তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি পার্ট:১৯+২০

তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:১৯+২০
#পিচ্চি_লেখিকা

আরিয়া সিড়ি থেকেই আইরাকে কিছু ইশারা করে দেখায়। আইরাও সেদিকে তাকায়!আরুশ বাকি সবার সাথে বসে হাসতে হাসতে ডিনার করছে। আইরা তো এমন কিছু দেখেই হা হয়ে গেছে আর আরিয়া বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে বলে,,

“” হায় মে মারগায়া। এই গুন্ডাটার হাসি এত কিউট কেন আল্লাহ। আহা সেই মাস্ত বডি, সেই সিল্কি চুল,সেই হাসি, আহা আহা। আচ্ছা আইরা তোর জিজু একটু বেশিই সুন্দর হয়ে গেছে না আগে থেকে?

আইরা প্রথমত আরুশ কে দেখে হা হয়ে গেছে তার উপর নিজের বড় বোনের মুখে এমন কথা শুনে বেচারি টাস্কি খাওয়ার মতো অবস্থা। আইরা কে চুপ থাকতে দেখে আরিয়া আইরার দিকে তাকিয়ে দেখে বেচারি হা করে তাকিয়ে আছে। আরিয়ার হালকা ধাক্কায় আইরার হুস আসে,,

“” আপু এটা আরুশ ভাইয়া?

“” হুম।

“” এতদিন তবে আমরা ভুল জানতাম?

“” হুমম,,ভুল জানতাম।

আইরা হঠাৎ ই নেচে উঠে,,অনেলটা জোড়েই বলে উঠে,,

“” ইয়াহু আরুশ ভাইয়া বেচে আছে।

আরিয়া আইরা নাচ দেখে অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি ওর মুখ চেপে ধরে,,

“”” থাম থাম কি করছিস সবাই কি ভাব,,

আরিয়া পুরো কথা শেষ না করে সামনে তাকাতেই দেখে সবাই হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়া তাড়াতাড়ি আইরা কে ছেড়ে আবুল মার্কা হাসি দিয়ে বলে,,

“” ইয়ে মানে ও এরকমই তাই আরকি,,

সাহেদ হোসেন দুজনকেই নিচে আসার জন্য ডাকলো। আরিয়া ঠিক গিয়ে আয়ুশের সামনের টেবিলটাই বসেছে। একটু খাবার খেয়ে ভাবলো এভাবে চুপচাপ না থেকে কিছু করা দরকার তাই আস্তে আস্তে আয়ুশের পায়ের কাছে নিজের পা নিয়ে যায় আর জোড়ে পা দিয়ে মেরে দেয়। আয়ুশ বেচারা প্রথমে চিল্লানি দিতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। প্রথম টা মার হজম করছে। আর আরিয়া মিটমিট করে হেসে দেয়। আয়ুশ আর না খেয়ে উঠে পড়ে এই মেয়ে ওর জান বের করে ছাড়বে তা আয়ুশ ভালো ভাবেই বুঝছে। আয়ুশ নিজের রুমে চলে যায় আর আরিয়া একটু খেয়ে সেও চলে যায়। নিজের রুমে যেতে গিয়ে একবার ভাবলো আরুশের কাছে যাবে যেই ভাবা সেই কাজ। আরিয়া দরজার কাছে যেতেই দেখে দরজা খোলা। আরিয়া আর কিছু না ভেবেই রুমের মধ্যে ঢুকে যায়। আয়ুশ বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছে। আরিয়া রুমে ঢুকেই পুরো রুমটা আরেকবার পর্যবেক্ষণ করে নিলো। পুরো রুমের সব কিছুই প্রায় অফ হোয়াইট দিয়ে সাজানো। রুমের পর্দা বেডসীট এমনকি রুমের দেয়াল ও হোয়াইট😱।

