তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি পার্ট:২৩+২৪

তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
পার্ট:২৩+২৪
#পিচ্চি_লেখিকা

🎵Teri meri gallan ho
gayi masshor..
kar na kabhi tu mujhe
nazroon se door..
kithe chali ae tu
kithe chali ae tu
kithe chali ae
kithe chali ae…

jaanda ae dil yeh
toh jaan di ae tu..
tere bin main na rahun
mera bina tu..
kithe chali ae tu
kithe chali ae tu
kithe chali ae

katun kaise ratan
oh sawre..
jiya nahi jaata
sun bawre..
ke raatan lambiyan lambiyan re
kate tere sangeya sangeya re..
ke raatan lambiyan lambiyaan re
kate tere sangeya sangeya re….🎵

আয়ুশ আর আরিয়া সুন্দর করে তাল মিলিয়ে ডান্স শেষ করে। দুজনেই যেন কোনো এক ঘোরে আছে। সবাই তো হাত তালি দিতে ব্যাস্ত। আইরা দৌড়ে এসে আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে। এতক্ষণে দুজনের ধ্যান ভাঙলো আয়ুশ ডান্স ফ্লোর ছেড়ে চলে যায়। আইরা তো খুশিতে নাচছে। আইরা কে সাথে করে আরিয়া রিমাদের কাছে আসলো। রিমা হা করে তাকিয়ে আছে।

“”বইনা তুই এত চুন্দর কইরা ডান্স কই শিখলি?

“” তোরে কমু না।

“” এহ বইন ক না! আমিও শিখমু রে। তুই আর আয়ুশ তো ফাটাই দিছোস আহা আহা।

“” জামাইয়ের লগে ফাটামু না তো কি করমু।

দিয়া জামাই শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। আরিয়া সেইটা খেয়াল করে বলে,,

“” উনি আয়ুশ না দিয়া আরুশ। উনি আমার হাজবেন্ড। কোনো কারনে এখানে আয়ুশের পরিচয়ে থাকে। কেন থাকে জানি না! এক বছর আমরা জানতাম আরুশ মারা গেছে এখানে এসে উনাকে দেখলাম আর আজ উনার চোখে সেই আরুশকে দেখেছি। আরিয়া বলতে যে আরুশ পাগল ছিলো সেই আরুশের চাহনি দেখেছি। যে আরুশ আরিয়াতে ডুবে ছিলো আজ সেই আরুশ দেখেছি। উনি মানুক আর না মানুক এটুকু আমি মানি উনিই আরুশ।

সব টা দিয়ার মাথার উপর দিয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ড মাথা চাপরে ধরে বলে,,

“” ধুর তোমাদের এতো জটিল কথা আমার মাথায় ঢুকবে না। এগুলো বাদ দাও। চলো মিষ্টি আপু একা আছে রুমে।

সবাই মিষ্টির রুমে চলে গেলো। এদিকে আয়ুশ ডান্স করে এসে ছাদে চলে যায়। ভালো লাগছে না তার। পকেটে হাত গুজে আকাশের দিকে তাকায়।

“” ওই চোখে তাকালেই নিজেকে হারিয়ে ফেলি। কি আছে তোমার মাঝে বউজান। এত কেন মায়াময় তুমি? তোমাকে ছাড়া আমার কেন যেতে চায় না রাত দিন? কেন তুমি ছাড়া নিশ্বাস নিতে এত কষ্ট হয় বউজান? এটা কি শুধু মায়া?

“”আরিয়া কে হয় তোমার?

কারো গম্ভীর কন্ঠ শুনে আয়ুশ পিছে তাকায় দেখে আরিফা এসেছে। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। এই আরেকটা মেয়ে আয়ুশের জিবনে পুরে আঠার মতো চিপকে আছে। কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না আয়ুশ। তার উপর কেমন অদ্ভুত প্রশ্ন তার। এটার উত্তর কি দেবে সে?

“” তুমি এখানে কেন?

