তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী || পর্ব ১৩ ||(পূর্নাংশ)

তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী || পর্ব ১৩ ||(পূর্নাংশ)
#লাবিবা_ওয়াহিদ

সানাম অশ্রুসিক্ত নয়নে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। তার ভেতরের তুফানটা তার নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ। কেঁদে কেটে চোখমুখের হাল বেহাল করে ফেলেছে। তার কান্নার একটাই কারণ সে হচ্ছে ফারিশ। ফারিশের বিয়ে বুশরার সাথে ঠিক হয়েছে। ৬ মাস পর ওদের বিয়ে। এ শুনে সানামের বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে। যাকে ভালোবাসে, যার সাথে সারাজীবন কাটানোর স্বপ্ন বুনে এসেছে সে কিছুদিন পর অন্যকারো…? সব তো ঠিকই ছিলো তাহলে তাদের শেষটা এমন কেন হলো? উপরওয়ালা সানামের আর কতো পরীক্ষা নিবে? এতিম হয়ে তো কম পরীক্ষা ভোগ করেনি সে। যবে থেকে বুঝতে শিখেছে সে থেকেই শুধু অবহেলিত হয়েছে, অপমানিত হয়েছে। এর মাঝে একজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলো কিন্তু সেই আশা তার আর পূরণ হলো না। কেউ হয়তো ঠিকই বলে এতিমদের বেশি আশা করতে নেই। সানামের মনে পরে যায় ফারিশের সাথে দেখা হওয়ার ঘটনাটা। সেদিনটা ছিলো সানামের জন্য সবচেয়ে স্পেশাল। সেদিন সানামের বান্ধুবির লাভারের বার্থডে ছিলো, সেই সুবাধে সানাম তার সাথে সেই ছেলের ভার্সিটিতে গিয়েছিলো। সেখানেই সানাম ফারিশকে প্রথম দেখে এবং প্রেমে পরে। প্রায়ই ফারিশকে ভার্সিটিতে দেখতো সানাম। প্রতিটা রাত কাটতো ফারিশকে ভেবে। এভাবে চলতে চলতে একসময় বুঝলো ফারিশকে সে ভালোবাসে, কিন্তু এই কথাটা ফারিশকে গিয়ে বলার সৎ সাহসটা তার ছিলো না। সে চুপই থাকতো। একসময় আর ফারিশকে ভার্সিটি দেখতো না, সানাম তো প্রায় পাগল হয়ে থাকতো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারে যে ফারিশের মাস্টার্স শেষ। হারিয়ে ফেলে সে ফারিশকে৷ সানাম ভেঙ্গে পরেছিলো এবং ভেবেছিলো ফারিশকে তার আর পাওয়া হবে না। বলা চলে সে কখনো আশাও করতো না। কারণ, সে তো এতিম! এতিমকে ফারিশের মতো ছেলে কখনোই এক্সেপ্ট করবে না। তাই সে নিজের সুখের জন্য আপনমনেই ফারিশকে নিয়ে কল্পনা করতো, স্বপ্ন বুনতো। তার জীবনটা ফারিশের স্মৃতি ঘিরেই। এভাবে চলতে চলতে ঠিক ১ বছরের মাথায় অপ্রস্তুতভাবে ফারিশের সাথে সানামের দেখা হয়। সানাম তখনো বুঝে উঠতে পারেনি যে ভাগ্য ঘুরেফিরে ফারিশের সাথেই তাকে বেঁধে দিলো। ফারিশের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সানামের সবকিছুই কল্পনার মতো লাগতে শুরু করলো। এসব যে সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। এভাবেই আজকের এই সানাম।

সানাম আজ আর ফারিশের রুমে গেলো না। কেন যাবে সে? কীসের অধিকার তার? নেই তার কোনো অধিকার। দুদিন পর ফারিশ অন্যকারো হবে, সেই ঘরটাও অন্যকারো হবে। তার তো কোনো অধিকার নেই। সানামের গলা দিয়ে এক ফোঁটা পানিও নামলো না। আজ তার নিজেকে বেশিই অচল মনে হচ্ছে। এই ভূপৃষ্ঠে তার আপন বলতে যে কেউই নেই।

-“এসব কী শুনছি ফারিশ? তুই সত্যি বিয়ে করছিস?”

