তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী পর্ব ১৫

#তৃষ্ণার্থ_প্রেয়সী পর্ব ১৫
#লাবিবা_ওয়াহিদ
|| ||

পার্টির প্রায় সকলেই অবাক হয়ে দেখছে ফারিশ এবং সানামকে। কারণ, দুজনের ড্রেসের কালার ম্যাচ করা। তার চেয়েও বড় বিষয় দুজন একসাথেই পার্টিতে প্রবেশ করেছে। রাতুল তো সানামকে দেখে জাস্ট শকড। তার মাথা যেন ভনভন করছে সানামকে দেখে। এই অপ্সরীর এই রূপটা তো তার জানা ছিলো না। পার্টিতে ঢুকেই সানাম এবং ফারিশ আলাদা হয়ে গেলো৷ সানাম অন্যদিকে ইতিকে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেলো৷
দূর থেকে রাতুল এক নজরে সানামকে দেখে চলেছে। এদিকে ফারিশ তার কলিগদের সাথে কথা বলছিলো এমন সময়ই তার ফোনের রিং বেজে উঠলো। ফারিশ তাদের থেকে সরে এসে পকেট থেকে ফোনটা বের করলো এবং সাথে সাথেই তার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ফারিশ রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই অপরপাশ থেকে বুশরা বলে উঠলো,

-“লজ্জা করে না, বিয়ের আগে অন্য মেয়ের সাথে ঘুরাঘুরি করতে? নিজের বডির সাথে লাগিয়ে ভালোই তো ফূর্তি করছো দেখছি! তোমাকে কতোবার বলবো ওই বেয়াদব মেয়ের থেকে দূরে থাকতে? দেখো না মেয়েটার চালচলন ভালো না? আর একবার যদি তোমায় ওই মেয়ের সাথে দেখি তাহলে তোমার একদিন কী আমার একদিন!!”

বুশরার কথা শুনে ফারিশ অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সানামের দিকে তাকালো। মেয়েটা যথেষ্ট ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে ফারিশ একটা সুখবর আগেই পেয়েছে। ফারিশ মুচকি হেসে বলে,

-“কী আর করবে? বিয়ে ভেঙ্গে দিবে। বাই দ্যা ওয়ে বিয়ে ভাঙলেও আই ডোন্ট কেয়ার। আমি যার সাথে ইচ্ছা ঘুরবো, ফিরবো ওকে? নাও বাই বাই!”

বলেই ফারিশ মুচকি হেসে কল কেটে দিলো। ফারিশ জানতে পেরেছে রাতুল এবং সানামের মধ্যে কিছু নেই। রাতুল এখনো যে সানামকে কিছু বলার সাহস পায়নি তাও স্বয়ং রাতুলই তাকে বলেছে। এ কথা শুনে ফারিশের খুশিতে যে কী করতে ইচ্ছা করছিলো সে নিজেও জানে না। তবে পরমুহূর্তে অনুতপ্তও হয়েছে কারণ, না জেনেই বারবার মেয়েটার উপর সে অন্যায় করে ফেলেছে। রাগ যে কোনো কিছুরই সমাধান নয়। ফারিশ এখন নিজের রাগের উপর যথেষ্ট কান্ট্রোল রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু সানামের কাছে কোন মুখে ক্ষমা চাইবে সেটাই বুঝতে পারছে না। আচ্ছা কোনোরকম সারপ্রাইজ দিয়ে সরি বললে কেমন হয়? আচ্ছা ফারিশ কী সানামের বিষয়ে ওভার থিংক করছে? কিন্তু কেন? সানামকে কেন অন্য ছেলের সাথে সহ্য করতে পারে না? তার মানে কী…? নাহ সানাম শুধুমাত্র তার দায়িত্ব।।
ফারিশ অন্যদিকে যাবে তখনই বস স্টেজে উঠে তার স্পিচ দিলেন। কয়েকজন পারফর্মও করলেন গানের ফারিশের সেদিকে খেয়াল ছিলো না। সে যে আড়চোখে সানামকে দেখতেই ব্যস্ত। মেয়েটা এতো সুন্দর কেন? মেয়েটার মায়া বারংবার তাকে চুম্বকের ন্যায় টানছে।
কিছুক্ষণ পর এক কলিগ এসে ফারিশকে বললো,

-“তুমি আমারই ভার্সিটির ছিলে। আমি তোমার গান শুনেছি৷ যথেষ্ট সুন্দর গাও তুমি৷ তাই আমি সিংগিং এ তোমার নাম দিয়ে দিয়েছি, কিছুক্ষণ পর তোমার নাম আসলে স্টেজে উঠে পরবে কেমন?”