“” তার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।

“” তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে এই আয়ুশ বাধ্য নয়।

আয়ুশ আরিফার পাশ কেটে চলে আসতে গেলে আরিফা হাত ধরে আটকায়। আয়ুশ ভ্রু যুগল কুচকে বলে,,

“” হাত কেন ধরেছো? ছাড়ো।

“” আমি ধরলে ফোসকা পড়ে তোমার গায়ে। আর যখন আরিয়া ধরে তখন তোমার কিছু হয় না।

“” সাট আপ আরিফা। একটু বেশি ই বলছো তুমি। আর শোনো তোমার আর আরিয়ার তুলনা কইরো না।

“” কেন?

“” এই কেনোর আন্সার খুব তাড়াতাড়ি পাবে।

আয়ুশ হাত ছাড়িয়ে নিচে নেমে যায় আর আরিফা তো রাগে ফেটে যাচ্ছে। তার বুঝতে বাকি নেই যে আয়ুশ আরিয়াকে ভালোবাসে কিন্তু সেও তো এতো সহজে সব হতে দেবে না।

আয়ুশ নিজের রুমে এসে চেঞ্জ করে রেস্ট নিচ্ছে। এমন সময় দরজায় নক পড়লো। আয়ুশ মুচকি হাসলো।দরজা খোলায় ছিল তাই বললো,,

“” দরজা খোলা আছে।

আরিয়া দরজা ঠেলে ঢুকতে ঢুকতে বলে,,

“” দরজা কার জন্য খোলা রাখছেন?

“” আজব তো এখন দরজা খোলা নিয়েও কৈফিয়ত দিতে হবে?

“” হ্যা দিতে হবে।

“” দেবো না।

“” ওই কি কইলি?

“” আরে রেগে যান কেন? এমনি খোলা রাখছিলাম। আপনি হঠাৎ আমার রুমে?

“” আমার জামাইয়ের রুমে আমি যখন ইচ্ছা আসবো।

“” আমি আপনার জামাই না।

“” কিহ🤬

আরিয়ার রেগে যাওয়া দেখে আয়ুশ চুপ করে যায়। এই মেয়ে যা ডেঞ্জারাস ওরে রাগানো মানে খবর আছে। পরেরদিন না জানি নিউজে বড় বড় করে লেখা দেখায়,,”আয়ুশ চৌধুরীর লাশ পাওয়া গেছে তারই রুমে” এহ কি ভাবছি আমি। নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মারতে ইচ্ছা করছে।

“” আরিফার থেকে দুরে থাকবেন।

আরিয়ার গম্ভীর কন্ঠে এমন কথা শুনে আয়ুশ বেশ অবাক হয়।

“” হঠাৎ এই কথা?

আরিয়া কিছু না বলেই আয়ুশকে জড়িয়ে ধরে তারপর জোড়ে করে শ্বাস নিয়ে বলে,,

“” আপনি স্বীকার করেন বা না করেন আপনি ই আরুশ এটাই চরম সত্য। আমি পারবো না আপনাকে হারাতে। আরিফা আপনাকে….

আর কিছু বললো না আরিয়া। আয়ুশ বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত এখন? মিশন কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত আরিয়াকে সে কিছুতেই কাছে টানবে না তাই আরিয়াকে ছাড়িয়ে বললো,,

“” আমি আরুশ নয়। এটাই সত্য। আর এটা আপনাকে মানতে হবে। আর আরিফা আমাকে ভালোবাসুক আর না বাসুক সেইটা বড় কথা না আমি বাসি না এটাই বড় কথা। আর আপনি এখন রুমে যান।

আরিয়াও আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ির কাছে গেলো। কেন যেন ভালো লাগছে না তার। মনে তার অজানা ভয়। সবাই যে যার মতো ব্যস্ত এখনো সিড়ির কাছে কেউ নেই। আরিয়া আনমনে সিড়ির কাছে গেলেই কেউ তাকে পিছন থেকে জোড়ে করে ধাক্কা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে আরিয়া চিৎকার করে সিড়ি বেয়ে পড়ে যায়। আরিয়ার চিৎকারে সবাই ছুটে আসে। আয়ুশ নিজেও লাফিয়ে উঠে বাইরে আসে দৌড়ে। আরিয়া এতক্ষণে সিড়ি থেকে পড়ে গেছে মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। হাত পায়েও চোট লেগেছে। আয়ুশ আরিয়ার এই অবস্থা দেখেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কিছুই বলতে পারছে না। আইরা আরিয়ার কাছে দৌড়ে গিয়ে কাদতে শুরু করে দিয়েছে। আয়ুশ কয়েক সেকেন্ডে শকড টা কাটিয়ে দৌড়ে আরিয়ার কাছে যায়। কারো দিকে না তাকিয়ে আরিয়ার কাছে বসে পড়ে। তার যেনো বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পেয়েছে।

