তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি Last_part

তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
Last_part
#পিচ্চি_লেখিকা

শুভর সাথে সেই ব্যাক্তিকে দেখে আরিয়ার চোখ ভরে আসে। কান্না গুলো যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে
সিজান তো আকাশ থেকে পড়ছে। আইরাও কান্না শুরু করে দিয়েছে। আরিয়া অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,,

“” স্মৃ..স্মৃতি আপু..

স্মৃতি মাথার উপর থেকে কাপড় সরিয়ে সুন্দর ভাবে দাঁড়ায়। সিজান তো হা করে তাকিয়ে আছে। যেন ভুত দেখছে। আরুশ বাকা হেসে বলে,,

‘”‘ভুত দেখার মতো চমকাচ্ছিস? চিন্তা করিস না এটা স্মৃতি নিজেই কোনো ভুত টুত না।

“” কি..কিন্তু ও তো মরে গেছিলো। ওর লাশও কবর দিয়েছে সবাই।

আরিয়াও সেটাই ভাবছে। অনেক কষ্টে চুপ করে বসে আছে সে।

“” সেইটা স্মৃতি ছিলো না সিম্পল। তুই হঠাৎ কথা এত ব্যাকা ত্যাড়া ভাবে নিচ্ছিস কেন বল তো? সে যাই হোক এত কথা বলতে আমার নিজেরও ভালো লাগছে না।

“” কিন্তু ওকে তো আমি নিজে হাতে মেরেছি আর তাছাড়াও তোরা কিভাবে জানলি আমি ওকে মেরেছি?

আরুশ ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে,,

“” কোনটা আগে জানতে চাস ঠিক কর? সব প্রশ্নের উত্তর পাবি!

“” স্মৃতি কে সেদিন আমি নিজে হাতে মেরেছি ও বেঁচে আছে কি করে?

“” কারন তুই চলে যাওয়ার পরপরই আমরা ঢুকি। কয়েক সেকেন্ডের ডিফারেন্ট। ওতোটুকু সময়ে ও বেঁচে ছিলো তৎক্ষনাৎ আমরা ওকে হসপিটাল নিয়ে যায়।

“” তোরা কিভাবে জানলি আমি ই ওকে মারার চেষ্টা করেছি?

“” ওর বাড়িতে ছোট একটা ক্যামেরা ছিলো যা তুই জানতিস না। হ্যা এটা ঠিক তুই মুখ ঢেকে ছিলি কিন্তু তোর ভয়েজ, তোর হাতের উটকো আংটি তোার গলার উটকো চেইন ভ্রুর পাশের কাটা দাগ এগুলো হয়তো লুকোতে ভুলে গেছিলি। সব দেখে আমরা এয়ারপোর্টে সার্চ করি আর জানতেও পারি তুই দেশের বাইরে ২ দিন আগে নয় ২ দিন পর গেছিস! ব্যাস আমরা তো সিউর বাট প্রুফ তো ছিলো না কি করবো? তাই তোর জন্য ২ বছর আমরা ২ জন দুরে দুরে থেকে শত্রুর মতো আচরন করে তোকে সিউর করেছি আমরা একজন আরেকজনের শত্রু। আর সবাই যে লাশ কবর দিয়েছে তার মুখ টা শুধু স্মৃতির মতো করা হয়ছে বাট সে স্মৃতি ছিলোই না। ২ বছর আমরা ওকে লুকিয়ে রেখেছি তোকে সামনে পেয়ে সব প্রুফ জোগাড় করার জন্য। তখন আমাদের কানে আসে তুই মেয়ে পাচারেও জড়িত। তারপর তুই দেশে আসলি তোর বিরুদ্ধে আরো প্রুফ পাওয়ার উপায় খুজছিলাম পেয়েও গেছিলাম কিন্তু মাঝখানে চলে আসে আরিয়া। আমরা তো আগে থেকেই জানতাম আরিয়া স্মৃতির বোন..ভেবেছিলাম ও স্বীকার করলেই ওকে সব সত্যি বলে দিবো সেদিন ওকে বলতে চেয়েছিলাম বাট ও সুযোগ দেয়নি যদিও আরিয়া আমাকে স্যুট করেনি তবুও ওর বোকামির জন্যই তুই আমাকে মারার সুযোগ পেয়েছিলি। আমার লাশ পাওয়ার পর তোরা ভাবলি আমি মরে গেছি এত বোকা তুই আমার মুখ কিভাবে বিকৃত হলো তাও জানার চেষ্টা করলি না? যায় হোক অনেক জেনেছিস এবার তোর ব্যবস্থা করি।

আরুশ গার্ডদের ইশারা করলে তারা অনেকে মিলে সিজানকে নিয়ে যায়। আর তানিম কে নিয়ে যেতে দেখে দিশা বলে উঠে,,

“” দাড়ান,,

“” দিশা তুম…

“” আমার কিছু বলার আছে!

