেহেভীনের কাছে গিয়ে বলে উঠে,

‘ মেহেভীন তুমি ঠিক আছো তো? কোথায় ব্যাথা করছে আমায় বলো তো? ‘

মেহেভীন আরহামের হাত খানা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,

‘আমার না পেটে হুট করেই ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। ‘

আরহাম সঙ্গে সঙ্গে বাজখায় গলায় উত্তর দিয়ে বললো,

‘ স্টুপিডের মতো সারাদিন অনিয়ম করলে তো পেটে ব্যাথা করবেই। প্রেগন্যান্সির সময়টায় অন্ত্যন্ত তো সর্তক থাকতে পারো। ‘

আরহামের কথায় অভ্র আরেকদফা চমকে উঠলো। প্রেগ্ন্যাসির সময় মানে? অভ্র মেহেভীনের দিকে তাকাতেই, মেহেভীন লজ্জামাখা কন্ঠে বললো,

‘ অভ্র ভাই আপনি হয়তো জানেন না আপনি এখন চাচ্চু ও হতে চলেছেন। ‘

তাহসান রুমে ঢুকে এইসব শুনে বলে,

‘ কিরে ভাই আরহাম? তুই এতো ফাস্ট যে বিয়েও করে ফেললি আবার বাচ্ছাও? ‘

আরিয়ান তার ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,

‘ বুঝতে হবে না? ইনি হচ্ছে আরহাম হাসান তালুকদার সব কিছুতেই উনি একটু বেশিই ফাস্ট। তাইনা ভাই? ‘

আরহাম আরিয়ানের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই, আরিয়ান তার মুখ বন্ধ করে ফেললো।

মেহেভীন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অভ্রের এই খবরটি একদমই হজম করতে পারেনি। অভ্রের চোখে একপ্রকার কষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেহেভীন। অভ্রের এই কষ্ট মেহেভীনের মনের ক্ষতটাকে যেন একটু লাঘব করে দিচ্ছে।
মেহেভীনের মনে পড়ে যাচ্ছে তার অতীতের সেই বিষাদময় স্মৃতি, যা অভ্র তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলো। অভ্র আজ যেই কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা একদিন মেহেভীন ও সহ্য করেছিলো দ্বীগুনভাবে।
অভ্র বেড়িয়ে যেতে নিলে, আরহাম বললো,

‘ অভ্র তুই কেন এসেছিলে? ‘

অভ্র শুকনো মুখে জবাব দিলো, ‘ আসলে তোকে খুঁজতে এসেছিলাম। আমার না এখন একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি আসছি। তোরা থাক। ‘

অভ্র আর এক দন্ড ও দাঁড়ালো না গটগট করে বেডিয়ে গেলো। অভ্রকে এইভাবে চলে যেতে দেখে কপালের কিছুটা চিন্তার রেশ ফুটে উঠলো আরহামের।

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
_________

অভ্র নিজের রুমে ঢুকেই দেখে, মায়রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গুন গুন করছে, আর নিজের মতো সেঁজে চলেছে। আজ মায়রার ঠোটের কোণে আলতো হাসি বিরাজমান রয়েছে, যা এতোদিন ছিলোই না বলতে গেলে। অভ্রকে ঢুকতে দেখে মায়রা অভ্রের সামনে গিয়ে বললো,

‘ কি হলো অভ্র? তোমাকে এতোটা আপসেট দেখাচ্ছে কেন? তোমার তো হ্যাপি থাকার কথা বিকজ যাকে নিয়ে, তোমার এতো চিন্তা সে এখন তোমার নিজের চাচাতো ভাইয়ের বউ। তাই আমার মনে হয় তোমার ভাই মেহেভীনের খেয়াল ভালোই রাখতে পারবে। ‘

অভ্র সঙ্গে সঙ্গে মায়রার হাত চেপে ধরে বলে,

‘ আর ইউ কিডিং? মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে? এইটাই বলতে চাইছো তাইতো যে, যেই মেহেভীনকে একসময় আমি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম সেই মেহেভীনই আমার ভাইয়ের বউ তাইনা? ‘

মায়রার নিজের হাত খানা অভ্রের হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে,

‘ কোন মজা নিচ্ছি না আমি অভ্র। আমি শুধু এইটুকুই বলছি যার জন্যে তুমি আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো,সে কিন্তু খুবই সুখে আছে এখন তোমার ভাইয়ের সাথে। এমনকি যা শুনলাম এখন সে তোমার ভাইয়ের সন্তানের মাও হতে চলেছে। দেখলে মেহেভীনের মনেও তোমার জন্যে কোন ভালোবাসা ছিলো না,তাহলে কেন তুমি এইরকম করছো অভ্র? কেন বুঝতে পারছো না যে মেহেভীন…’

