তোর_নেশালো_শহরে Part: 10

তোর_নেশালো_শহরে Part: 10
#Eshika_Khanom

আচ্ছা তুই এতো বড় হয়ে গেলি তবুও তোর বোধবুদ্ধি এতো কম কেন বল তো আমায়?
হিয়া প্রশ্ন করে তার মা।
-কেন মা তুমি আবার এই কথা বলছ কেন? তুমি তো জানোই তোমার মেয়ে সবসময় সেরা।
-হ্যাঁ তাইতো আজ তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে যাচ্ছিলি।
-আরে আমি আবার কি করলাম?
-রাহির সাথে ঐভাবে কথা বললি কেন?
-ওকে আমার সহ্য হয় না তাই। একটু ওকে কথা শুনানোর সুযোগ পেয়েছিলাম তাই সেটার ব্যবহারও করেছিলাম।
-খুব ভালো করেছ। তুমি জানো এভাবে যে তোমার ইম্প্রেশন সবার কাছে কতটা খারাপ হয়েছে?
-সেটা যে আমায় যা মনে করে মনে করুক, যা ভাবে ভাবুক, আমার কিছু যায় আসে না।
-তা আসবে কেন? মাথায় তো আর বুদ্ধি বলতে কিছুই নাই। আরে রাহি আর মিহি হল ভাবির বোনের মেয়ে। তাও এতো বছর খোজার পর পেয়েছে তাদের। তুই কেন ওদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবি? ভাবি এতে কষ্ট পেয়েছে না? ভাবি তোকে নিয়ে খারাপ মনে করল না? এমন করলে কি ভাবি তোকে নিজের ছেলের বউ করতে চাইবে? তুই তো এরিকের বউও হতে পারবি না, আর এই সম্পত্তিও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
-মিহিকে মানা যায়, তবে রাহিকে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায় আম্মু।
-একটু সহ্য কর। এরপর একবার এই বাড়ির বউ হলেই তো ক্ষমতা তোর হাতে আসবে।
-হুহ শুধু মনে হয় আমার হাতেই আসবে? ওই এরোনের বউ এর হাতে আসবে না?
-ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারবি না তুই?
-তা অবশ্যই পারবো। আমি আমার অবস্থান আদায় করে নিতে জানি।
-তবে সেই মতোই কাজ কর। এখন ঘুমিয়ে পড়, গুড নাইট।
-গুড নাইট আম্মু।

______________________________

কিছুদিন কেটে গিয়েছে দেখতে দেখতেই। এরোন এখন রিয়াকে ঘৃণা করে। এরিক বারবার বলার পরও রিয়াকে সে চিনতে পারেনা। মাঝে মাঝে নিজেকেই ধিক্কার জানায় সে। কারণ সে নিজের পবিত্র ভালোবাসাকে একটা লোভী বাজে মেয়ের প্রতি সাজিয়ে রেখে সেটার অপচয় করেছে। কিন্তু আর এই ভুল করবেনা সে। এরোন ভেবেছিল জীবনে সে আর কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা। কিন্তু মিহির আচরণে সে এতটাই মুগ্ধ, ধীরে ধীরে কখন সে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি। মিহির মধ্যে এরোন সেইসব গুণাবলি দেখতে পেয়েছে যেগুলো সে রিয়ার মধ্যে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু হায়! রিয়া তো তার ভালোবাসার মর্যাদাই রাখেনি। এরোন আবার নতুন করে মিহিকে নিয়ে নিজের জীবন সাজাতে চায়। নতুন করে নিজের জীবন মিহি নামের রঙ এ রাঙাতে চায়।

এরোন আজ স্থির করেছে মিহির সাথে বাহিরে যাবে। বিকেল ওকে নিয়ে একটু ঘুরবে, কিছু সময় কাটাবে সেটাই আজ ওর ইচ্ছা। কিন্তু মিহিকে নিয়ে যেতে হলে এরোনের তার মায়ের পারমিশন লাগবে।
যথা চিন্তা, তথা কাজ। এরোন গেল তার মায়ের কাছে অনুমতি নিতে। সে তার মায়ের রুমের দরজায় নক করে বলল,
আসব আম্মু?
এরোনের মা আফিয়া তখন নিজের বিছানায় বসে একটা বই পড়ছিলেন। এরোনকে দেখে সে বইটা বন্ধ করে দিয়ে বলেন, আস।
-মা একটা কথা ছিল।
-আজ এতো সেজেগুজে, মানে কি?
-সেটাই তো বলতে এসেছি।
-তো বল।
-আম্মু আমি আজ মিহিকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি?
-কেন? ( আফিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল)
-আসলে আম্মু মেয়েটা তো ঘর থেকেই বের হয়না, শুধু ভার্সিটি যাওয়ার জন্যেই বের হয়। আমি ভাবলাম মিহি বোর হতে পারে। আজ আমিও ফ্রি আছি, তাই ভাবলা।
-আমিও অনেক দিন ধরে বের হইনা কোথাও। চল আমিও যাব তোদের সাথে।

