#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ১৫+১৬
.
.
.
মাসুদ সাহেব ঃ
মা-বাবা, মামুন আর আমি এই চারজনকে নিয়ে খুব ভালোই দিনগুলো যাচ্ছিলো।
মামুন আমার যমজ বড় ভাই, তেমনই আমার খেলার সঙ্গীও। দুই ভাইয়ে ভাইয়ে খুব মিলেমিশে থাকতাম।
কিন্তু সব ভালো বেশি দিন থাকেনা ফাটল ধরবেই সেই সম্পর্কের মধ্যে।
আমাদেরও সেই একই অবস্থা হলো।
প্রাইমারী স্কুলে একই ক্লাসে ছিলাম আমরা। আমি লেখাপড়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকতাম আর মামুন খেলাধুলা নিয়ে। পরিক্ষার রেজাল্টে আমি ফার্স্ট ছিলাম সবসময়। মামুন পাশ অবধি করতো না, কারন ও কখনো বইয়ের ধারে-কাছেই যেতোনা।
মা-বাবা রেজাল্টের জন্য আমায় ভালোবাসতেন কিন্তু মামুনকে যে ভালোবাসতো না এমনটিও নয়। শুধু রাগ দেখাতো, ধমকাতো যাতে ও একটু লেখাপড়ায় মন দেয়।
এভাবে প্রাইমারির, সময়টা কেটে যায় যখন নাইনে পড়ি তখন মামুন ওর বন্ধুদের সাথে মিশে অধিক বেমানান হয়।
ক্লাস নাইনে থেকেই সিগারেটের মধ্যে ডুবে থাকতো। এমনকি সারাক্ষন টাকার জন্যও মায়ের সাথে ঝগড়া করতো।
এসএসসি পরিক্ষার পরে মামুনের আরও পরিবর্তন ঘটে।
সারাক্ষন শুধু টাকা আর টাকা , বাবা সাধারণ একটা প্রাইমারির শিক্ষক ছিলেন। যা বেতন পেতেন তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ, বাবার ওষুধ এইসবেই অনেকটা টাকা খরচ হতো। কিন্তু মামুনকে যা পারতো বেশিই দিতো।
কিন্তু তাতেও যদি মামুন ভালো থাকতো তাহলে আমাদের কোনো কষ্টই লাগতো না।
ওর বন্ধুদের সাথে নোংরা কাজে লিপ্ত হইছে পর্যন্ত। নেশা করা, টাকার বিনিময়ে অন্যের সাথে মারামারির কাজে লিপ্ত হওয়া ওর পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমি ভাইকে কয়েকবার নিষেধ করছি উল্টো আমায় মারছে, আর মা-বাবার কাছে আমার নামে বিচার দিতো। কিন্তু মা-বাবা ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করতো না। তারা জানেন আমি কিরকম ছিলাম।
তাই মামুন সবসময় আমাকে সবার সামনে খারাপ করে তুলে ধরার চেষ্টা করতো।
একদিন বাবার কাছে বিচার আসে মামুনের নামে।বাবা অনেক অপমানিত হন।
সেদিন বাড়িতে ফেরার পরে মামুনকে মারধর করেন বাবা। এক পর্যায়ে মামুন বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
তিনি নিজেও একজন অসুস্থ বয়স্ক মানুষ ছিলেন তাই সহ্য করতে পারেননি চলে যান সবাইকে ছেড়ে।
মামুনের বয়স কম ছিলো কিন্তু ওর অত্যাচারের জন্য গ্রামের সবাই অশান্তিতে ছিলো। তাই বাধ্য হয়ে আর খুন করার জন্য মামুনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
বাবার মৃত্যুর ৩ দিন যেতে না যেতেই গ্রামের সবাই আমাদের বাড়িঘর ছেড়ে আসতে বলে। আমরা থাকলে নাকি মামুন আবার সেখানে যাবে। আর অকারণেই ঝামেলা বাঁধাবে।
আমরা যদি না থাকি তাহলে গ্রামবাসীরা নাকি মামুনকে গ্রামে উঠতে দিবেনা। যদি আমরা থাকি তাহলে মামুন ঝামেলা বেঁধে উঠবে।
তাই এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে বাবার শেষ স্মৃতি থেকে চলে আসতে হয় গ্রাম ছেড়ে।
মা ও সঞ্চয়ের জমানো কিছুটা টাকা সাথে। ঢাকার শহর অচেনা রাস্তা কিছুই চিনিনা।
বাস টার্মিনালে বসে আছি মাকে সাথে নিয়ে। আমি না খেয়ে থাকতে পারবো কিন্তু মাকে তো খাবার দিতে হবে।
আমার লেখাপড়া না হয় শেষ হয়ে গেল এখন তো রোজগারের জন্য পা বাড়াতে হবে নয়তো খাবো কি!! আর মাকেই বা উপোস রাখবো কিভাবে!!