সারা রাত কেটে ভোরের দিকে ঘুম ভাঙে আরিয়ার। নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে বেশ অবাক হয়। রাতের ঘটনা মনে করতেই তার সবটা মনে পড়ে। সারা শরীর ব্যাথায় কুকড়ে যাচ্ছে। হাতে টান পড়তেই খেয়াল করে এক হাতে কেনোলা আরেক হাতের উপর আয়ুশের হাত। শক্ত করে ধরে আছে আরিয়ার হাত। কেবিনে আইরা দিয়া একে অপরেকে ধরে আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আয়ুশের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখ বুজে ফেলে। এখন কাউকেই ডাকা তার উচিত না বলেই মনে হয়ছে।
একটু পরই সূর্য তার তীর্যক আলো ফেলছে। আরিয়া নড়েচড়ে উঠতেই আয়ুশের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ ছোট ছোট করে তাকায় আরিয়ার দিকে।

“” কখন উঠেছেন? ঠিক আছেন এখন? শরীর ঠিক আছে। খারাপ লাগছে কি খুব? ডক্টর ডাকবো?

আয়ুশের কথা শুনে আরিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,

“” আমি ঠিক আছি মিস্টার আয়ুশ। হাতটা ছাড়ুন।

হাত ছেড়ে দেয় আয়ুশ। কি হলো এটা? বুঝে উঠতে পারছে না। যে মেয়েটা সারাদিন আরুশ আরুশ করে পাগল করে দেয় আজ সে আয়ুশ বললো। কিভাবে হলো এটা?আয়ুশের ভাবনার মাঝেই আরিয়া শান্ত গলায় বলে উঠে,,

“”আপনাকে এখানে থাকার পারমিশন কে দিয়েছে? আঙ্কেল আন্টি কি ভুলে গেছে আমি বিবাহিত?

“” আরি…

“” সরি। এতদিন আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি। বার বার আমার হাজবেন্ড বলেছি! আরুশ আরফান দাবি করেছি তার জন্য রিয়েলি সরি। আমি ভুলেই গেছিলাম আমার হাজবেন্ড এক বছর আগে মা..মারা গেছে।

শেষের কথা বলতে গিয়ে আরিয়ার কন্ঠ ভার হয়ে আসছিলো। বুকের ভেতরটা তার খারাপ ভাবে পুড়াচ্ছে। আরিয়া একটা কথাও আয়ুশের দিকে তাকিয়ে বলেনি। আয়ুশ কিছু না বলে আইরা আর দিয়াকে ডেকে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আরিয়ার আয়ুশের যাওয়ার পানে তাকায়। চোখ থেকে টুপ করে ২ ফোটা নোনা জল বেরিয়ে আসে। মুহূর্তেই তা মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। আইরা আর দিয়া আরিয়ার পাশে বসে,,

“” আপু তুমি এখন কেমন আছো? সিড়ি থেকে পড়লে কিভাবে?দেখে হাটবে তো। আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম।

আইরা আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আরিয়াও আইরাকে জড়িয়ে ধরে। দিয়া বলে,,

“” আরিয়া আয়ুশ ভাইয়া চলে গেলো কেন?

আরিয়া শক্ত গলায় কাট কাট বলে দেয়,,

“” আমি যেতে বলেছি তাই।

“” হঠাৎ চলে যেতে কেন বলেছো? জানো কাল আমি আর আইরা সিউর হয়ে গেছি উনি আরুশ ভাইয়া।

আরিয়া অবাক চোখে দুজনের দিকে তাকায়,,

“” কিভাবে?

