মেঘকন্যা☁️ Part_25

মেঘকন্যা☁️
Part_25
#Writer_NOVA

আবছা আবছা করে যখন চোখ খুললাম তখন মনে হলো শূন্যতে ভাসছি।চারিদিকে শুধু সাদা আভার ছড়াছড়ি। বেশ ভালো লাগছে।আমি কিসের ওপর ভাসছি?কথাটা মনে হতেই হুট করে চোখ খুলতেই টের পেলাম আমি সাদা মেঘের ভেলায় শুয়ে আছি।কিন্তু আমার তো নিচে পড়ে যাবার কথা। তাজিনের কথা মনে আসতেই চারিপাশে চোখ বুলালাম। একি!!! তাজিনও আমার পাশে শুয়ে আছে। কিন্তু ও এখনো ঘুমন্ত। মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো। মাথাটা উঠানোর চেষ্টা করেও উঠাতে পারলাম না।মাথাটা পুরো ভার হয়ে আছে।কিছু সময় তাকিয়ে আকাশ দেখলাম।সাদা মেঘের ভেলায় খুব দ্রুত কোথাও ছুটে চলছে।হঠাৎ করে আবার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।কিন্তু কেন তা জানা নেই। তাজিন যেহেতু আমার সাথে আছে সেহেতু ঘুমাতেও সমস্যা নেই।

চোখ পানির ছিটা পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললাম।চোখে মিষ্টি রোদের আলো পরলো।সকাল হয়ে গেছে। সারারাত মেঘের ভেলায় ভেসেছি। সত্যি ছিলো নাকি স্বপ্ন দেখেছি,আল্লাহ ভালো জানে।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা সত্যি ছিলো।
চোখটা সামনের দিকে ঘুরাতেই দেখলাম কুহুকলি ও তাজিন আমার দিকে খুশিমনে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা কাত করে সামান্য ঝুঁকে উঠে বসলাম।

তাজিনঃ এখন কেমন আছো মেঘকন্যা?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোমার শরীরটা কেমন?

তাজিনঃ আমিও আল্লাহর রহমতে অনেকটা ভালো আছি।কখন থেকে তোমার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছি।এইমাত্র সফল হলাম।

আমিঃ কুহুকলি, তুমি কোথায় ছিলে?আমরা এখন কোথায়?

কুহুকলিঃ আমি তোমাদের সাথেই ছিলাম।

আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম নদীর পাশে শুয়ে আছি।দক্ষিণ দিকে সারি সারি পাহাড়।উত্তর দিকে ভয়ানক জঙ্গল।কিন্তু আমরা তো সাদা মেঘের ভেলায় ছিলাম।এখানে কখন এলাম?

আমিঃ কুহুকলি, আমরা দুজন তো সাদা মেঘের ভেলায় ছিলাম।এখানে পৌঁছালাম কিভাবে?

কুহুকলিঃ তোমরা নিচে পরে যাওয়ার আগে দ্রুত বেগে সাদা আভাগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে মেঘের ভেলা তৈরি হয়ে যায়।তারপর তোমাদের দুজনকে নিচে পরে যাওয়ার আগে সেখানে তুলে নেয়। আমি সারা পথে তোমাদের পাশাপাশি উড়ে উড়ে এসেছি। মেঘকন্যা, তুমি সবসময় বলো না,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।আজ আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তোমরা যদি পাহাড় থেকে না পরতে তাহলে এতো জলদী আমরা উত্তরের জঙ্গলে পৌঁছাতে পারতাম না।হেঁটে এখানে পৌঁছাতে আমাদের কয়েকদিন লাগতো।কিন্তু সেখানে আমাদের লেগেছে কয়েক ঘন্টা।

তাজিনঃ আমি ভেবেছিলাম গতকাল আমার জীবনের শেষ রাত ছিলো।আমি কখনো আর চোখ খুলতে পারবো না।আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। তিনি আমার মৃত্যু এভাবে লিখেনি।আমার আরো হায়াত আছে।তাইতো মরতে মরতে বেঁচে গেলাম।