কোনোরকম একটা ভাড়া বস্তিতে উঠলাম কিন্তু মাস শেষে তো ভাড়া দিতে হবে। খাবার জোগাড় করতে হবে, তাই আমি কাজ খুঁজতে নামলাম।
মা অনেকবার নিষেধ করছিলো আমি শুনিনি।
আমার মা কম যায়না। মা হন তিনি সবার বড় জান্নাত। আমার সুখের কথা ভেবে তিনিও কাজ খুঁজে দিতে বললেন। যাদের সাথে কয়েকদিনেই পরিচয় হইছে তাদেরকে।
আমি সন্ধ্যায় হতাশ হয়ে ঘরে ফিরলাম কোথাও কোনো কাজ নাই। কাজ তো এতোটা সহজ কথা না। যে মুখ থেকে বললেই কাজ সামনে চলে আসবে।
ঘরের আসার পরে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা হাসিখুশি আছে। আমি ঘরে আসামাত্রই আমাকে জরিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,,,
আমাকে আর কাজ খুঁজতে হবেনা, তিনি কাজ পেয়েছেন।
এখন নাকি আমায় লেখাপড়ায় মনযোগী হতে হবে। তারপর অনেক বড় হবো।
মায়ের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকাই। তিনি মুচকি হাসি দিয়ে বললেন আমার ছেলে বাংলাদেশের একজন সম্মানিত মানুষ হবে। তারপর আবার আমাকে জরিয়ে ধরলেন।
কিন্তু তার সেই হাসির আড়ালে যে কান্না লুকিয়ে ছিলো আমার চোখ এড়োয়নি।
তবুও মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম না কারন মায়ের আদর পাচ্ছি তো। যেখানে কোনো অবহেলা নেই।
কিন্তু মা কি কাজ করবেন!! এই শহরে কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা।
সকালে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি মায়ের কোলেই ঘুমিয়েছিলাম। মায়ের দিকে তাকানো মাত্রই মায়ের মুখে এক চিলতে হাসি দেয়। আমি মুগ্ধ নয়নে মায়ের পবিত্র ভালোবাসার হাসি দেখছি।
মা বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তোকে আবার কলেজে ভর্তি করবো।
তিনি একটা ছোট হাসি উপহার দিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে গেলেন। আমি স্তব্ধ হয়ে তখনও বসে রইলাম। দুই-তিন দিন পরে আমাকে একটা কলেজে ভর্তি করলেন।
অসময়ে!!! এখনো কলেজের ভর্তি চলছে তাই হয়তো সুযোগ পেয়েছিলাম আবার লেখাপড়ার।
আমাদের পাশের বাসায় এক আন্টি ছিলো (নিলয়ের নানি) সেই মুলত মাকে কাজ খুঁজে দিছিলো। ভালো সম্পর্ক ছিলো তার সাথেও । বলতে গেলে মা আর আন্টি(নিলয়ের নানি) বোনের মতো ছিলেন।
একদিন কলেজ থেকে ফিরে আসার পরে প্রায় দুই ঘন্টার মত অপেক্ষা করি কিন্তু মায়ের কোনো খোঁজ নেই। যেখানে মাকে প্রতিদিন আমি আসা মাত্রই দেখতে পেতাম।
ছুটে যাই আন্টির কাছে কিন্তু তিনি বলেন মা নাকি এখনো আসেনি।
তিনি আমাকে মা যেখানে কাজ করতেন সে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু আফসোস মা নাকি অনেক আগেই বেরিয়ে গেছিলেন।
এত বড় শহর কোথায় খুঁজবো মাকে। ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছি আমি আর আন্টি। আন্টির নাকি পানির তেষ্টা লাগছে তাই একটা চায়ের দোকানে যাই।
কত ভাগ্যবান ছেলে আমি, আমার মায়ের ছবি তুলে টিভিতে দেখাচ্ছে। মা রাস্তার পাশ ধরে আসার সময়ে নাকি গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়।
স্তব্ধ হয়ে রইলাম, আমার মাথার উপরে শেষ ছায়াও চলে গেল, আমার জান্নাত চলে গেল।
যে হাসপাতালে আছে সেখানে চলে গেলাম , যেয়ে দেখি আমার মা সাদা কাপড় জরিয়ে শুয়ে আছে।