আরিয়া পুরো রুম দেখে আরুশ কে খুজতে লাগলো।আরিয়া নিজেই নিজেকে বললো,,

“” আরুশকে এখন খুজে লাভ নেই।উনি তো আবার নিজেকে আরুশ না আয়ুশ বলে ঢং,,হুহ।

আরিয়া নিজেই নিজের মনে বকবক করতে করতে খেয়াল করে আয়ুশ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আরিয়াও আর দেরী না করে হাটা দিলো আয়ুশের দিকে। আয়ুশকে সিগারেট ফুকতে দেখে ভ্রুকুচকে নিলো। আয়ুশের পাশে দাড়াতে দাড়াতে বললো,,

“” ওয়াও আপনি স্মোক করছেন? আমাকে একটা দিন।

আরিয়ার কথা এমন মাতাল মার্কা কথায় আয়ুশ ভ্রু যুগল কিঞ্চিত কুচকে বলে,,

“” স্মোক করবেন আপনি?

“” হুম দেন।

আরিয়া এটুকু বলেই আয়ুশের কাছ থেকে সিগারেট টা নিয়ে মুখে পুড়ে ফেললো। আর ধোয়া গিয়ে নাকে মুখে পড়াতেই কাশি উঠে গেলো। আয়ুশ কিছু না বলে হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে আগের মতো ফুকতে লাগলো। আরিয়া কোনো রকম নিজেকে সামলে নিলো।

“” যেইটা পারেন না সেইটা করতে কেন যান?

আরিয়ার কাশি উঠে গেছিলো তখন একটু কিছু না করে এখন আবার কড়া গলায় কথা বলছে এতে যেন আরিয়া দ্বিগুন রেগে গেলো,,কিন্তু শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,,

“”যেইটা পারবো না সেইটা করাই আমার কাজ। এই যে দেখেন না আপনাকে মারতে গেলাম পারলাম তো না ই উলটো নিজেই মরে বসে আছি।

আরিয়ার এমন আগা মাথা ছাড়া কথার কিছুই গেলো না আয়ুশের মাথায়। হয়তো গেছে কিন্তু সে তার নিজের মতো ধোয়া উড়াতে ব্যাস্ত।

“”” আপনার এসব আগা মাথা ছাড়া কথা রেখে বলেন আমার রুমে কি করছেন? তাও আবার নক না করে রুমে ঢুকছেন!

“” আমার জামাইয়ের রুমে আমি আসবো নাকি ঘুমাবো সেইটা আমার ব্যাপার হুহ।

ভেংচি কেটে আরিয়া বারান্দা থেকে রুমে চলে আসে। আয়ুশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে আরিয়া কি বলতে চাইলো। তাই সেও পিছন পিছন রুমে এসে পড়লো। আরিয়া আরাম করে বেডের উপর পা তুলে বসে পড়লো,,

“” এই আপনি বসছেন কেন? উঠুন।

“” উঠার জন্য নিশ্চয় বসিনি। আপনিও বসুন আমার পাশে। দেখেন বাইরে পূর্ণিমা হচ্ছে।

আরিয়ার কথায় সাথে সাথে আয়ুশ ভ্রু যুগল কুচকে ফেলে। এই মেয়ের মাথায় নিশ্চিত কোনো সমস্যা বছে,,

“” আপনার মাথার ২ বা ৪ টাা তার ছিড়া আছে। বাইরের ওটুকু চিকন সরু চাঁদ দেখে আপনার মনে হচ্ছে পূর্নিমা।লাইক সিরিয়াসলি!

