তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি লেখিকা_রিয়া_খান পর্ব_৪৮

তেজস্ক্রিয়_রক্তধ্বনি
লেখিকা_রিয়া_খান
পর্ব_৪৮
-আচ্ছা তোমাকে তো বলাই হয় নি, আমি তো বাড়িতে ঢুকে তোমাদের কাজের লোকদের ক্লোরোফরম মেরে সেন্সলেস করে দিয়েছি।
-কোথায় রেখেছো ওদের?
-আরে রেখেছি তো চোখের সামনেই, সিঁড়ির পেছনে।
-সমস্যা নেই, মা না দেখলেই হলো।
-তোমার মা-বাবা কেউ তো বাড়িতে নেই।
-তুমি তো জানো না,আমার মা কিরকম চালাক, দেখতে রোগা শান্ত মনে হলেও আমার মা অতি ধুরন্ধর চালাক।কখনো মায়ের সামনে পড়লে খুব সাবধানে কথা বলো,তোমার অজান্তেই তোমার পেটের কথা টেনে বের করে আনবে।
-উনাকে দেখে তো বেশ বোকা বোকা লাগে।
-একটা কথা বলি,মনে কষ্ট নিও না মিশান।
মা তোমাকে অতোটাও পছন্দ করে না, বিশেষ করে আমার পাশে হয়তো মেনেও নেবে না কখনো। একদিকে মায়ের মাথায় দীপ্তি নাম চেপে আছে,আরেকদিকে তুমি নেশা করে আমাদের বাড়িতে এসেছিলে তারজন্য মা আরো অনড় থেকে যাবে তাঁর সিদ্ধান্তে । কিন্তু তুমি টেনশন নিও না, সব কিছু ম্যানেজ করা আমার বাঁ হাতের কাজ শুধু সময় সাপেক্ষ ।
-আমি তো সেরাতের জন্য আপনার মায়ের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলাম।
-লাভ নেই।আমার মায়ের প্রচুর জেদ।মা সন্দেহ করে তোমার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে।মা তোমাকে জিজ্ঞেস করলে স্বিকার করে নিও না,তাহলে ব্যাপারটা আরো মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।
-আচ্ছা, এখন বের হই আমি,কাজ আছে তো।
-আমিও যাবো সাথে।
-না তুমি থাকো,আমি পারবো।
-জানি তুমি পারবে,কিন্তু ভয় থেকেই যায় ভেতরে, তাই দূর থেকে হলেও তোমার অগোচরে তোমার ছায়ার মতো হয়ে থাকি,যেনো তুমি বিপদে পড়লে এগিয়ে যেতে পারি।
-ব্রো! তোমার মিশান মাতাল হলেও এখন পাকাপোক্ত খেলোয়াড় ওহ সরি, কিলার হয়ে গেছে।
-হুম। সেটা তো নিজের চোখেই দেখছি দিনের পর দিন। ক্যাপ্টেন মিশান খান থেকে সিরিয়াল কিলার মিশান খান!

মিশান হেসে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, পিস্তল টা লুকিয়ে তীব্রর ঘর থেকে বের হয়ে যায়, তীব্রও রুম লক করে মিশানের পিছু পিছু বেরিয়ে যায়।ওদের ধারণা ছিলো বাড়িতে এই মুহূর্তে আর কোনো মানুষ নেই,কিন্তু নিমেষেই ধারণার মাঝে কাঁটা বিঁধল।
করিডোর পেরিয়ে ,নিচে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে যাবে, অমনি তীব্রর মাকে দেখতে পায় নিচে বসে পায়ের উপর পা তোলে টিভি দেখছে। দুজনেই দাঁড়িয়ে পড়ে, তীব্র মিশানকে চোখ দিয়ে ইশারায় দাঁড়াতে বলে,একা নিচে যায়, মায়ের পাশে বসে টি টেবিল থেকে নিউজ পেপার হাতে নিয়ে ওর মাকে বলে,
-সুগারলেস এক কাপ চা করে আনো তো।
তীব্রর মা টিভির দিকে তাকিয়ে উত্তরে বললো,
-সেই কখন বাড়িতে এসেছি, একটা পোকাকেও দেখতে পাচ্ছি না কাজের জন্য,যত্তসব অপছন্দনীয় কাজের মানুষ আমার ভাগ্যেই আসে।
কেটলিতে মাত্র চা করে এনেছি, কাপে ঢেলে খা।
তীব্র উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির দরজার দিকে যেতে লাগলো,পেছন থেকে ওর মা বলে উঠলো,
-কোথায় যাচ্ছিস?
-বাইরে চা খেতে।
-আহা! রাগ করছিস কেনো?বললেই পারিস এটা খাবি না,আমি করে আনছি এখনি।
-নাহ তোমার কষ্ট হবে আবার,আমি বাইরেই খেয়ে নেবো।