বাড়িতে দাফন সম্পন্ন হলো কিন্তু দাফনের পরেই আমাকে বাড়ি ছাড়তে হলো। নয়তো মামুন ঝামেলা করতে পারে, সন্দেহের বসে আমায় গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করলো সবাই।
চলে আসছি আবারো সেই বস্তিতে, যেখানে মায়ের শেষ স্মৃতি জরিয়ে আছে।
আন্টির ছেলে নেই নিজের ছেলের মতো আমার দায়িত্ব নিলেন। যদিও তার অহরহ ছিলোনা, আপুর(নিলয়ের মা) তার অবদানে কোনোরকমে ইন্টার শেষ করছি। যদিও তিনি লেখাপড়া করেননি কিন্তু একজন সত্যিকারের বোনের দায়িত্ব পালন করছে।
টিউশনি করি, ইন্টারের রেজাল্টও ভালো হয়। একটা পাব্লিক ভার্সিটিতে চান্স হয় নিজের টিউশনির টাকা দিয়েই চলতে পারতাম। সাথে আন্টিকেও সাহায্য করতাম।
ভার্সিটিতে নতুন পরিবেশ কিভাবে কি থাকবো বুঝতে পারিনা সারাক্ষন মনে হয় এখানেও হয়তো মামুনের মত কেউ থাকবে।
কিন্তু না ভালো খারাপ মিলিয়েই আমাদের সমাজ গঠিত। প্রথম দিনেই একজন বন্ধু পাই আশরাফ যে প্রতিটি পদক্ষেপে আমার সাথে ছিলো।
!
দিনগুলো যাচ্ছিলো ভালোই। আশরাফের বিয়ে ঠিক হয় কিন্তু পরে জানতে পারি আমার বিয়েও ঠিক করছে ও। ওর বউয়ের বান্ধবী দুইজন একঘরে না থাকতে পারলেও দুই বন্ধু দুই বান্ধবীকে বিয়ে করি।
!
দিনগুলো সুখের যাচ্ছিলো, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি কিন্তু যারা অবদানে ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ আর বেঁচে ছিলোনা।
!
!
সুখের দিন আমার কপালে বেশি থাকেনা। আবারও প্রমান পেয়েছি তার।
তুই(আদ্রিয়ান), মনি আমাদের সাথে মেলায় ছিলি। এতবার আশরাফ আর আফসানাকে আসতে বলছিলাম ওরা আসলো না। আফসানার মাথা ব্যাথা ছিল তাই আশরাফও আসেনি।
মনি কান্না করছিলো তাই ওর জন্য আমরা আসতে বাধ্য হইছি।
মেলা থেকে যখন বাসায় যাই তখন দেখতে পাই দুইটা নিথর দেহ পরে আছে।ছুটে যাই কলিজার বন্ধুর কাছে।
তারমধ্যেই পুলিশ আসে আমার সামনে থেকে আমার কলিজার বন্ধুকে নিয়ে যায়। শত বাঁধা দিয়েও রাখতে পারিনি।
কিন্তু পুলিশ নাকি কোনো প্রমান পায়না। কে খুন করছে, কেন করছে তারা কিছু করেনা।
খুন হবে কিন্তু বিচার হয়না, আল্লাহর কাছে বিচার দেই। তিনিই একমাত্র ভরসা ছিলেন।
তোর(আদ্রিয়ান) উপরে যাতে এসবের প্রভাব না পরে তাই বিদেশে পাঠিয়ে দেই। মনিকে আমাদের কাছে রেখে দেই। আমি অফিসে কাজ করতাম তাই বাসার খোঁজ খবর তো আমার জানার কথা না। একদিন বাসায় ফিরে দেখি ছোট্ট মেয়েটি(মনি) মন খারাপ করে বসে আছি। আমি শতবার জানতে চাইলেও কিছু বলেনা।
আমি আর জানার চেষ্টা করিনি, আমি ভাবি হয়তো মা-বাবার কথা মনে পড়েছে তাই মন খারাপ।
কিন্তু তা না,,,রাহিমা আসার পরেই খেয়াল করলাম ওর উপরে মানুষিক অত্যাচার বেড়েই যাচ্ছে। রোহানাকে যতবার বুঝিয়েছি ও বুঝার মতো অবস্থায় ছিলনা।(কথাটি শুনে রোহানা বেগমের মুখটি অন্ধকার হয়ে গেল)
অনেকবার রাহিমার হাসবেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করছি ও বলছে হাসবেন্ড বিদেশে থাকে।
রোহানা জিজ্ঞেস করলে ও কিছু বলতে পারেনা কারন রাহিমা নিজে বিয়ে করছে।
একদিন অফিস থেকে একটা ডিল করার জন্য রেস্টুরেন্টে যাই। সেখানে যাওয়া মাত্রই চোখ আটকে যায় পাশে টেবিলে।
রাহিমা!! আর পাশে আমারই নিজের ভাই মামুন। ওরা দেখার আগেই আমি অন্যদিকে সরে যাই।