“”ওহ এইটুকু সরু চাঁদে পূর্নিমা হয় না বুঝি। আচ্ছা যে টুকু চাদ আছে তা দিয়েই হবে।

“” আপনি অতিরিক্ত কথা বলেন। আমার রুম থেকে যান। এত রাতে একটা ছেলের রুমে কেউ এভাবে একটা মেয়েকে দেখলে খারাপ ভাববে।

“” ভাবলে ভাবুক। অবশ্য ভালোই হবে আপনাকে আর আমাকে আবারও বিয়ে দিয়ে দেবে। হিহিহি,,

আরিয়া কথা টা বলেই চোখ মেরে বাকা হাসছে। আয়ুশ শুধু অবাক হচ্ছে বেচারার কি আর করার। উপায় না পেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে কোথাও আরিয়া নেই। তাই তো আরিয়া থাকবে আর আয়ুশকে জালাবে না তা কি হয়? আয়ুশ পুরো রুম একবার পরখ করে বেডের দিকে তাকাতেই দেখে একটা চিরকুট। আয়ুশ সেইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে পড়া শুরু করে,,

প্রিয় গুন্ডা জামাই,,

আমারে খুইজ্জা লাভ নাই। অনেক ইচ্ছা হইছিলো আপনার সাথে থাকমু কিন্তু আমার ছুডু বইন একলা ঘুমাইতে পারতো না তাই গেলাম গা। সকাল সকাল আইসা পড়মু। দরজা খুইলা রাইখেন।আলাবু,,ফ্লায়িং কিস নেন উম্মাহ টাটা..

আপনার বউজান..

আয়ুশ চিরকুট টা পড়ে মুচকি হেসে বারান্দায় চলে যায়। তারপর কাউকে ফোন দেয়।

এদিকে আরিয়ার কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না। এত গুলো দিন পর সে তার প্রিয় মানুষটাকে মন ভরে দেখেছে। আরুশ যতই নিজেকে আয়ুশ আয়ুশ করুক নিজের অনুভুতি? সে গুলো এখনো আরুশের মতোই আছে। আরুশ একটুও বদলায়নি। আরিয়া আরুশের কথাই ভাবছিলো হঠাৎ তার কানে গিটারের টুংটাং শব্দ আসে। মাত্রই কেউ গান গাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে,,

🎶ab jane hum ye pyar kya hai🎶
darde jigar mushkil bara hai….
sunta nehi kehna koyi bhi
dil bekhabar jitbe ara hai..
hare hare hare
hum to dil se hare..
hare haree haare
hum to dil se hare!!🎶🎶

কত পাওয়া না পাওয়া নিয়ে গান গাইছে। আরিয়া গান টা কে গায়ছে তা দেখার জন্য আরিয়া সেই টুংটাং শব্দ অনুসরন করে হাটতে থাকে। শব্দটা আয়ুশের রুম থেকে আসছে। হঠাৎ গানটা অফ হয়ে যায়। আয়ুশের রুমের দরজা ভেজানো ছিলো। এতক্ষণ গানের আওয়াজ পেলেও এখন ফিসফিসানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আরিয়া ভ্রু কুচকে আয়ুশের রুমে ঢুকে। বারান্দার দিকেই যেতেই ফিসফিসের আওয়াজটা আরেকটু জোড়ে আসছে। আরিয়া বারান্দার দিকে যেতে গিয়ে যতটা না অবাক হয় তার বেশি রেগে যায়। হাতের পাশে একটা ফুলদানি থাকায়৷ সসেটাই তুলে আছাড় মেরে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের রুম লক করে কাদতে থাকে। তখন আরিয়া গিয়ে দেখে আয়ুশকে আরিফা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরিয়ে আছে। আয়ুশ কিছু না বলে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে ছিল। তাই জন্যই আরিয়া রেগে গিয়ে ফুলদানি ফেলে দেয়। এত জোড়ে শব্দ হওয়ায় ২জনই কেপে উঠে। আরিফা তাড়াতাড়ি আয়ুশকে ছেড়ে দুরে সরে যায়। আয়ুশ দাতে দাত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আরিফা কে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লক করে দেয়।

সকালবেলা_____________

আরিয়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। সেখানে সবাই আছে। আইরা আগেই উঠে গেছে। আয়ুশ সবার মাঝে একটু কমই যায়। আরিয়াকে লিভিং রুমে দেখে ইমন প্রায় শকড খায়। ১ বছরে আরিয়া কোনোদিনও এত সকাল সকাল সবার সাথে লিভিং রুমে আসে নি।ইমন তার ছোট বোনের উদ্দেশ্যে বলে,,

“””এই রিমা সূর্য আজকে৷ কোনদিক উঠছে রে?