দিশা একটু এগিয়ে গিয়ে তানিমের সামনে দাঁড়িয়ে কলার টেনে ধরে উচ্চ স্বরে বলে উঠে,,

“” বেইমান,ঠকবাজ,বিশ্বাসঘাতক,জানোয়ার তোরা ২ ভাই আমার জিবন টা নষ্ট করে দিলি। আমার বাবা মা কেও বাচতে দিস নি তোকে আমিও বাচতে দিবো না।

দিশা কলার টা ছেড়ে পাগলের মতো কান্না করতে করতে অনেকগুলো থাপ্পড় দেয়। গলা চেপে ধরে,,বোঝাই যায় দিশা ঠিক কিসের মাঝে আছে। স্মৃতি তাড়াতাড়ি দিশা কে আটকায়। কোনোরকম দিশার থেকে তানিম কে ছাড়িয়ে দিশা কে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করে। দিশা শব্দ করে কান্না করেই যাচ্ছে।

এতক্ষণ অবাক হয়ে সব শুনছিলো আরিয়া। শুভ গিয়ে সবার হাতের বাধন খুলে মুক্ত করে দেয়। আইরা কান্না করতে করতেই স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরে আর দিয়া গিয়ে ওদের কাছে দাড়ায়। আরুশ এক পাশে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আরিয়া যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে আছে। আরুশ যেতে চেয়েও গেলো না। আরিয়াকে এমন চুপ দেখে স্মৃতি দিশাকে দিয়া আর আইরার কাছে দাড় করিয়ে আরিয়ার কাছে এগিয়ে যায়। আরিয়ার ঠিক সামনে বসে ওর মাথায় হাত দিতেই আরিয়া চোখ তুলে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে স্মৃতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেদে উঠে আরিয়া। স্মৃতিও নিঃশব্দে কান্না করছে। পুরো ৩ টা বছর পর আজ তাদের দেখা। স্মৃতি নিজের চোখ মুখ মুছে আরিয়াকে সোজা করে। কাদতে কাদতে আরিয়ার হেচকি উঠে গেছে।

“” এই বুচি কান্না থামা নয়তো আবার চলে যাবো।

“”……….

“” তুই কান্না থামাবি না তার মানে তুই চাস আমি আবারও চলে যায় তাই তো?

“”………

“” ঠিক আছে,, আমিও চলে যাচ্ছি। এই শুভ চলো আমরা চলে যায়। ওরা চায় না আমি ওদের সাথে থাকি!

স্মৃতি উঠে চলে যেতে নিলে আরিয়া হাত টেনে ধরে।

“” আ..আপু আমি কা..দ..বো না। তু..তুমি আর যেয়ো না প্লিজ।

“” পাগলি একটা,, আমি কোথাও যাচ্ছি না। আমি তো ঠিক করেছি তোদের সাথে আরুশের বাড়িতে থাকবো। কি রে আরুশ থাকতে দিবি না তোদের বাড়ি?

“” এহ আমি তো ক্ষেপছি। তোদের আমি আমার বাড়িতে ঢুকতেই তো দিবো না। অবশ্য আমি ঢুকতে পারবো কি না তারই তো ঠিক নাই।

শুভ এগিয়ে এসে আরুশের পাশে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,,

“” এই তো একটা হক কথাা কইছোস। তোরেই তো ঢুকতে দিতো না বাড়িতে তুই আবার আমাদের কি বাড়ি থেকে বের করবি হুহ।

“” কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা। তুই বন্ধু নামক শত্রু😪।

“” হয়ছে নাটক বন্ধ কর এবার বল কেন ঢুকতে দেবে না তোকে বাড়িতে? আর কে ঢুকতে দেবে না?(স্মৃতি)