অনেক খোঁজাখুঁজির পরে জানতে পারি রাহিমার হাসবেন্ডের নাম মামুন। তার মানে আমার ধারনাই ঠিক ছিলো।
বাসায় ফিরে যখন মনি মায়ের মুখ দেখলাম আবারও মন খারাপ। আস্তে আস্তে মেয়েটি বড় হইছে এখন আমি কোথায় বা রাখবো ওকে। শহর ভালোনা, তাছাড়াও খুনের সাথে যে মামুন জরিত ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই আমার। ওর কাছে এই বাচ্চা মেয়েটির ক্ষতি করা কোনো ব্যাপার না।
তাই অনেক বাঁধার সম্মুখীন হলেও মনি মাকে আমার চোখে চোখে রাখি। আমার একমাত্র কলিজার বন্ধু আশরাফের কলিজার টুকরো।
নিলয়ের সাথে কি ঘটছে তাও জানতে পারি, মামুন আর রাহিমাকেই দেখেছিল নিলয়। কিন্তু আমি মামুনের ভয়ে কাউকে ওর কথা প্রকাশ করতে পারছিলাম না। তাহলে নাকি মনির ক্ষতি করবে। ও মুখে যা বলে তাই করে। তাই আমিও নিজেকে শক্ত রাখছি।
তুই যেদিন নিলয়কে খোঁজার উদ্দেশ্যে গেলি আমিও গেছিলাম কিন্তু তুই তার আগেই ওকে সরিয়ে দিছো।
কিছু ঘটতে পারে মামুনের জন্য, তাই তোর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মনির সাথেই বিয়ের তোর বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি তোদের বিয়ে হয়ে গেছে।
যখন কথাটি শুনি আমার থেকে কেউ মনে হয়না যে বেশি খুশি ছিলো। ধুমধামে অনুষ্ঠান করি, কিন্তু হঠাৎই মামুনের কল আসে ছুটে যাই সেখানে।
ওর মেয়ে রিয়া পাগলের মত হয়ে গেছিলো তোর বিয়ের কথা শুনে।
কিন্তু এখন ওর হাতে মরলেও আমার আফসোস থাকবেনা কারন আমার বন্ধু আশরাফের শেষ ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারছি।
কথাগুলো বলে মাসুদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস নিলেন। কোনো কথা আর আজকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখেননি।
রোহানা বেগমের মনে তার ই করা অত্যাচার গুলো জেগে উঠলো। যা ভেবে ভেবে তিনি আফসোসে ভুগছেন।
আদ্রিয়ান মাসুদ সাহেবের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো। যে বাবা কিনা আমার বা আমাদের ভালোর জন্য কতোকিছু করছেন
নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখা কত কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন তাকে আমরা ভুল বুঝছি।
এক পর্যায়ে আদ্রিয়ান মাসুদ সাহেবকে জরিয়ে ধরলো।
বাবা-ছেলের ভালোবাসা দেখে রোহানা বেগমের ঠোঁটে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
—————————————-
রাত ১২ টা
আদ্রিয়ান রুমে যেয়ে দেখে মনি ঘুমিয়ে গেছে। আজকে আর মনিকে রাগাতে ভালো লাগছেনা আদ্রিয়ানের তাই নিজেও শুয়ে পরলো। মাসুদ সাহেবের বলা কথাগুলো মনে পরছে আদ্রিয়ানের।
আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম, ঘুম আসছেনা।
কিন্তু আদ্রিয়ান আজকে আর কিছু বলছেনা।
তাই অপেক্ষায় রইলাম কখন বজ্জাত ঘুমিয়ে যাবে।
কিছুক্ষন পরে বুঝতে পারলাম সে ঘুমের রাজ্যে পারি দিছে তাই আমিও আমার স্থানে পারি জমালাম( আদ্রিয়ানের বুকে)।
একদিনেই অভ্যাস হয়ে যায়!! আসলে আমরা অভ্যাসের দাসত্ব করি। যা মন চায় তাই করি।
কিন্তু হঠাৎ মনে হলো দুটো হাত আমায় জরিয়ে আছে। পরক্ষণেই কানে ফিসফিস করে বললো,,,,
বউ আমায় ভালোবাসতে শিখেছে। আমি মুখ তুলে তাকিয়ে থতমত খেলাম।
এই বজ্জাত বেটা এখনও জেগে আছে!!
