তোর_নেশালো_শহরে Part: 09

তোর_নেশালো_শহরে Part: 09
#Eshika_Khanom

(অনেকের এরিন নামটি পড়তে সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া আপনারা অনেকেই এরিক, এরোন আর এরিন নাম তিনটিকেই গুলিয়ে ফেলছেন। তাই আজ থেকে এরিনের নাম বদলে হিয়া দিয়ে দেওয়া হল। পাঠকদের সমস্যার জন্যে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।)

হেনা ফুপ্পি বলল, আজ আমি এরিককে নিজের হাতে খাইয়ে দিব।
এরিক এটা শুনে বলে উঠল,
না!!

পুরো পরিবেশটা থমথমে হয়ে গেল মূহুর্তেই। এরিক নিজেই বোকা বনে গেল তার কাজে। এতোটা রিয়েক্ট সে না করতেই পারতো। তার হেনা ফুপ্পি তাকে কাদোকাদো ভাব নিয়ে বলল,
তুই এমনটা বলতে পারলি এরিক? আমায় তুই এতোটা পর করে দিলি?

খালামনি রেগে গেলেন। তিনি এরিককে বললেন,
এরিক তুমি তোমার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করার স্বভাবটা বদলাও।

এরিক বলল, আম্মু ফুপ্পি আমি এভাবে বলতে চাইনি। আমি বুঝাতে চেয়েছিলাম আমি এতোগুলো খাবার একেবারে খেতে পারতাম না। ফুপ্পি তো অনেক বেশি বেড়ে ফেলেছে আমার জন্যে। এরিকের মুখের সামনে ধরে বলল,
এরিক হা কর এবার।

এরিক এতো বড় লোকমা দেখে ভউএ আরও সটিয়ে গেল। এরোন মাঝ দিয়ে বলল,
দাড়া এরিক, দাড়াও ফুপ্পি, আমি ক্যামেরা অন করে ভিডিও শুরু করি আর তুমি ওকে খাওয়াতে থাক। অনেক সুন্দর একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে। কি বলো?

হেনা ফুপ্পি খুশি মনে এরোনকে বলল,
একদম ঠিক বলেছিস। এই না হলে আমার এরোন? যাহ এই খুশিতে তোকেও এরিকের সাথে খাইয়ে দিব।

এরোন ভড়কে গেল। সে মোটেই আশা করেনি হেনা ফুপ্পি এমন একটা পদক্ষেপ নিবে তার জন্যে। এরোন বলল,
না ফুপ্পি আমি তুমি যদি খাইয়ে দাও আমি ভিডিও করব কিভাবে?

হেনা ফুপ্পি এরিকের মুখে আরও বড় এক লোকমা ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
সে মাঝে দিয়ে খেয়ে নিলেই হবে। হিয়া তুইও খাবি নাকি আমার হাতে?খেলে আয়।

হিয়া বলল, নাহ আম্মু তুমি এরিককেই খাইয়ে দাও। আমি এতো বড় বড় লোকমা খেতে পারিনা।

হেনা ফুপ্পি বলল, তুই খাবি কেন? তুই তো নিজের মাকে ভালোই বাসিস না? আমায় ভালোবাসে আমার এরিক। তাইনা?

এটা বলে এরিকের মুখে আরও এক লোকমা ঢুকিয়ে দিল। এতো খাবার একবারে মুখে নেওয়াতে এরিকের দম যায় যায় অবস্থা। হেনা ফুপ্পির এতো এক্সট্রা কেয়ারের জন্যেই এরিক আর এরোন তাকে এতো ভয় পায়। আর সবচেয়ে বেশি ভয় পায় এরিক। নিজের মুখের খাবার সে শেষ করে একটা দম নিয়ে সে বলল,
আমায় মাফ করো ফুপ্পি, আমার পেটে আর এক সেন্টিমিটার যায়গাও ফাঁকা নেই। আমি আর খেতে পারবো না।

হেনা ফুপ্পি বলল, সে কিরে এরিক? এতো কম খাবার খেলে হবে? মাত্র তিন লোকমা মুখে ঢুকিয়েছিস তোর। ছোট থেকেই তোরা দুই ভাই এমন, তাই দেখ৷ বেশি লম্বা হতে পারলি না।

রাহি আর মিহি এতোক্ষন চুপ করে খাবার খাচ্ছিল। রাহি হেনা ফুপ্পির এই কথা শুনে চট করে বলে উঠল,
সে কি আন্টি? আপনার এই দুই ভাইকে খাটো লাগে নাকি? এরা মানুষ হিসেবে তালগাছের চেয়েও বেশি লম্বা বলা যায়। তালগাছ যদি মানুষ হতো তাহলে তালগাছও এদের দুই ভাইয়ের কাছে খাটো হতো আন্টি।

হিয়া রাহিকে ধমকে বলে উঠল,
এই মেয়ে তোমার কাছে থেকে কি আম্মু কিছু শুনতে চেয়েছে? আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটারে তুমি আর তোমার বোন এতো নাক গলাও কেন বলতে পারো? যত্তসব গায়ে পড়া লোক।

কথাটায় আমি খুব কষ্ট পাই। রাহি তো খুব রেগে যায়। রাহি রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি ওর হাত চেপে ধরে ইশারা দিয়ে ওকে চুপ থাকতে বলি। রাহি চুপ থাকলেও চুপ থাকেনি এরিক আর এরোন। এরিক রেগে বলে উঠে,
মুখ সামলে কথা বলো হিয়া। রাহি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। মিহি আর রাহি দুইজনই আমার আর এরোনের কাজিন। তুমি তাদের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস কোথায় পাও?