ফারিশ এক গ্লাস ওয়াইন গিলে বলে,

-“বিশ্বাস না হওয়ার কী আছে? আরে ভাই তোদের তো সবচেয়ে বেশি হ্যাপি হওয়ার কথা বাট তোরা কেন এসব প্রশ্ন করছিস অদ্ভুত!”

-“বিশ্বাস তো আমার তোকে হচ্ছে না। তুই সত্যিই কী রাজি বিয়েতে? আর সানাম? ওর কী হবে? আমরা কী ভেবেছি আর তুই…”

সেজান আরও কিছু বলার আগেই ফারিশ কাঁচের টেবিলটাতে সজোরে থাবা মেরে হুংকার ছেড়ে বলে,

-“সানাম, সানাম, সানাম!!! আই জাস্ট ডিস্টার্বড দিস নেম!! এই সানাম নাম যদি মুখেও আনিস আই প্রমিস আমি এই ফুল বোতল ওয়াইন খাবো!”

ফারিশের এমন মিসবিহেভিয়ারে সেজান এবং সামির বুঝতে বাকি রইলো না ফারিশ এবং সানামের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে! নয়তো সামান্য কথায় এমন ওভার রিয়েক্ট ফারিশ সচরাচর করে না। সেজান না থেমে বলে,

-“কেন? কী করেছে সানাম?”

-“সেজান আমি তোকে ওর টপিক বলতে নিষেধ করেছি কিন্তু!” অত্যন্ত রেগে কথাটা বললো ফারিশ। সেজান বা সামি ফারিশকে কিছু বলার সাহস পেলো না। কারণ বাঘ খেপে আছে, আরও খেপাতে গেলে আসল কথা তো জানবেই না উল্টো ওয়াইন সবটা ফারিশ খাবে যা মোটেও উচিত হবে না। তাই সেজান চুপ করে মনের মধ্যে ছক আঁকতে শুরু করলো।

রাত সাড়ে এগারোটায় সেজান, সামি ফারিশকে বাড়ি পৌঁছে দিলো। ফারিশের উপরের দিকে চোখ যেতেই দেখলো সানামের বেলকনি থেকে কেউ সরে গেলো। আবছা আলোয় ওড়নার আঁচল দেখে তার চিনতে অসুবিধা হলো না মানুষটি কে। ফারিশের সারাশরীরে কেমন অজানা ভালো লাগা ছেঁয়ে গেলো৷ ফারিশ ভেতরে ঢুকতে গিয়ে কী মনে হতেই বুশরার জানালার দিকে তাকালো। হ্যাঁ বুশরা এদিকেই তাকিয়ে আছে। মুহূর্তেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এই বুশরাকে সে এখনো সহ্য করতে পারে না, তাও সানামের উপরের জেদ থেকে সে এই বিয়েতে রাজি হয়েছে যাতে করে সানামকে উচিত শিক্ষা দিতে পারে। ফারিশ নিজের জেদের বশের ঠিক-ভুল সবই যেন খেয়ে ফেলেছে।
ফারিশের কাছে এক্সট্রা চাবি থাকায় তার আর বেল চাপতে হলো না। বাসায় প্রবেশ করে লিভিংরুমের লাইট জ্বালালো। কেউ নেই। অন্তু গেছে নানীর সাথে দেখা করতে। আগামীকাল আসবে সে। ইকরাম ফরিদ তার নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছে। ফারিশ ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। একপলক সানামের ঘরের দিকে তাকালো। দরজা বন্ধ৷ গতকাল থেকেই খুব একটা দরকার ছাড়া সে ঘর থেকে বের হয় না। ফারিশ কিছু না ভেবে লাইট নিভিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বেডে বসতেই ফারিশের ফোনে কল আসলো। ফারিশ বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো বুশরা কল করেছে। এতে যেন ফারিশের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। ফারিশ রিসিভ না করেই লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরলো। এদিকে বুশরার থামার নাম নেই৷ ফোনের উপর ফোন দিয়েই চলেছে। ফারিশ মাত্রাতিরিক্ত রেগে ফোনটা রিসিভ করলো,

-“কী সমস্যা কী তোমার? একশো বার কল করার মানে কী?”