খিটখিটে ভাব নিয়ে তীব্রর মা বলে উঠলো,
-তীব্র!সব সময় মেজাজ দেখাবি না,আমার মন মেজাজ খুব একটা ভালো না। মায়ের দিকে একটু তাকাস,আমারও একটা প্রাণ তোদের মতো।

তীব্র ঘুরে এসে আবার সোফায় বসলো, তীব্রর মা উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
ওর মা রান্না ঘরে প্রবেশ করতেই তীব্র টিভির সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো, মিশান বুঝে যায় নিচে ম্যানেজ হয়ে গেছে,এক দৌড় দিয়ে তীব্রর পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। মিশান বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তীব্রও উঠে দাঁড়ায়, এমন সময় তীব্রর মা হাতে কাপ পিরিচ নিয়ে ওর দিকে আসে,
-কিরে আবার কোথায় যাচ্ছিস?
-চা খেতে।
-আমি যে, চা করে আনলাম।
-পাতিলে আগেই চা করা ছিলো,তুমি সেটাই গরম করে এনেছো। অই চা আর কেটলির চাতে কোনো পার্থক্য নেই। এরচেয়ে বরং, আমি চা বাইরেই খাই গিয়ে।

কথাগুলো শেষ করেই তীব্র চটজলদি বেরিয়ে গেলো।
-কাজ পড়ে গেছে বলে বেরুচ্ছে সেটা বলছে না, আমার দোষ দিয়ে যাচ্ছে।
এই কাজের লোক গুলো কোথায় গেলো?সবাই হয়তো ছাদে আড্ডা দিচ্ছে, কি আর করার, জানে না হয়তো আমি এসেছি,নিজেই ডেকে নিয়ে আসি গিয়ে।

তীব্রর মা ছাদে উঠে এদিক ওদিক তাকাতাকি করে খুঁজে পাচ্ছে না কাউকেই।কি মনে করে যেনো ছাদের কিনারায় যেতেই দেখে তীব্র বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর রহমান গাড়ি নিয়ে আসে, রহমান গাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে।
তীব্র গাড়ীর অপর পাশের ডোর খোলে দিতেই অন্ধকার থেকে মিশান এসে দৃশ্যমান হয়,মিশান গাড়িতে উঠে বসে, এরপর নিজে ড্রাইভিং সীটে গিয়ে বসে।

বাড়ির চারদিকে পর্যাপ্ত লাইটিং থাকার কারণে সবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তীব্র মা উপর থেকে দেখে অনেকটা অবাক হলো, বাড়ির এরিয়াতে মিশান কি করে এলো।
মনে মনে আন্দাজ করে ফেললো মিশান হয়তো বাড়ির ভেতরেই ছিলো তীব্রর সঙ্গে।

বাড়িতে থেকেও কিচ্ছুটি বুঝতে পারেনি বলে নিজের উপর রাগ হতে লাগলো।

মিশান মোবাইলে লোকেশন দেখে দেখে তীব্রকে বলছে আর সে অনুযায়ী তীব্র গাড়ী ড্রাইভ করছে। যাকে মারবে তাঁর লোকেশন ট্র‍্যাক করে নিজের মোবাইলে সেটিং করেছে।লোকটা রাত করে বাইরে থেকে বাড়ি ফিরছিলো।

-গাড়িটা এখানেই থামাও।বাঁ দিক থেকে আসছে ও।পাঁচ দশ মিনিটেই এদিকটাই এসে যাবে।
তীব্র গাড়ি থামালো।মিশানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আমার গাড়ির পেছনের সিটে তোমার রেড ওয়াইন, নিয়ে নাও।

মিশান মুচকি হেসে দিয়ে বললো,
-পুলিশের লোক,তাও আবার সিনিয়র অফিসার হয়ে গাড়িতে করে মদ নিয়ে ঘুরেন,ভয় লাগে না?
-না তো!
-বুঝবেন যেদিন কোনো সাংবাদিকের নজরে পড়বেন।তারপর নিউজ হেডলাইন হবে আপনাকে নিয়ে”দেখুন এসপি হয়ে গাড়ির ভেতর কি নিয়ে চলছে”

