দিন কেটে যায় আশায় আশায় পর্ব-৯

0
362

দিন কেটে যায় আশায় আশায়
নবম পর্ব

সুমাইয়ার সাথে কথা হওয়ার পর থেকে আমার মাথা কাজ করছে না I যদিও বলেছিলাম এক ঘন্টা পরে ফোন দিবো , কিন্তু মাথা আউলা হয়ে আছে I কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা I আমি বুবুকে ফোন দিলাম I ও ধরল না Iবোধ হয় ফজরের নামাজ পড়ছে I আমি একটা রিক্সা নিয়ে সোজা মুগদাপাড়া রওনা হয়ে গেলাম I গতকাল ওখানেই ছিলাম I কয়েকটা বই লাগবে বলে মেসে এসেছিলাম I রাত হয়ে যাওয়ায় এখানেই থেকে যাই I আজ শুক্রবার Iভেবেছিলাম জুম্মার নামাজটা পড়ে সুমাইয়াকে ফোন দেব I আপা দুলাভাই তাড়া দিচ্ছে I একটু অস্বস্তি হলেও ভেবেছিলাম আজকে ওকে বলে ফেলব I কিন্তু তার আগেই এই আপদ হবে কে জানত I

আমার কেন যেন খুব অসহায় লাগছে I মাথা কাজ করছে না I যে আমি , ঠান্ডা মাথায় সবার সমস্যা সমাধান করি I সেই আমি আজ নিজের বিপদের সময় কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা I মা, বুবু দুলাভাই , বোরহান চাচা সবার কথা খুব মনে পড়ছে I একটা কথা বোধহয় আগে বলা হয়নি I আমার বুবুর কোন ছেলে মেয়ে নেই I বিয়ে হয়েছে প্রায় আট বছর I বুবু দুলাভাই দুজনেই বাচ্চা খুব পছন্দ করেন I ওর শাশুড়ি বেঁচে নেই I বাড়িতে ওর শ্বশুর বোরহান চাচা আর ওরা দুজন I বিয়ের কয়েক বছর পরে ও বাচ্চা না হওয়ায় মা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন I হয়তো শ্বশুরবাড়ি থেকে ওকে নানান কথা শোনাবে I আমি তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছি I প্রতিদিনই মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ফোনে কথা হত I মা অনেক আফসোস করতI আমার একটু একটু ভয়ই করতো I অনেকের কাছেই শুনেছি ছেলে-পুলে না হলে মেয়েদের উপর নাকি অনেক অত্যাচার করা হয় I

তখন আমার সামনে এইচএসসি পরীক্ষা I একদিন মার কাছে বুবুর শ্বশুর বাড়ির গল্প শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম I তখন দুলাভাই এর পাশাপাশি বোরহান চাচাও আড়তে বসতেন I একদিন সকালের ঘটনা I বোরহান চাচা আড়তে ছিলেন তখনই তার প্রতিবেশী একজন এসে গল্প জুড়ে দিলেন I অনেক কথা বার্তার পর ইনিয়ে বিনিয়ে আসল কথাটা বললেন
– আপনার পোলার বউয়ের তো বাচ্চা-কাচ্চা হয় না I এইরকম বানজা মাইয়া মানুষ রাইখা কি করবেন ?এইবার পোলারে আরেকটা বিয়া দেন I এত বিষয় সম্পত্তি কে ভোগ করব ?
বোরহান চাচা জবাব দিয়েছিলেন
– তোর মায়েরে পাঠায়া দিস I তার লগে বিয়া দিমু I তাইলে তো তুই আমার নাতি হবি I ভোগ করিস আমার সম্পত্তি I
এরপর ভয়ে আর কেউ এরকম কথা বলার সাহস করেনি I বোরহান চাচাকে বাইরে থেকে কঠিন মনে হলেও, ভিতরে ভিতরে তিনি অত্যন্ত নরম একজন মানুষ I চাচা বুবুকে অত্যাধিক স্নেহ করেন I উনি সব সময় বলেন বাচ্চাকাচ্চা হলো আল্লাহর দান I আল্লাহর যখন ইচ্ছা হবে তখন দিবে I এত চমৎকার একজন মানুষ গত বছর মারা গেলেন I উনার কাছাকাছি থাকতে আমার খুব ভালো লাগতো I আজকে কেন যেন হঠাৎ করে উনার কথা খুব মনে পড়ছে I আমার খুব ইচ্ছা ছিল চাকরি হলে ওনাকে খুব ভালো একটা দামী উপহার কিনে দেবো I কিন্তু সেটা আর হলো না I তার আগেই উনি চলে গেলেন I এখনো মনে আছে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর প্রথম টিউশনির টাকা পেলাম I মা আর দুলাভাইয়ের জন্য উপহার কিনেছিলাম I কি মনে করে বোরহান চাচার জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনেছিলাম I একদম কম দামে I সস্তা পাঞ্জাবি I সেটা পেয়ে কি যে খুশি হয়েছিলেন উনি I চোখ মুছতে মুছতে আমাকে অনেক দোয়া করেছিলেন I রিকশায় বসে লক্ষ করলাম আমারও চোখ ভিজে আসছে I

