মেঘকন্যা☁️ Part_24

মেঘকন্যা☁️
Part_24
#Writer_NOVA

রাতের অন্ধকারে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে একটা ময়ূরের গাড়ি খুব দ্রুত ছুটে যাচ্ছে। বারবার পেছনে তাকাচ্ছি আমি।আমার সাথে তাজিন ও কুহুকলি।কোনরকম জীবন বাজি রেখে ময়ূর রাজ্য থেকে পালাচ্ছি। ওয়াহাবকে শরাবের সাথে নেশার জড়িবুটি খাইয়ে আমি ছোড়া নিয়ে পালিয়েছি।আমাকে সাহায্য করছে তাজিন।হঠাৎ ময়ূর গাড়ি থেমে গেল।আমরা কিছুটা সামনে ঝুঁকে পরলাম।চারিদিকে টিমটিম আলো জ্বলছে।

তাজিনঃ কি হলো হঠাৎ থেমে গেলো কেন?
আমিঃ আমিও তো কিছু বুঝতে পারছি না।
কুহুকলিঃ সর্বনাশ হয়ে গেছে মেঘকন্যা।(ভয় পেয়ে)
আমিঃ কেন কি হয়েছে? (ঢোক গিলে)
তাজিনঃ কি সর্বনাশ কুহুকলি?

আমাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই অনেকগুলো সৈন্য আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেললো।সবার পোশাক সাদা। ময়ূরের পেখমের পোশাক দেখে আমরা খুব অবাক হলাম। ওয়াহাব এখানে এলো কি করে? আমাদের জোর করে গাড়ি থেকে নামালো।গুটি গুটি পায়ে সামনে এগিয়ে দেখলাম একজন উল্টো দিকে ঘুরে আছে।বর্তমানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি পাহাড়ী রাস্তার বাঁকে।

ওয়াহাবঃ কোথায় পালাচ্ছিলে মেঘপরী?

ওয়াহাবের গলার স্বর পেয়ে আমি ভয়ে জমে গেলাম।ওকে তো আমি শরাবের সাথে নেশার জড়িবুটি মিশিয়ে অজ্ঞান করে রেখে এসেছিলাম।তাহলে এখানে আসলো কি করে? ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।
আমি তাজিনের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি।

ওয়াহাবঃ নিশ্চয়ই ভাবছো নেশার জড়িবুটি মেশানোর পরেও আমি সুস্থ-সবল কীভাবে দাঁড়িয়ে আছি? আমার থেকে পালানো এত সহজ নয় মেঘপরী।তুমি আজই আমাকে বিবাহ করবে। নয়তো তোমার অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। তুমি মৃত্যু ছোড়া নিয়ে আমার নাকের ডোগা দিয়ে পালাবে। আর আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো।এটা কি হয়?

আমিঃ আমাকে যেতে দিন।নয়তো আপনার প্রাণনাশের আশংকা আছে ময়ূর রাজ। (রাগী স্বরে)

আমার কথা শুনে ওয়াহাব শয়তানি হাসি দিয়ে ঘাড় কাত করে আমার দিকে তাকালো। আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে তাজিন আমার সামনে এসে আমাকে আটকে দাঁড়ালো। কুহুকলিকে আমি আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি না।তাকে লুকিয়ে যেতে বলেছি।কারণ মৃত্যু ছোড়াটা তার কাছে।

তাজিনঃ ভাইয়া তুমি মেঘকন্যাকে যেতে দেও।আমি থাকতে তোমায় কখনো ওকে বিবাহ করতে দিবো না।এটা অন্যায়।তুমি জেনেশুনে এই অন্যায় কাজ করতে পারো না।তুমি হয়তো ওর রূপে পাগল হয়ে পাগলামি করতে পারো।কিন্তু আমি একটা মেয়ে হয়ে আমার চোখের সামনে কখনো অন্য মেয়ের ক্ষতি হতে দিতে পারি না।তুমি আরেক পা এগুলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার ভাইয়া।