“” কাল যখন তুমি সিড়ি থেকে পড়ে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলে আয়ুশ ভাইয়া তো পাগলের মতো করছিলো। কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে তোমাকে আমাকে আর আইরা কে নিয়ে হসপিটালে চলে এসেছে। পরে পিছে বাকি সবাইও এসেছিলে। সারা রাত ভাইয়া না ঘুমিয়ে তোমার খেয়াল রেখেছে। কান্না করে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে।

আরিয়া দিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,,

“” উনি আমার আরুশ?সত্যি?না দিয়া উনি আরুশ না উনি আয়ুশ। আরুশ তো ১ বছর আগেই মারা গেছে হ্যা উনিও আরুশ ছিলো তবে এখন আয়ুশ হয়ে গেছে। উনার কাছে কি এমন ইম্পর্ট্যান্ট যে আমার এই অবস্থায়ও উনি নিজেকে আয়ুশ দেখাচ্ছে? আমার আরুশ এমন ছিলো না।

দিয়া আর কিছু বললো না। আরিয়ার চোখ ছলছল করছে। বাইরে থেকে সবটাই আয়ুশ শুনেছে। কিছু বলতে পারেনি। একটু পর বাড়ি থেকে সবাই এসে দেখা করে যায়।

মিষ্টির বিয়ে হয়ে গেছে আজ দুদিন। এই দুদিনে আরিয়া অনেকটাই সুস্থ। আয়ুশপর কাছে আর আগের মতো যায় না আরিয়া। অভিমান জমেছে পাহাড় সমান। আইরা আরিয়া আর দিয়া হাটতে বের হয়েছে। মন ভালো না আরিয়ার তাই আইরা আর দিয়া অনেক চেষ্টা করছে মন ভালো করার। ৩ জন গল্প করতে করতে এগোচ্ছিলো হঠাৎ করেই কই থেকে ২ টা গাড়ি এসে ওদের সামনে থামলো। আরিয়া ভ্রু কুচকে তাাকায়। আইরা আর দিয়া আরিয়ার কাছ ঘেষে দাড়ায়। কয়েকটা বডি গার্ড মতো লোক এসে আরিয়া আর আইরা কে টানতে থাকে। ৩ জনেই চেচাচ্ছে কিন্তু কারো কানেই কোনো কথা যাচ্ছে না। শেষ মেষ টেনে গাড়িতে তুলে নেয়। উদ্দেশ্য আরিয়া আর আইরা হলেও দিয়া ছিলো তাদের সাথে তাই তাকেও গাড়িতে তোলে। গাড়িতে তুলেই ৩ জনকে অজ্ঞান করে দেয়।

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️

হ্যাপি রিডিং😊

#তোমার_নেশায়_নেশাক্ত_আমি
#পার্ট:২৪
#পিচ্চি_লেখিকা

সেন্স আসতেই বদ্ধ অন্ধকার রুমে হাত পা মুখ বাধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে আরিয়া। তার ঠিক বোধগম্য হলো না এমন অন্ধকারে সে কি করে এলো। ভয়ে দম বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মুখ বাধার জন্য চিৎকার করতেও পারছে না। আশে পাশে কেউ আছে কি না? তাও তার অজানা। ভয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়ে উম উম করতে থাকে। কয়েক মিনিট পরই দরজা খোলার আওয়াজ কানে আসে আরিয়ার। বাহির থেকে এক ফালি আলো রুমে আসতেই চোখ মুখ কুচকে নেয় সে। কেউ এসেছে রুমটাই..পারফিউমের কড়া সুগন্ধ। আরিয়া কারো উপস্থিতি টের পেতেই আরো জোড়ে জোড়ে উম উম করতে থাকে। একটা লোক একটু এগিয়ে এসে রুমের আলো দেয়। আলো দেখতে পেয়েই যেনো তার জিবন ফিরে আসে। শান্ত হয়ে জোড়ে করে একটা শ্বাস নিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর সামনের মানুষকে দেখার জন্য চোখ তুলে তাকাতেই বড় সড় এক শকড খায়। সামনে আরুশের সেই ফ্রেন্ড সিজান খান দাড়িয়ে তার পিছনে দিশা আর তানিম দাড়িয়ে। আরিয়া ভেবেছিলো কোনো একজন এসেছে কিন্তু তার ধারনা ভুল করে দেয় ৩ টা ব্যাক্তি দাড়িয়ে আছে। আরিয়ার মাথা ঝিম ধরে আসছে। কি হচ্ছে এসব? এখানে এরা ৩ জন আটকেই বা কেন রেখেছে? আর আইরা আর দিয়া কোথায়? আরিয়ার মাথায় আইরা আর দিয়ার কথা আসতেই চোখ তুলে আশে পাশে তাকায়। এক কোণে দুজনকে ঠিক সেই ভাবেই বেধে রাখা হয়েছে যেভাবে আরিয়া কে বাধা হয়েছে। ওদের এখনো সেন্স আসেনি। ২ জন কে এমন অবস্থায় দেখে বুকের মাঝে ধক করে উঠে আরিয়ার তবুও নিজেকে সামলে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ চোখে সামনে থাকা ৩ জনের দিকে তাকায়। সিজান একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে দিশাকে ইশারা করে। দিশা মাথা নাড়িয়ে আরিয়ার কাছে যায়। আরিয়ার মুখ খুলে দেয়। আরিয়া জোড়ে করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে দিশার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়। দিশার মুখে চাপা কষ্টের ছাপ। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে সরে যায়।