রফিক ভাইয়ের বাসায় যখন ঢুকলাম তখন প্রায় সাতটা বেজে গেছে I রফিক ভাই দুলা ভাইয়ের মামাতো বোন মালিহা আপুর হাসবেন্ড I দুজনেই অসম্ভব আন্তরিক I মুগদাপাড়ায় ওদের দুই রুমের ছোট একটা বাসা I সামনে এক চিলতে বারান্দা I কিন্তু খুব গুছিয়ে রাখে বলে ভীষণ সুন্দর লাগে দেখতে I আপার সঙ্গে মালিহা আপুর খুব ভাব I উনাদের বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক I আমি এর আগেও কয়েকবার এসেছি এখানে I আপু ,ভাইয়া দুজনই অনেক আদর যত্ন করেছেন I

দরজা খোলাই ছিলI আমি ভেতরে ঢুকে দেখলাম দুলাভাই আর রফিক ভাই ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছে I মালিহা আপু আর বুবু বোধহয় রান্নাঘরে I রান্নাঘর থেকে চমৎকার খাবারের সুগন্ধ ভেসে আসছে I খুব সম্ভবত বুটের ডাল , সুজির হালুয়া I সঙ্গে নিশ্চয়ই পরোটা ও করছে I অন্যদিন হলে আমার জিভে জল এসে যেত I কিন্তু আজকে সেরকম অবস্থায় নেই I আমার বুক ভীষণভাবে ধরফর করছে I ছোটবেলায় অংক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় যে রকম লাগতো ,সেরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে I
আমি ভেতরে ঢুকে দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলাম
– বুবু কই দুলাভাই ?

বুবু আর মালিহা আপুকে রান্নাঘর থেকে খাবারের ট্রে হাতে বের হতে দেখা গেল I বুবু আমাকে দেখে খুব খুশী হয়ে গেল I বলল
– বসে পড় রাসু
আমি বললাম
-ঝামেলা হয়ে গেছে দুলাভাই I
আমার কন্ঠস্বরেই বোধহয় এমন কিছু ছিল I দুলাভাই উঠে এসে আমার হাত ধরলেন I চিন্তিত গলায় বললেন
– কি হয়েছে রাসু ?
– আজকে সন্ধ্যায় সুমাইয়ার বিয়ে I
দুলাভাই আমাকে হাত ধরে নিয়েছে বসালেন I সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো I বুবু বলল
– কি হয়েছে সব ঠিক মতন বল I
আমি যতটুকু জানি বললাম ওদেরকে I ভেবেছিলাম বুবু হয়তো খুব রাগারাগি করবে I কিংবা এসব চিন্তা বাদ দিতে বলবে I কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও বলল
সুমাইয়ার ফোন নাম্বারটা আমাকে দে
বুবু সুমাইয়াকে ফোন দিচ্ছেI আমি উদগ্রীব হয়ে উল্টো দিকের সোফায় বসে অপেক্ষা করছি I প্রথম দুবার কেউ ফোন ধরল না I তৃতীয় বারে ফোন রিসিভ হলো I কথাবার্তা হলো মোটামুটি নিম্নরূপ
হ্যালো সুমাইয়া
অন্যদিকে কথা শোনা গেল না
ও আচ্ছা I ঘুমাচ্ছে ? আপনি কে ? আচ্ছা আচ্ছা I
আমি ইশারায় বুবুকে লাউডস্পিকারে দিতে বললাম
প্রথমেই আমার পরিচয় দেই I দিই আমি রাশেদের বোন Iরিমি I রাশেদ কে চেনেন তো ?
স্লামালিকুম আপু I অবশ্যই চিনি I উনি আমাদের যে উপকার করেছেন , তা জীবনেও ভুলতে পারবোনা I
আপা, আমি ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলি না I সুমাইয়ার কি কোন পছন্দ আছে ?
না I
আপনি নিশ্চিত ?
জি I থাকলে আমি জানতাম I
আপনার জামাই কি বাসায় ?
জি আপা I
আশেপাশে নাই তো ?
না I আমি বাথরুমে ঢুকে কথা বলছি I
খুব ভালো I শুনেন I আপনার জামাই বাসা থেকে বিদায় হলে আমাকে ফোন দিবেন I আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা আজকে সুমাইয়া আর রাশেদের বিয়ে দিতে চাই I
আলহামদুলিল্লাহ আপা I আমাদের কোন সমস্যা নেই I
তার পরেও আপনি একবার সুমাইয়াকে জিজ্ঞেস করেন I
তার কোন দরকার নাই আপা I সুমাইয়ার দুলাভাই বের হয়ে গেলেই আমি আপনাদের খবর দিব I
আচ্ছা ঠিক আছে I উনি যেন কিছু বুঝতে না পারে I

সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল I দুলাভাই বললেন
– চলো নাস্তা করে নেই

