তোর_নেশালো_শহরে Part: 08

তোর_নেশালো_শহরে Part: 08
#Eshika_Khanom

খালামনির কথামতো আমায় এখানে পৌছে দেওয়া তোমার শেষ, তাই এখন নিজের কাজে যেতে পারো,
রাহি এরিককে বলল।
-কেন? পুরো ক্লাবটা কি তোমার একার? যে তুমি আমায় চলে যেতে বলবে আর আমি চলে যাব?
-আমি কি সেটা বলেছি?
-যেহেতু তুমিও ক্লাবের সদস্য আর আমিও ক্লাবের সদস্য তাই তুমিও যেখানে খুশি থাকতে পারবে আর আমিও যেখানে খুশি থাকতে পারবো।
-থাকো তুমি।

এটা বলে রাহি চলে যেতে লাগলো। কিন্তু সে স্থান থেকে প্রস্থান করলেও নিস্তার নাই তার। এরিক তার পিছু পিছু যেতে লাগলো। একটু পর রাহি বিরক্ত হয়ে বলল,
আমার পিছে পিছে কেন ঘুরছ এরিক?
-আমি তোমার পিছু ঘুরছি? কোথায়? আমি তো ব্যাডমিন্টন কোর্ট এর পাশে দিয়ে হেটে চলেছি।
-উফফ!

আবার চলতে শুরু করল রাহি। আজ এরিক মজে হয় খুব ভালোভাবেই তার পিছে লাগবে বলে মনে সিদ্ধান্ত এটে নিয়েছে। সেও রাহি যেদিকে যায় সেদিকে যেতে লাগলো। আর রাহি মনের মধ্যে তার রাগ পুষে রাখলো শুধু। কারণ এই ছেলেকে কিছু বললে সে কথার এমন প্যাচ ধরবে যে জিলাপির প্যাচও হার মানবে।
_________________________

সিড়ির এক কোণায় বসে রয়েছে এরিন। প্রচণ্ড রেগে রয়েছে সে আবার এরিক আর রাহিকে একসাথে দেখে। রাহিকে সে মোটেও সহ্য করতে পারেনা। এরিক আর রাহির শুরু থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। আর এরিন এটা ভালো করে জানে যে এরিক রাহিকে ভালোবাসে। রাহিকে প্রপোজও করেছিল সে। কিন্তু কি জানি রাহি সেদিন এক্সেপ্ট করেনি।এজন্য যেমন সে খুশি হয়েছিল তেমন তার রাগও হচ্ছিল রাহির প্রতি। কারণ তার ভালোবাসা তার সামনে অন্যে একটা মেয়েকে প্রপোজ করেছে।
সেদিন…..

ফ্ল্যাশব্যাক…..

কিছুক্ষণ প্র‍্যাক্টিস করে একটু বিশ্রাম নেএয়ার জন্যে উদ্যত এরিন। সে তাই মাঠের একপাশে বসে ছিল। খুব পিপাসার্ত থাকায় সে পানি পান করছিল তখন দেখে অনেকে মিলে কোথাও একটা যাচ্ছে। এরিনেরও খুব আগ্রহ হল। তাই সে কয়েকজনকে অনুসরণ করে পিছু পিছু গেল তাদের। দেখলো অনেকে মাঠের একটা অংশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যায়গাটায় যথেষ্ট ভীড়ও বটে। কিন্তু কেন? প্রশ্নটা অনেক ভাবালো এরিনকে। আগ্রহের বশবর্তী হয়ে আরও সামনে এগিয়ে যায় এরিন। কিন্তু সামনে যা দেখলো তাতে এরিনের যেন পুরো দুনিয়া থমকে গেল। তার চোখের সামনে তার ভালোবাসার মানুষ এরিক রাহিকে প্রপোজ করছে। সেই মেয়েকেই প্রপোজ করছে যাকে কিনা একদমই সহ্য করতে পারেনা সে। সবসময় হার কবুল করতে হয় এরিনকে রাহির কাছে। রাহি যেন সব দিক দিয়েই সেরা। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য একজনকে ভালোবাসি বলা কথাটা একদমই সহ্য করতে পারেনি সে। তার হৃদয় যেন সেখানেই টুকরো টুকরো হয়ে গেল। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। এটা শুধু কষ্টের অশ্রুও নয়, এর সাথে যথেষ্ট রাগ, ঘৃণা আর প্রতিশোধ মিশ্রিত। ঐ স্থান ছেড়ে সে জলদি চলে যেতে চাইলেও কেন যেন তার পা দুটো আটকে গেল। চোখ দুটি দেখতে চাইলো কি হয় এরপর। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে এখানে। তার পাশে দিয়ে অনেকে রাহিকে বলছে এক্সেপ্ট করে নিতে। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার। সবাই যেন রাহি আর এরিককে এক জুটি হসেবে প্রত্যাশা করছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাহি এরিককে বলল,
ভুল মানুষকে ভালোবেসেছ এরিক, তোমার ভালোবাসার যোগ্য আমি নাই তাই তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি আমি, মাফ করে দিও আমায়।