এরপর বিস্তারিত খবরে থাকবে,
“এস পি সাফওয়ান রেজা তীব্র।স্পেশাল ব্রাঞ্চের স্বনামধন্য এক অফিসার। যে কিনা চিতা বাঘের মতো থাবা মেরে ক্রিমিনালদের ধরে,আর তাঁরই গাড়িতে পাওয়া গেছে মদের বোতল! প্রতিরাতে বার থেকে মদ নিয়ে বের হোন, সেই মদ প্রেমিকার সাথে ভাগ করে খান দুজনে।
দেশের পুলিশদের ই যদি এই হাল হয়,সাধারণ পাব্লিকের কি হবে?”

এগুলোর সাথে বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর আরো তথ্য,আমার গোষ্ঠী বর্গের পরিচয়,আপনার গোষ্ঠীর পরিচয়।
তাদের সাক্ষাতকার। সব উদ্ধার করে দেবে!
-এতো কিছু ঘটার হলে অনেক আগেই ঘটতো মিশান খান।আর হলেই হলো, ভয় পাই নাকি আমি?তোমার জন্য এইটুকু করতেই পারি ।
-এগুলোর আর প্রয়োজন হবে না।
-এলকোহল ছাড়াই মার্ডার করতে যাবে?
-যেখানে তুমি আছো,সেখানে এলকোহলের প্রশ্নই আসে না।
তোমার থেকে মারাত্মক এলকোহল আর কিসে আছে?

তীব্র হেসে দিয়ে মিশানের গাল ধরে টেনে বললো,
-এতোদিনে হুঁশে এলো এটা?
-প্রচ্চুর পিনিক!

দুজনেই হাসতে হাসতে, গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির সামনে উঠে পা ঝুলিয়ে বসতেই তীব্র মিশানকে কাছে টেনে নিয়ে কাঁধের উপর হাত ঝুলিয়ে রাখে।

বসে বসে কিছুসময় কথোপকথনের পর, মিশান স্লিপ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির ডিকি থেকে একটা মোটা রডের দন্ড নিয়ে বের হলো,মাস্ক পড়ে হুডিটা পড়তে পড়তে কিছুটা দূরে গিয়ে রাস্তার মাঝখানে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,তীব্র পা ঝুলানো থেকে জোড়াশীন পেতে বসে গাড়ির সামনেই।
গাড়িটা রাস্তার একদম সাইডে অন্ধকারের মধ্যে পার্ক করা হয়েছে।

দূর থেকে গাড়িটা আসতে দেখে মিশান পকেট থেকে একটা লেজার লাইট বের করলো, যার সবুজ রঙের আলো টা তীর্যকভাবে বস্তুর গায়ে লাগে, আবার একটা ক্যাপ পড়ালে জোনাকিপোকার আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে পুরো এরিয়াতে।

ছেলেটা নিজের গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে এদিকে আসছে, মিশান ছেলেটার চোখ বরাবর লেজার লাইট ধরায় ছেলেটা ড্রাইভ করতে পারে না,চোখের মণিতে বিঁধে পড়ে সবুজ আলোটা,যার কারণে এলোপাথাড়ি ড্রাইভ করতে করতে গাড়ির গতি ব্রেক করে।রাগান্বিত মেজাজে গাড়ি থেকে বেরিয়ে মিশানের দিকে এগিয়ে আসে বকতে বকতে।
– এই কেরে তুই? রাস্তার মাঝখানে সং জুড়েছিস?রাস্তা কি তোর বাপের? সাইকো নাকি?এতো রাতে প্র‍্যাংক করতে বেরিয়েছিস?কোথায় তোদের ক্যামেরাম্যান? ডাক দে!প্র‍্যাংক করা শেখাচ্ছি।

কথাগুলো বলতে বলতে মিশানের কাছাকাছি যাওয়ার আগেই মিশানের হাতে একটা বিয়ারিংয়ের মতো বস্তু চারপাশে কাঁটা কাঁটা ডিজাইন, সেটা ছুঁড়ে মারে।সঙ্গে সঙ্গে সেটা লোকটার গলায় গিয়ে বিঁধে পড়ে।
লোকটা গলায় থেকে ওটা ছাড়াতে গিয়ে আরো আহত হয়, কিন্তু ছাড়াতে পারে না। মিশান লোকটার কাছে দিয়ে, মোটা রডের অই লাঠিটা দিয়ে মাথায় আঘাত করলে মাটিতে নুইয়ে পড়ে।

