তুৃমি_আছো_মনের_গহীনে 💖 পর্ব- ৪৩

#তুৃমি_আছো_মনের_গহীনে 💖
পর্ব- ৪৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আশিক মেহেভীনের মুখের বাঁধন খুলে দিতেই,মেহেভীন ‘আরহাম ‘ বলে চেচিয়ে উঠে। আশিক সঙ্গে সঙ্গে মেহেভীনের মুখ চেপে ধরে বলে,
‘ এতো চিৎকার করছিস কেন তুই? আরহাম টা আবার কে রে? নতুন নাকি? সবার কাছে যেতে পারিস অথচ আমার কাছে আসলেই শুধু ছটফট করিস কেন রে? ‘ আশিকের এইসব নোংরা কথা শুনে,মেহেভীনের ইচ্ছে করছে মরে যেতে। আশিক এইবার মেহেভীনের আরেকটু কাছে এসে, মেহেভীনের গালজোড়া শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
‘ ডার্লিং আমাকে একদম ডিস্টর্ব করো না তো।নাহলে তোমার বাচ্ছাটাকে তো মেরে ফেলবোই,তার সাথে তোমাকেও আমি মেরে মাটি চাপা দিয়ে চলে যাবো। কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না। ‘
আশিক কথাটি বলেই, ধারালো ছুড়ি বের করে। মেহেভীন ভয়ে ভয়ে চুপ হয়ে যায়। এখন বেশি কথা বলা যাবে না। মেহেভীন কিছুতেই তার বাচ্ছার ক্ষতি হতে দিতে পারেনা। মেহেভীন কিছু একটা ভেবে,জোড়ে জোড়ে কান্নার শুরু করে দিয়ে বলে,

‘ মাগো! মরে গেলাম গো। কেউ বাঁচাও। ‘

মেহেভীনের এমন গলা ফাটানো কান্নায় আশিক ভরকে গিয়ে বলে,

‘কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? ‘

‘আশিক আমার হাত টা প্লিয খুলে দাও। দেখো তুমি তো দরজা আটকে রেখেছো। আমি তো পালিয়ে যেতে পারবো না। আমার হাত টা অনেক্ষন বেঁধে থাকার কারণে প্রচন্ড ব্যাথা করছে। প্লিয খুলে দাও। ‘

মেহেভীন অনুনয়ের সুরে কথাটি বললো। আশিক ভাবলো সত্যিই তো মেহেভীন কী করে পালাবে? তার মতো সুঠম দেহী ছেলের সাথে হস্তাহস্তি করার শক্তিটুকুও মেহেভীনের আপাতত নেই। তাই হাতের বাঁধন খুললেও তেমন সমস্যা হবেনা। আশিক মেহেভীনের হাতজোড়া খুলে দিলো। তারপর মেহেভীনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে নিলে,মেহেভীন তার হিজাবে আটকে থাকা, ছোট্ট সেফটি পিনটি হাতে নিয়ে, আশিকের ডান চোখের মনির মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। আশিক ব্যাথায় চিৎকার করে, মেহেভীনের থেকে ছিটকে দূরে সরে আসে। মেহেভীন কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে ফেলে।আশিকের চোখ থেকে অনাবরত রক্ত ঝড়ছে। তবুও আশিক ঘোলা ঘোলা দেখছে। আশিক হাতড়ে
হাতের কাছে চাকুটা মেহেভীনের পায়ের দিকে ছুড়ে ফেলতে নিলে,মেহেভীনে দ্রুত দরজা খুলে বেড়িয়ে আসে। আশিক চোখ দেখতে না পেলেও, চিৎকার করে তার লোকদের আদেশ করে যেন মেহেভীনকে আটকায়। মেহেভীন এক কোনায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। আশিকের লোকগুলো চারদিকে মেহেভীনকে খুঁজতে শুরু করে দেয়। মেহেভীন ভয়ে ভয়ে কর্নারে লুকিয়ে আছে। মনে মনে মহান আল্লাহ তায়ালার নাম স্বরণ করছে। কেননা এই বিপদের মুহুর্তে একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাই তাকে এবং তার বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে। মেহেভীন মনে মনে খুব করে চাইছে আল্লাহ যেন এখন আরহামকে দূত করে তার এবং তার সন্তানের জন্যে পাঠায়। মেহেভীন আস্তে করে বিড়বিড় সুরে বলে,

‘ আরহাম সাহেব। কোথায় আপনি? আপনাকে যে আমার এখন খুব দরকার। প্লিয আসুন আরহাম সাহেব। আমি আর পারছি না। ‘

______________

আরহাম কিছুতেই স্হির হয়ে বসতে পারছে না। তার পরিচিত আছে উপরমহলের সাথে। সে তাদের উপর বার বার প্রেশার দিচ্ছে যেন, তার মেহেভীনের একটা খবর পাওয়া যায়। আরহামের বুক ফেটে কান্না আসছে। তার মেহেভীনের যদি কিছু হয়ে যায়? তখন কি হবে? আরহামের মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে কে বা কারা মেহেভীনের অপহরণ করিয়েছে,তাদের পেলে সে কিছুতেই তাদের ছাড়বে না। আরহাম নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে একপ্রকার। ধরা গলায় বললো,

‘ প্রেয়সী! তোমাকে দেখতে না পাওয়ার দহন যে আমার কলিজাটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। তুমি কি শুনতে পারছো? তুৃমি কী আদোও বুঝতে পারো? তোমার আরহাম সাহেব যে বড্ড ভালোবাসে তোমাকে। কোথায় তুমি? আমি কোথায় খুঁজবো তোমায়?’