“” কেন?যেদিকে উঠে সেদিকেই উঠছে।

“”” আরিয়া ম্যাম সবার সাথে লিভিং রুমে আসছে। আই’ম শিহরিত।

আরিয়া ইমনের কথা শুনে তেড়ে উঠে বলে,,

“”” এই দানব তোর মাথা ফাটিয়ে উগান্ডার কাইল্লা ছেরির কাছে দিয়া আমু। কথা কম কবি। আমার যা মন চায় তা করমু তোর কি?

“”” আমার কিছুই না। শাকচুন্নির মতো তো দেখতে হয়ছোস আবার উগান্ডার ছেরি গো কাইল্লা ছেরি কস। তুই নিজেই তো কাইল্লা ছেরি।

“”” এই ইমন্ন্যা তোরে রে আমি!

আরিয়া ইমনকে মারার জন্য ছুটছে কিন্তু ইমনকে কি আর ধরতে পারে! বাদরের মতো লাফাচ্ছে ইমন। একবার এখানে তো একবার ওখানে। আরিয়াও দম মেরে বসার মানুষ না সেও ছুটছে ইমনের পিছে। আর ওদের এমন ছোটাছুটি দেখে সবাই হাসতে হাসতে লুটুপুটি খাচ্ছে। দুর থেকে এই সবই কেউ পর্যবেক্ষণ করছে!

অনেকক্ষণ ছুটাছুটির পর সবাই মিলে ছাদে চলে যায়,,ছাদে কিছুক্ষণ গল্প করতেই আরিয়া দিয়া কে…..

চলবে…

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️

হ্যাপি রিডিং😊

#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
#পার্ট:২০
#পিচ্চি_লেখিকা

আরিয়া দিয়াকে বলে,,

“”আচ্ছা দিয়া তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করি?

“” হ্যা করো!

“” ২ তালায় আমরা যে রুমে থাকি সেই রুমের পাশের রুমটা তে কে থাকে?

“‘আয়ুশ ভাইয়ার কথা বলছো?

“” হুম। কে হয় তোমার?

“” তেমন কেউ হয় না। মিষ্টি আপুর ফ্রেন্ড! আমাদের বাসাই পেইন গেষ্ট হিসেবে থাকে। অনেক ভালো!

“” তাই নাকি। তা উনি কি মেরিড?

“” আরিয়া তুৃমি কি পাগল হয়ে গেছো? বউ থাকলে উনি এখানে একা থাকতেন?

“” ওরে তাই তো। আচ্ছা এখানে কতদিন হলো থাকেন উনি?

“” এই তো ৮ বা ৯ মাস।

“”ওরে বাবা এত দিন?

“” হুম। তোমার কি কাহিনি বলো তো? হঠাৎ আয়ুশ ভাইয়ার বিষয়ে এত খোজ নিচ্ছো! ক্রাশ বাশ খাইসো নাকি?

আরিয়া মনে মনে বলে,,

“” নিজের জামাই তো ক্রাশ বাশ না খাইয়া কই যামু!

আরিয়া কে চুপ থাকতে দেখে দিয়া হালকা করে ধাক্কা দেয়,,

“” কোন দুনিয়ায় হারাও বলো তো তুমি?

“” আরে কোন দুনিয়ায় হারাবো? এই দুনিয়াতেই হারাতে পারি না। আচ্ছা মিষ্টি আপুর বিয়ে কয়দিন দেরি আছে?

“” ৪ দিন।

“” এই ৪ দিন কি করবো তাহলে?

