তোকে_ঘিরে❤
পর্ব_১৯
#ফাবিয়াহ্_মমো
– বইন বইন জলদি আয়!! আসমা টাওয়ারের মাঠে অঘটন ঘইটা গেছে!! তাড়াতাড়ি আয়!!
আয়মান এমন চিৎকার করে কথাগুলো বলছিলো যেনো ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে ওখানে! আমি মা-কে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি করে কাধের ব্যাগ ঝুলিয়ে আয়মা টাওয়ারের সামনে গেলাম! সকাল নয়টা বিধায় এখন মানুষ খুবই কম! আশেপাশে কোথাও আমি আয়মানকে দেখতে পাচ্ছিনা। ও কোথায়? একমিনিট! ও কি আয়মা টাওয়ারের পিছনের মাঠে নয়তো? যেয়ে দেখবো? আমি দৌড়ে আসমা টাওয়ার সামনের পথ ধরে পেছনের মাঠটায় গেলাম! সকালের ঝাঝালো রোদের মধ্যেই দেখতে পাই মাঠের শেষ কোণাটার বটগাছের নিচে একদল ছেলে ঘেরাও করে দাড়িয়ে আছে। দূর থেকে ওদের মুখ স্পষ্ট না! আশ্চর্য! আয়মান আমাকে এখানে ডাকলো কেন?
পূর্ণতা বিশাল গোলাকার মাঠ পেরিয়ে ওই গাছটার কাছে এসেই হতভম্ব হয়ে যায়! পূর্ব গাছের সাথে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুজিয়ে দাড়িয়েছিলো হঠাৎ পূর্ণতার উপস্থিতি পেয়ে ও ছেলেদের ইশারায় কিছু নির্দেশ দিলো। গাছের মোটা ডালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা রাজিবকে ওরা গাছ থেকে নামিয়ে সোজা মাটিতে হাটু ভেঙ্গে বসিয়ে দেয়। আয়মান কি যে ভয় পেয়েছে!! পূর্বের নৃশংসরূপ দেখে দুটো ঘন্টা যাবৎ শুধু ঢোকই গিলে যাচ্ছে। মুখের জবান টোটালি বন্ধ! পূর্ব গাছ থেকে সরে এসে রাজিবের পেছনে দাড়িয়ে চোখ খুলে দিয়ে পূর্ণতাকে বলে উঠে,
– ননষ্টপ থাপ্পর দিতে পারবে? নো থামাথামি! জাস্ট হাত চলবে। পারবে? অলরেডি দম যাই যাই করছে। যা করার জলদি করো।
পূর্ণতা রাজিবের দিকে চোখ ঘুরিয়ে হালকা একটা ঢোক গিলে অজান্তেই ভয়ে কাঁপতে থাকে। রাজিবের চোখ দুটো থেকে স্রোতের মতো রক্ত পরছে, আর্দশ সুন্দর হিসেবে ট্যাগ পাওয়া মুখের অবস্থা বাজে হয়ে গেছে, শরীর ওর হাপড়ের মতো কাঁপছে। আচ্ছা? রাজিবের চোখদুটো কি অন্ধ করে দিয়েছে? এতো রক্ত কেনো পরছে? পূর্ণতা রাজিবের এই অবস্থা দেখে প্রচণ্ডরূপে ভয় পাচ্ছে। পূর্ব এতটা বিভৎস আচরন করতে পারে পূর্ণতার তা জানা ছিলো না। পূর্ণতা এক পা করে খুবই ধীরাজ ভাবে পিছাচ্ছে। গতকাল পূর্ণতা রাগের বশে বলে ফেলেছিলো ওকে মেরে ফেলতে! তাই বলে এভাবে তো নৃশংসভাবে মারতে কখনো বলেনি। পূর্ব খুবই ভয়ংকর! খুবই বিপদজ্জনক! যদি কখনো পূর্ণতাকে মেরে ফেলে? আয়মান যেভাবে ভয়ের চোটে নাকানিচুবানি খাচ্ছে পূর্ণতা সেখানে ভয়ের তিন ডাবল ফিল করছে। আয়মান পূর্ণতার স্থিরদৃষ্টির আড়ালে থাকা চাপা ভয়টা বুঝতে পেরে খুব সাবধানে পূর্বের পাশ কাটিয়ে পূর্ণতার পাশে দাড়িয়ে দাতঁ কিড়মিড় করে বললো,
– পূর্ণণতা…বববইন, আমমারে মমাফ করিস। পূর্ব ভাই নানানা বললে আমি তোরে এইখখানে ডাককতাম না। রাজিজবরে দুটা থাথাবড়া দিয়া জাজাগা…আআমি..