“” তো মিস আরিয়া আফরিন ওয়েলকাম টু হেল।

সিজানের কথার মানে না বুঝে ভ্রু কুচকে তাকায়,,

“”মানে?

সিজান ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,,

“” মানে হলো এই যে এখন থেকে তোমার সাথে অনেক কিছু হবে আর যা তোমাকে সহ্য করতে হবে। অবশ্য এছাড়া কোনো উপায়ও নেই। ভেবেছিলাম তোমার সো কলড হাজবেন্ড মারা গেছে কিন্তু শালার তো কৈ মাছের জান ঠিকই বেচে আছে। সবাই কি আর সাধে বলে আরুশ আরফান কে মারা সহজ নয়। তবে হ্যা মানসিক যন্ত্রনা তো দিতেই পারি আরুশকে আর তার বউজান কে।

এটুকু বলেই ঘরকাপিয়ে হাসলো সিজান। কিন্তু সিজানের একটা কথাও যে আরিয়ার কানে যায়নি বা সে নেয়নি সেইটা তার মুখের প্রশস্ত হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এতক্ষণে দিয়ার সেন্স ফিরেছে তবে আইরার আসেনি। আরিয়া তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলে,,

“” হাহ মানসিক যন্ত্রনা ইউ মিন মেন্টালি টরচার তাও আবার আরুশ আরফান কে হাউ ফানি। এসবের চিন্তা মাথা থেকে বের করে নিজের মৃত্যুর দিন গুনতে থাক। আরুশ থাকতে না তার বউজানের কিছু হবে আর না নিজে ভেঙে পড়বে। তুই শু…

আরিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সজোড়ে এক থাপ্পড় দেয় সিজান। আরিয়া ছিটকে পড়ে যায়। থাপ্পড় টা এতো জোড়ে হওয়ায় ঠোট কেটে ফিনকি দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। আরিয়ার চোখ ভিজে আসে। থাপ্পড়ের দাগ তার গালে স্পষ্ট। এতক্ষণ দিয়া চুপচাপ সবটা দেখলেও এবার কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু মুখ বাধা তাই কথা বলতে পারছে না। সিজান দিশাকে ইশারা করতেই দিশা এবার দিয়া আর আইরা দুজনেরই মুখ খুলে দেয় যদিও আইরা সেন্সলেস তবুও খুলে দেয়। সাথে সাথে দিয়া বলে উঠে,,

””আরি..আরিয়া তুমি ঠিক আছো তো। কে আপনারা? ওকে মারছেন কেন? আমাদের কিডন্যাপ কেন করেছেন?

“” রিল্যাক্স! বলছি বলছি। প্রথমত আরিয়া আমরা এমন একটা জায়গায় আছি যেখানে আরুশ কেন কেউই আসতে পারবে না। আর জানো তো মেয়েদের এত উচু গলায় কথা বলা আমি মোটেও পছন্দ করি না কিন্তু তুমি উচু গলায় কথা বলার সাহস দেখিয়েছো তাই শাস্তি তো তুমি এক্সট্রা করে পাবে। ভেবেছিলাম তোমাদের ৩ জনকেই পাচার করে দেবো। কিন্তু না..এখন শুধু এই ২ টাকে পাচার করবো আর আরিয়া তোমাকে তো মৃত্যু যন্ত্রণা দেবো নিজে হাতে।

আরিয়া চুপচাপ শুনে মৃদু হেসে দিশার দিকে তাকালো। দিশা সিজানের পিছে ছলছল চোখ নিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে। পাশেই তানিম ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। আরিয়া সিজানের দিকে তাকিয়ে বলে,,

“” এত সহজ হবে কি?