আমিঃ সকালের আলো ফুটে গেছে। চারিদিকে পাখির কিচিরমিচির। কতদিন পর যে নিজ চোখে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলাম।আমার মনটা ভালো হয়ে গেছে। (বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে)

জায়গাটা বেশ নির্জন।নরম,কচি ঘাসের উপর বসে আছি।চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। দুচোখ যতদূর যায় সবুজের সমারোহ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের আনাগোনা নেই। কিন্তু এখন কোন দিকে যাবো?কিছুই বুঝতে পারছি না।

আমিঃ এখন এই নদী কিভাবে পার হবো কুহুকলি?নদী পার না হলে তো ওপাড়ের জঙ্গলে যেতে পারবো না। এখন কি করবো আমরা?

তাজিনঃ আমিও বুঝতে পারছি না। তোমাকে তো উত্তরের জঙ্গলে যেতে হবে। মেঘকন্যা আমাকে তোমার সাথে নিবে তো?নয়তো আমি এখন কোথায় যাবো?আমারতো আপন বলতে এখন কেউ নেই। (কাঁদতে কাঁদতে)

আমিঃ তোওবা,তোওবা কি বলো এসব?তুমি আমার সাথে আমাদের মেঘরাজ্য থাকবে।যদি আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সব ঠিক করতে পারি।তোমার বোন এখনো বেঁচে আছে। তাই কখনো এসব বাজে কথা বলবে না যে তোমার আপন বলতে কেউ নেই। আমাকে কি তোমার চোখে পরে না।আমি কি হাওয়ায় ভেসে উড়ে গেছি নাকি?তুমি আমার যে উপকার করেছো।আমি সারাজীবন তোমাকে নিজের কাছে রেখেও তার ঋণ পরিশোধ করতে পারবো না। আর তুমি এসব কথা কি করে বলো? তুমি মৃত্যু পর্যন্ত আমার সাথে থাকবে।আমার বোনকে আমি নিজের কাছে রেখে দিবো।কোথাও যেতে দিবো না।

তাজিন এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো।আমি ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম।

তাজিনঃ যাকে নিজের থেকে বিশ্বাস করেছি সেই সিংহাসনের লোভে আমার বাবা-মাকে মেরে ফেললো।আর তুমি সামান্য কিছু দিনের পরিচয়ে আমাকে এত আপন করে নিলে।তোমাকে বিশ্বাস করে আমি কোন ভুল করিনি।বরং আমি নিজের বাবা-মায়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে পেরেছি।তুমি না থাকলে হয়তো ঐ শয়তানের ভালো মানুষির পেছনের অমানুষের রূপটা দেখতে পারতাম না।আল্লাহ আমার জন্য সত্যি একজন ভালো বন্ধু ও বোন পাঠিয়েছে। আমার জীবন শেষ হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আমি তোমার পাশে আছি মেঘকন্যা।প্রয়োজন হলে নিজের জীবন দিয়ে দিবে তাও তোমার কিছু হতে দিবো না।

আমি তাজিনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর চোখ মুছে দিলাম।ততক্ষণ কুহুকলি আশেপাশে কিছু একটা খুঁজছে। কিছু সময় পর কুহুকলি আমাদের সামনে এলো।

কুহুকলিঃ পথ পেয়ে গেছি।আমার সাথে চলো।

আমরা দুজন কুহুকলির পেছনে চলতে লাগলাম।একটা পাহাড়ের পাশে এসে দাঁড়ালাম। নিচের দিকে বিশাল বড় একটা পাথর। মনে হচ্ছে কোন গুহা আটকে রাখা হয়েছে।

কুহুকলিঃ মেঘকন্যা, পাথরটা সরাও।

আমিঃ এতবড় পাথর আমি একা সরাবো কি করে 🙄?তুমি কি পাগল হলে কুহুকলি। আমার শরীরে এত শক্তি নেই। আমিতো সামান্য ৫ কেজির আটার বস্তাই সরাতে পারি না।