আয়মানের ফিসফিসিয়ে বলার ভঙ্গিটা পূর্বের কাছে কৌতুহলের উদ্রেক হলো! সে হঠাৎ করে আয়মানের ফিসফিস কথায় বলে উঠলো,
– ওর কানে কি পট্টি দিচ্ছো?
আয়মান এমনভাবে শিউরে উঠলো যেন পূর্ব ওকে ধমক দিচ্ছে। কৈলেশ পূর্বের কাছে এসে কানের কাছে বললো,
– পূর্ব দা? এই ছেলেটা আপনাকে হেব্বি ভয় পাচ্ছে। কি করবো?
পূর্ব পকেটে থেকে হাত বের করে চুল পেছনে ঠেলে বললো,
– কিছুই করবি না। সব চুপ!
পূর্ব রাজিবের চোখের পট্টিটা আবার বেধেঁ দিয়ে পূর্ণতার সামনে সটান মেরে দাড়িয়ে বললো,
– ভয় পাচ্ছো কেন? কি সমস্যা? তোমার পেটে যে খামচি মেরেছে তার উপঢৌকন হিসেবে দুটো থাপ্পর কি দেওয়া যায় না?
পূর্ণতা ঢোক গিলতেও প্রচুর হিমশিম খাচ্ছে। পূর্বের কাছ থেকে দ্রুত কয়েক কদম পিছিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি করে তোতলিয়ে বলে উঠলো,
– আপপনাকে আমমি চিনি না…রারাজিবকে পুলিশের হাতে দিয়ে দিন।
বলতে দেরি পূর্ণতা পা ঘুরিয়ে হুড়মুড় করে দৌড়ে পালালো! বুকের ভেতর ধপাস ধপাস করে হৃৎপিন্ড লাফাচ্ছে! শরীর ঘেমে উঠছে! পূর্ণতার চোখের সামনে রাজিবের চোখ থেকে নির্গত রক্তগুলোর বিভৎস দৃশ্য ভাসছে! সমস্ত শরীরের পশম কাটার মতো খোচাচ্ছে পূর্ণতার! পূর্বের এই দৃশ্যবিবরণী মনকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ভাষা খুজে পাচ্ছেনা। পূর্ণতা একমিনিটের মধ্যেই গতরাতের সব অনুভূতি উড়িয়ে প্রাণপণে দৌড়ে পালালো! নাহ…ওর পূর্বকে চাই না। পূর্ব খুবই ভয়াবহ…খুব বেশি।
ভার্সিটি গিয়েও লেকচার ভালোমতো এটেন্ড করতে পারলো না। স্যার ওখানে বিশাল বিশাল লেকচার দিলেও পূর্ণতার অদ্ভুত মন বারবার ওই দৃশ্যপটে আটকে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাচ্ছে। পূর্ণতা মাথা চতুর্দিকে ঘুরায়। যদি পূর্ব এখানে এসে পরে? পূর্ণতা ডেস্কে হেড ডাউন করে থাকে। বুকটা এখনো ধুকধুক করছে। মাথার ভেতর ঝিমিয়ে উঠছে। পূর্ণতা ক্লাস থেকে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে যায়। ক্লাসে মন বসছেনা। ভয় হচ্ছে। আয়মান সেই কখন থেকে কল দিচ্ছে। পূর্ণতা ফোন সাইলেন্ট করে চুপচাপ শ্রেয়াকে ওর ডিপার্টমেন্ট থেকে ডেকে আনে। শ্রেয়াকে সব খুলে বলে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে পা বারিয়ে আবার থমকে যায়। যদি পূর্ব চলে আসে? এই ভয়টা কোত্থেকে উদয় হলো? পূর্ণতা তো পূর্বকে ভয় পায় না। শ্রেয়া পূর্ণতাকে আশ্বস্ত করে বলে উঠে,
– ক্যান্টিনে যেতে ভয় লাগছে? এক কাজ করি, দোতলার যেই বড় রুমটা আছে না? ওখানে চল। কেউ আসবেনা সিউর দিচ্ছি।
– আমার বুকটা এখনো ধুকধুক করছে দোস্ত। এক বোতল পানি খেয়েও শান্ত হতে পারছিনা।
– পূর্ণতা? নিজেকে সামলা। ভয় পেলে পূর্ব তোকে লেবুর মতো চিপড়ে কঠিন জেরা করবে।
পূর্ণতা ঝট করে শ্রেয়ার হাত চেপে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠে,