“” কে আবার? আমার ফুপিজান আর তার মেয়ে তানিয়া জান থুক্কু ওইডা তো আমার আপা হয়। আমি যে বেঁচে আছি এটা তো ওদের বলিও নি আর এতদিন বাড়িও যায়নি এখন যদি বাড়ির ত্রিসীমানায়ও আমায় দেখে মেরে হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে দেবে।

আরুশের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। তারপর একসাথে বের হয় বাড়ি যাওয়ার জন্য।

সিলেট থেকে বিদায় নিয়ে সবাইকে জানিয়েই চলে আসে ওরা। দিশার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে সবাই বুঝতে পারে দিশার বাবা আর মা কেও এই ২ ভাই মেরে ফেলেছে। তাই আরুশ আর আরিয়া ঠিক করে দিশা কে ওদের সাথেই রেখে দিবে। স্মৃতি আর শুভ ৩ বছর আগেই বিয়ে করে নিয়েছে। এখন শুধু ওদের বাবা দেশে আসলেই আবারও বিয়ে হবে এই ২ জুটির। সালমান শেখ সব শুনে প্রথমে অভিমান করলেও স্মৃতির বেঁচে থাকার কারনে সব অভিমান ভুলে ২ বোনের আবারও ব্যান্ড বাজিয়ে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা উনার। বাড়িতে এসে কলিং বেলে চাপ দিতেই ফুপি দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায়। আরুশ,আরিয়া,শুভ,স্মৃতি, দিশা,আইরা সবাই আছে। সবাইকেই চেনেন তিনি। আরুশকে দেখেই কান্নাকাটি জুড়িয়ে দিয়েছে আর তানিয়া সত্যি সত্যি মারার জন্য আরুশের পিছনে ছুটছে।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে আরিয়া চারপাশটা একবার পরখ করে নেয়। কতদিন পর এই রুমে তার আসা। কত স্মৃতি তার এই রুমটা জুড়ে। আরিয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই আরুশ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আরিয়া চুপ করে আরুশের স্পর্শ অনুভব করছে।

৫ বছর পর……

আজ আয়ান আর আইরার বিয়ে। ৫ বছর এই বাড়িতেই আইরা আর দিশাও থেকেছে । তবে দিশাা শুধু থেকেছে ২ বছর। যদিও দুজনকেই জোড় করে রাখা কারন দিশার মা বাবা মারা যাওয়ার পর ওর কোনো যাওয়ার জায়গা নেই আর ৩ বছর আগে আরিয়ার বাবাও হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তাই আইরাকে নিজের কাছেই রেখে দেয় আরিয়া। আরফান বাড়ি সারাক্ষণ এখন আমেজে জমে থাকে। আয়ান আর আইরার মাঝে সৃষ্টি হয় ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই তাদের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায় ওরা। দিশার বিয়ে আরুশের কাজিন শুভ্র সাথে হয়েছে। সে এখন শ্বশুরবাড়ি তেই থাকে তবে মাঝে মাঝেই আসে ওরা। বেশি দুর তো আর না। তুলি আর দিশার তো বান্ধবীর মতো সম্পর্ক। বাড়ি ভর্তি মেহমান আরিয়া আর স্মৃতি এত কাজ সামলাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। তানিয়া,দিশা, ফুপি, রায়ানা আরো বড়রা আছে বলে তাও একটু বেচেছে। নয়তো দুজনেই চিৎপটাং হয়ে যেত। সব কাজ সামলে রুমে গিয়ে দেখে আরুশ আর আরাফ রেডি হচ্ছে। আরাফ তার উদ্দেশ্য বলছে,,

“” পাপা,,এতা আমাতে বালো লাকতে না।

“” কে বলছে পাপা? তোমাকে তো পুরাই হ্যান্ডসাম লাগছে।

“” মোতেও না। তোমাতে বেতি চুন্দর লাগে।

“” আরে না বাবা। তোমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।

“” শুরু হয়ে গেছে ২ বাবা ছেলের। রেডি হবে নাকি কে কার থেকে বেশি সুন্দর করে সেজেছো সেইটা দেখবে?

রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথা গুলো বলল আরিয়া। আরুশ আর আরাফ দুজনের দিকে তাকিয়ে এক সাথে বলে উঠে,,

“” তুমি লেডি তরিয়ে দাও।

আরুশের মুখেও আরাফের মতো কথা শুনে আরুশের দিকে কোমরে হাত গুজে দাঁড়ায়। আরুশ আমতা আমতা করে বলে,,

“” ইয়ে মানে আমি তো রেডি হয়ছি তোমার ছেলেকেও রেডি করিয়েছি দেখো।

“” হ্যা দেখতে পাছি তো। কি করেছো ছেলেটা কে!তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিবো। এত কাজ করেও তোমাদের পিছনে ছুটতে ছুটতেই আমি শেষ হয়ে যাবো।আর ছেলেটাও হয়েছে বাবার মতোই পিটপিটে আর এটিটিউডের ডিব্বা।

ওদের কথার মধ্যেই স্মৃতি আর ওর মেয়ে সকাল রুমে ঢোকে। সকাল আর আরাফের মিলের শেষ নেই। আরাফ কারো সাথে এটিটিউডের জালায় কথা বলে না কিন্তু সকালের সাথে সারাদিন থাকতে ভালোবাসে। সকাল কে দেখেই আরাফ বলে,,

“” এই তকাল দেক আমাতে কেমন লাকতে?

“” ওই তকাল কি সকাল বল। সে যায় হোক তোকে তো অনেক কিউট লাগছে।

“” হাহ পাপার তেকেও চুন্দর লাকতে বল?

“” হুম চল আমরা যায়।

আরাফ আর সকাল চলে যায়। ওদের কান্ড দেখে ৩ জনই হেসে দেয়। তারপর স্মৃতিও চলে যায়।

অনেক আনন্দের মাঝেই বিয়েটা সম্পূর্ন হয়। সবাই অনেক খুশি। আইরা আর আয়ান তো পারলে ওখানে ডান্স শুরু করে। ওদের বাসর ঘর পর্যন্ত দিয়ে আরিয়া রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অনেক রাত হওয়ায় আরাফ আর সকাল ঘুমিয়ে গেছে। সকাল আর আরাফ দুজনই স্মৃতির রুমে। একটু রেস্ট নিয়ে আরিয়া গিয়ে বারান্দায় দাড়ায়। বাইরে থেকে শীতল হাওয়া আসছে। আরিয়া সেটা উপভোগ করছে। হঠাৎ করেই কারো ছোয়া তার শাড়ি ভেদ করে পেটে পড়তেই লাফিয়ে উঠে পিছে তাকায়। আরুশ এসেছে,,তাই সে আবারও বাইরে মনোযোগ দেয়,,আরুশ আরিয়ার চুলে মুখ গুজে বলে,,

“” বউজান..

“” হুম,,

“” খুশি তো তুমি?

আরুশের কথায় আরিয়া ভ্রু কুচকে পেছনে তাকায়। আরুশের দিকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,

“” খুশি কেন হবো?

“” আরে আইরা আর আয়ানের বিয়েতে। আইরা এখন আমাদের থেকে আর দুরে যাবে না।

“” এটা কোনো প্রশ্ন?খুশি কেন হবো না? ওরা আমারই ভাই আমারই বোন। ওদের খুশিই আমাদের খুশি।

“” হুম। জানো বউজান?

“” কি জানবো?

“” সবাই বলে প্রিয়জন কখনো প্রয়োজন হয় না কিন্তু আমার…আমার যে প্রিয়জনকেই বড্ড প্রয়োজন। সে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। আমার বেঁচে থাকার জন্য হলেও আমার প্রিয়জনকে প্রয়োজন। আমার তোমাকে ছাড়া কখনোই চলবে না। আমার বউজান যে আমার নেশা যেইটা তে আমি নেশাক্ত। সেই নেশা পৃথিবীর সব থেকে বড় নেশা। যা আমার চায়ই চায়। ভালোবাসি বউজান!

আরিয়া আরুশের কপালে নিজের ওষ্ঠ ছুইয়ে বলে,,

“” খুব ভালোবাসি জামাইজান….

আরুশ মুচকি হেসে আরিয়াকে জড়িয়ে চাদ দেখতে থাকে।

সমাপ্ত……

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️..পুরো গল্প কেমন হয়েছে জানবেন😊..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here