আরিয়ার কাট কাট জবাব যেন সিজানের গায়ে কাটার মতো বিধছে। এই মেয়ে তার কাছে বন্দী হয়েও এত স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে কথা বলছে?

“” সহজ ই হবে তবে তোমারো অনেক কিছু জানার আছে। আগে জেনে নাও!

আরিয়া ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলে,,

“” কি জানার আছে আমার?

সিজান বাকা হেসে বলে,,

“” স্মৃতি!

স্মৃতির নামটা শুনতেই আরিয়ার বুকের ভিতর ধপ করে উঠে। আবার কি জানবে স্মৃতির বিষয়ে? কোন সত্যি মুখিয়ে আছে তার জন্য? কোনো ভাবেই সেই সত্য আরুশের বিরুদ্ধে না তো? না না এমনটা যেন না হয় সেটাই বার বার বলে যাচ্ছে আর শান্ত করছে নিজেকে। জিভ দিয়ে ঠোট টা ভিজিয়ে দম নিয়ে বললো,,

“” স্মৃতি আপুর বিষয়ে কি জানেন আপনি?

“” ওহ বাবা স্মৃতির ব্যাপারে বলতেই এতটা আগ্রহ!ওকে নো প্রবলেম আমিও তো বলবো তোমাকে। অন্তত মরার আগে সব সত্যি টা তো তোমারও জানা উচিত।
২ বছর আগে আমি শুভ আর আরুশ এক সাথেই থাকতাম। স্মৃতিকে প্রথম দেখায় আমারো ভালো লেগে যায়। অবশ্য মেয়ে মানেই আমার বেডে আনা ছাড়া আর কিছুই না। ওইসব ভালো টালো আমি বাসতে পারি না। স্মৃতিকে প্রোপোজ করলে সবার সামনে অপমান+থাপ্পড় দেয়। এত সাহস ওর?কাজটা খুব খারাপ করেছে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। শুভ আমার বরাবরই ভালো বন্ধু ছিলো কিন্তু আরুশের জন্য আমার থেকে দুরে দুরে থাকতো। আরুশ সব সময় আমাকে হেয়ো করে জিতে যেত যেইটা আমার পছন্দ না বরাবরই। শুভ আর আরুশের মধ্যে ঝামেলা আর স্মৃতির থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্ল্যান করলাম। স্মৃতির মার্ডারের ২ দিন আগে শুভ আর আরুশকে বলি আমি দেশের বাহিরে যাচ্ছি ওরাও তাই মেনে নেয়। দুদিন পর স্মৃতির বাড়ি গিয়ে ওকে ভয় দেখিয়ে ভুলভাল চিঠি ভিডিও এসব বানায়। অবশ্য এত সহজে ভয় পায়নি তোমাদের ২ বোন আর বাবার ভয় দেখিয়ে ওই সব বানিয়ে ওকে ওখানেই মেরো রেখে আসি পরে তোমার কাছে সব প্রুফ পাঠিয়ে দেয় আর তুমিও সবটা বিশ্বাস করে আরুশের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যাও কিন্তু সেখানেও ওই আরুশ আরফান বেচে যায়। কিন্তু এত সবের মধ্যেও শুভ আর আরুশের বন্ধুত্ব ভেঙে গেছে। কি যে শান্তি পেয়েছি। তারপর দেখলাম তুমি নেমেছো মাঠে আমিও দিন গুনতে লাগলাম সুযোগ আসলেই সব শেষ করে দিবো। ওই আরুশ…আরুশ আমার সব বরবাদ করে দিয়েছে ওর জন্য মাফিয়া গ্যাংয়ের লিডার হতে পারিনি ওর জন্য বিজনেসেও পিছিয়ে গেছি। মেয়ে পাচারকারীর লিডার আমি তাও ওই আরুশের জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে।

শেষের কথা গুলো প্রচন্ড জোড়ে চেচিয়ে বললো সিজান। তানিম এসে সিজানকে থামাতে থামাতে বলে,

“” ভাইয়া সামলাও নিজেকে। কি করছো এসব? আগে এদের শাস্তি পরে আর সব হবে।

আরিয়া যেন একের পর এক শকড হয়েই যাচ্ছে। এই জঘন্য লোকটার ভাইয়ের সাথে দিশার বিয়ে? কিভাবে?কেন?দিশা কি জেনেও বিয়ে করবে?