এরোন বলে উঠে, হিয়া একটা কথা মাথায় রাখবা তুমি যেমন আমাদের পরিবারের সদস্য তেমনই রাহি আর মিহিও আমদের পরিবারেরই সদস্য। তুমিও আমাদের কাজিন আর তারাও। তাই বেশি ইচড়ে পাকামি করবেনা।

হিয়া প্রতিউত্তরে কিছু বলার জন্যে যখন প্রস্তুত হলো তখনই হেনা ফুপ্পি হিয়াকে বলল,
হিয়া চুপ করে নিজের খাওয়া শেষ কর। আমরা এখানে যারা উপস্থিত আছি সবাই একই পরিবারের সদস্য। কি বলো ভাবি?

খালামনি মাথা নাড়িয়ে শুধু সম্মতি জানালো। সবাই যার যার মতো খেয়ে একটু পর উঠে চলে গেল সেখানে থেকে।

রাতের বেলা এরোনের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দরজায় নক করলাম আমি। কিছুক্ষন পর এরোন দরজা খুলল। আমায় সে একদমই আশা করেনি। সে অবাক হয়ে আমায় প্রশ্ন করল,
এই তুমি এখন এখানে কি করছ?
-কিছু কথা বলার ছিল।
-ভিতরে আসো।
-না থাক বলেই চলে যাব।
-ওকে বল।
-আমি যে বারে চাকরি করতাম সেখানে দুইদন ধরে আমি যাইনা। খালামনি জানে আমি টিউশনি করি। খালামনি বলেছে আমায় আমি যাতে আর টিউশনি না করি। কিন্তু এভাবে কিভাবে চলবে? আমার চাকরিও তো চলে যাবে। চাকরি আর টিউশনি দুটাই তো আমার প্রয়োজন।
-কিসের প্রয়োজন?
-তো আমি কি এখানে বসে বসে খাব নাকি?
-তো কি করবে? তুমি এখানে থাকবে, খাবে, পড়বে, ঘুরবে আর ঘুমাবে। তোমার তো আর কোনো কাজের প্রয়োজন নাই মিহি।
-আমার চাকরি?
-আমি ম্যানেজারকে বলে এসেছি তুমি আর ওই চাকরি করছ না।
-কি?
-হুম।
-কেন?
-আম্মু যদি জানে তুমি বারে ওয়েট্রেস এর কাজ করতা তাহলে খুব রাগ করবে। তাই আমি আগেই কাজ সেরে এসেছি। কই আমায় ধন্যবাদ জানাবা তা নয়, তুমি আবার বলো কি?
-তো আমি কোনো কাজ করব না?
-না।
-আমার দিন কাটবে কেমনে?
-আমি যে লিস্ট দিয়ে দিয়েছি সেভাবেই। আর আম্য পরামর্শ দিয়ে।
-মানে?
-আমার বন্ধু হতে চেয়েছিলে তুমি?
-হুম কাল রাতে বলেছিলাম
-এখন হতে চাওনা?
-আপনিই তো না করে দিয়েছেন।
-আজ আমি প্রস্তাব দিচ্ছি, মিহি আমি তোমাকে নিজের বন্ধু বানাতে চাই। নিজের সব বিপদ আর সুখের সাথি বানাতে চাই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বানাতে চাই তোমাকে। হবে কি তুমি?
-আপনার সব সমস্যা যদি মিটিয়ে দিতে পার তবে অবশ্যই হব।
-ওকে তাহলে আজ থেকে আমরা খুব ভালো বন্ধু।(আমার দিকে হাত বাড়িয়ে)
আমি তার হাতে হাত রেখে বললাম, হুম একদম পাক্কা বন্ধু।
এরোন বলল, ওকে তাহলে এখন ঘুমাতে যাও। কাল ভার্সিটি তোমায় আমি ড্রপ করে দিব।
-আপনি?
-হুম আমি। কোনো সমস্যা?
-না।
-তাহলে যাও। গুডনাইট।
-শুভরাত্রি।

বেলকনিতে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাহি। মনে তার একটাই প্রশ্ন, এরিক যদি তাকে ভালোবাসে তাহলে সেদিন কেন এমন করল? আবার অন্য একটা মেয়ের সাথে তাকে কেন দেখেছিল সে? সেদিন রাহির দুই চোখ থেকে অশ্রুর স্রোত বয়ে গিয়েছিল। বুক চিরে গিয়েছিল তার। এরিক তাকে ভালোবাসলে অন্য একটা মেয়ের সাথে কি করছিল?

এরিক তার রুমে পাইচারি করছে। রাহির সাথে কাটানো অতীতের ঘটনা গুলো মনে করছে। তখন সময় কতো সুন্দর কেটে যাচ্ছিল। ভাগ্য কেন এতো ঝামেলা এনে দিল তাদের জীবনে?

চলবে…….

(আমার মন একদমই ভালো নেই। টেনেটেনে ১০০০ শব্দ লিখেছি। গল্প দেওয়ার একদমই ইচ্ছে ছিল না আজ আমার। মনটা অনেক খারাপ। ভুল ত্রুটি থাকলে মাফ করবেন। আজ আর কিছুই আশা নাই আপনাদের কাছে তাই আমি দুঃখিত। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here