আরিয়ানের ও কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়ের এই অবস্হা তার মধ্যে মেহেভীনকে পাওয়া যাচ্ছে। তার ভিতরটাও জ্বলে যাচ্ছে। কিছুক্ষন এর মাঝেই পুলিশ অফিসার
হাতে একটা ফাইল নিয়ে এসে, আরহামের উদ্দেশ্য বললেন,

‘ মিঃ আরহাম হাসান তালুকদার। আমরা মিস মেহেভীনের ফোন ট্রেক করে তিনি বর্তমানে যেখানে আছেন সেই জায়গাটি জানতে পেরেছি। এমনকি মিস মেহেভীনকে যেই গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই গাড়ির নাম্বার টাও সিসিটিভি ক্যামরা দিয়ে আমরা দেখতে পেরেছি। যদিও যারা মিস মেহেভীনকে নিয়ে গিয়েছেন তাদের চেহারা দেখা যায়নি। কেননা তারা মাস্ক পড়ে ছিলো। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে তারা কাজটি অনেক তাড়াহুড়োর মধ্য দিয়ে করেছেন। যার ফলে আমাদের ক্লু পেতে কিছুটা সহজই হয়েছে। ‘

পুলিশ অফিসারের কথা শুনে আরহাম এবং আরিয়ান কিছুটা শান্তি পায়। মেহেভীনকে এইবার তারা খুঁজে পাবে। আরহাম উত্তেজিত হয়ে বলে,

‘ তাহলে আমরা এখনো দাঁড়িয়ে আছি কেন অফিসার? চলুন আমাদের এখুনি যেতে হবে। ‘

‘ জ্বী চলুন। ‘

________________

অভ্রের চিৎকারে মায়রা ড্রইং রুম চলে আসে। মায়রা বর্তমানে বাসায় একা রয়েছে। তার বাবা অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে। মা ও এখন দেশের বাইরে আছে। বাড়িতে এখন শুধু কাজের লোকেরাই আছে।
অভ্রলে দেখেই মনে হচ্ছে সে এখন যথেষ্ট পরিমান রেগে আছে। রাগান্বিত হওয়ার ফলে, অভ্রের আখিজোড়া লালে টগবগ করছে। অভ্র এগিয়ে এসেই,মায়রার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

‘ আমার মেহুর অপহরন হয়েছে জানো নিশ্চই।
এই অপহরন টা তুমি করেছো তাইনা? আমি একদম হ্যান্ডেড পারসেন্ট সিউর। এই কাজ তুমি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। ‘

অভ্রের কথা শুনে, মায়রা বেশ অবাক হয়ে বলে,

‘ আমি মেহেভীনের অপহরণ করিয়েছি মানে টা কি অভ্র? আমি এইসব কিচ্ছু করেনি। তাছাড়া মেহেভীন এখন প্রেগন্যান্ট। এই অবস্হায় আমি কেন মেহেভীনের ক্ষতি করতে যাবো?আমিও তো প্রেগন্যান্ট অভ্র। আমি এতোটাও অমানুষ না যে প্রেগন্যান্ট অবস্হায় একজনকে অপহরণ করবো।’

অভ্র মায়রাকে থামিয়ে দিয়ে, দম ছেড়ে বললো,

‘ হয়েছে যথেষ্ট নাটক করেছো তুমি মায়রা। মেহেভীনকে যে তুমি নিজের পথের কাটা মনে করো তা আমি ভালো করেই জানি। বাট একটা কথা তুমি মাথায় ঢুকিয়ে নাও আমার মেহুর কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়বো না। জাস্ট মাইন্ড ইট। ‘

‘ আমার কথাটা তো শুনো অভ্র? ‘

অভ্র শুনলো না সে বেড়িয়ে গেলো।মায়রা সোফায় বসে পড়লো। মেহেভীনকে হঠাৎ কে বা কারা অপহরণ করলো? মায়রা তো এইসব ব্যাপারে কিছুই জানে না। মায়রা গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে গেলে,তার মাথায় শুধু একটা চিন্তা এসেই ভর করে,তা হলো এই কাজটি তার বাবা ছাড়া আর কেউ করতে পারেনা। কথাটি ভেবেই মায়রার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।