– পূর্বকে কি উত্তর দিবো? আমি..আমি..আমি প্রচুর ভয় পাচ্ছি। আমার মাথা কাজ করছেনা। পূর্ব যদি রাগের মাথায় আমাকেও মেরে ফেলে? শ্রেয়া? ও কি স্বাভাবিক? আমি কি ভুল কারোর প্রেমে পরলাম? ও কি আমাকে আদৌ ভালোবাসে? আমি কি খুব জলদি করছি?
শ্রেয়া পূর্ণতার গালে দুহাত রেখে অভয় বানীতে শক্ত করে বলে উঠে,
– পূর্ণ রে, ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি থাকতে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিচ্ছু হতে দিবো না। ঠান্ডা হ পাগল। পূর্ব তোকে যদি খারাপ কিছু করতেই চায় তার আগে আমাকে ট্যাকল করতে হবে! চল দোতলায়। আমার কাছে টিফিন আছে। আসার সময় তিনটা কোক কিনেছিলাম। দুজনে একসাথে খাবো।
পূর্ণতা মাথা নাড়িয়ে শ্রেয়ার পিছু পিছু দোতলার সিড়ি ধরে উপরে যায়। বড় রুমটার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলে দেখে বেন্ঞ্চগুলোতে একপাল্টা ময়লা পরে আছে। শ্রেয়া নিজের ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে দুটো লো বেন্ঞ্চ এবং একটা হাই বেন্ঞ্চ মুছে দুজনে মুখোমুখি হয়ে বসে। হাই বেন্ঞ্চের উপর শ্রেয়া টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলে কোকের বোতল পাশে রাখে। পূর্ণতা এখনো চুপচাপ হয়ে আছে। ওই ইবলিশ আয়মানটা যদি পূর্ণতাকে না ডাকতো পূর্ণতা এতো ভয় পেতো না। আয়মান কি জানে না? পূর্ণতা হঠাৎ এমন অঘটন দেখলে ভয় পায়? আজ তোকে ছাড়বো না ইবলিশ! এতোদিন তুই আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছিস আজ তুই বেকুবের মতো পূর্ণতাকেও জ্বালাতন করলি। আয় খালি তুই! তোকে আচ্ছা কেলাবো হারামি! শ্রেয়া চামচভর্তি খাবার তুলে পূর্ণতাকে জোর করে খাইয়ে দেয়। পূর্ণতা অন্যমনস্ক হয়ে খাবার চিবুতে থাকলে হঠাৎ খালি রুমে মধ্যে কারোর পায়ের প্রতিধ্বনি শুনতে পায় শ্রেয়া। পূর্ণতা এখনো অন্যমনস্ক হয়ে আছে! শ্রেয়া পূর্ণতার পিছনে কাউকে দেখে বেন্ঞ্চ থেকে ঝটাং করে দাড়িয়ে যায়। পূর্ণতা নিজের সন্ধি ফিরে পেলে শ্রেয়ার দিকে ভ্রু কুচকে কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে একটা হাত এসে পূর্ণতার ডান কাধ থেকে বাম কাধ বরাবর গলায় হাত রাখে। পূর্ণতা মাথা নুয়ে গলার কাছে হাতটা দেখেই চোখ বিশাল বড় করে ঢোক গিলে। মাথার উপর কিছু অনুভব করে পূর্ণতা। হয়তো পূর্ব নিজের হাতটা রেখেছে মাথার উপর। শ্রেয়া স্তব্ধ হয়ে নির্লিপ্ত চাহনিতে ঢোকের পর ঢোক গিলেই যাচ্ছে। খুব কষ্টসহকারে একটা ঢোক গিলে পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে কম্পান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,
– আ আ আ মা কে, ছে ছেড়ে দি দি ন…
শ্রেয়া স্থির দৃষ্টিপাতে চোখের পলক না ফেলে বলে উঠে,
– ভাইয়া আপনি এখানে কিভাবে এলেন? আপনাকে দারোয়ান ঢুকতে দিলো?