বলেই কলিগ চলে গেলো। ফারিশ নিশ্চুপ হয়ে শুনলো। একটা টুশব্দ অবধি করলো না। কিছুক্ষণ পর ফারিশের ডাক আসলো। ফারিশ একনজর সানামের দিকে তাকিয়ে কী মনে করে স্টেজে উঠে গেলো। অতঃপর হাতে মাইক নিলো। মিউজিক বাজতে শুরু করলো। ফারিশ একপলক সানামের দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলো,

“তেরি নাজার নে কেয়া কার দিয়া
মুঝসে হি মুঝকো জুদা কার দিয়া;
মে রেহতা হু তেরে পাস কাহিন।
আব মুঝকো মেরা এহসাস নেহি,
দিল কেহে তাহে কাসামসে,

কে থোড়া থোড়া পেয়ার হুয়া
তুমসে,,,
কে থোড়া ইকরার হুয়া,
তুমসে।
কে থোড়া থোড়া পেয়ার হুয়া।

মেরি আখোন কি দুয়া হে
চেহারা তেরা,,
আব দেখে বিন তুঝে
না গুজারা হো মেরা।
মেইন সানসিভি লু তুঝে চাহে বিনা..
আব হো..গা না ইয়ে হামসে,
কি থোড়া থোড়া পেয়ার হুয়া
তুমসে..
কি থোড়া ইকরার হুয়া তুমসে।
কী থোড়া থোড়া পেয়ার হুয়া..!!”

পুরো গানটাই ফারিশ সানামের দিকে চেয়ে গাইলো। দুজন যেন দুজনের চোখের মাঝে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে কোনো এক রঙিন দুনিয়ায়। তালির শব্দে দুজনেরই ধ্যান ভাঙলো। ফারিশ মাথা নিচু করে হেসে স্টেজ থেকে নেমে গেলো। ইয়েস! তার ফিলিংস সে ধরতে পেরেছে৷ আগে কেন এই অনুভূতি বুঝলো না সে, কেন? বড্ড দেরী করে ফেললো।

ইতি একনজরে সানামকে দেখছে। সানাম চুপচাপ জুসের গ্লাসটার দিকেই তাকিয়ে আছে। কোনো এক ভাবনায় মগ্ন সে। নিরবতা ভেঙ্গে ইতিই বলে উঠলো,

-“এ কেমন কথা সানাম? প্লিজ বলে দে ফারিশ ভাইকে। আর কতো সব মুখ বুঝে সহ্য করবি তুই বল? পার্টিতেও তোকে এই রূপে দেখতে ভালো লাগছে না। তোর চঞ্চলতাকে বড্ড মিস করছি রে। প্লিজ ফারিশ ভাইকে বলে দে, আমার মন বলছে খারাপ কিছু হবে না!”

-“বড্ড দেরী হয়ে গেছে রে ইতি। কোন অধিকারে তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো বলতে পারিস? কিছুদিন পর তার বিয়ে, নাহ আমার পক্ষে সম্ভব না কারো সুখে থার্ড পার্সন হয়ে থাকতে।”

-“আর তুই যে নিজের সুখের বিসর্জন দিচ্ছিস?”

সানাম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
-“ভালোবাসা যে সবসময় পেতেই হবে এমন নয়, মাঝেমধ্যে ভালোবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দেয়াতেও আলাদা প্রাপ্তি আছে যা তুই বুঝবি না। আপাতত তুই সন্ধি ভাইয়ের দিকেই ফুল ফোকাস কর, আই উইল বি রাইট।”

ইতি আর কথা বাড়ালো না। সানামের সাথে কোনোদিনও সে যুক্তিতে পারেনি। তবে সে মন থেকে চায় সানাম খুশি থাকুক, ফারিশের সাথে খুশি থাকুক। কী হবে তাদের পরিণতি? শেষে কে হারবে কে জিতবে? ভালোবাসা নাকি জেদ?