“”” ঘুরবো সবাই। বিছানাকান্দি কি সুন্দর তা কি তুমি জানো?

“” না গো। আসি নাই কখনো।

“”” তাহলে আমরা সবাই ঘুরতে যাবো।

“” আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি যায়।

“” আচ্ছা।

আরিয়া ছাদ থেকে নামতে গিয়েও কি মনে করে আবার আইরা কে ডেকে নিয়ে গেলো। আয়ুশ দরজা লাগিয়ে কি যেন করছে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। আয়ুশ জানে হয় এটা আরিয়া নয়তো আরিফা। এরা দুজন তার জিবন বিষিয়ে দিচ্ছে।বিরক্তি নিয়ে আয়ুশ জিজ্ঞেস করে,,

“” কে?ব্যস্ত আছি পরে আসেন।

“” ভাইয়া আমি আইরা। একটু দরজা খোলেন দরকার আছে।

আইরার কথা শুনেই আয়ুশ খুশি মনে দরজা খুলে দেয়,,দরজা খোলার সাথে সাথেই আরিয়া হুড়মুড় করে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। ঘটনার এমন আকস্মিকতায় আয়ুশ বোকা বোনে যায়।

“” এভাবে ঢুকলেন কেন? আর আইরা ডাকলো আপনি কি করে আসলেন?

“” আইরা আপনাকে ডেকে ছাদে চলে গেছে তাই আমিই আসলাম। আপনি যে পরিমান ঘারত্যাড়া আমি ডাকলে যে দরজা খুলতেন না তা আমি ভালো ভাবেই জানি তাই আর কি!

“”ছোট বোন কে এসব কাজে ব্যবহার করতে লজ্জা লাগে না?

“” লজ্জা কেন লাগ…ওয়েট ওয়েট আপনি কিভাবে জানলেন আইরা আমার ছোট বোন?

আয়ুশ থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বলে,,

“” ওই শুনেছিলাম! যাই হোক আপনি আমার রুমে কেন এসেছেন সেইটা বলেন?

আরিয়া আয়ুশের কাছে গিয়ে কলার টা হালকা করে টেনে মুখ টা নিজের কাছে এনে বলে,,

“” কাল রাতে আরিফা আপনাকে জড়িয়ে কেন ধরেছিলো?

আয়ুশ কি ভেবে যেনো একটু বাকা হেসে বললো,,

“” আরিফা আমার গার্লফ্রেন্ড যে তাই।

আরিফা আয়ুশের গার্লফ্রেন্ড শুনেই আরিয়া রেগে যায়,,

“” কি বললি? এত সাহস তোর আমাকে রেখে বাইরে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতেছিস? তোকে আমি মেরেই ফেলবো,,

আরিয়া হুট করেই আয়ুশের গলা চেপে ধরে। আরিয়ার যা হাত আর আয়ুশ যে লম্বা গলা চেপে ধরাই যে আয়ুশের লাগছে বলে মনে হয় না। হুট করেই আরিয়া গলা ছেড়ে কান্না করে দেয়। কাল রাতে আরিফা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিলো আয়ুশকে। তবে কি সত্যি ওর সাথে কোনো সম্পর্ক আছে? আরিয়া নিজের ভুলের জন্য এতদিন দুরে থেকেছে আরুশের থেকে আর আজ যখন পেলো তখন কি আরুশ অন্য কারো?
আরিয়া এসব ভেবেই কান্না করতে করতে বসে পড়ে । আরিয়ার এমন হঠাৎ কান্না দেখে আয়ুশ ভড়কে যায়। আরিয়ার সামনে বসে কাপা কাপা হাতে গালে আলতো করে হাত দিয়ে মুখ টা উপরে তোলে। বয়ুশের ছোয়া পেয়ে আরিয়ার কান্না থেমে যায়।

“” এভাবে কাদছেন কেন? কি হয়েছে?