রাগ? নাকি অভিমান? তার কন্ঠে কিছুই বোঝা গেলো না। শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে জবাব দিলো পূর্ণতার পিছনে থাকা ব্যক্তিটা,
– জালিয়াতির দুনিয়ায় সব সম্ভব। আমি প্রাইভেসি চাই। বাইরে অপেক্ষা করো। কেউ যেনো ভুলেও ভেতরে না আসে। বুঝছো?
– ভাইয়া ও তো ভয়…
– ওটা আমার দেখার বিষয়। বাইরে যাও। বাইরে যেয়ে পাহারা দাও। জাস্ট কিছু কথা বলবো।
শ্রেয়া না চাইতেও পূর্বের কঠিন আজ্ঞাধীন পেয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হলো। পূর্ণতা ভয়ে রীতিমতো ফোপাচ্ছে। পূর্ব গলা থেকে হাতটা সরিয়ে পূর্ণতার পাশে বসে ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। এখনো চোখ খিচুনি দিয়ে বন্ধ করে দাতেঁ দাতঁ চেপে কিড়মিড় করছে।
– চোখ বন্ধ করে থাকলে একটা থাপ্পর লাগাবো। ওখান থেকে পালিয়ে এসেছো কেন?
চোখ খুলেও আবার বন্ধ করে ফেলে পূর্ণতা। মাথা নুয়ে কাদঁছে এখন। পূর্ব নিজের রাগ সংবরন করতে প্রচুর ধকল খাচ্ছে। থাপ্পর মেরে দাতঁগুলো সব ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে! কি বুঝে বেকায়দায় পালালো? আবার বললো, ‘আমি আপনাকে চিনিনা?’। ধাম করে খুব বিকট একটা শব্দ হলো! পূর্ণতা ভয়ে চমকে উঠে চোখ মেলে দেখে পূর্ব হাই বেন্ঞ্চে ঘুষি মেরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে। পূর্ণতা একবার পূর্বের দিকে তাকাচ্ছে। আরেকবার চোখ ফিরিয়ে দেখছে হাতের দিকে। পূর্ণতা কি উত্তর দিবে? কথাগুলো জটলা পাকিয়ে গলায় আটকে যাচ্ছে। পূর্ব কিছুক্ষণ পর গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,
– বিয়ে করতে চাচ্ছো? না করলে বলো আমি চলে যাই। এসব ভেল্কিবাজি আমার দেখতে ইচ্ছে নেই !
পূর্ণতা জিহবা দিয়ে আলতো ঠোঁট ভিজিয়ে গলায় ঢোক ফেলে বলে উঠে,
– আপনি কি মানুষ মারেন?
– পরিস্কার করে বলো!
– আপনি কি রাজনীতিতে মানুষ খুন করেন? আজ..আজ আপনি রাজিবকে..