দূর থেকে সেই কখন থেকেই রাতুল সানামের দিকে তাকিয়ে আছে। সানামকে যেন আজ সে চোখে হারাচ্ছে। নিজের প্রতি কান্ট্রোলই করতে পারছে না। আজ কেন যেন সানামের চোখে চোখ রাখার মতো সাহসটা যসে পাচ্ছে না তাই দূর থেকে চুপচাপ সানামকে দেখছে। আজ রাতুল অনেক কঠোর একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা ফলাতে বেশি সময় নিবে না।

কিছুদিন পর,

এই কিছুদিন বুশরা যেন ফারিশের সাথে লেগেই আছে যা সানামের সহ্যই হচ্ছে না। সানাম ওদের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে কিন্তু সানাম যখনই ওদের পাশ কেটে যায় তখনই বুশরা ফারিশের ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করে যাতে করে সানাম ভাবে তাদের মধ্যে খুবই গভীর সম্পর্ক। ফারিশ বুশরাকে সরিয়ে দেয়ার আগেই সানাম চলে যায়৷ ফারিশের যেন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে এর পিছু ছাড়াবে?

-“তুই ইদানীং একটু বেশিই বুশরার সাথে টাইম স্পেন্ড করিস তাই না?”

ফারিশ কিছুই বললো না, চুপ করে রইলো। তার দৃষ্টি স্থির, সেই অদূর যানবাহনের দিকে। সামি এবং সেজান একে অপরের দিকে চাওয়া-চাওয়ী করছে। কিছুক্ষণ বাদে ফারিশ অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো এবং হাসতে হাসতেই সেজান এবং সামিকে একটা ভিডিও প্লে করে দেখালো। ভিডিওটা দেখে দুজনের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

-“এই কারণেই বুশরার এতোটা ক্লোজ ছিলাম আমি, চল এখন বাসায় যাই। মায়ের চা টা ভিষণ মিস করছি। তোরাও আয়, মা অনেকদিন বলছে তোদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। চল চল!”

বলেই ফারিশ সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। সেজান এবং সামি এখনো থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাথায় যেন কোনো কাজই করছে না। পরে ফারিশের ডাকে দুজনের ধ্যান ভাঙতেই কোনোকিছু না ভেবে সোজা হাঁটা দিলো।

বাসায় গিয়ে ফারিশ যেন আকাশ থেকে পরলো। ফারিশের মায়ের দেয়া শাড়ি পরে রাতুলের সামনে বসে আছে সানাম। রাতুলের দু’পাশে রাতুলের বাবা-মা রয়েছেন। রাতুকের বাবা এবং ইকরাম ফরিদ হেসে হেসে কথা বলছেন। সানাম সেই কখন থেকেই মাথা নিচু করে বসে আছে। রাতুল কিছুক্ষণ পরপর আড়চোখে সানামকে দেখছে। ফারিশের পেছনে থাকা সেজান, সামিও একইভাবে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। হচ্ছে কী এসব? অন্তু আন্টি ফারিশকে দেখে মুচকি হেসে বললো,

-“একদম ঠিক সময়ে এসেছিস, এখন আয় জলদি করে বিয়ের ডেটটা ঠিক করে ফেলি সবাই মিলে?”

-“বিয়ে মানে?” পেছন থেকে সামি অবাক হয়ে বললো।

-“আরে সানাম এবং রাতুলের বিয়ে তো। ”

-“সানামের মত না জেনেই তোমরা বিয়ে ঠিক করে ফেললে?” কিছুটা রেগে বললো ফারিশ!

-“বারে! ওর মত আছে বলেই তো কথাবার্তা এগোচ্ছি নাকি? নয়তো এই অসময়ে বিয়ের কথা কেন উঠাতে যাবো?”

অন্তুর কথা শুনে ফারিশ যেন পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। যেমন ঝটকা সানাম খেয়েছিলো ঠিক তেমনই আজ ফারিশ ঝটকা খেলো৷ কানে বারবার মায়ের কথাগুলোই বাজছে। মাথা ভনভন করছে। সেজান এবং সামি করুণ দৃষ্টিতে ফারিশকে বোঝার চেষ্টার করছে। হচ্ছে কী এই দুটো মানুষের সাথে?

~চলবে।

বিঃদ্রঃ গল্পটি কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে? পরিশেষে কী হবে সানাম এবং ফারিশের জীবনে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here