-“কল ধরছিলে না তাই দিয়েছি। তুমি এতো রাতে কোথা থেকে ফিরলে আর কলই বা কেন রিসিভ করছিলে না?”

-“সেই কৈফিয়ত তোমায় দিতে বাধ্য নই!”

-“ফারিশ! আমি কিন্তু তোমার উড বি!”

-“তো? বউ তো হয়ে যাওনি? নিজের লিমিটের মাঝে থাকো। আমি চাইলে বিয়ে ভাঙ্গতে আমার দু সেকেন্ডও লাগবে না।”

-“আমিও দেখবো তুমি কী করে বিয়ে ভাঙ্গো! ইউ আর অনলি মাইন! মাইন্ড ইট!”

-“ডিজগাস্টিং!”

বলেই ফারিশ কল কেটে ডিরেক্ট সুইচড অফ করে ফেললো। রুমে পানি না থাকায় সানাম পানি নিতে কিচেনে চলে যায়৷ ফারিশের ঘর ক্রোস করার সময় ফারিশের রুম থেকে সে ফিসফিস শুনতে পায়। সানামের বুঝতে বাকি রইলো না ফারিশ কার সাথে এমন ফিসফিস করছে। ফারিশের সামনে বিয়ে, সে যে তার উড বি এর সাথে কথা বলে কাটাবে সেটা যে কেউ-ই সিম্পলি বুঝে যাবে। সানামের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। সানাম বুকে পাথর দিয়ে কিচেনের দিকে চলে গেলো। সানাম কিচেন থেকে পানি নিয়ে আবার নিজের ঘরে চলে গেলো।

পরদিন খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে যায় সানাম। আযান দেয়ায় সে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। মোনাজাতে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে সে। পরে তার মনে পরে নাস্তার কথা। জলদি মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজ ভাঁজ করে উঠে দাঁড়ায়। মাথায় একটা ঘোমটা দিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটে যায়। অন্তু আন্টি নেই তাই তার অনুপস্থিতিতে নাস্তা সানামই আজ বানাবে। যদিও রান্নায় ওতোটা পটু নয় তবে যা পারে তা এনাফ। বুয়া আসতে আসতে ন’টা বাজবে। সানাম আগে এক কাপ চা এবং কফি বানিয়ে নিলো। প্রথমে চা টা গিয়ে ইকরাম ফরিদকে দিলো৷ ইকরাম ফরিদ সানামকে বসিয়ে চা এ এক চুমুক দিলেন।

-“বাহ! তোমার এই অমৃত স্বাধের চা খেলে সকালটা একটু বেশিই ভালো কাটে।”

সানাম উত্তরে মুচকি হাসলো। অতঃপর বললো,

-“আন্টিকে মিস করেন না?”

-“তা আবার করি না বলো। কিন্তু কী আর করার বলো, যা ঝাঁঝলঙ্কা শ্বাশুড়ি! তার বেলায় আমার সকল সুখ বিসর্জন দিতে হয়।” মুখটা মলিন করে বললো ইকরাম ফরিদ। ইকরাম ফরিদের কথায় সানাম খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। সানামের হাসি দেখে ইকরাম ফরিদও মুচকি হাসলো৷ ইকরাম ফরিদ চায়ের কাপটা রেখে সানামের মাথায় পরম আদরে বিলি কেটে দিয়ে বললো,

-“এভাবেই সবসময় হাসতে থাকো মা। তোমার ওই মিষ্টি মুখে এই হাসিটাই মানায়!”

ইকরাম ফরিদের কথায় সানামের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। মুহূর্তে ফারিশের কথা ভাবতেই তার চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো। ইকরাম ফরিদ যেন সানামের চোখের জল না দেখতে পারে তাই সে জলদি করে চোখ নামিয়ে ফেলে। এর মাঝে ইকরাম ফরিদ বলে উঠলো,

-“দেখো কান্ড!! আমরা এখানে কথা বলছি এদিকে ফারিশের কফিটা তো ঠান্ডা হয়ে যাবে!”

