তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ৪৫

#তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ৪৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহাম এক প্রকার ছুটেই হসপিটালে দৌড়ে চলে আসে। আরহাম এসেই দেখতে পায় তার প্রেয়সী ব্যাথায় কতটা কাতরাচ্ছে কতটা মরণ যন্ত্রনা ভোগ করছে। মেহেভীনকে স্ট্রেচারে করে ওটির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মেহেভীন স্ট্রেচার ধরেই মরনব্যাথায় অনবরত কান্না করে যাচ্ছে।আরহামের চোখ ভিজে যায় দাঁড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পড়ে তার পক্ষে। আরিয়ান আরহামকে ফোন করেই জানিয়ে দিয়েছিলো মেহেভীনের অবস্হা একদমই ভালো নয়। মেহেভীনের শরীর থেকে অনবরত রক্ত যাচ্ছে। এই অবস্হা চলতে থাকলে বাচ্ছা তো বাঁচবেই না তার সঙ্গে মেহেভীনও বাঁচবে না। এই মুহুর্তেই মেহেভীনকে সিজার করতে হবে, নাহলে মেহেভীনের অতিরিক্ত রক্তপাতে মৃত্যু ঘটবে। এই কথাটি শুনেই আরহামের একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। অভ্র ও মেহেভীনের কথা শুনে হসপিটালে দৌড়ে ছুটে। নিজের ভালোবাসার মানুষটির এই করুন দশা দেখে অভ্রের বুকটা জ্বলে যাচ্ছে। সে মেহেভীনের দিকে এগোতে নিলেই, মেহেভীন হাত নাড়িয়ে আরহামকে কাছে ডাকে, আরহাম ধীর পায়ে মেহেভীনের কাছে যায়। মেহেভীন যন্ত্রনা নিয়েই আরহামের হাত জোড়া শক্ত করে আকড়ে ধরে ভেজা কাতরতার সুরে বলে,

‘ আরহাম সাহেব! ওরা আমার এতো তাড়াতাড়ি সিজার করছে কেন? আমার বাচ্চার কিচ্ছু হয়নি তো? ও আরহাম সাহেব বলুন না কিছু? ‘

আরহামের বুক ফেটে কান্না আসলেও, সে তা সংযত করে, মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসি দিয়ে বলে,

‘ কিচ্ছু হবে না বেবী। বুঝলে না বেবী একটু তাড়াতাড়িই চলে আসতে চাইছে, তাকে নিয়ে কত প্ল্যান করেছি আমরা। সে চলে আসলেই আমরা সবকিছু করবো। আল্লাহ ভরসা কিচ্ছু হবে। বি পজিটিভ ওকে। ‘

মেহেভীন আরহামের কথা শুনে, আরহামের হাতজোড়া আরো শক্ত করে বলে,

‘ আপনি তো আছেন তাইনা আরহাম সাহেব? আমার আর কোন চিন্তা নেই। ‘

মেহেভীন আরহামের অনেকটা ভরসা নিয়ে ধরে আছে এতোটা যন্ত্রনার মধ্যে। অভ্র মেহেভীনের দিকে এগোয় না,সে থেমে যায় তার স্হানেই। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মেহেভীনের এই মুহুর্তে তার সঙ্গের প্রয়োজন নেই। মেহেভীন সবথেক ভরসা আরহামকেই করে,তাইতো এতোটা যন্ত্রনার মধ্যেও সে ঠিক আরহামের হাতজোড়া আকড়ে ধরে রেখেছে।

আরিয়ান আরহাম এবং মেহেভীনের কাছে এসে বলে,

‘ ভাই দেরী হয়ে যাচ্ছে মেহুকে এখুনি ওটিতে নিয়ে যেতে হবে।’