উপস্থিত সবাইকে সরিয়ে দিয়ে রাহি সেখানে থেকে চলে গেল। এরিক নিস্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে সেখানে। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারেনি সে। কখনো সে ভাবতে পারেনি তার ভালোবাসা তাকে রিজেক্ট করবে। তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিল রাহি। রাহিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছে সে। সব যেন থমকে গেল। কিন্তু এতোক্ষন যা ঘটলো তাতে যেন এক বিরাট জয় পেল এরিন। অশ্রুভরা নয়ন দুটি তার মূহুর্তেই বদলে গেল। ওষ্ঠদ্বয়ে ফুটে উঠলো হাসির ঝিলিক। খুব মন চাইল এরিনের সে গিয়ে এরিককে সান্ত্বনা দিয়ে নিজের ভালোবাসার মায়াজালে আটকে নিবে। কিন্তু না, আজ সে এটা করবে। খানিক মুহূর্ত সে যে কষ্ট পেয়েছে তার শোধ দিবে এখন এরিক। ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট অনুভব করতে দিবে তাকে। যাতে সে নতুন করে এরিনকে নিয়ে সে জীবন শুরু করতে পারে।

বর্তমানে….

আজ আবার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেল এরিনের। সেদিন যা ঘটেছে তারপর তো রাহি আর এরিককে কেউ একসাথে দেখবে সেটা কল্পনা করাও দায়। আর আজ সেটা বাস্তবে ঘটেছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? এরিন নিজের হাত কচলাচ্ছে আর চিন্তা করছে।

গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এরিক। স্মার্টফোনে সময় দেখছে কিছুক্ষণ পরপর। মাঝে মাঝে পাইচারি করছে। রাহি এরিকের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে বাড়িতে যাওয়ার জন্যে। অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে। এবার রাহি বিরক্ত হল খুব। এরিককে সে বলল,
আর কতক্ষন পর আসবে আপনার ফুপাতো বোন?
-এরিন যে কি করছে কোথায় আছে আমি কিছুই বুঝছিনা। মেয়েটা আমার কল ও রিসিভ করছেনা।

তখন এরিন পিছনে থেকে এসে এরিকের কাধে হাত রেখে মিষ্টি হেসে বলল,
এইতো এরিক আমি এসে গিয়েছি। আর চিন্তা করতে হবেনা সোনা।

রাহি একদম অবাক হয়ে গেল এরিনকে দেখে। এই মানুষটিই যে এরিন হবে আর তার ফুপাতো বোন হবে সে ভাবতে পারেনি। এরিন এরিককে প্রশ্ন করল,
তা বুঝলাম তুমি আর আমি আজ তোমার বাড়িতে যাব। তা ও এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছে?
এরিক বলল, আমরা তিনজন একসাথে যাব।
এরিন প্রশ্ন করল, কেন?
এরিক বলল, কারণ আমরা এক বাড়িতেই থাকি।
এরিন বলল, ওহ রাহি কি তোমার বাড়িতে কাজ করে এরিক? কাজের লোক নাকি?
এরিক বলল, হ্যাঁ এরিন।