ওয়াহাবঃ নিজের ভালো চাইলে ওর সামনে থেকে সরে যা।নয়তো আমি খারাপ হতে বাধ্য হবো।(রেগে)

তাজিনঃ তুমি আরেক পা এগুলে আমিও ভুলে যাবো তুমি আমার ভাইয়া। আমি ভালোভাবে বলছি মেঘকন্যাকে যেতে দেও।

ওয়াহাবঃ বুঝেছি, তোকেও তোর বাবা-মায়ের সাথে উপরে পাঠাতে হবে।ভেবেছিলাম তুই বেঁচে থাকলে আমার লাভ হবে, তাই তোকে সেদিন তোর বাবা-মায়ের সাথে মারি নি।কিন্তু এখন দেখছি তোকে না মেরে আমি সবচেয়ে বড় ভুল করেছি।তুই এখন আমার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিস।আমার সামনে দিয়ে তুই মেঘপরীকে সাহায্য করে ওর গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছিস।আমার রাস্তায় কাটা হয়ে দাঁড়ালে আমি তা উপরে ফেলি।তাহলে তোকে কি করে বাঁচিয়ে রাখি বল।(রেগে +চিৎকার করে)

তাজিনঃ মামামানে!!! তুমি আমার বাবা-মা কে মেরে ফেলোছো!!!এতটা শয়তান তুমি কি করে হলে ভাইয়া?উনারা তোমারও বাবা-মা ছিলো। ছিঃ কতটা নিচ তুমি। ধিক্কার জানাই এমন সন্তানকে।যে নিজের বাবা-মাকে মারতেও পিছপা হয় না।

ওয়াহাবঃ আমার দ্বারা সব সম্ভব। তাছাড়া তোর বাবা-মা তো আমার বাবা-মা ছিলো না।আমাকে ছোট বেলায় কুড়িয়ে পেয়েছিলো তারা।কিন্তু আমার হাতে রাজ্য তুলে দিতে চায়নি।তাইতো তাদেরকে অত্যাচার করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আমি সিংহাসন জয় করে নিয়েছি।সেদিন যদি তোকে শেষ করে দিতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।

তাজিনঃ পরগাছা সবসময় পরগাছাই হয়।তাদের আপন করতে নেই। আমি বাবা-মা তোর মতো শয়তানকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে অনেক বড় ভুল করেছে।তাইতো তারা এমন মাশুল দিয়েছে। আমি তোকে নিজের আপন ভাই হিসেবে জানতাম।কিন্তু তোর এই ভালো মানুষির মধ্যে যে এতবড় একটা শয়তান চরিত্র লুকিয়ে আছে তা কখনো ধরতে পারিনি।তাই তো মেঘকন্যাকে আমাকে এসব কথা বলায় আমি বিশ্বাস করিনি।কিন্তু এখন সে আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে তোর আসল রূপ দেখিয়ে দিয়েছে। তোর ওপর আমার থু থু ফেলতেও ঘৃণা করছে।অমানুষ কোথাকার?

ওয়াহাব রেগে তেড়ে এসে তাজিনের গলা চেপে ধরলো। আমাকে সৈন্যরা আটকে রেখেছে। আমি সুযোগ বুঝে তাদের সাথে নিজের শক্তি দিয়ে লড়াই করছি।সৈন্যরা আমার সাথে পেরে উঠছে না।তাই ওয়াহাব তাজিনকে ছেড়ে আমার দিকে লড়াই করতে এগিয়ে এলো।আমরা দুজন এখন বেশ শক্তি নিয়ে একে অপরের আঘাত প্রতিহত করছি।কারো থেকে কেউ কম নয়।এখন পুরো বিষয়টা বুঝতে আমাদের অতীত থেকে ঘুরে আসতে হবে।

🌨️🌨️🌨️

অতীত…….