মায়রা আর কিছু বলার সুযোগটুকু পেলো না, তার আগেই অভ্র মায়রার মুখ চেপে ধরে বলে,

‘ অনেককিছু বলে ফেলেছো তুমি। এইবার যা বুঝার আমি বুঝবো। ‘

অভ্র মায়রাকে ছেড়ে দিয়ে,বেডের এক কোণে বসে থাকে। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না মেহেভীন বিয়েও করে ফেললো, তার মধ্যে আবার আরহামের সন্তানের মা ও হতে চলেছে?কিছু তো একটা গন্ডগল আছে এর মধ্যে।

_________________

অন্যদিকে মেহেভীন বিছানায় বসে গভীর ছক কষছে। অভ্রের চোখে আজ যে কষ্ট দেখেছে, সেই কষ্টকে সে আরো দ্বিগুন করে বাড়িয়ে তুলবে সে। অতীতের সব কষ্ট দে অভ্রকে ফিরত দিবে। মেহেভীন আনমনে বলে উঠলো,

‘ মেহেভীন থুরি মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার কারো ধার রাখেনা। এইবার আমি তোমাকে তোমার দেওয়া সকলে কষ্ট ফিরত দিবো মিঃ দেবরজ্বী।’

মেহেভীন আরেকদফা মুচকি হাসলো। আরহাম তখনি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে, আয়নায় জেল দিয়ে নিজের চুল সেট করতে থাকে। মেহেভীন অপলক তাকিয়ে থাকে। লোকটা বড্ড সুন্দর! চোখ ফিরানো যে কারো পক্ষে মুশকিল। আরহাম আয়নার দিকে তাকাতেই, মেহেভীন নিজের আখিঁজোড়া সরিয়ে ফেললো। যেহুতু সবাই জেনে গেছে মেহেভীন আরহামের স্ত্রী, তা মেহেভীনকে এখন আরহামের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। আরহাম আয়নার দিকে তাকিয়েই বললো,

‘ আমি এখন আমার অফিসের কলিগদের সাথে কালকের জরুরী প্রযেক্ট নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি চুপচাপ ঘুমিয়ে গেছো। একদম স্টুপিডের মতো জেগে থাকবে না। এইসময় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়াটা ভালো। ‘

মেহেভীন ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়। আরহাম বেড়িয়ে যায়।

_______

আরহাম হোটেলের স্পেশাল রুমে তার অফিস কলিগদের সাথে কালকের তাদের জরুরী প্রযেক্ট নিয়ে জরুরী মিটিং করছে। সবাই আরহামের সাথে প্রযেক্টটা নিয়েও কথা বললেও, রুশা এক কোণে চুপ হয়ে বসে থাকে। রুশাকে চুপ থাকতে দেখে আরহাম বলে উঠে,

‘ মিস রুশা আপনি কিছু বলছেন না যে? এই প্রযেক্ট নিয়েই তো আমি আপনাকে হেড় করেছিলাম। আপনিই যদি কথা না বলেন, তাহলে আমরা এগোবো কীভাবে? ‘

রুশা উঠে দাড়িয়ে কান্নাভেজা গলায় বললো,

‘ স্যার আমি তো অনেক কিছু্ই বলতে চাই,কিন্তু সেসব শুনার সময়টুকু আদোও আপনার আছে?
আপনার সময়ের অভাবে আমার কথাগুলোও বলা হলো না বলে, আজ আমি শূণ্য হয়ে গেলাম। ‘

রুশার কথা শুনে অফিসের সবার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না যে, রুশা আসলে কি বলতে চাইছে। কেননা সবাই জানে রুশার মনে আরহামকে নিয়ে কিরকম অনুভুতি আছে।

আরহাম গম্ভীর সুর গলায় এনে বলে,
‘ মিস রুশা আপনি আসলে বলতে কি চাইছেন? ‘

‘ আমার মনে হয় কিছুক্ষন যদি আপনার সাথে একা কথা বলতে পারতাম, তাহলে বোধহয় ভালো হতো। ‘

রুশার কথা শুনে তাহসান সবাইকে ইশারা করে, রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে। তাহসানের ইশরায় সকলে বেড়িয়ে যায়। সকলে বেড়িয়ে যেতেই, রুশা…….

চলবে.. কী 🐸

[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু]
[ ছোট বলবেন না প্লিয। আপনারা সবাই জানেন আমি স্টুডেন্ট।🙄সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। সো…প্লিয সবাই ঘটনমূলক কমেন্ট করুন। ]

5 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here