তাজিনঃ 😒😒

কুহুকলিঃ তুমি কি ভুলে গেলে তুমি মেঘকন্যা?তোমার অনেক শক্তি আছে।

আমিঃ ও হ্যাঁ,আমি আসলেই ভুলে গিয়েছিলাম।

কুহুকলিঃ 😐😐

আমি পাথরের সামনে গিয়ে নিজের শক্তি প্রয়োগ করে সরিয়ে ফেললাম।পাথরটা সরে যেতেই সেখানে পাতালে একটা পথ দেখতে পেলাম।আমরা নিচে নেমে সেই পথ দিয়ে চলতে লাগলাম।যাওয়ার আগে পাথরটা যথাস্থানে রেখে আটকে দিলাম।

🌨️🌨️🌨️

ইশাল চিন্তিত মুখে সিংহাসনে বসে আছে। মেঘকন্যাকে সে কোথাও খুঁজে পায়নি।গতকাল মাঝরাতে ময়ূর রাজ্য গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় ওয়াহাবের বিভৎস লাশ।সাথে জানতে পারে ওয়াহাবের পালক বোন ও মেঘকন্যাকে রাতের বিয়ের আসরের সময় থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।ওয়াহাব তাদের খুঁজতে গিয়েছিল। কিন্তু অনেক রাত হওয়ার পরও প্রাসাদে ফিরে নি।তখন এক প্রজা এসে ওদের রাজ্যের মানুষকে খবর দেয় ওয়াহাবের লাশ পরে আছে পাহাড়ের বাঁকা পথে। আগুনে পুরে যাওয়ায় এতটাই বিভৎস ছিলো যে কেউ ওয়াহাবকে প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে রাজ পোশাকের কিছু অংশ দেখে বুঝতে পারে। ইশাল এখন দুই আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করছে।

কিছু দূরে মেঘরাজ্যের সবাইকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।নির্মম অত্যাচার ও না খেয়ে থাকায় তারা পুরো নেতিয়ে পরেছে।তবুও তাদের মনের মধ্যে একটা জোর আছে। মেঘা এসে ওদের রক্ষা করবে।

আয়িশঃ মনে হচ্ছে অঙ্গরাজ্যের রাজপুত্র খুব বেশি চিন্তিত ওয়াহাবের মৃত্যু নিয়ে। হবারি কথা,কারণ আমার বউ তোর মৃত্যু ছোড়া নিয়ে ওয়াহবকে মেরে খুব শীঘ্রই আমাদের মুক্ত করতে এসেছে। তার মৃত্যুও সামনে ঘনিয়ে এসেছে। (বাঁকা হেসে)

আয়িশের কথায় ইশাল কিছুটা ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। সকাল থেকে তার মনটা আনচান করছে।

ইশালঃ আমি নিজেকে সুরক্ষা করতে পারি। আমার কথা তোদের চিন্তা না করলেও চলবে। তোরা শুধু নিজেদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা কর।তোদের একেকটা কে আমি মেঘকন্যার সামনে হত্যা করবো।তাও খুবই ভয়ানক মৃত্যু। (রেগে)

রাকিনঃ মৃত্যুর ভয়টা আমি তোর চোখে দেখতে পাচ্ছি ইশাল।আমাদের মাঝে নেই। আমরা যদি মারা যাই তাহলে হাসতে হাসতে মরতে রাজী আছি। কিন্তু খুব শীঘ্রই তোর মৃত্যু হতে চলেছে। মেঘকন্যার হাতে তোর মৃত্যু ছোড়া যেহেতু পরে গেছে। সেহেতু তুই ওপরে চলে যাবি।তোর মৃত্যুর সাথে সাথে সারা অঙ্গরাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।কালো মেঘের অস্তিত্ব আমাদের পাশের থেকে চিরজীবনের জন্য বিলীন হয়ে যাবে।সেই কথাগুলো ভেবে আমার যে কি খুশি লাগছে।

রাজাঃ অরেকটু অপেক্ষা করো ইশাল বাবাজী।তোমার মৃত্যুর সকল কিছু তৈরি হয়ে গেছে। তোর পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার শুধু বিস্ফোরণ হতে বাকি আছে।