বিশাল বড় এক সাদা ড্রেসে আমাকে সাজানো হয়েছে।অসম্ভব সুন্দর ড্রেসটা।নিচের দিকে কোণাচে করে সাদা পাথরের কাজ করা। পুরো মুখ ঢাকা এক পাতলা ওড়না দিয়ে। বুঝতে পারছি না ঢং করে এরকম পাতলা ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকার মানে কি?সব তো দেখাই যাচ্ছে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।সবার নজর এখন আমার দিকে।ওয়াহাব লুচু ব্যাটা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। হাতে থাকা নেশার জড়িবুটি পাউডারের কৌটা-টা লুকিয়ে ফেললাম।চারিদিকে শুধু সাদা আর সাদা। চোখ ধাঁধিয়ে আসছে।তাজিন কোণার দিকে মন খারাপ করে বসে আছে।

ওয়াহাবঃ স্বাগতম, আমার রাণী।উপস্থিত প্রজা ও রাজ্যের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আপনাদের হবু ময়ূর রাণী চলে এসেছে। কিছু সময় পর বিবাহ অনুষ্ঠান শুরু হবে।আপনারা আনন্দে মেতে উঠুন ।

ওয়াহাবের পরনে আজ সাদা ময়ূরের পেখমের পাঞ্জাবী।আশেপাশের সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি হাত মুচড়া-মুচড়ি করছি।কারণ কোন সুযোগ খুঁজে পাচ্ছি না। এখন শক্তি দিয়ে লড়াই করা সম্ভব নয়। কারণ এতে আমাকে বন্দী করে ফেলবে।তাহলে আরেক ভেজাল।আমাকে নিয়ে সিংহাসনে বসানো হলো।আমি তাজিনের দিকে তাকালাম।তাজিন চোখের ইশারায় বুঝালো সব ঠিক আছে। ওয়াহাব আমার পাশের সিংহাসনে বসতেই ওর মুখটা কালো হয়ে গেল।আর আমি মিটমিট করে হাসতে লাগলাম।

ওয়াহাবঃ সিংহাসনে পানি কে ফেলেছে?(রেগে)

আমিঃ কারো সাহস আছে আপনার সিংহাসনে পানি ফেলার।এত জরুরি যখন আপনার ওয়াস রুমে যেতে হবে আমাদের বললেই পারতেন।কাপড় নষ্ট করার কি দরকার ছিলো ময়ূর রাজ? (মুখ টিপে হেসে)

আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ওয়াহাব সবাইকে এক রাম ধমক দিয়ে গটগট করে নিজের কামরায় চলে গেল। ওয়াহাব কে চলে যেতে দেখে সবাই একে অপের সাথে কথা বলতে মশগুল হয়ে গেলো। আমি সেই ফাঁকে তাজিনের কাছে চলে গেলাম।ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম।

আমিঃ শুকরিয়া তাজিন।তুমি যদি সিংহাসনে পানি না ফেলতে তাহলে আমি এই সুযোগটা পেতাম না।

তাজিনঃ তুমি কথা না বলে কোষাগারের দিকে ছোটো।তোমাকে দেরী করলে চলবে না।মৃত্যু ছোড়া নিয়ে তোমাকে পালাতে হবে।

আমিঃ তুমি ঠিক বলেছো।তুমি এদিকে খেয়াল রাখো।

আমি ড্রেস উঁচু করে কোষাগারের দিকে ছুটলাম।সামনে এসে প্রহরীদের মুখে হাতে থাকা জড়িবুটি পাউডার মুখে ছুঁড়ে মারলাম।তারা কিছু সময়ের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পরে গেল।আমি স্টেপ বাই স্টেপ একেক দরজা খুলে ছোড়ার কাছে পৌঁছে গেলাম।আমি ছোড়াটা হাতে নিতেই চারিদিকে সোনালি আলো ছড়িয়ে পরলো।আমার সারা শরীর একটা কাঁপুনি দিয়ে উঠলো।ছোড়া লুকিয়ে বের হতেই দেখি কুহুকলি আমার দিকে উড়ে আসলো।

কুহুকলিঃ কাজ হয়েছে মেঘকন্যা?