_____

মায়রার বাবা রুক শাহেদের সময়ের অস্হিরতা শুরু হয়ে গেছে। সে কিছুতেই শান্তিমতো কাজে মন দিতে পারছেন না। আশিক তার ফোন ধরছে। কি হলো টা কী আশিকের? মায়রার বাবা আশিকের নাম্বারে আবারো ফোন করে,কিন্তু নাম্বারটা বরাবরের মতো বন্ধ। আশিক কাজটা ঠিক মতো করতে পেরেছো তো?নাকি কোন গন্ডগোল করে ফেলেছে। রুক শাহেদের মাথা কাজ করছে না।

_________

মেহেভীন কোনায় লুকিয়ে আছে। আশিকের লোকগুলো মেহেভীনকে দেখতে না পেয়ে, ভাবলো মেহেভীন হয়তো বাইরে পালিয়ে গিয়েছে। তাই তারা বাইরের দিকে চলে গেলো।
এদিকে,,,
আরহাম পুলিশ ফোর্স নিয়ে মেহেভীনের ফোনের লোকেশন ট্রেস করে মেহেভীন বর্তমানে যে জায়গায়টায় আছে সেই জায়গাটি চলে আসলো। জায়গাটি শহরের থেকে দূরে নদীর পাশে। পুরোনো একটা বাড়ি। আরহাম,আরিয়ান এবং পুলিশ অফিস তাদের ফোর্স নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। আরহাম বাড়ির ভিতর ঢুকেই ‘মেহেভীন ‘ বলে চিৎকার করতে থাকে।

আরহামের অস্হিরতা সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে।
সে এবং বাকিরা উপরের দিকে চলে যায়। উপরে চলে যেতেই তারা দেখে আশিক তার চোখে হাত দিয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে এবং তার পাশে রশি পড়ে আছে। আরহাম গিয়েই, আশিককে টেনে ধরে মারতে মারতে বললো,

‘ তুই আমার মেহেভীনকে নিয়ে এসেছিস তাইনা? তাহলে বল আমার মেহেভীন কোথায়? হেই স্পিক আইট ব্লাডি বিচ।’

আরহাম এতোটাই রেগে আছে সে একপ্রকার হুশ হারিয়ে আশিককে ধরে মারছে। পুলিশরা এসে, আরহামকে আটকিয়ে, আশিককে গ্রেফতার করে। আশিক মাথা নিচু করেই ভয়ে ভয়ে বলে,

‘ আমি জানি না। মেহেভীন আমাকে একপ্রকার ধোঁকা দিয়েই ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। ‘

আরহাম আশিককে টেনে আরেকটি সজোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে হিংস্র সুরে বলে,

‘ তুই জানিস আমার মেহেভীন কোথায়? নাহলে তোর এমন অবস্হা করবো যে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও মরে যাবে। ‘

________

আশিকের লোকগুলো চলে যেতেই,মেহেভীন কর্নারের থেকে বেড়িয়ে আসে। সে একদম বাড়িটার শেষের দিকে অবস্হান করছে। মেহেভীন ঠিক করেছে পিছন দিয়েই সে পালিয়ে যাবে। যে ভাবা সেই কাজ। মেহেভীন একপ্রকার দৌড়ে সদর দরজার কাছে যেতে থাকে।
মেহেভীন তার ভারি পেট টা নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তবুও সে হাল ছাড়েনা। তার সন্তানের জন্যে তাকে এখান থেকে বেড়োতে হবে,নাহলে আশিক নামক পশুটা তার সন্তানকে মেরে ফেলবে।মেহেভীন দৌড়াতে গিয়ে, অসাবধানতায় পা পিছলে মেঝেতে পড়ে যায়। মেঝেতে কাচেত টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো,যা মেহেভীনের পেটে ঢুকে গেছে। মেহেভীন ব্যাথায় শব্দটুকু করার শক্তিও পায় না। মেহেভীন তার পেটে হাত রাখতেই সে দেখতে পায় রক্ত। সে কিছু একটা আশন্কা করে,সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলে,

‘ আমার বাচ্ছা! ‘

মেহেভীন কথাটি বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে। মেহেভীনের শব্দ আরহামের কানে আসতেই,আরহাম আশিককে ছেড়ে দিয়ে……

চলবে….কী?

নীচের কথাগুলো পড়বেন প্লিয…
[ দুইদিন পর আমার এক্সাম তবুও লিখলাম আপনাদের জন্যে। এতো প্যারার মাঝে গল্প লিখি নিশ্চই বাজে কমেন্ট পড়ার জন্যে না। আপনাদের ভালো না লাগলে প্লিয পড়বেন না আমার অনুরোধ 😄। আমি তো আপনাদের জোড় করে গল্প পড়াই না। তাহলে ভালো না লাগলে স্কিপ করবেন।
আর আমার লাভারসরা আমার ভালোবাসার পাঠকগন আপ্নারা একটু ধৈয্য ধরুন। গল্পের শেষ পর্বে এসেও টুইস্ট পাবেন। আশা করি কেউ নিরাশ হবেন না। আপ্নারা শুধু আমার পাশে থাকবেন]
গল্পে সুখ যেমন থাকবে দুঃখও থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here