আরিয়া আয়ুশের দিকে এক পলক তাকিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠে। আরিয়ার এমন কান্না যে আরুশ সহ্য করতে পারে না কিন্তু এখন সে আর আরুশ নেই আয়ুশ হয়ে গেছে। তাই শক্ত গলায় বলে,,

‘”এভাবে কান্না না করে বলে কি হয়েছে?

আরিয়া কান্না করতে করতেই কাপা কাপা কন্ঠে বলে,,

“” আমি যা করেছি তার জন্য আবারও মাফ চায়। প্লিজ আমাকে আর ছেড়ে যাবেন না। প্লিজ,,

“” আমি আপনার হাজবেন্ড না আমি আয়ুশ। এটা কেন মানতেছেন না?

“” চুপ একদম চুপ। আরুশ আর আয়ুশ দুজনই আপনি আর আপনি আমার হাজবেন্ড। আরিফার ধারে কাছেও যেন আপনাকে না দেখি। আর দেখলে আপনাক গুলি করে মারবো।

আরিয়া আয়ুশকে ছেড়ে গটগট করে চলে যায়। আয়ুশ আরিয়া কথা শুনে হেসে দেয়। আরিফার কথা শুনে কেদেই দিলো। এ কেমন কান্দুনি বউ তার। আয়ুশ দরজা লক করে কাকে যেন ফোন দেয়। কয়েকবার রিং হতেই ফোনটা ধরে,,

“”হ্যালো,,ও এখানে কি করছে?

….

“” কে তুই বুঝতে পারছিস না?

“” হ্যা আমি ওর কথায় বলছি।

“” তুই জানিস না মানে টা কি? ওর এখানেই আসায় কতটা বিপদ বেড়ে গেছে তোর ধারনা আছে?

“”এখন থেকে এখন যেতেও পারবো না আমি। সামনেই মিষ্টির বিয়ে। মিষ্টি কোনো ভাবেই যেতে দেবে না আর আঙ্কেল আন্টিও না। এখন কি করবো বল?

….

“”” দেখ আর বেশি সময় নিলে চলবে না। মিষ্টির বিয়ের মাঝেই যা করার করতে হবে।

””ঠিক আছে। তোর কাছে যা প্রুফ আছে সব রেডি কর। খুব সাবধানে। টার্গেট কিন্তু তুই।

আয়ুশ ফোন কেটে কোথাও বেরিয়ে যায়।

সারাদিন কেটে যায় আয়ুশের পাত্তা নেই। এদিকে আরিয়ারও চিন্তায় ঘাম ছুটে যাচ্ছে। অনেক বার আয়ুশের রুমে গেছে কিন্তু খুজে পায়নি। গভীর রাতে আয়ুশ বাড়ি ফেরে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ওই যে জামাইয়ের চিন্তায় আমাগো আরিয়া এখনো জাইগ্গা রইছে। আয়ুশ রুমের কাছে যেতেই দেখে দরজা খোলা। আয়ুশ ভ্রু যুগল কুচকে রুমে ঢোকে। আরিয়া বসে বসে ঝিমোচ্ছে। আয়ুশের চিন্তায় ঘুমাচ্ছেও না আবার ঘুমেরাও আক্রমণ করছে বার বার। আয়ুশ আরিয়ার এমন অবস্থা দেখে হেসে দেয়। আরিয়ার কাছে গিয়ে ঝুকে ওর মুখের দিকে তাকায়। গরম নিশ্বাস মুখে আচড়ে পড়তেই আরিয়া লাফ দিয়ে উঠে দেখে আয়ুশ ওর খুব কাছে। আয়ুশ আরিয়ার হঠাৎ জেগে যাওয়ায় ভড়কে গিয়ে পিছিয়ে যায়। আরিয়া কিছুক্ষণ বুঝার চেষ্টা করলো যে এতক্ষণ কি হয়েছে তারপরই বাকা হেসে আরাম করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলে,,

“” আরে মাই ডিয়ার গুন্ডা জামাই বউয়ের এত কাছে আসতে মন চায়ছে ভালো কথা তাই বলে কি ঘুমের সুযোগ নিচ্ছেন?