সানাম নিজেও কফিটার কথা ভুলে গেছে। তাই সে জলদি ইকরাম ফরিদের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, কফি নিয়ে। ফারিশের রুমের সামনে এসে সানাম অস্বস্তিতে পরে যায়। দরজা নক করে ঢুকবে নাকি না বলেই ঢুকবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কই আগে তো এমন ইতস্ততবোধ হতো না? সানাম কিছুক্ষণ ভেবে দরজায় নক করলো। ভেতরে নিস্তব্ধতা। সানাম আবারও নক করলো। এবারও কোনো সাড়া এলো না। সানাম দরজাটা হালকা ধাক্কা দিয়ে উঁকি দিতেই দেখলো ফারিশ এখনো ঘুমোচ্ছে৷ সানাম আবারও আবেগি হয়ে গেলো। দ্রুত নিজেকে সামলে কফি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো এবং সেন্টার টেবিলে কফিটাকে ঢেকে রাখলো৷ না চাইতেও সানামের চোখ বারবার ফারিশের ঘুমন্ত মুখটার দিকে যাচ্ছে। সানাম এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। নাস্তা অর্ধেক রেডি করে সানাম চলে গেলো টিউশনিতে৷ এখন বাজে সাড়ে ছ’টা। সানামের অফিস থাকায় যেই একটা টিউশনি সন্ধ্যার পরে ছিলো সেটা সকাল সাড়ে সাতটায় নিয়ে আসছে।

ফারিশ শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে ডাইনিং এ এসে বসলো। ইকরাম ফরিদ পত্রিকা নিয়ে সেই বেলকনিতেই বসে ছিলো। ফারিশকে দেখে পত্রিকা রেখে সেও ডাইনিং এ এসে চেয়ার টেনে বসলো। ফারিশ তার বাবাকে দেখতেই বলে উঠে,

-“ওষুধ নিয়েছো?”

-“হ্যাঁ! সানাম মা আগেই কাহিয়ে দিয়েছে।” মুচকি হেসে বললো ইকরাম ফরিদ

সানামের নাম শুনে ফারিশ চুপ হয়ে গেলো এবং প্লেটে খাবার বাড়তে লাগলো। সানাম তার ঘরের দরজা কিছুটা ফাঁক করে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম ফারিশ তার হাতে বানানো খাবার খাবে। সানাম জানে না খাবার কেমন হয়েছে, ফারিশের পছন্দ হবে কি না। তাই সে কৌতুহল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশ তার বাবাকে দুটো পরোটা আর তরকারি দিয়ে নিজেও খাওয়া শুরু করলো। খাবার মুখে দিতেই ফারিশ সাথে সাথেই তার বাবার দিকে চাইলো। ইকরাম ফরিদের চেহারার এক্সপ্রেশনও একইরকম।

-“বাবা! ঘি এর পরোটা এবং তরকারিটা তো বেশ হয়েছে। বুয়া এতো ভালো রাঁধে কই আগে তো জানতাম না!”

ফারিশের মুখে খাবারের প্রসংশা শুনে তৃপ্তিতে সানামের ঠোঁট দুটো প্রসারিত হলো। ইকরাম ফরিদ মুচকি হেসে বলে,

-“বুয়া তো আসে ন’টায়। এগুলো সানাম মা বানিয়েছে। সত্যিই মেয়েটার অনেক গুণ বলতে হয়।”

ইকরাম ফরিদের কথায় সানাম খানিক লজ্জা পায়। এখানেও সানামের ক্রেডিট শুনে ফারিশ আবারও চুপ। আশেপাশে তাকালো কিন্তু না সানামের দেখা নেই। নিশ্চয়ই রুমে বসে রাতুলের সাথে কথা বলছে৷ ভাবতেই ফারিশ চোয়াল শক্ত করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। ফারিশের হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়াটা সানামকে ব্যথিত করলো। ইকরাম ফরিদ খেতে খেতে আবারও বললেন,

-“তা বুশরা মায়ের সাথে কথা হয়? কেমন আছে ও?”