আমিঃ হ্যাঁ,এই নাও ছোড়া।তুমি এটা নিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব রাজপ্রাসাদ থেকে বের হয়ে যাও।আমি কিছু সময়ের মধ্যে আসছি।

কুহুকলির পাখা বাড়িয়ে ছোড়াটা নিয়ে নিজের শক্তি দিয়ে সেটা অদৃশ্য করে ফেললো।আমি ড্রেস উঁচিয়ে আবার সিংহাসনের দিকে দৌড় দিলাম।রাজদরবারে গিয়ে দেখি এখনো ওয়াহাব আসে নি।তাজিন শরাবের পাত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তাজিনঃ কাজ শেষ মেঘকন্যা?

আমিঃ সব শেষ। এখন তুমি সবার চোখের আড়ালে এখান থেকে বের হয়ে যাও।দেরী করলে চলবে না।

তাজিনঃ আমি আমার ময়ূর গাড়ি নিয়ে তোমার জন্য রাজফটকোর বাইরে অপেক্ষা করবো।তুমি জলদী চলে এসে।আর হ্যাঁ,সব ময়ূর এখন উত্তরের কক্ষে আছে। ওদের খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে। তুমি তাদেরকে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে যেয়ো।নয়তো ভাইয়ার কিছুই হবে না।

আমিঃ সবকিছু করেই আমি রাজ্য ত্যাগ করবো। শয়তান ওয়াহাবের বিনাশ আজ হবে।

তাজিনঃ তুমি বিকেলে আমাকে সব বলেছে।কিন্তু তারপরেও আমার কেন জানি বিশ্বাস হয় না।আমার ভাইয়া আমার বাবা-মা কে মারতে পারে না।কিন্তু আমি জানি তুমি মিথ্যে বলছো না। তারপরেও মনটা সায় দিচ্ছে না। কিন্তু নিজের প্রাণ থাকা অব্দি আমি তোমাকে সাহায্য করবো।

আমিঃ তুমি আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারো।যদি সময় পাই তাহলে তোমার ভাইয়ের ভালো মানুষের আড়ালের কুৎসিত রূপটাও তোমাকে দেখিয়ে দিবো।

আমি চটজলদি শরাবের পাত্রে হাতে থাকা সবটুকু জড়িবুটি পাউডার মিশিয়ে দিলাম।তারপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সিংহাসনে বসে পরলাম।কিছু সময় পর ওয়াহাব চলে এলো।তাজিন হাতের শরাবের পাত্রটা একটা দাসীর হাতে দিয়ে সেখান থেকে আস্তে করে কেটে পরলো।ওয়াহাব আমার পাশে বসতেই আমি খুশি মনে তার হাতে শরাবের গ্লাস তুলে দিলাম।সে আমার দিকে এতটায় বুদ হয়ে তাকিয়ে ছিলো যে কিছু না বলে পরপর কয়েক গ্লাস শরাব পান করলো।কিছু সময়ের মধ্যে সে ঢলে পরলো।রাজদরবারের সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমি ফাঁক বুঝে সেখান থেকে দৌড়ে পালালাম। আসার সময় উত্তরের কক্ষে নিজের শক্তি দিয়ে ঘেরা দিয়ে ময়ূরের ওপর আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আসলাম।

রাজ ফটকের সামনে এসে দেখি তাজিন ও কুহুকলি ময়ূর গাড়ি নিয়ে বসে আছে। তখনি কয়েকজন সৈন্য আমাকে পালাতে দেখে ফেললো।তারাও আমার পিছু নিলো।সারা রাজদরবারে বাতাসের মতো ছড়িয়ে গেলো তাদের রাণী পালিয়েছে।

তাজিনঃ জলদী মেঘকন্যা।এখানে এক মুহুর্তও নয়।

আমিঃ আমাকে কিছু সৈন্য দেখে ফেলেছে। সচারাচর ব্যবহৃত পথ দিয়ে যাওয়া যাবে না।তুমি আমাকে অন্য কোন পথ দিয়ে নিয়ে চলো।

তাজিনঃ একটা পথ আছে।সেটা পাহাড়ের ভেতর দিয়ে। তবে অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।