এরপর গলায় থেকে সেই কাঁটাময় বিয়ারিং টা টেনে তুলে। এতে লোকটার প্রাণ বের হওয়ার পেছন খুব একটা সময় ব্যয় হয়নি।

এরপরেও মাথার পেছনে আরো কয়েকটা বাড়ি মারলো।

এই লোকটাকে খুব একটা আঘাত দিয়ে মারলো না, নেশা না করার কারণ ভেতর থেকে হিংস্রতা তেমন ভাবে বেরিয়ে আসছে না মিশানের।

প্রাণ বের হওয়া অব্ধি লোকটার পাশেই বসে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ মৃত লাশটার পাশে থাকার পর মিশান এক হাতে রক্তাক্ত বিয়ারিং আরেক হাতে লোহার দন্ডটা ঘুরাতে ঘুরাতে তীব্রর কাছে গেলো।
-এতো হাল্কা পাতলা ভাবে মারলে?লাস্ট ছিলো তো।
-নাহ!ড্রিঙ্কস করিনি তো তাই ভেতর থেকে খুব একটা স্পীড আসছে না।আরেকটা কথা বলবো?
-বলো,
-কেনো জানি মনে হচ্ছে, এটাই শেষ না। আরো আছে।আর কেনো জানি মনে হচ্ছে এতোগুলো দিন ভরে যাদের খুঁজে খুঁজে বের করে নৃশংসভাবে মারলাম, তাঁরা কেবলই দাবার গুটি,পেছনে কেউ চাল গুলো চেলেছে। জানি না, কেনো জানি মনের মধ্যে এই প্রশ্ন গুলো খুব করে আসছে।এটা বেশ কিছুদিন ধরে আমার মাথায় ঘুরছিলো,মাঝখানে তুমি মাথায় ঢুকিয়ে দিলে ঝলকের মার্ডার কেস।সব মিলিয়ে গুলিয়ে যাচ্ছিলো,মাথা পাগল হওয়ার উপক্রম।
আজকে তো সবটা ক্লিয়ার হয়েই গেলো।
শুধু এই একটা ব্যাপারে মনের কোণে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

তীব্র ফরমাল হাসি দিয়ে মিশানকে বললো,
-চলো জাফর দাদার এরিয়াতে একটু ঘুরে আসি, মনটা হাল্কা হয়ে যাবে।
বড়লোক মানু্ষের বিলাসিতা দেখতেও ভালো লাগে।
এমনিতেই জাফর অনেক সিকিউরিটি গার্ড নিয়ে চলে।অভিজিৎয়ের মৃত্যুর পর ওর সিকিউরিটি আরো চৌগুণ হারে বেড়ে গেছে।
-অনেক যন্ত্রণা তোমার ভেতরে তাই না?
-নাহ!এখন আর কষ্ট লাগে না,সব যন্ত্রণা এখন প্রতিশোধে কনভার্ট হয়েছে।
-তাহলে এতো দিনে নিশ্চয় ফাঁদ ভালোমতো তৈরী হয়েছে?
-সেতো অবশ্যই, শুধু প্রয়োগের অপেক্ষা।
– কবে নামছি এই মিশনে?
-পরিস্থিতি বুঝে, ঝোপ বুঝে কোপ হবে,সময় অনিশ্চিত।
-বুঝেছি বস! চলুন ঘুরে তাহার রাজ্য খানা।

অনেকটা পথ যাওয়ার পর, তীব্র হঠাৎ মিশানকে বললো,ড্রাইভিং সীটে বসে ড্রাইভ করতে।মিশান ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ী চালাতে থাকে,পাশে তীব্র বসে বসে গান লোড করতে থাকে।
চলবে…………

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ভুল গুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেবো। গল্পকে গল্প হিসেবে দেখুন,বাস্তব জীবনের সাথে মেলাতে যাবেন না দয়া করে।
ভালো লাগলে অনুপ্রেরণা দিয়ে পাশে থাকুন,ভালো না লাগলে ইগনোর করুন,ধন্যবাদ!)
আগের পর্বের লিংক:-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=415683159708528&id=100038005432100
পরের পর্বের লিংক:-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=421356882474489&id=100038005432100

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here