– ওকে ওভাবে মারাটাই কি উচিত ছিলো না?
পূর্ণতা চুপ করে থাকে। কোনো মেয়ের শালীনতায় হাত দেওয়া পুরুষের কি শাস্তি দেওয়া উচিত না? হ্যাঁ উচিত। কিন্তু সেটা নিজ হাতে নিয়ে তো নয়। আইনের সাহায্যে করা উচিত। তবে পূর্ব কি নিজেও আইনের উপর বিশ্বাস করতে পারে না? দেশের অযাচিত দুর্নীতি দুরবস্তায় আইন যে নতজানু হয়ে পরছে এজন্য কি উনি ভরসা পান না? পূর্ণতা চোখ তুলে পূর্বের দিকে তাকায়। ওভাবে না বলেকয়ে হুটহাট পালিয়ে আসাতে পূর্ব নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে? পূর্ণতা হাত এগিয়ে পূর্বের গাল স্পর্শ করতে যাবে পূর্ব ঝাপটানি দিয়ে হাত সরিয়ে দিচ্ছে। মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। পূর্ণতা এগিয়ে আসে পূর্বের দিকে। নিজের বোকামির উপর অনুতপ্ত হয়ে দ্বিতীয় দফায় গালে হাত রাখবে পূর্ব আবার সরিয়ে দিয়ে বলে উঠে,
– আমার সাথে কাহিনি করবে না! টাচ করার চিন্তা ভুলে যাও!
পূর্ণতা কপাল কুঁচকে পূর্বের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। পূর্ব ওকে ধরেনি একদম। প্রচণ্ড রাগে, মারাত্মক জিদে শরীর ফেটে যাচ্ছে পূর্বের। পেয়েছে কি? একটু আগে তামাশা করে কি স্বাদ মিটে নি? পূর্ব নিজের উপর থেকে পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে পূর্ণতা দুহাতে জাপটে ধরে পূর্বের দিকে আলতো করে মুখ তুলে বলে উঠে,
– মাফ করা যায় না?
– না!, পূর্বের রাগান্বিত উত্তর!
– কি করলে মাফ করবেন?
– জানি না!
পূর্ণতা পূর্বকে ছেড়ে উঠে দাড়ালে পূর্ব নিজেও উঠতে যায় বেন্ঞ্চ থেকে। কিন্তু পূর্ণতার আকষ্মিক কান্ডে পূর্ব হকচকিয়ে যায়! পূর্ণতা ওর কোলে বসে দুহাতে চুল টেনে পূর্বের চোখে ঠোঁট বসিয়ে দিচ্ছে! কপালে, গালে..উফফ! আবার শুরু করেছে এই মেয়ে! কোন্ ভাষায় ওকে বোঝাবো! পূর্ব আবার বিড়বিড় করে নিচুকন্ঠে বলে উঠে,
– পূর্ণতা ছাড়ো, এখন এরকম করো না। তুমি বুঝো না কেন?