সিজান গিয়ে আরিয়াকে টেনে তুলে নিজের সব শক্তি দিয়ে পরপর কয়েকটা থাপ্পড় দেয়। আরিয়া টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়। ফর্সা গাল টাই একদম স্পষ্ট ছাপ বসে গেছে। ঠোটের ফিনকি বেয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে। সিজান আরিয়াকে টেনে তুলে আরেকটা থাপ্পড় দিতে যায় এমন সময় কেউ সিজানের হাত ধরে আরিয়ার সামনে গিয়ে বুক বরাবর লাথি দেয়। সিজান হঠাৎ আক্রমণে চমকে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে আরুশ দাড়িয়ে। কপালের রগটা ফুলে উঠেছে চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে চুল গুলো এলোমেলো। ভয়ংকর লাগছে আরুশকে। সিজান জানে আরুশ রেগে গেলে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তার উপর আবার বিশ্বাসঘাতক। সিজান বার বার আশে পাশে তাকাচ্ছে। কয়েকটা গার্ড এসে তানিম কে ধরে রেখেছে।

“” আশে পাশে কাকে খুজছিস? তোর ওই সব গার্ড দের? যা দেখ গিয়ে সব গুলো মার খেয়ে কাত হয়ে গেছে।৷ মরে গেছে কি না তা জানি না।

সিজান আরুশের কথায় কয়েকটা ঢোক গিলে বলে,,

“” আব..আরুশ তু..তুই এখানে?

আরুশ সিজানকে কিছু না বলে টেনে তুলে। তারপর কলার ধরে সপাসপ ৩ টা থাপ্পড় দেয়। সব শক্তি দিয়েই দিয়েছে।

“”এত বড় কলিজা তোর? তোর কলিজায় টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি। তুই আমার আরিয়ার গায়ে হাত তুলেছিস!এত সাহস তোর? তোর হাতটাই ভেঙে ফেলবো আমি।

এটুকু বলেই আরুশ সিজানের হাত মুচড়িয়ে ধরে। এতক্ষণে সেখানে শুভ এসে দাড়ায়। সিজানের চেচানো তে আরুশ মুখের মধ্যে রুমাল গুজে দেয়। ওভাবে ধরে রেখেয় বলে,,

“” ভেবেছিলাম তোকে মারবো না পুলিশের হাতে তুলে দিবো কিন্তু না তোকে আমি নিজের হাতে মারবো। তোর মতো জানো*** বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।

আরুশ আরো অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করছে। আরিয়া শুধু অবাকই হচ্ছে,,শুধু আরিয়া না দিয়া আইরা দিশা ওরাও অবাক হচ্ছে অন্যদিকে সবাই খুশি হচ্ছে। আরিয়া ঠোটের ফিনকি থেকে এখনো রক্ত পড়ছে। সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে এখন আরুশের এই ভয়য়ংকর রুপ দেখতে ব্যস্ত।

আরুশ অনেক গুলো লাথি থাপ্পর গুষি এমন কি হটিস্টিক দিয়েও মেরেছে। সিজান নিচে শুয়ে কাতরাচ্ছে শুধু।

“” তোকে এখনি মরলে চলবে? দাড়া সারপ্রাইজ আছে তো!

শুভ এতক্ষণ দেয়ালে হেলান দিয়ে সিজানকে মারতে দেখছিলো সিজান শুভর কাছেও অনেক সাহায্য চেয়েছে সেদিকে অবশ্য শুভ কানও দেয়নি। আরুশ কিছু ইশারা করতেই সে চলে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যে রুমে ঢুকে শুভ আর তার সাথে অন্য একজন ব্যাক্তি। সিজান তো হা হয়ে গেছে। চোখ যেন কোটোর থেকে বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। আরিয়া আইরা দিয়া দিশা ওরাও শকড….

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️

হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here