তোমার ছায়া পর্ব-১৫

0
919

#তোমার_ছায়া (পর্ব ১৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারদিন আজ আয়রিনের সামনে এমন স্বাভাবিক আচরণ করছে, দেখে মনে হচ্ছে তার মনে কষ্টের পরিমান টা বালি কণার চেয়েও ক্ষুদ্র।
ওদের দুজনের কথার মাঝে ফারহা বললো,
– ভাইয়া তুমি না ইন্টারভিউ দিয়ে আসলে? নিশ্চই শরির ক্লান্ত তাই না? বাসায় গিয়ে রেষ্ট নাও। আমি কোচিং শেষেই চলে আসবো।
ফারদিন আর কিছু না বলে চুপচাপ ‘হ্যা’ সুচক সম্মতি জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

আয়রিন ফারহা সাথি সবাই রওনা দিবো আবরার স্যারের কোচিং সেন্টারে। আইসিটি ক্লাস নেয় আবরার। দুটি ব্যাচ, একটা ফাস্ট ইয়ার, আরেকটা সেকেন্ড ইয়ার।
দুইটা থেকে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়, আর তিনটা থেকে ফাস্ট ইয়ারের।
তারা দ্রুত কোচিং সেন্টারে গিয়ে তাদের তিন জনের একটা নির্দিষ্ট টেবিল আছে ওখানে বসে পরলো। ক্লাস শুরু হতে আর ৫ মিনিট বাকি।
আজ পাঁচ দিন পর কোচিং-এ এসে সবচেয়ে অবাক হয় ক্লাসে ফাস্ট ইয়ারের ছেলে দেখে। তাও আবার সেই জুনিয়র আবরার। হয়তো নতুন ভর্তি হয়েছে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচ এ।

বেঞ্চে বসে সেই জুনিয়র আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহা। এই ছেলের মতলব টা কি? এখানে তো ফাষ্ট ইয়ারের ছেলে থাকার কথা না। কারণ, প্রতি ইয়ারের সিলেবাস অনুযায়ি ক্লাস হয়।
ফারহাকে দেখেই ছেলেটা আঙুলের ইশারায় ‘হায়’ জানায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় ফারহা। এই ছেলে কি এবার এখানেও মান ইজ্জত খাবে নাকি? এখানে তো অন্য কলেজের স্টুডেন্টও আছে।
ছেলেটা হাতের ইশারায় বুঝালো আমি আসছি, ওয়েট।
আর এক মুহুর্ত দেড়ি না করে ফারহার কাছে এসে পাশের একটা বেঞ্চিতে বসে পরে সে। ফারহা একটু ভ্রু কুচকে বলে,
– এই ছেলে, তুমি সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচে কি করছো?
ছেলেটা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– সে অনেক কাহিনি। স্যারকে কতো রিকুয়েষ্ট করে বুঝালাম, যে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস করলে সামনের পড়া গুলোর সম্পর্কেও ভালো আইডিয়া থাকবে। প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। পরে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি। আমার পড়ার আগ্রহ দেখে পরে স্যারও আর না করেনি।
ফারহা একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললে,
– পড়ার প্রতি এতো আগ্রহ বেড়ে গেলো কবে থেকে।
ছেলেটা সোজাসুজি ভাবে বললো,
– তোমাকে দেখার পর থেকে। তোমাকে কাছ থেকে দেখার জন্য বাড়তি ক্লাস কেন? সারাদিন ক্লাসে বসে থাকলেও একটু বিরক্ত হবো না।
ফারহা একটু রেগে গিয়ে বললো,
– দাড়াও আমি স্যারকে বলে দিবো তোমার আসল উদ্দেশ্য কি?
ছেলেটা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আমিও সবাইকে বলে দিবো। তোমার সিক্রেট বিষয় টা।
ফারহা এবার একটু থৎমৎ খেয়ে বলে।
– সি,, সিক্রেট বিষয় মানে?
– হিহিহি আমি সব জানি।

কথার মাঝেই আবরার স্যার ক্লাসে চলে আসলো। ফারহাকে আর জুনিয়র আবরারকে একসাথে দেখে বললো,
– যে যার যার টেবিলে গিয়ে বসো।
মুহুর্তেই পুরো ক্লাসের স্টুডেন্ট সব নিরব হয়ে গেলো। এদিকে ফারহার মাথায় ঢুকলো ভিন্ন চিন্তা৷ জুনিয়র ছেলেটা বিষয় টা জানলো কিভাবে?