আমিঃ হোক,তারপরেও আমাদের সেখান দিয়ে যেতে হবে।

আমি ময়ূরের গাড়িতে চড়ে বসতেই বাতাসের বেগে সেটা চলতে আরম্ভ করলো।আমি পেছনের দিকে মাথা হেলিয়ে দিলাম।আজ যদি তাজিন না থাকতো তাহলে আমার বড় বিপদ হয়ে যেতো। আজকের ঘটনাটা অনেকটা আয়িশের সাথে বিয়ের ঘটনার মতো হয়ে গেলো।তাই ভেবে একটা মুচকি হাসি দিলাম।

🌨️🌨️🌨️

বর্তমান…….

ওয়াহাব ও আমি দুজনেই অদৃশ্য শক্তি দিয়ে একে অপরের সাথে মোকাবিলা করছি।ওর ওপর নেশার জড়িবুটি বেশিক্ষণ কাজ করেনি।কিছু সময় পর জ্ঞান ফিরে এসেছে।আমাদের পুরো পরিকল্পনাটা ছিলো কুহুকলির।কুহুকলি বিকালে আমাকে এই বুদ্ধিগুলোই দিয়েছিলো।সব ওর কথামতোই হয়েছে। জঙ্গলের থেকে নানা পাতা,গাছের বাকল খুঁজে এনে আমাকে নেশার জড়িবুটি পাউডার বানাতে সাহায্য করেছে কুহুকলি।কিন্তু এতো কষ্ট করেও লাভ হলো না। সেই ধরা পরেই গেলাম।

ওয়াহাব যখনি শুনেছে আমি পালিয়েছি তখনি সৈন্য নিয়ে আমাদের আগে অন্য পথ দিয়ে আমাদের আগে পাহাড়ের বাকে চলে এসেছে।দুজনের মধ্যে বেশ জমজমাট লড়াই চলছে। তাজিন এগিয়ে এসে ওয়াহাবকে পেছন থেকে আটকে দিলো।ওয়াহাব ওকে ঝাড়া মেরে ফেলে দিলো। তাজিন একটা পাথরের সাথে বারি খেয়ে সেখানেই পরে রইলো।হাত দিয়ে মাথা ধরে রেখেছে।

আমিঃ তাজিন কি হয়েছে তোমার?

তাজিনঃ তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না।এই শয়তানকে ধ্বংস করে দেও।ওকে ছাড়বে না। ও আমার বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। তুমি ওকে নৃশংস মৃত্যু উপহার দিবে।(চেখ,মুখ কঠিন করে)

ওয়াহাবঃ মাথায় আঘাত পেয়েও মনের বারুদ নিভেনি।ভালো চাস তো আমার পথ থেকে সরে দাঁড়া। একবার শুধু মেঘপরীকে কাবু করতে দে।তারপর তোর ব্যবস্থা করবো।অন্ধ কুঠুরিতে সারাজীবনের জন্য ধাক্কা মেরে ফেলে দিব।

তাজিনঃ আমার সর্বনাশের কথা না চিন্তা করে নিজের কথা ভাব তুই। তোর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে। থেমে রয়েছে কেন মেঘকন্যা?ওকে শেষ করে দেও। ওর মতো মানুষের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

আমিঃ আমিতো ঠিক সময়ে ময়ূরের ওপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে এসেছি। ওয়াহাবের শক্তি যদি ময়ূরে থাকে তাহলে এতক্ষণে ওর মৃত্যুর কোলে ঢলে পরার কথা।কিন্তু এখনো বেঁচে আছে কি করে? (মনে মনে)

ওয়াহাবঃ ভেবেছিলাম তোকে জানে মারবে না।কিন্তু তুই একটু বেশি ফালাচ্ছিস।তাই তোকে এখন মারতেই হচ্ছে।(সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে) সৈন্যরা তোমরা গিয়ে তাজিনকে ধরে এই পাহাড় থেকে ফেলে দেও।ওকে বাঁচিয়ে রেখে আমার কোন লাভ নেই। ওর মরার সময় হয়েছে।তাই আমার মুখে মুখে তর্ক করছে।(রেগে হুংকার দিয়ে)