#চলবে
(গল্পটি কি বড় করবো?? নাকি কয়েক পর্বের মধ্যেই শেষ করে দিবো?
জানাবেন সবাই☺)
#তোর_জন্য
#sumaiya_moni
#পার্টঃ১৬
.
.
.
আদ্রিয়ান ঃ ভাগ্যিস ঘুমাইনি। নয়তো এত সুন্দর মুহুর্ত দেখতে পারতাম না।
আমি তার কথা শুনে মাথাটা সরিয়ে নিতে চাইলাম। কিন্তু তা স্বপ্নই থেকে গেল।
আদ্রিয়ান ঃ কি! এখানে ভালোলাগছে না?
আমিঃ উহু
আদ্রিয়ান ঃ তো কোথায় যাচ্ছো! চুপচাপ শুয়ে থাকো।
একটু নড়াচড়া করলে কিন্তু ভাবনাকে আনবো(হেসে)
এখন তোমার ইচ্ছা তুমি কি করবে।
আমিঃ এই কোন বজ্জাতের পাল্লায় পরলাম।
চুপচাপ তার কথামত শুয়ে রইলাম। নয়তো কি না কি করে বসে এর ঠিক নাই।
—————————————-
সকালে মাসুদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খবরের কাগজে মনযোগ দিলেন।
মাসুদ সাহেবের পাশেই অন্যরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।
হঠাৎ মাসুদ সাহেবের চোখ কপালে উঠার উপক্রম।
রাহুল!! খবরের কাগজে বড় করে রাহুলের মুখটা দেখা যাচ্ছে। আর ছবির নিচেই লেখা ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করছে।
মাসুদ সাহেবের বেহাল অবস্থা দেখে রোহানা বেগম তারাতারি কাগজটি হাতে নিয়ে দেখলেন। কিন্তু তার অবস্থাও মাসুদ সাহেবের মত, যতই হোক ছোট থেকে ছেলেটিকে দেখছে।
এভাবে জঘন্য কাজে যে লিপ্ত হবে এটা ভাবেনি।
আমিও পাশে ছিলাম। রাহুল ভাইয়ার কথাটি শুনে খারাপ লাগলেও সেদিনের কথা মনে পরলো।
আদ্রিয়ান যদি না থাকতো তাহলে হয়তো আমারও আজকের মেয়েটির মত অবস্থা হত।
কিন্তু তার পাপের শাস্তি যেন তিনি পায়।
আদ্রিয়ান, আশিক ভাইয়া সকাল থেকে কই যেন গেছে আর মোহনা আপুকেও দেখছিনা। মনে হয় তাদের সাথেই আছে।
কিন্তু আদ্রিয়ান!! মোহনার সাথে থাকলে তো নির্ঘাত ওই মেয়ে কিছু করবে। কেমন ভাবে আদ্রিয়ানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
মনে চায় চোখ দুটো উঠিয়ে ফেলি।আর আমার বজ্জাত জামাই আছে তার তো ভালো লাগে।
কিন্তু আমাই তাকালেই তার উপর যত নজর পরে।
তাকাবোনা আমি। হুহ,,,,।
-কার দিকে তাকাবেনা?
এতক্ষন রুমে পায়চারি করছিলাম আর কথাগুলো বলছিলাম। কিন্তু কারো কথা শুনে দড়জার দিকে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আসছে।
~আপনি!!