ক্লাস শুরু হলেই আবরার স্যার ফারহাকে দাড় করালো। কারণ তার ক্লাসে দুই দিনের বেশি কেউই অনুপস্থিত থাকা তার রুল্সের বাইরে। সেই জায়গায় ফারহা পাঁচ দিন। তাই শাস্তি স্বরুপ ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকা।
শাস্তি স্বরুপ চুপচাপ দরজার বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো ফারহা। আবরার ক্লাস নিতে শুরু করলো।
তখনই ক্লাসের মাঝখানে জুনিয়র আবরার দাড়িয়ে গেলো হাতের ছোট কনে আঙুল টা দেখিয়ে। যার অর্থ সে পশ্রাব করতে চায়।
স্যারের অনুমতি পেয়েই বাইরে চলে গেলো। ফিরে এসে ক্লাসে না ঢুকে ফারহার পাশে দাড়ালো। ফারহার পাশে দাড়িয়ে বললো,
– ডেরি মিল্ক পছন্দ করো?
ভেতর থেকে আবরার স্যারের কন্ঠ শোনা গেলো।
– তুমি ভেতরে না এসে বাইরে কি করছো?
একটু গরম লাগছে এমন ভাব নিয়ে ছেলেটা বললো,
– স্যার হুট করে মনে হলো দমটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একটু বাইরে স্বস্থির নিশ্বাস নিচ্ছি।
তারপর ছেলেটা আবার ফারহার দিকে চেয়ে বললো,
– দেখো তুমি চকলেট না নিলে আমি সবাইকে বলে দিবো।
বাধ্য হয়ে ফারহা চকলেট নিয়ে বললো,
– হুম খুব পছন্দের এটা।
ছেলেটা একটু গাল টেনে হেসে বললো,
– আমারও এটা খুব পছন্দের। দোখছো, আমাদের মনেরও কতো মিল।

ওদের এমন কান্ড দেখে ক্লাস করানোয় মন বাদ দিয়ে ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা শুরু হলো আবরারের। একটা বিরক্তিকর নিশ্বাস নিয়ে ফারহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ফারহা যাও, নিজের সিটে গিয়ে বসো।
ফারহা খুশি মনে চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে গেলো। পেছন থেকে জুনিয়ার আবরার বললো,
– স্যার, আমিও আসবো?
– না, তোমার আসার দরকার নেই। তুমি বাইরের প্রাকৃতিক হাওয়া খাও।
,
,
রাতের বেলায় খেতে বসলো সবাই। সেই দুপুরে বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকলো ফারদিন। তাই বাসায় কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি কেউ।
খাওয়ার সময় বাবা ইন্টারভিউ’র ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে ফারদিন বলে,
– আমি মানা করে দিয়েছি, ওদের জব করবো না আমি।
পাশ তেকে মা বললো,
– মানে কি? তোর বাবা তো আগেই তোর কথা বলে দিয়েছে। ওরা বললো, ইন্টারভিউ তে টিকলেই চাকরি কনফার্ম।
ফারদিন খেতে খেতে বলে,
– হুম বলেছিলো। আর আমি টিকেছিও। স্যালারিও বলেছে ৬০ হাজার দিবে।
– তাহলে না করলি কেন?
– কারণ ওরা ১০ লাখ ঘুষ চায়। ভেবে দেখো ১০ লাখ ঘুষ দিয়ে চাকরিটা নিলে, এক হিসেবে প্রায় দেড় বছর আমাকে বিনা বেতনেই খাটতে হবে ওখানে।
বাবা খেতে খেতে বললো,
– তোকে কি টাকার কথা ভাবতে বলেছি?
– তবুও বাবা, আমি কেন ঘুষ দিয়ে চাকরি নিবো? আমি ভাইবায় ও ভালো করেছি। আমাকে তারা জোগ্য মনে করে সিলেক্ট করেছে। তবুও কেন ঘুষ দিতে হবে আমায় বাবা? হোয়াই? এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করলাম কি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার জন্য?
বাবা আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো। মা প্লেটে তরকারি দিতে দিতে বললো,
– একটা চাকরি ছারা তোর কাছে কোন বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবে? সারা জীব দেবদাসের মতোই কাটা।
ফারদিন কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে শান্ত ভাবে বললো,
– দেবদাসের মতোই মনে হয় মা নিজেকে। বিয়ে করার ইচ্ছে টা তো অনেক আগেই ম’রে গেছে।
বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো ফারদিন। বাবা মা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
,
,
ঘুমানোর আগ মুহুর্তে ফোন টা বেজে উঠে আয়রিনের। ফোন টা রিসিভ করে খাটের উপর বসলো সে। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেষে উঠে,
– আয়রিন বলছেন?
– জ্বি বলছি, আপনার পরিচয়?
– আমার পরিচয় জেনে আপনার লাভ নেই। আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?
– মানে?
– এখন কিছুই বুঝছেন না তাই না? মাহিন আপনাকে বলেনি আমার কথা?
আয়রিনের মাথা যেন মুহুর্তেই ভন ভন করতে লাগলো। কি সব বলছে এই মেয়ে।
হতবম্ভ হয়ে মেয়েটাকে বলে,
– আপনি তার কি হোন বললেন?
– গার্লফ্রেন্ড। আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে আপনাকে করে ফেললো। ছারছেন না কেন আমার বয়ফ্রেন্ডকে?
আর কিছু না বলেই ফোন কে’টে দিলো আয়রিন। দুই হাতে চুল গুলো পেছনের দিকে চেপে ধরে বসে আছে। সারা শরির জুড়ে অস্থিরতার ভাব ফুটে উঠেছে। কান জুড়ে একটা শব্দই ভাসছে। ‘আমার বয়ফ্রেন্ড কে ছাড়ছেন না কেন?’

To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here