কথাটা শুনে এরোনের গলা শুকিয়ে এলো। সে যেন একদমই আশা করেনি তার মা এমন কিছু আবদার করবে। এরোনের মা তখন হেসে বলে উঠল,
আরে আমি তো মজা করছিলাম। আমার এখন এতো শক্তি নাই তোদের সাথে ঘুরতে যাব। তা তুই তো বাইক নিয়ে যাবি তাইনা?
-হুম।
-যা সমস্যা নাই।
-ধন্যবাদ আম্মু, তুমি সবচেয়ে সেরা আম্মু আমার।(এরোন তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল)
-হুম মিহিকে গিয়ে বল, ও যদি যেতে চায় তাহলে ওকে নিয়ে যা।
-হুম।

এরোন তার মায়ের রুম থেকে চলে যেতে নিল তখন আফিয়া আবার বলে উঠল,
আচ্ছা আমার বড় ছেলেটা কি মিহিকে আমার বড় বউমা করতে চায়?

এরোন থমকে দাড়ায় এই কথা শুনে। আফিয়া এরোনকে বলে, আমার দিকে তাকা।

এরোন মাথা নিচু করে তার মায়ের দিকে ঘুরে। তখন আফিয়া এরোনকে বলে,
মেয়েদের মতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন? বল? ভালোলাগে ওকে নাকি ওকে ভালোবাসিস?

এরোন তার মাকে জানায়, ভালোবাসি আমি মিহিকে।

আফিয়া মুচকি হেসে বলে, আমিও মিহিকে আমার বড় বউমা করতে চাই। যা ওকে নিয়ে ঘুরতে যা এখন, সাবধানে যাবি।

এরোন পুরো অবাক হয়ে গেল। সে জিজ্ঞেস করল,
মা তুমি সত্যি বলছ?
-হুম।
-লাভ ইউ আম্মু।(এরোন তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল)
-এবার যা।
-তাড়ায় দিচ্ছ?
-না বউমার কাছে পাঠাচ্ছি। যা!
-টাটা
-টাটা।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাধছিল মিহি। আজ তার কিছুই ভালো লাগছে না। মনটা কেমন যেন আনচান করছে। কেন যেন মনটা তার বলছে আজ খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। ভালো লাগছে না তার একটুও। সে একবার একরকম করে চুল বাধছে আবার খুলে আরেকভাবে চুল বাধছে। আর তাকে বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করছে এরোন। এরোন মুগ্ধ নয়নে মিহির চুলগুলো দূর থেকে দেখছে। তার ইচ্ছে করছে টুক করে গিয়ে একটু মিহির চুলগুলো ছুয়ে দিয়ে আসবে সে। কিন্তু তার তো সেই অধিকারটা নাই। মিহি আরেকবার চুল খুলে ফেললো।আবার আরেকভাবে যখন সে বাধার জন্যে মনস্থির করলো তখন এরোন বলে উঠলো,
থাক না খোলা তোমার ওই অবাধ্য চুল, দাও এদের মুক্তি। তোমার চুলগুলো হাসবে, খেলবা, মনের সুকজে উড়বে। তোমার প্রানবন্ত চুলগুলোকে আমি দেখব আখি মেলে।
মিহি চমকে তাকায় এরোনের দিকে। এরোন কি বলল সেটা তার মাথায় ঢুকতে যথেষ্ট বেগ পেতে হল। মিহি আমতা আমতা করে বলল,
কি করছেন এখান দাঁড়িয়ে?
-আমার বাড়ি এটা, আমার যেখানে খুশি সেখানে আমি যাব। তোমার কি?
-না আমার কিছুনা।
এটা বলে মিহি নিজের চুলে খোপা করে ফেলার জন্যে উদ্যত হলে এরোন ধমক দিয়ে উঠে।

-এই মেয়ে তোমাকে না বললাম চুল খোলা রাখতে। আবার ত্যাড়ামি করে চুল বাধো কেন?
-আমার চুল আমার ইচ্ছে।
-না আমার বাড়িতে থাকো তুমি তাই আমার ইচ্ছে।
-ইস সে মনে হয় আমার বর, তার ইচ্ছে থাকবে।
-বর হলেও ক্ষতি নেই বলো? (মিহির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল এরোন)

মিহির বুকটা কেপে উঠল। শিড়দাড়া দিয়ে যেন ঠান্ডা প্রবাহ বয়ে গেল। মিহি বলল,
কি জন্যে আমার এখানে তলব আপনার?
-এইতো বুদ্ধিমতী মেয়ে। চল পয়েন্টে আসা যাক। আজ আমি আর তুমি বাহিরে যাব।
-কই যাব?
-এমনি ঘুরতে?
-আমি কেন যাব? আমি যাব না।
-আম্মু বলেছে এরপরও যাবা না তুমি?
-খালামনি বলেছেন?
-হুম।
-কেন?
-তা আমি কি জানি?
-কেন জানবেন না?
-আমি জানিনা। তবে চিন্তা কইরো না হানিমুনে পাঠাচ্ছে না আমাদের। অবশ্য বললেও আমার সমস্যা ছিল না।
-কি বললেন?
-বললাম মিহি তুমি রেডি হও। দেরি হিয়ে যাবে নাহলে।

মিহিকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না এরোন। চলে গেল মিহির রুম থেকে। মিহির মাথার উপর দিয়ে যেন গিয়েছে এরোনের কথাগুলো। মিহি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। মাথাটা চেপে নিল তার দুই হাত দিয়ে। মিহির ফোন এ টুং করে একটা শব্দ হল। সে দেখল এরোন মেসেজ দিয়েছে। মেসেজ এ লিখা, বিছানায় বসে না থেকে জলদি রেডি হও। আমি নাহলে রেডি করতে আসব তোমায় বলে দিলাম। মিহি তটজলদি উঠে পড়ল রেডি হতে।
_____________________________

এরিক ক্লাবের কাগজ ঘাটাঘাটি করছে। তার হাতে এখন ক্লাবের মেম্বারশিপ এর কাগজ। সে টাকা দিয়ে ক্লাবের সব মেম্বারের তথ্য নিয়ে এসেছে তার কাছে। সে যেকোনো ক্রমেই হোক খুজে বের করবে কে মিহিকে তার নাম নিয়ে এতো অশ্লীল চিরকুট পাঠিয়েছে। তাকে যদি সে আচ্ছামতো ধোলাই দিতে পারে তখনই সে শান্তি পাবে। E লেটার দিয়ে যার যার নাম শুরু হয় তাদের সবার নামের একটা লিস্ট করে ফেলল এরিক। এমনকি ওর বা মিহির ক্লাবের যাদের সাথে সম্পর্ক একটু খারাপ তাদের নাম নিয়ে একটা আলাদা লিস্ট বানিয়ে ফেলল। লিস্ট এ সে হিয়ার নামটাও বরাদ্দ করল। তখন তার মনে একটা খটকা লাগলো। আজ হিয়া যেভাবে রাহির সাথে কথা বলেছে তাতে মনে হয়েছে যে রাহি হিয়ার চিরশত্রু। হিয়া তাকে পছন্দ করে আর সে রাহিকে পছন্দ করে। আবার হিয়া জানে এরিক রাহিকে ভালোবাসে। কোথাও না কোথাও তার রাহির এই ব্যপারের সাথে তার মনটা হিয়ার নাম জুড়ে দিচ্ছে। অবশ্য তার ভুলও হতে পারে। কিছু তো একটা খটকা থেকেই যায় মনে। কিন্তু সেটা কি? হিয়ার উপর আজ থেকে কড়া নজর রাখবে এরিক। এতে হিয়ার কাছাকাছি যেতে হলেও সে যাবে।
_______________________________

মনটা ভালো লাগছেনা আজ রাহির। তাই একটু ঘুরতে বের হয়েছে সে একা একা। মিহিকে নিতে চেয়েছিল কিন্তু সে বাহিরে যেতে চায়নি। এখন তো মিহি আবার বাধ্য হয়ে এরোনের সাথেই বাহিরে গেল। একা একা একদমই ভালো লাগছে না রাহির। ফুটপাত দিয়ে হেটে চলেছে সে। হঠাৎ মেইন রোদের ওপারে একটা ফুচকার দোকান দেখতে পেল সে। ফুচকা রাহির বরাবরই খুব বেশি পছন্দ। কালবিলম্ব না করে তাই রাহি রাস্তা পার হয়ে ফুচকা খেতে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হল। রাস্তা পার হতে হতে সে যখন রাস্তার একদম মাঝে এসে পড়ল তখন একটা ট্রাক পুরো গতিতে এগিয়ে আসতে লাগলো তার দিকে। রাহি যখন অনুভব করল একটা ট্রাক তার দিকেই আসছে তার শরীর যেন কেমন পাথরের মতো হয়ে গেল। রাস্তার মাঝে এখন দাড়িয়ে সে। মাথায় হাজার চিন্তা ভর করল তার। সে সরে যেতে যাবে ঠিক তখন……

চলবে…..

( কাল গল্প দেইনি তার জন্যে সরি। আসলে হুট করে খালামনির বাসায় যেতে হবে ভাবিনি। আর আজকের পর্বও হয়তো আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী লিখতে পারিনি। এতোদিন আমি মিহি সেজে গল্প বলতাম, আর আজ থেকে আমি মিহির হয়ে মিহি আর বাকিদের গল্প বলব। এতো দিন লিখতাম আমি বললাম আমি করলাম, আর আজ থেকে লিখব মিহি বলল, মিহি করল। গল্পটা আর বেশি নাই। কিছুদিনের মধ্যে তোর নেশালো শহরেও আপনাদের থেকে বিদায় নিবে। বর্তমানে গল্পটা বিদায়ের দিকে মোড় নেওয়ার জন্যে প্রস্তুত। আগামীকাল থেকেই গল্প পরিণতির দিকে অবতীর্ণ হবে। আর কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here