তুমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ১৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীন ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। সে আশা করেনি এতো কিছু। আরহাম হঠাৎ এইরকম কিছু মেহেভীন কিছুতেই ধারনা করেনি। কালকে রাতে মেহোভীন আপনমনে নিজের গর্ভের অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলছো। কথার এক পর্যায়ে মেহেভীন বলেছিলো, ‘ আমার বেবী তুমি একদম মন খারাপ করো না। আমার তো এখন সামর্থ নেই তাই তোমার জন্যে তেমন কিচ্ছু করতে পারছি না। নাহলে আমিও তোমার জন্যে পুরো ঘর খেলনায় পরিপূর্ন করে দিতাম। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না। তুমি একবার পৃথিবীতে একবার চলে আসো,তোমার মা চাকরী করে তোমাকে সবকিছু এনে দিবে। বাবার অভাব বুঝতে দিবে না তোমায়। ‘
আরহাম তখন রুমে ঢুকতে গিয়েই সব শুনে ফেলে।
মেহেভীনকে এইভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, আরহাম ভ্রু কুচকে বলে, ‘ এইভাবে দাড়িয়ে আছো কেন? রুমটা ঠিক-ঠাক আছে তো? ‘
আরহামের কথায় ঘোর ভেঙ্গে যায় মেহেভীনের। সে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে রুমটা পুরোই বাচ্ছাদের খেলনায় পরিপূর্ন। বিছনার পাশে ছোট্ট বাচ্ছাদের বিছানা। চারপাশের দেয়ালজুরে ছোট্ট ছোট্ট কার্টুনের ছবি। মেহেভীন এইসব দেখে বললো,
‘ এইসব কি করেছেন আপনি? ‘
‘ কেন দেখতে পারছো না তুমি? অন্ধ নাকি? ‘
‘ দেখুন এইসব কেন করেছেন আমি জানি। আপনি কালকে আমার প্রতিটা কথা শুনেছেন তাইনা? দেখুন আমাকে আর দয়া করবেন না। এমনিতেও আমি আপনার দয়া নিয়ে এই বাড়িতে আছি। আমি আর দয়া নিতে পারছি না। ‘
কথাটি বলে মেহেভীন চলে যেতে নিলে, আরহাম তার হাতজোড়া আকড়ে ধরে। আরহামকে এইভাবে হাত ধরতে দেখে,মেহেভীন আরহামের দিকে তাকাতেই , আরহাম বলে
‘ এমনি এমনি কি তোমাকে স্টুপিড বলি? আচ্ছা যে বেবীটা আসছে তাকে কি আমি একটু আদর করে কিছু দিতে পারি না? তোমার কিংবা তোমার প্রাক্তনের মাঝেই যাই হয়ে থাকুক না কেন। তোমার গর্ভে যে সন্তান রয়েছে সে কি দোষ করেছে? সে কেন সবকিছু থেকে বঞ্চিত হবে? ‘
আরহামের কথাতে বাচ্ছার প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করা যায়। কিন্তু পরের বাচ্ছা নিয়ে আরহামের এতো কিসের ভালোবাসা।
আরহাম আবারোও বললো,
‘হ্যা আমি হয়তো বেবীর আসল বাবা নই। নকল বাবা কিছু মাসের জন্যে। এই নয় মাসেই না হয় নকল বাবা হয়ে, দায়িত্বটুকু পালন করবো। ‘
মেহেভীন আরহামের কথা শুনে, কিছু বললো না।