রাণীঃ আমাদের কন্যা কখন আসবে মহারাজ? আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কতদিন ধরে এই জ্বলন্ত কয়লায় দাঁড়িয়ে আছি। পায়ের নিচের কোন চামড়া অবশিষ্ট নেই।প্রত্যেকদিন রক্ত দিয়ে আগুন নিভছে।নিয়ম করে দুবেলা বিষাক্ত সাপের দংশন সহ্য করতে পারছি না। সারা শরীরে আগুনে ঝলসানো।বিচ্ছুর কামড়,ইয়া বড় বড় মশা।সাধারণ মানুষ হলে হয়তো প্রথম দিনই মারা যেতাম।সারা শরীর নীলচে হয়ে ফোস্কা পরে যাচ্ছে। কন্যা কি আদোও আমাদের খুঁজে পাবে? আমার খুব ভয় করছে।(কাঁদো কাঁদো সুরে)

মন্ত্রীঃ চিন্তা করবেন না মহারাণী।আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন।উনি সব ঠিক করে দিবে।ইনশাল্লাহ, কন্যা আমাদের খুঁজে পেয়ে এই শয়তানের বিনাশ করবে।কন্যাকে যে পারতেই হবে।

আয়িশঃ আম্মিজান, অনেক কষ্ট করেছো। আরেকটু ধৈর্য্য ধরো।নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সব ঠিক করে দিবে।দুঃখের পর সুখ নিহিত আছে। দুঃখের সময় দিশেহারা না হয়ে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হয়।

সবার কথা শুনে ইশালের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। এমনিতেই সে তার প্রাণের আশাঙ্কায় আছে। তার মনটা খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার মধ্যে সবার এমন গা জ্বালানো কথায় মাথায় টগবগ করে রক্ত ফুটছে। সৈন্যদের আদেশ দিলো সবাইকে বিষাক্ত সাপের দংশন দিতে।ইশাল সামনে এগিয়ে এসে আয়িশের টুটি চেপে ধরলো।ঠিক তখনি ইশাল অদৃশ্য শক্তিতে কিছু দূর ছিটকে পরলো।দূরের পাথরের সাথে মাথা লেগে ফেটে গেল।মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো।

🌨️🌨️🌨️

ইশাল উঠে এসে এদিক সেদিক কিছু খুঁজতে লাগলো। গুহার সামনে প্রচুর আলোর ঝলকানি দেখতে পেলো।সাথে সাথে সবাই চোখ বন্ধ করে ফেললো।আলোর ঝলকানি কিছুটা কমতেই সবাই সেদিকে তাকালো।শুভ্র মেঘের আভাগুলো একে অপরের সাথে ঝলকানি দিয়ে একটা মেয়ের অবয়ব তৈরি হচ্ছে। মেঘরাজ্যের সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ইশাল চোখ, মুখ কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে। একসময় একটা হালকা সাদা,আকাশি রঙের বিশাল বড় ড্রেস পড়া একটা মেয়ে দৃশ্যমান হলো।তবে এখনো মুখটা ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না। আলোর ঝলকানি ঠিকরে ঠিকরে বেরুচ্ছে। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের ভরপুর। কিছু সময় পর আলোর ঝলকানি থেমে গেল।মেঘা আলতো করে নিজের চোখ খুললো।মেঘাকে দেখে ইশালের মুখ শুকিয়ে গেছে।

জঙ্গলের ভেতর ঢুকতেই সারা শরীরের হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল। আমার মুখে এক টুকরো হাসি ফুটে এলো।আমি একটা মিষ্টি ঘ্রাণও পাচ্ছি। যা আয়িশের শরীরের। আমি নিশ্চিত ওরা আমার আশেপাশেই আছে। সারা শরীর কিরকম অদ্ভুত অদ্ভুত শিহরণ লাগছে।হঠাৎ করে বাতাসের বেগে আমি ঐ গুহার সামনে পৌঁছালাম।তাজিন ও কুহুকলি পেছনে আসছে।তারপর জানি কি হলো কে জানে? আলতো করে চোখ খুলে সামনে আয়িশকে দেখতে পেলাম।আমি যে কতটা খুশি তা বুঝাতে পারবো না। দিক পাশ না তাকিয়ে দৌড়ে আয়িশকে জড়িয়ে ধরলাম।