বুশরার নাম শুনে সানাম সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দূরে চলে গেলো। যেসমস্ত কথাবার্তা সানাম সহ্য করতে পারে না তা শোনার চেয়ে না শোনাই ভালো।
ফারিশ ছোট করে উত্তর দিলো, “ভালো।”

ফারিশ খেয়ে তার সময়মতো সে বেরিয়ে গেলো৷ অফিসে এখন প্রচুর কাজের চাপ৷ ফারিশ বেরিয়ে গেলে সানাম বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো এবং অপেক্ষা করতে লাগলো ফারিশকে বেরিয়ে যেতে দেখার জন্য। কিছুক্ষণ বাদে তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। ফারিশ বাইক নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। যতদূর অবধি ফারিশকে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ অবধিইই সানাম দাঁড়িয়ে রইলো। ফারিশ চোখের আড়াল হতেই সানাম নিজের ঘরে এসে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে নিলো। আজ তার ২য় সেমিস্টারের রেজাল্ট বের হবে। সানাম আগে ইকরাম ফরিদের কাছে গিয়ে তার প্রেশার মেপে মেডিসিনগুলো দুপুরের জন্য বাছাই করে দিলো। অতঃপর কিচেনে গিয়ে বুয়াকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

বিকালের দিকে ফারিশকে বস ডেকে পাঠালো। ফারিশ কিছু ফাইলস চেক করতে করতে বিসের কেবিনে প্রবেশ করলো। ফারিশকে এভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখে বস বেশ সন্তুষ্ট হলো। ফারিশ কোনো এসিস্ট্যান্ট নেয়নি। বলা চলে দুইজনের কাজ ফারিশ একাই করছে। ফারিশের বিচক্ষণতা যত দেখছে ততোই বস সন্তুষ্ট হয়। বস মুচকি হেসে বলে,

-“তা প্রজেক্টের কাজ কতোদূর, ইয়াংম্যান?”

-“প্রায় শেষ স্যার। এখন জাস্ট এই ফাইল গুলোতে আপনার সাইন করা বাকি!”

বলেই ফারিশ তার হাতের ফাইলগুলো বসের দিকে এগিয়ে দিলো। বস ফাইলগুলো নিয়ে খুশিমনে সাইন করলো। অতঃপর বস ফারিশকে বললো,

-“আশা করছি তোমার পরিশ্রম বৃথা যাবে না। তোমার উপর পূর্ণ আস্থা আছে ইয়াংম্যান।”

-“আপনার এসব কথাতেই আমি অনুপ্রাণিত হই স্যার। আমি সবসময় নিজের বেস্ট দিয়ে কাজ করবো ইনশাল্লাহ। আমি গিয়ে ফাইলগুলো ওনাদের ইমেল করে দেই?”

-“তোমার একাউন্ট থেকে না করে আমার একাউন্ট থেকেই নাহয় সেন্ড করো।”

-“ওকে স্যার।”

বলতেই বিস তার ল্যাপটপ ফারিশের দিকে এগিয়ে গেলো। ফারিশ ল্যাপটপ নিয়ে তার পকেট থেকে প্যানড্রাইভ নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো। ১০ মিনিটের মাঝে সে ইমেইল সেন্ড করে দিলো।

সানামের কেন যেন আজ বড্ড খারাপ লাগছে। মাথা যেন সে উঠাতে পারছে না। ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় বৃষ্টি ছিলো। বৃষ্টির ফোটা হয়তো মাথায় পরেছে তাই তার কেমন যেন মাথা ভার হয়ে আছে। ইতি সানামের অবস্থা বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে।

-“কী হয়েছে সানাম? এনিথিং রং?”

-“মাথা কেমন ভার ভার লাগছে।”

-“কী বলছিস! দেখি?”

বলেই ইতি সানামের কপালে হাত রাখলো। কপালে হাত রাখতেই সানাম যেন চমকে উঠলো।

-“একি সানাম! তোর তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।”

সানাম নিজেও হতভম্ব হয়ে গেলো ইতির কথা শুনে। বৃষ্টিতে তআর কখনোই এমন জ্বর আসেনি তাহলে জ্বর কেন আসলো? ইতি তড়িঘড়ি করে সানামকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললো,

-“তোর রেস্ট নেয়া দরকার।”

-“বাট কা…”

-“রাখ তোর কাজ! আগে নিজের সুস্থতা অতঃপর কাজ। দাঁড়া আমি স্যারকে কল করে জানাচ্ছি!”