আরহাম আরিয়ানের কথা শুনে মেহেভীনের হাত আলতো করে ছেড়ে দেয় এবং চোখ দিয়ে মেহেভীনকে ভরসা দেয়। মেহেভীন আরহামের ভরসা পেয়ে,নিজের আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। মেহেভীনকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ডক্টর জেসমিন মেহেভীনের প্রস্রব বেদনা উঠানোর জন্যে, মেহেভীনকে ইঞ্জেকশন দিয়ে দেয়। মেহেভীনের ব্যাথা দ্বীগুন ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ওটির বাইরে আরহাম পাইচারি করে যাচ্ছে। তরতর করে ঘামতে থাকে। আরহাম শুধুমাত্র এখন আল্লাহর কাছেই দোয়া করছে বাচ্চাটা এবং মেহেভীন যেন ঠিক থাকে। অভ্র এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।
আরহাম আরিয়ানের কাছে এসে বলে,

‘ আচ্ছা ভাই একটা কথা বলতো? বাচ্চা এবং মেহেভীন দুজনেই ঠিক থাকবে তাইনা? এই ভাই বল না? ‘

আরিয়ান কোনরুপ জবাব দেয়না। তার চোখের কোণে জল এসে জমাট বাঁধে। তার ভাই যে সত্যিটা শুনে সহ্য করতে পারবে না,তা সে খুব ভালো করেই জানে। একজন ডাক্তার হয়ে এইটুকু আরিয়ান খুব ভালো করেই জানে ছয় মাসের মাথায় কোন বাচ্চার ডেলিভারি হলে, তার বেঁচে থাকার তেমন একটা চান্স নেই, তার মধ্যে মেহেভীনের শরীর থেকে অঝোড়ে রক্তপাত হয়েছে, তাতে তো বাচ্চার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এতো কিছুর মধ্যে বাচ্চাটা বাঁচার আদোও কোন সম্ভবনা রয়েছে? আরিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে, আরহামের অস্হিরতার দ্বীগুন ভাবে বেড়েই চলেছে। ভিতর থেকে মেহেভীনের আর্তনাদ কানে আসতেই সেস্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। আরহাম বেড়িয়ে যায়।অভ্রের চোখ ও ভিজে উঠে। ভালোবাসার মানুষটির কষ্টটা অনুভব করাটা কতটা যে বেদনার, তা আজ অভ্র হারে হারে টের পাচ্ছে। যে মেয়েকে কষ্ট দিয়ে এক সময় সে পৌচাশিক আনন্দ পেতো আজ তারই কষ্টে অভ্রের বুকটা ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। কি অদ্ভুর নিয়তির খেলা! অভ্র এখন খুব করে চাইছে, ‘ তার সন্তানের কিংবা মেহেভীনের যেন কিচ্ছু না হয়। ‘

__________________

একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা ছবির ফ্রেমে চোখ বুলাচ্ছেন। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একজন যুবতী তার ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে। ছবিটা দেখে মহিলাটির চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে।কেননা ছবিটাতে রয়েছে তিনি এবং তার মেয়ে।আজ তারই কোন এক পাপের ফলে তার মেয়ে তার থেকে আজ অনেকটাই দূরে। এমনকি তারই পাপের ফলটা আজ তার মেয়েকে সহ্য করতে হচ্ছে। মহিলাটা ছবিটাকে বুকের মাঝে সীমাবদ্ধ করে বলে,

‘ মেহু মা রে। তোর মা এইবার আর নিজেকে লুকিয়ে রাখবে না। এইবার তোর মা তোর কাছে ধরা দিবে।’

_____________

আরিয়ান চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে পায় আরহাম নেই। এইরকম সময় আরহাম আবার কোথায় গেলো? আরিয়ান আরহামকে খুঁজার উদ্দেশ্য হসপিটালে চারপাশে যেতে লাগলো। হাটতে হাটতে আরিয়ানের চোখ আটকে যায়,হসপিটালের মসজিদেদ দিকে। মসজিদে বসে আরহাম নামায পড়ছে। মোনাজাত তুলেছে তার রবের কাছে। কেননা আরহাম জানে এই মুহুর্তে মহান আল্লাহ তায়ালাই পারে তার প্রেয়সী এবং বাচ্চাটাকে বাঁচাতে। আরিয়ান স্পষ্ট দেখতে পারছে আরহাম মমোনাজাত কি যেন বিড়বিড় করছে। বিড়বিড় করতে করতে তার চোখ দিয়ে অঝোড় ধারায় অশ্রুপাত হচ্ছে। আরহাম নামাযটা পড়েই, উঠে দাঁড়িয়ে দেখে আরিয়ান দাড়িয়ে আছে। মুখটা কেমন থমথমে। আরিয়ান ধরে আসায় গলায় বলে,