আমিঃ তুমি ঠিক আছো?তোমার কিছু হয়নি তো?তোমার চিন্তায় আমি হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম।তোমাকে সুস্থ দেখে আমার যে কি খুশি লাগছে। তোমাকে আমি বলে বুঝাতে পরবো না।আমার প্রতি মুহুর্তে মনে হয়েছিল আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমার আয়িশ আমার চোখের সামনে। আমার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না।

আয়িশ আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আলতো করে আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। আয়িশের চোখেও পানি। আমি ধরতেই আয়িশের বাঁধন খুলে গেলো।ওর পোশাক বদলে গেল।আমি ওর সারা মুখে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিতেই সারা মুখের আঁচড় গুলো মিশে গেলো।আয়িশ এখন সাদা,আকাশির মিশ্রণের নতুন পোশাকে সজ্জিত হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আবারো জড়িয়ে ধরলাম।

আয়িশঃ আমার কি কিছু হতে পারে? আমার বউ আছে তো আমাকে বাঁচানোর জন্য। এখনো তো ক্রিকেট টিম বানালাম না।এখুনি কি পৃথিবী থেকে চলে যাবো নাকি।আমি ১৬ জন বাচ্চার বাপ হওয়ার পর, আমার মনের আশা মিটবে।তখন হাসতে হাসতে আমি মরতে রাজী।

আমিঃ তুমি এই মুহুর্তেও ফানি মুডে আছো।তুমি বদলালে না।আমার পাগলটা।

আমি আয়িশের বুকে হালকা করে কয়েকটা ঘুষি মারলাম।আয়িশের চোখেও পানি।আমরা দুজনের মাঝে এতটা বিভোর ছিলাম যে আশেপাশে নজর দেওয়ার কথা মনে ছিলো না। অন্য দিকে তাকাতেই দেখি সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম।ইশালের দিকে তাকাতেই দেখতে পারলাম বেচারা এতটা শক পেয়েছে যে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে সৈন্যদের বলতে ভুলে গেছে।হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমিঃ কি ইশাল সাহেব?অনেক বড় ঝাটকা পেলেন নাকি?সেটা সামলাতে কতদিন লাগবে?

আমার কথায় ইশালের হুশ ফিরলো।আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে দ্বিগুণ ঝাটকা খেয়ে আরো দূরে ছিটকে পরলো।

আমিঃ আহারে!!!! অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি যে আমার স্বামীর সাথে দাঁড়িয়ে আছি তা কি দেখতে পারছো না।আমাদের এখন যে শক্তি তাতে তুই এক কদমও আমাদের কাছে পৌঁছাতে পারবি না।

ইশালঃ সৈন্যরা তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছিস?মেঘকন্যাকে ধর,আজকে ওকে আমি নিজের রাজ্যে নিয়ে গিয়ে নিজের করেই নিবো।

সৈন্যারা আমাদের কাছে আসতে নিলে বিদ্যুতের শক পেয়ে একেকজন একেক দিকে ছিটকে পরে ভীষণ ব্যাথা পেল।একটা বড় সাদা কালার বাবল আমাদের দুজনকে আটকে রেখেছে। যার কারণে কেউ আমাদের কাছে আসতে পারছে না।

পেছন দিক থেকে তাজিন পা টিপে টিপে গুহার ভেতরে ঢুকলো। সামনে এসে রাকিনের লোহার বাঁধন খোলার ব্যর্থ চেষ্টা করগে লাগলো।রাকিনের হাতে আলতো ছোঁয়া পেয়ে দ্রুত সেদিকে তাকালো।দেখলো এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে তার হাতের বাঁধন ছুটানোর চেষ্টা করছে।মুখটা তার অনেক মায়াবী।হঠাৎ করে রাকিনের হাত-পা ঠান্ডা হতে লাগলো।হৃদপিণ্ডটা জোরে জোরে হাতুড়ি পেটা করছে।মনে হচ্ছে এখুনি বিস্ফোরণ হবে।