পূর্ব পূর্ণতার কানের কাছে হাত রেখে আলতো স্বরে বলে উঠে,
– তুমি আমার মাফ পাওয়ার জন্য এই নিয়ম খাটাচ্ছো?খুবই খারাপ কাজ করছো পূর্ণ। কষ্টটা তুমি কথা দ্বারা দিয়েছো। শোধরাতে হলে কথা দ্বারাই শোধরাও। এভাবে আদর-স্পর্শ করে ভুল শোধরানো যায় না।
পূর্বের ‘কথা,কাজ,কর্ম’ সবকিছুতে যেন আলাদা ন্যায়শাস্ত্র বিরাজ করে। পূর্ণতা যে নিজ থেকে ওকে আদর করতে আসে এক্ষেত্রে রাজিব হলে পূর্ণতার সাথে সব লিমিটেশন শেষ করে ফেলতো। পূর্ণতার এই কাজে রাজিব ওর কোমর জড়িয়ে ঠোঁটে অজস্র স্পর্শ এঁকে উন্মাদের মতো আচরন করতো! কিছুই ছাড় দিতো না একবিন্দু! পূর্ব পূর্ণতার হাতদুটো নিজের চুল থেকে সরিয়ে স্বাভাবিক হয়ে কোলে বসতে বলে। হাই বেন্ঞ্চ থেকে কোকের বোতল নিয়ে ছিপি খুলে পূর্ণতার ঠোঁটে এগিয়ে খাওয়ার ইশারা করে বলে উঠে,
– কোনো মেয়ে একটা ছেলের কোলে বসলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় পূর্ণতা। তার উপর এতো কাছাকাছি, এতো নিকটে থাকলে ‘প্লাস-মাইনাস’ ধর্মের মতো ম্যাগনেটেড হয়ে যায় দুজন। তুমি অবশ্যই আমার প্রতি যে ফিলটা করছো তোমার তুলনায় তিনগুণ বেশি ফিল আমি করছি। তোমার বোঝা উচিত আমি স্টিল তোমায় ওভাবে ছুইনি। চাইলে কি ছুতে পারতাম না? আমি চাচ্ছি না। তোমার ঠোঁটদুটো দেখলে আমারও কি মাথা নষ্ট হয়না? হয়। তোমার চোখদুটোতে নিজের স্পর্শটা গামট্যাপের মতো লাগিয়ে রাখতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু আমি এখনো তা করিনি। আমি যে তোমাকে কোলে নিয়ে বসে আছি আমার লিমিট এটুকুই। এর চেয়ে বেশি কিছু তুমি আমার কাছ থেকে বিয়ের আগ পযর্ন্ত পাবে না। ঘন্টা দুয়েক আগে তুমি যেভাবে বললে, ‘আমি আপনাকে চিনি না’…আমার ইচ্ছা ছিলো তখনই সবার সামনে দুটো কষিয়ে মারি। লজ্জাবোধ হলে তোমার শিক্ষা হতো। আমি কিছুই করিনি। তোমার উচিত ছিলো আমার রাগ ভাঙানো। তুমি উল্টো আমায় চুমু দিতে শুরু করেছো এটা কি যুক্তিসংগত হলো? কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হয় এটা জানো! কিন্তু কথার কষ্ট কথা দিয়ে কিভাবে দূর করতে হয় সেটা জানো না? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করো তো, তুমি আদৌ আমার যোগ্য কিনা? আমার রাগ যদি ভাঙাতে না পারো, আমাকে যদি বুঝতে না পারো, আমি চাইছি তা যদি ধরতে না পারো…তবে আমি দুঃখিত পূর্ণতা! তুমি আমার পূর্ববতী হওয়ার লায়েক না। তুমি আর আনিশা অনেকটাই সেম কাজগুলো করছো। আনিশা ভুখার মতো আমার পিছু পিছু ঘুরতো, আমার পাত্তা পেতো না। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে আমি সিরিয়াস হয়েও তোমার কাছ থেকে পজেটিভ ভাইভ পাচ্ছিনা। আমার স্ট্যাটাস বা আমার মুখদর্শন দেখে প্রেমে পরা মেয়ে আমি চাই না। আমার অগোছালো, এলোমেলো জীবনটাকে পূর্ণতা দেওয়ার মতো একটা তুমি চাই। আমার ক্ষুদ্র চাহিদা যে পূর্ণ করতে পারবে আমি তার জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করবো না। তুমি এখনো পূর্বকে বুঝতে পারলে না…আফসোস।
– ‘ চলবে ‘
#FABIYAH_MOMO
(নোটবার্তা : পর্ব – ১৬ তে কি এমন ছিলো জানিনা কিন্তু আমার আইডির উপর কুনজর এখনো যাচ্ছেনা। রেস্ট্রিকশান ওয়ার্ণ পেয়েছি কাল, কমেন্টের রিপ্লায় ব্যস্ততার জন্য দিতে পারিনি গতকাল। দুঃখ প্রকাশ করছি আমি। চেষ্টা করবো দ্রুত রিপ্লায় করার❤)