‘ ভাই অপারেশন হয়ে গিয়েছে। ওটির সামনে চল। ‘

আরহাম খুশি হয়ে বলে,
‘ তার মানে ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ।
বেবী চলে এসেছে আরিয়ান তাইনা? তাহলে তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস? চল। সবার আগে বেবীকে কিন্তু আমিই দেখবো। ‘

আরিয়ান আরহামকে কিছু বলতে চাইলেও সে শুনে না। বরং ছুটে যায় ওটির সামনে। ওটির সামনে আসতেই সে দেখতে পায় অভ্র চেয়ারে বসে কাঁদছে। অভ্রকে এইভাবে কাঁদতে দেখে আরহামের কিছুটা অবাক হয়। আরিয়ান ও চলে আসে। আরিয়ানও চোখে পানি। ডক্টর জেসমিন ও কালো মুখে বেড়িয়ে আসে ওটি থেকে। আরহাম ডক্টর জেসমিনের কাছে এসে বললেন,

‘ডক্টর জেসমিন? বেবী কোথায়? ‘

‘ আম সো সরি মিঃ আরহাম সাহান তালুকদার। ‘

জেসমিনের কথা শুনে এইবার আরহামের সত্যি ভয় হচ্ছে প্রচন্ড। আরহাম ঘাবড়ে গিয়ে বলে,

‘ সরি মানে কিসের সরি? ‘

জেসমিন এইবার স্পষ্ট গলায় বললো,

‘ দেখুন মিঃ আরহাম এমনিতেই ডেলিভারি ছয় মাসের মাথায় হয়েছে। ছয় মাসে কোন বাচ্চার স্বাভাবিক গঠন কোনভাবেই হয়না। ছয় মাসে ডেলিভারি মানে বাচ্চাটা নিশ্চিত মৃত্যু। তার মধ্যে মেহেভীনের যথেষ্ট রক্তখনন হয়েছে। মেহেভীনকে বাঁচাতেই আমাদের ছয় মাসে সিজার করতে হয়েছে। তাই বলছি আম সো সরি মিঃ আরহাম। বাচ্চাটাকে আমরা বাঁচাতে পারেনা। ‘

কথাটি শুনেই আরহামের পৃথিবী যেন এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায়। জেসমিন হাতের ইশরায় আরহামকে ছোট্ট কেবিনটির দিকে তাকাতে ইশারা করে। আরহাম তাকাতেই দেখতে পায় ছোট্ট কেবিনের ছোট্ট খাটে সাদা কাপড়ে ছোট্ট বাচ্চাটাকে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। তার চার পাশে কাচ দিয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বাচ্চাটাকে এইভাবে দেখে
আরহাম থমকে দাঁড়ায়। শরীরটা যেন তার ভারসাম্য হারাতে শুরু করে। আরহাম যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে সে। আরহাম এসে তার ভাইকে সামলায়। আরহাম স্তব্দ হয়ে বসে আছে। মুখের ভাষাটুকুও আজ তার নেই। বেবীটাকে নিয়ে মেহেভীনের এতো লড়াই মুহুর্তেই বিফল হয়ে গেলো। বেবীটাকে নিয়ে আরহাম এবং মেহেভীনের কত স্বপ্ন ছিলো,মুহুর্তেই তা শেষ হয়ে গেলো। অভ্র তার সন্তানের দিকে তাকাতে পারছে না। ঢুকরে মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছে। নিয়তি এতোটা নিষ্ঠুর কেন?

_______চলবে…..কী?

[কিছু কিছু নিয়তি সত্যি নিষ্ঠুর। 🙂
আমি বাচ্চাকে চাইলেও বাঁচাতে পারতাম না।কেননা এতোটা করুন পরিস্হিতেও বাচ্চা বেঁচে গেলে সেইটা সত্যি অতিমাত্রায় কাল্পনিক হতো। আমার এক্সাম তাই আমি একদিন পর পর গল্প দিবো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here