আয়ুশ আরিয়ার কথায় আরিয়ার দিকে তাকায়,,

“” সুযোগ নিচ্ছি মানে?

“” এই যে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর আপনি…

“” আর আমি কি হ্যা? উলটা পালটা ভাবা বন্ধ করে নিজের রুমে যান। সারাদিন আমার রুমে কি করেন?

“” হ্যা সাারাদিন? আপনি কই ছিলেন সারাদিন?

“” সেইটা আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নয়।

“” অবশ্যই বাধ্য। আমি আপনার বউ সো আমার সব জানার অধিকার আছে।

“” কে বউ?কার বউ? এভাবে আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করে যান এখান থেকে।

আরিয়া সোফা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে যায়। আয়ুশ ভেবেছিলো আরিয়া চলে যাবে কিন্ত আয়ুশের চিন্তায় এক জগ পানি ঢেলে দরজা লক করে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে। আয়ুশ আরিয়ার এহেন কান্ডে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এ কেমন ঘাড়ত্যাড়া রে বাবা।

“” এই আপনি আমার বেডে শুয়ে পড়লেন কেন? উঠুন আর নিজের রুমে যান।

আয়ুশের কথায় পাত্তা না দিয়ে আরিয়া নিজপর মতো করে শুয়ে পড়লো। আয়ুশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে এই ঘাড়ত্যাড়া কে কিছু বলে লাভ নেই তাই সে ওয়য়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে সোফাতে শুয়ে পড়লো।

সকালবেলা নিজের উপর কারো ভাড় পেয়ে আয়ুশ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই ৪২০ ভোল্টেজের শক খায়। আয়ুশের উপর আরিয়া ঘুমিয়ে আছে। এটা কি মেয়ে রে বাবা। ওর জন্যই সোফাতে এসে আয়ুশ ঘুমাচ্ছে আর ও কি না বেড ছেড়ে আয়ুশের উপর ঘুমাচ্ছে। তাও আবার মনে হচ্ছে আয়ুশ তার শান্তির বালিশ। আয়ুশ কিছু বলতে গিয়েও না বলে আরিয়াকে সটাং করে তুলে দাড় করিয়ে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। এতদিনে এই ফার্স্ট আয়ুশ আরিয়ার গায়ে হাত তুললো। থাপ্পড় খেয়ে আরিয়ার ঘুম ও ভয়ে পালালো। আরিয়া কিছু না বুঝে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

“” সমস্যা কি আপনার? আপনি জোড় করে রাতে আনার রুমে ঘুমালেন ভালো কথা। বেড ছেড়ে আমার উপর কি করছেন হ্যা? আমি আপনার হাজবন্ড না আর কত বলবো? এত বেহায়া কেন আপনি? সম্মান দিয়ে কথা বলেছি কিন্তু আপনার তাতে শান্তি হয়নি? বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে আর কখনো আসার চেষ্টাও করবেন না।

আরিয়া আয়ুশের দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ কখনো তার গায়ে হাত তোলেনি৷ বাবা মায়ের আদরের মেয়ে ছিলো ৩ বোন। কেউ কখনো নার খায়নি। আর মা মারা যাওয়ার পরও স্মৃতি কখনো ওদের মারেনি। আরুশও কখনো গায়ে হাত তোলেনি কিন্তু আজ?

আরিয়া আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আয়ুশ দরজা লাগিয়ে বসে পড়ে।

“” সরি বউজান। তোমার যে আমার থেকে দুরে থাকতে হবে নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে। ভালোবাসি তোমাকে ক্ষতি কি করে হতে দেয়?

চলবে…

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️

হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here