মেহেভীন দ্রুত পায়ে হেটে বেড়িয়ে গেলো। আরহাম সেদিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর আনমনে বিড়বিড়িয়ে কিছু বলে বারান্দায় চলে গেলো। আরহামের বারান্দায় আসতেই, তার ফোনে রিনার কল আসলো। আরহাম কি ভেবে যেন ধরলো না রেখে দিলো। আরহাম এইভাবে ফোন কেটে দেওয়ায় রিনার মনটায় দুঃখ এসে ধরা দিলো। আজ আরহামকে তার খুব মনে পড়ছিলো, তাই সে ফোন করে ছিলো তার প্রিয়কে।রিনা ফোনের স্কিনে আরহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘স্যার ভালোবাসায় এতোটা বেদনা এতোটা অবহেলা কেন থাকে? আপনাকে যে বড্ড ভালোবাসি। আপনার ভালোবাসা না পেলেও, আপনার অবহেলাটুকু মাথা পেতে গ্রহণ করবো। ‘
কথাটি বলতে বলতে রিনার চোখ জল চলে আসে।
_______
আরহামের মা ছেলের ঘরে এসে, ছেলের কান্ড দেখে মুচকি হেসে, মেহেভীনকে বলে,
‘ এইটা কি সেই আরহামের ঘর?যে আরহাম কিনা নিজের রুমে অন্য কারো জিনিস দেখলে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলতো। নিজের রুমে অন্য কারো জিনিস রাখতে দিতো না। নিজের রুম ও শেয়ার করতো না। সেই ছেলে আজ নিজের সন্তানের জন্যে নিজের ঘরটাকেই খেলনায় পরিপূর্ন করে ফেললো৷ ‘
আরিয়ান ও তার মাকে সায় দিয়ে বললো,
‘ সত্যি ইহা বিশ্বাসযোগ্য নহে। মা তুমি ঠিকই বলেছিলে ভাই বাবা হবে বলে সত্যি চেঞ্জ হয়ে গেছে।সত্যি একজন ছেলে ও মেয়ে বাবা-মা হওয়ার পরে, একদম চেঞ্জ হয়ে যায়। তাইনা ভাবি?
মেহেভীন আরিয়ানের দিকে চোখ রাঙ্গায়। আরহামের মা মেহেভীনের হাত ধরে বলে,
‘ জানো মেহেভীন?আমার ছেলেটা ছোট বেলা থেকেই বাচ্ছাদের খুব পছন্দ করতো। বাচ্ছাদের সাথে খুব করে মিশতো। যখন ও জানতে পারলো ও বাবা হতে চলেছে। প্রথমবার বাবা হচ্ছে তো নিজের সন্তানকে তাই তার যথেষ্ট চিন্তা। তাই তোমাকে এতো বকাবকি করে মা।’
আরহামের মায়ের কথায়, মেহেভীনের মনে থাকা সকল সন্দেহ আরহামকে ঘিড়ে তা নিমিষেই দূরে চলে গেলো। আরহামের বাচ্ছা পছন্দ তাই আরহাম তার বাচ্ছার জন্যে এতোকিছু করছে।
_______________
‘তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাচ্ছা নিয়ে নাও মায়রা। এই বাচ্ছা দিয়েই অভ্রের থেকে মেহেভীনকে দূরে রাখতে সম্ভব হবে তুমি। ‘ মায়রা অবাক হয়ে তার শাশুড়ির দিকে তাকায়। এইসময় তো তার পার্টি করার বয়স। নিজের মতো লাইফটাকে ইঞ্জয় করতে চেয়েছিলো অভ্রের সাথে মায়রা। কিন্তু এখন সেই অভ্রকেই কাছে রাখতে মায়রাকে বাচ্ছা নিতে হবে? এ কেমন কথা? অন্য উপায় কি নেই অভ্রকে ধরে রাখার। মায়রার ভাবনার মাঝেই ইশরা বেগম আবারো বললেন, ‘ এতো ভেবো না মায়রা। অভ্রের যা অবস্হা দেখছি,সে গভীরভাবে বেকুল হয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের প্রতি। অভ্রের এই বেকুলতা বাড়তে থাকলে, তাকে কিছুতেই আর দমিয়ে রাখা যাবে না। অভ্র ঠিকই মেহেভীনের কাছে ফিরে যাবে। ‘
কথাটি বলেই ইশরা বেগম উঠে চলে গেলেন। মায়রা পড়ে গেলো গভীর ভাবনায়।