রাহি খুব কষ্ট পেল এরিকের কথায়। রাহি আশা করেনি এরিনের কথায় এভাবে তাল মিলিয়ে অপমান করবে এরিক। রাহির ভাবনার মাঝে তাকে অবাক করে দিয়ে এরিক বলল,
এরিন রাহির কাজ হলো আমায় সময় দেওয়া। কারণ ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আবার আমার খালামনির ছোট মেয়েও। ও আমার বাড়িতে আনার সাথে থাকে সবসময় আর এটাই ওর কাজ।

রাহি সম্পূর্ণ অবাক হয়ে গেল এই কথায়। মোটেও আশা করেনি সে যে এরিক এরিনকে এভাবে একটা উত্তর দিবে। এরিন খুব অসন্তুষ্ট হল এরিকের কথায় সাথে অবাকও হল। কারণ সে জানতোই না রাহি এরিকের খালাতো বোন। এরিনের এবার দুশ্চিন্তা আর সংশয় হতে লাগলো এরিককে সে কিভাবে পাবে?

এরিনের ভাবনার মাঝে এরিক বলল,
তো মেয়েরা মানে আমার বোন এরিন আর বেস্ট ফ্রেন্ড রাহি, এবার কি আমরা যেতে পারি আমাদের গন্তব্যে?

রাহি আর এরিন একসাথে বলল, হুম।

এরিন গাড়িতে সামনের সিটে বসতে গেল। তখন এরিক এরিনকে বাধা দিয়ে বলল,
এরিন তুমি পিছনে বসবে প্লিজ। আসলে আমি চাই রাহি আমার সামনে বসুক।

এরিন মুখ ভেংচিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে বসে পড়ল। রাহি যেন একদম অসাড় হয়ে আছে এরিকের আচরণে। এরিক রাহির মাথায় টোকা মেরে বলল,
ম্যাডাম ভিতরে ঢুকুন প্লিজ।

রাহি খেয়াল করল এরিক গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছে। রাহির মাথায় যেন কিছু কাজ করছেনা।
রাহি বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে বসে পড়ল। এরিক গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। চলল তারা নিজ গন্তব্যে।
__________________________

রাতে খাবারের টেবিলের সামনে বসে রয়েছে সবাই। আজ অনেক কিছু রান্না হয়েছে তাদের বাড়িতে। এখন শুধু একটা মানুষেরই কমতি রয়েছে খাবার টেবিলে, আর সে হলো এরিক এবং এরোনের হেনা ফুপ্পি। আজ সেই রান্না করেছে সব, আর তার এই কাজের বিশেষ কারণ হলো এরিক। খুশিতে গদগদ হয়ে আরও কিছু পদ নিয়ে হাজির হলো হেনা ফুপ্পি। সে এরিকের সামনে গিয়ে বলল,

নাও আমার জান শুরু কর।

এরিক এতো খাবার দেখে ভয়ে ঢোক গিলল। এরোন মুখ টিপে হাসছে এরিকের অবস্থা দেখে। বাকি সবাই নিশ্চুপই আছে। এরোনের মা মানে খালামনি বললেন,
আরে হেনা তুমি তো বস। নিজের ভাইয়ের বাড়িতে এসে কি রান্না শুরু করলে তুমি? এখন বসতেও চাইছ না।

হেনা ফুপ্পি বললেন, আরে আমার মেয়ের জামাইয়ের জন্যে এসব করেছি। এরিক তো আমার লক্ষী সোনা।

এরিক যেন এবার কান্না করে দিবে। এরোন মাঝ দিয়ে বলল,
ফুপ্পি আমি কি কিছুনা তোমার?
-আমার আরেকটা মেয়ে থাকলে আর সে এরিনের বড় হলে তোকেও আমার মেয়ের জামাই বানাতাম।

এরোন বলল, না থাক ফুপ্পি আমি ঠিক আছি। আমি এভাবেই খুব ভালো আছি।

হেনা ফুপ্পি বলল, আজ আমি এরিককে নিজের হাতে খাইয়ে দিব।

এরিক এটা শুনে বলে উঠল,
না!!

চলবে….

(এরিকের এবার কি হবে? খেয়ে খেয়ে কি বেচারা এবার ব্লাস্ট হিয়ে যাবে নাকি? দোয়া করবেন প্লিজ এরিকের জন্যে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here