আমি এগিয়ে এসে সৈন্যদের বাঁধা দিতে গেলে ওয়াহাব তার শক্তি দিয়ে আমাকে দূরে ছিটকে ফেলে দিলো।হাত-পায়ে বেশ খানিকটা চোট পেলাম।ততক্ষণে তাজিনকে জোর করে সৈন্যরা পাহাড়ের কিনারায় নিয়ে গেছে। আমি দৌড়ে সেদিকে যেতে চাইলে ওয়াহাব আমার পথ আটকে দাঁড়ায়।

ওয়াহাবঃ খুব ভালোভাবে দুজনকে বললাম আমার সাথে রাজ্যে ফিরে চলো।কিন্তু কারোর ভালো লাগলো না। তাই একজনকে মেরে আরেক জনকে আধমরা করে আমি চললাম।খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে মেঘপরী।আমার সাথে চলো।ভালোবেসে সব কষ্ট পুষিয়ে দিবো।

আমিঃ মরে যাবো তাও তোর মতো জঘন্য মানুষের হাতে নিজেকে তুলে দিবো না।ভালো চাইলে তাজিনকে ছেড়ে দিতে বল।নয়তো তোকে আমি কি করবো নিজেও জানি না।

ওয়াহাবঃ ওরে বাবা,অনেক ভয় পেয়েছি। এত চোখ উল্টিয়ো না মেঘপরী।বুকের বাপাশটা খুব করে লাগে।তোমার এই কড়া কড়া কথাগুলো আমার কাছে মিষ্টির মতো মধূর মনে হয়। (বাঁকা হেসে)

ওয়াহাব সামনে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে নিজের শক্তি দিয়ে ওর উপর সাদা ধোঁয়ার কুন্ডলি ছুঁড়ে মারি।সাথে সাথে ওয়াহাবের গায়ে আগুন ধরে যায়।ওয়াহাব চিৎকার করা শুরু করে। ওয়াহাবের চিৎকার শুনে সৈন্যরা তাজিনকে পাহাড় থেকে ফেলে ওর দিকে এগিয়ে যায়।সৈন্যরা সামনে যেতেই ওদের শরীরেরও আগুন ধরে যায়।সবাই এখন নিজেকে বাচাতে ব্যস্ত।আমি দৌড়ে পাহাড়ের কিনারায় ছুটে যাই।কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে।

আমিঃ তাজিন!!!!!(চিৎকার করে)

তাজিন নিচের দিকে পরে যাচ্ছে। তবে ওয়াহাবের গায়ের আগুন ধরানোর দৃশ্যটি ও দেখতে পেয়েছে।যাতে করে ওর ঠোঁটের কিনারায় আমি তৃপ্তির হাসি দেখতে পেয়েছি।নিজের বাবা-মায়ের খুনীর সর্বনাশের খুশিতে ছিলো সেই হাসি।কয়েক মিনিটে পুরে ছারখার হয়ে যায় ওয়াহাব ও তার সৈন্যরা।ইতিমধ্যে মৃত্যুর স্বাদ তারা গ্রহণ করে ফেলেছে।তাজিনকে বাঁচাতে দিকপাশ না ভেবে আমিও লাফ দিলাম পাহাড় থেকে।বিশাল উঁচু পাহাড়। জানিনা আদোও আমরা দুজন বাঁচবো কিনা।কুহুকলি কোথায় আছে কে জানে?থাকলে হয়তো ওকে আমি শেষ দেখাটা দেখতে পারতাম।আমার আয়িশ কি আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে?কে জানে কি করবে ছেলেটা?নিশ্চয়ই পাগলামী করবে আমার মৃত্যুর খবর পেয়ে। মেঘরাজ্য ও তার প্রজাদের কি হবে?আর কিছু ভাবতে পারছি না। নিজের শরীরটা পুরো হালকা লাগছে।পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম।
জানি না আর খুলতে পারবো কিনা???

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here