___________________
অভ্র জ্যামে পড়ে আছে। অফিসে আজকে সে দ্রুত যাবে অনেক কাজ পড়ে আছে তার। সে ভেবে রেখেছে মেহেভীনের পিছনে সে এইবার লোক লাগাবে। মেহেভীন ঠিক কোথায় আছে তা তাকে জানতেই হবে। অভ্র সিটে মাথা হেলিয়ে দিতেই, তার চোখ যায় তার পাশের গাড়ির পরের গাড়ির দিকে। মেহেভীন সেই গাড়িতে বসে আছে। মেহেভীনকে দেখে তৎক্ষনাক উঠে বসে অভ্র। মেহেভীন কার গাড়িতে আছে তা বুঝতে পারছে না সে।
মেহেভীন ও আরহাম একসাথেই আজ বেড়িয়েছে প্রতিদিনের মতো। আরহাম মেহেভীনকে ভার্সিটিতে নামিয়ে, অফিসে চলে যাবে। জ্যাম ঠিক কখন ছুটবে তা আরহাম কিংবা মেহেভীন কেউই বুঝতে পারছে না। আরহাম একরাশ বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। আকাশে মেঘ জমেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি নামার পূর্বে প্রকৃতিতে আলাদা এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মৃদ্যু ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি শুরু হবে বলে। মেহেভীন জানালার গ্লাস টা খুলে দিলো। ঠান্ডা মৃদ্যু বাতাস মেহেভীনের গায়ে বার বার স্পর্শ করে যাচ্ছে। আরহাম ভাবলো মেয়েটাকে বকবে এইভাবে গ্লাস খুলে দেওয়ায়। পরক্ষনেই সে তা করতে পারলো না। বাতাসে মেহেভীনের চুলগুলো খাপছাড়া হয়ে, নিজের মতো উড়ছে। এই দৃশ্যটি নিঃসন্দেহে অপূর্ব। আরহাম হয়তো এই দৃশ্যটি আপাতত ঘেটে দিতে চায়না। সে নিজের মতোই চেয়ে রইলো মেহেভীনের দিকে। যা মেহেভীনের অজানা।
__________
মায়রা আজ একাই ডক্টরের চেম্বারে এসেছে। মায়রা অভ্রকে বলেছিলো, একটিবার যেন তার সাথে যায়। কিন্তু অভ্র কাজের বাহানা দিয়ে, একপ্রকার মায়রাকে এড়িয়ে চলে গেছে। ডক্টর অনেক্ষন ধরে মায়রার রিপোর্ট চেক করছে। কিছুক্ষন দেখার পর, ডক্টর এমন কিছু বললেন, যা শুনে মেহেভীন স্হীর হয়ে গেলো।
_________
বৃষ্টি ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অভ্র অনেক্ষন ধরে মেহেভীনকে লক্ষ্য করছে। সে ঠিক বুঝার চেস্টা করছে,মেহেভীনের সাথে কে আছে?। আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হয়ে গেলো। খুব জোড়ে বাজ পড়ায়, মেহেভীন ভয় পেয়ে, আরহামকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরহাম চমকে উঠে। আরহাম ও তার হাত মেহেভীনের পিঠে রাখে। যেন মেহেভীন ভরসা পায়।ভয় না পায়। অভ্রের সামনে এই দৃশ্য পড়তেই তার মাথায় রক্ত চড়ে বসে। হাত মুঠো করে থাকে। মেহেভীন অন্য একটা ছেলেকে তার সামনে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু কে এই ছেলে? বৃষ্টির কারণে ভালো মতো ছেলেটাকে দেখতে পারছে না অভ্র । কেননা ছেলেটার মুখ অন্য দিকে ঘুড়ানো। অভ্র আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। সে গাড়ি থেকে বের হতে নিলেই,
চলবে…ইনশা-আল্লাহ।
[আপ্নারা সবাই জানেন আমার প্রতিদিন দুটো করে এক্সাম। এমন অবস্হায় আমি প্রতিদিন গল্প কীভাবে দিবো। আমি তো তাও একদিন পর পর দিচ্ছি 🙂]