আদ্রিয়ান ঃ তো! অন্য কাউকে আশা করছিলে নাকি??
আমিঃ আপনার মত আমি না। হুহ…..!
সারাক্ষন অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করবেন আর বউ তাকালেই আপনার উপর নজর পরবে।
আদ্রিয়ান ঃ কোন মেয়ে!!(অবাক হয়ে)
আমিঃ এখন সাধু সাজলে কিছুই হবেনা। সকালে একবারের জন্যও বকে যাননি। আবার ওই মোহনা সারাক্ষন পিছুপিছু ঘুরবে। তার সাথে কিসের এত কথা?
আমি থাকলেই যে সব কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়!!
আদ্রিয়ান ঃ কেন! হিংসে হয়?(হেসে)
আমিঃ সারাক্ষন ফাজলামি ভালো লাগেনা।
এরপরে যদি আর একবারো দেখি, তাহলে আপনার একদিন কি ওই মোহনার একদিন।
আদ্রিয়ান ঃ কেন কেন! মোহনার সাথে কথা বলবো না কেন!!একশো বার বলবো(হেসে)
আমিঃ কিইইইই(রেগে)। থাক তোর মোহনা নিয়ে, আমি থাকবোনা 😭
আদ্রিয়ান ঃ মোহনা আমার ভালো বন্ধু হয়। ওর সাথে কথা বলবোনা বলো??
তাছাড়া আমাদের বাসার গেস্ট।
!
আচ্ছা ঠিক আছে। এভাবে কান্না করোনা প্লিজ(হাত আদ্রিয়ানের হাতের মুঠোয় নিয়ে)
মোহনা একটা কাজের জন্য আসছে তোমাকে সাহায্য করার জন্য।তারপরেই চলে যাবে।
তাছাড়াও ও আমাদের বাড়ির গেস্ট, আর গেস্টদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হয়।
আমিঃ গেস্টদের সাথে জরাজরি করে মানুষ??
এবার থেকে যে ছেলে আসবে আমিও জরাজরি করে গেস্টদের সাথে ভালো ব্যবহার করবো।(মুখ ভেঙিয়ে)
আদ্রিয়ান মুখ হা করে তাকিয়ে আছে মনির বোকাবোকা কথা শুনে। ও হাসবে নাকি কান্না করবে কনফিউজড।
অতঃপর বলেই ফেললো,
অন্য কোনো ছেলের নাম মুখে আনলেও মেরে ফেলবো(দাঁতে দাঁত চেপে)
আমিঃ নিজে মেয়েদের নাম তো দুরের কথা বউয়ের সামনে চুমু খেতে পারেন, জরাজরি করতে পারেন। তাতে কোনো দোষ হয়না!!(চোখ রাঙিয়ে)
আদ্রিয়ান ঃ (ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরার অবস্থা। এসব আবার কখন করলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরলো রিয়া চুমু খেয়েছিলো আর মোহনা জরিয়ে ধরছে।)তাই মনিকে ক্ষেপানোর জন্য আদ্রিয়ান বললো,,,,,,
হ্যা। বউ(আর কিছু বলতে দিলোনা তার আগেই মনি মুখে হাত দিয়ে বন্ধ করে দিলো)
আদ্রিয়ান ঃ উম্মম
আমি হাত সরিয়ে অন্যদিকে ফিরে বসে রইলাম। বজ্জাত জামাই বউ রেখে অন্য মেয়েদের কথা বলছে!!
থাকুক সে তার মতো😭।
আদ্রিয়ান মনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। তারপর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
অন্য মেয়েদের পাশে দেখলে রাগ করে!! অথচ নিজেও কাছে নেয়না।
তাই আদ্রিয়ান অন্য কিছু ভেবে হাসি দিলো।
আদ্রিয়ান আমার সামনে আসেনি একবারের জন্যও। বুঝে গেছি, আমায় আর দরকার নেই তার।
রাতে আদ্রিয়ান রুমে এসে একপাশ হয়ে শুয়ে রইলো। একবারের জন্য আমার দিকে তাকালোও না। আজকে আর গতকালকে মত ভুল করবোনা।হুহ!
তার মোহনা আছে, আমায় তো আর লাগেনা।
আমি এপাশ-ওপাশ ফিরছি কিন্তু তিনি একবারের জন্যও আমার দিকে তাকালেন না।
!
আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু উঠবো যে তেমন কোনো শক্তি নেই। কারন দুইটা হাত আমায় জরিয়ে আছে।
এনাকন্ডা, ইদুর,টিকটিকি, কুমির রাতে আমার দিকে একবারের জন্যও তাকালো না। কিন্তু এখন দিব্যি আমায় জরিয়ে ঘুমানো হচ্ছে!!!
!
আমি উঠবো তখনই তার মায়াবী মুখের দিকে চোখ পরলো। আবারও ক্রাশ খেলাম কিন্তু কিছু করার নাই আমি তো রাগ করছি তার সাথে।
তাই নিজেকে সামলে তার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিলাম।
!
উঠুন, নামাজের সময় হইছে।
আদ্রিয়ান ঃ উম্মম। ঘুমাতে দাও
আমিঃ এখন নামাজের সময় হইছে, নামাজ আদায় করে যত ইচ্ছা ঘুমান।
উঠুন,,,,,,।
আদ্রিয়ান ঃ ( চোখ মেলে) উঠবো। কিন্তু শর্ত আছে। তাহলে ভদ্র ছেলের মত মসজিদে যাবো।
আমি ঃ ঠিক আছে আমি রাজি। তবুও নামাজে যাবেন।
আদ্রিয়ান ঃ এই যে একটু আগে লুকিয়ে লুকিয়ে কি যেন দিছিলে। আবার দাও(মুচকি হেসে)
আমিঃ কিইইইই(চোখ বড়বড় করে)। আপনি সজাগ ছিলেন????
আদ্রিয়ান ঃ ছিলাম তো। সজাগ না থাকলে এত সুন্দর মুহূর্ত মিস করতাম।
আমিঃ নামাজে যাবেন। তারজন্য উঠতে বলেছি সেখানেও লুচুগিরি শুরু করছেন??
তাছাড়া আপনি আমায় জরিয়ে ঘুমিয়েছিলেন কেন শুনি??
রাতে তো বেশ একাএকা ছিলেন(মন খারাপ করে)
আদ্রিয়ান ঃ ওরে বউ আমার অভিমান করছে(হেসে)।
কে বলছে আমি একাএকা ছিলাম!! হুম্মম্ম?
আমিতো আমার বউয়ের সাথেই ছিলাম। কিন্তু বউ ঘুমে বিভোর ছিলো তাই বুঝতে পারেনি।
আমিঃ এখন বানিয়ে বানিয়ে কোনো কথা বললেও বিশ্বাস করছিনা। ইগ্নোর করছেন আমায়😭।
কালকে আপনি আমার সামনেও আসেননি।
আদ্রিয়ান ঃ ভাবনার আম্মু!!(করুন ভাবে তাকিয়ে)।
একটা কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই আসতে পারিনি।
আর রাতে যখন বাসায় আসছি তখম দেখি তুমি শুয়ে আছো তাই আর ডিস্টার্ব করিনি।
আমিঃ কাজ তো সবসময় থাকে মোহনার সাথে।
আমি তো কেউ না তাই আমাকে বলারও প্রয়োজন মনে করেননি।
বলেই উঠে পরলাম।
আদ্রিয়ান ঃ আরে আরেহ কই যাচ্ছো!!
কথা ছিলো কি?
আমিঃ মোহনা আছে তো তার কাছে যাবেন।
আদ্রিয়ান ঃ এসবের জন্য😳!!!
আমিঃ যাবেন কিনা মসজিদে!! (চোখ রাঙিয়ে)
আদ্রিয়ান ঃ হ্যা যাবোতো😳।
মসজিদ থেকে এসে তিনি আবার শুয়ে পরলেন।
আমি পাশে বসে ম্যাগাজিন পড়ছি।
হঠাৎই তিনি আমার হাত থেকে ম্যাগাজিন কেড়ে নিলেন।
আশ্চর্য!! আমি যা করি তাতেই তার অশান্তি।
যত্তসব তেলাপোকা।
আদ্রিয়ান ঃ (কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে।)
আমিঃ এভাবে হা করে থাকলে সত্যি সত্যিই তেলাপোকা যাবে মুখে।
#চলবে
(প্রথমেই দুঃখিত। গল্প না দেয়ার থেকে,,,, পর্ব ছোট করে দেয়াও ভালো। তাই ছোট পর্বই দিলাম😊)