তাজিনঃ আসালামু আলাইকুম। আমি তাজিন।ময়ূর রাজ্যের রাজকন্যা।আমার যদি ভুল না হয় তাহলে আপনি মেঘরাজ্যের সেনাপতি রাকিন। মেঘপুত্রের জানের দোস্ত। নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি এত কথা জানলাম কিভাবে?মেঘকন্যা বলেছে।এখন আমার দিকে হা করে না তাকিয়ে থেকে বলুন, আপনার হাতের লোহার শিকল কিভাবে ছুটাবো।

একদমে কথাগুলো বলে থামলো তাজিন।মিষ্টি কণ্ঠ শুনে রাকিনের সারা পৃথিবী থমকে গেছে। সে এক দৃষ্টিতে তাজিনের দিকে তাকিয়ে আছে।অন্য কোন দিকে তার হুশ নেই।

ইশাল আমার দিকে আবারো তেড়ে আসতে লাগলো।আমি সেই ফাঁকে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা বাতাসে সবার পায়ের নিচের কয়লা নিভিয়ে দিলাম।আয়িশ সামনে গিয়ে সবার হাতের বাঁধন খুলে দিলো।কুহুকলি উড়ে এসে তার পাখা থেকে মৃত্যু ছোড়া আমার হাতে তুলে দিলো।আমি ছোড়া হাতে ইশালের দিকে এগুতে লাগলাম।বাকি সবাই সৈন্যদের সাথে লড়াই করছে।

ইশালঃ খবরদার মেঘকন্যা,কাছে আসবে না।যেখানে আছো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকো। নয়তো অনেক খারাপ হয়ে যাবে।তোমরা সবাই মরবে আমার হাতে।কাজটা ঠিক হচ্ছে না। (ভয় পেয়ে)

আমিঃ কি ঠিক হচ্ছে না? তুই নাকি কাউকে ভয় পাস না। তাহলে পিছিয়ে যাচ্ছিস কেন?এত ভয় কিসের তোর?(ভ্রু কুঁচকে)

হঠাৎ ইশাল আমার চোখে মাটি ছুঁড়ে মারলো। আমি চোখ কচলাতে লাগলাম।তখনি ইশাল আমাকে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরলো। আমি সেই ফাঁকে কাঁপা কাঁপা হাতে ওর বুকের বামপাশে রিহিসের ট্যাটুর জায়গায় ছোড়াটা বসিয়ে দিলাম।ওর পোশাক ভেদ করে ছোড়াটা পুরো হৃৎপিণ্ডে ঢুকে গেল।তখনো ইশাল আমাকে এক হাতে মাথার পেছনে ও আরেক হাতে আমার হাত ধরে ছিলো।ভাগ্যিস তখন রিহিস ট্যাটু অবস্থায় ছিলো।নয়তো আরেক ঝামেলা হয়ে যেতো।

ইশালঃ ককককি কককরলে তততুমি?(কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে)

চোখ উল্টে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করছে ইশাল।কিন্তু সুবিধা হলো না। ধীরে ধীরে ওর শরীর কালো হতে লাগলো।সারা শরীর আগুনের ফুলকিতে থেকে থেকে ঝলকানি মারছে।কয়েক সেকেন্ডে ইশাল ছাই হয়ে উড়ে গেলো।সাথে সাথে ওর সৈন্যদের শরীরে আগুন লেগে গেল।কিছু সময়ের মধ্যে তারাও পুড়ে ছাই হয়ে উড়ে গেল।সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কুহুকলি এসে আমার কাঁধে বসলো।অঙ্গরাজ্য বোমা বিস্ফোরণের মতো করে পুরো রাজ্য ধ্বংস হয়ে গেল।আমরা বাইরে বের হয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, কালো মেঘের ভেলাটা আগুন ধরে গিয়ে বিস্ফোরিত হলো।আয়িশ বাবা-মায়ের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিলো।তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করলো।সব বিপদ থেকে আমরা মুক্ত। এখন নতুন করে সব সাজাবো আমরা। খুশিমনে আমাদের গন্তব্যের দিকে আমরা হাঁটতে লাগলাম।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here