বলেই ইতি তার ল্যান্ডলাইন থেকে বসকে কল করে সবটা খুলে বললো। বস তার মতামত জানাতেই ইতি ধন্যবাদ জানিয়ে কল কাটলো। ইতি সানামের দিকে তাকিয়ে চোখমুখ চিকচিক করে বললো,

-“স্যার তোকে ছুটি দিয়েছে। আমি ক্যসব বুকড করছি তুই কিছুক্ষণ আরাম কর!”

-“এসব করার কী খুব দরকার ছিলো ইতি? বললাম তো তেমন কিছু না, কিছুক্ষণ পর এমনেই ঠিক হয়ে যাবো।”

-“তুই চুপ কর!”

বলেই ইতি ক্যাব বুক করে ফেললো। অতঃপর দুজনেই অফিসের ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে গেলো। সানামের সাথে ইতিও ছুটি পেয়েছে। সানামকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ইতি নিজের বাসার দিকে রওনা হলো। মাঝরাস্তায় সন্ধির কল আসলো।

-“অফিসে?!”

-“না। এখন ফ্রি আছি কেন?”

-“তেমন কিছু না, তোমায় ভাবছিলাম!”

ইতি লাজুক হেসে বলে, “সত্যি নাকি মজা নিচ্ছো?”

-“তোমার কাছে মজা কেন লাগছে?”

-“নাহ। আপনি তো সিনিয়র মানুষ, বন্ধুদের নিয়ে আজীবন বিজি। আপনার তো সময়ও হয় না আমার জন্য!”

-“এই একদম অপবাদ দিবা না। তোমারই তো অফিস থাকে। ভার্সিটিতেও তোমাকে ঠিকমতো পাই না, তাতে আমার কী দোষ?”

-“থাক। বুঝেছি আপনার দৌড় কতোদূর!”

-“তাই না? ওকে এখন ধানমন্ডি লেকে আসো! অনেকক্ষণ ঘুরবো।”

-“ওকে!” মুচকি হেসে বললো ইতি। কতদিন পর সন্ধির সাথে একসাথে কিছু সময় কাটাবে ভাবতেই খুশিতে ইতির মন নেচে উঠছে।

ফারিশ কিছু কাজে বাইরে যাচ্ছিলো, রিসিপশনের দিকে তাকাতেই সে সানামকে দেখলো না। ফারিশ থেমে গেলো এবং ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকালো। এই বিকাল সময়ে সানাম কই গেলো? ব্যাপারটা ফারিশকে ভাবাচ্ছে। রাতুল তখনই মুখ গোমড়া করে লিফটের দিকে যাচ্ছিলো। রাতুলের ভাব-ভঙ্গির দিকে তাকাতেই ফারিশের মনে কৌতুহল জাগলো এবং সময় নষ্ট না করে রাতুলকে জিজ্ঞেস করলো,

-“কি হয়েছে রাতুল? মুখটা এমন করে রেখেছো কেন?”

-“রিসিপশনে সানামের সাথে সময় কাটাতে এসেছিলাম কিন্তু এখানে এসে শুনি সানাম নেই।”

-“নেই মানে?” চমকে বললো ফারিশ!

-“সানাম নাকি সিক তাই বসের থেকে ছুটি নিয়ে চলে গেছে। না জানি এখন কেমন আছে।”

ফারিশ উত্তরে কিছু বললো না। চলে গেলো তার কাজের স্থানে। আজ আর প্রজেক্টের কাজ না থাকায় সাড়ে ছ’টার মাঝেই অফিস অফ হয়ে গেলো। বস সকলকে রেস্ট নেয়ার জন্য ছুটি দিয়েছে। প্রজেক্টের রেজাল্ট আগামীকাল বিকালে জানানো হবে।

~চলবে।

বিঃদ্রঃ আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম। আপনাদের পঠনমূলক মন্তব্যই আমার লেখায় আগ্রহ বাড়িয়ে তুলে। হ্যাপি রিডিং।😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here