আপা খুব দ্রুত পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এল I আমি অবাক হয়ে তার কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলাম I ও সবার কাজ ভাগ করে দিল I মালিহা আপুকে বলল অনলাইনে দেখে পঞ্চাশ জনের খাবারের ব্যবস্থা করে ফেলতে I রফিক ভাইকে কাজীর ব্যবস্থা করতে এবং একটা গাড়ি ভাড়া করতে বলল I আর দুলাভাইকে পাঠিয়ে দিল এটিএম থেকে টাকা তুলতে I তারপর নিজের মোবাইল নিয়ে বসলো I আমার কাছ থেকে সুমাইয়ার দুলাভাইয়ের আইডি নিয়েছে আগেই I এখন নিশ্চয়ই ব্যাটার চৌদ্দগুষ্টির বের করে ফেলছে I বেশ কিছুক্ষণ পর আমার কাছে এসে বলল
ওই দুলাভাইয়ের বাচ্চার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলেছি I ওর বস আমার বান্ধবীর খালাতো বোনের ননদের জামাই I রায়হান ব্যাটাকে এখনো ধরতে পারিনি I ধরে ফেলব ইনশাআল্লাহ I চিন্তা করিস না I
আমি জবাব দিলাম না I ও আবারও মোবাইল ডুবে গেল I কিছুক্ষণ পর মোবাইল থেকে মুখ তুলে বললো

– তুই ভেন্দার মত দাড়িয়ে আছিস কেন ?
– তো কি করব ?
– জামা কাপড়ের ব্যবস্থা কর I
-কি ব্যবস্থা ?
– এই ফকিরের মতন পাঞ্জাবি পড়ে বিয়ে করতে যাবি ?
আমি ব্যাগ খুলে আরেকটা পাঞ্জাবী বের করলাম I যদিও পাঞ্জাবি পারে যেতে খুবই লজ্জা লাগছিল I এমনিতেই আমি দেখতে ভালো না I আমার গায়ের রং শ্যামলা I মাথার চুল কোঁকড়ানো I উচ্চতা ও মাঝারি I মোটের উপর আমাকে আলাদা করে চোখে পড়ার মতন কিছু না I পাঞ্জাবি হাতে দাঁড়িয়ে আছি বলে আবারো বুবুর ধমক খেলাম I ধুর ছাই ! কি দরকার পাঞ্জাবি পড়ার I এমন তো না যে পাঞ্জাবি না পড়লে বিয়ে হবে না I অবশ্য পাঞ্জাবি পড়লেও না হবার সম্ভাবনা আছে I

সুমাইয়াদের বাসায় আমরা যখন ঢুকলাম তখন 10 টার উপরে বাজে I ঘণ্টাখানেক আগে ওর বোন ফোন করে জানিয়েছে যে দুলাভাই বিদায় হয়েছে I আমরা মোট ছয়জন এসেছি I বুবু দুলাভাই , রফিক ভাই ,মালিহা আপু ,কাজী সাহেব এবং আমি I বুবু আমাদের সবাইকে পেছনে ফেলে আগে আগে ঢুকে পরল I এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে তারা যখন যেখানে উপস্থিত থাকে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, আশেপাশের সবাইকে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে দেয় I আমার বুবু হচ্ছে সেই রকম একজন মানুষ I ঘরের ভেতরে ঢুকে প্রথমেই ও বাবুকে নিজের কোলে নিয়ে নিল I তারপর একের পর এক সবাইকে তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া শুরু করলো I কাজী সাহেবকে বসিয়ে তার চা নাস্তার ব্যবস্থা করল I আসার পথে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে আনা হয়েছে I সুমাইয়া ঘুমিয়ে আছে এখনই ওকে জায়গাতে নিষেধ করল I অনলাইন থেকে অর্ডার করা খাবারের অর্ধেকটা বাড়িতে রেখে আসা হয়েছে বাকি অর্ধেক এখানে আনা হচ্ছে I হোম ডেলিভারি আসার সময় নাই তাই বাড়িতেই জামা কাপড় বিক্রি করে এমন একজন আপুর কাছ থেকে তার বাসায় যেয়ে গাড়ি থামিয়ে বিয়ের শাড়ি কিনে আনা হয়েছে I সুরমা আপাকে বলেছে বাড়িতে কোন ঝামেলা না করতে I একের পর এক সবাইকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে I ওর নেতৃত্ববোধ দেখে আমি মুগ্ধ I প্রতিভার কি নিদারুণ অপচয় I ওর তো উচিত ছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া I যাক ,আল্লাহ যা করেন ভালো জন্যই করেন I আজ ও প্রধানমন্ত্রী হলে আমার কি হতো I নিশ্চয়ই তখন আমার বিপদে সময় দিতে পারত না I বরং বিরোধী দলকে কিভাবে প্যাচে ফেলবে সেই ধান্দায় ব্যস্ত থাকতো I

আমি তখন থেকে ছটফট করছি I সুমাইয়া এখনো কিছুই জানেনা I আমার স্থির বিশ্বাস এসব জানলে ও বিয়ের জন্য মানা করে দেবে I আমি বেশ কয়েকবার বুবুর কানে কানে বলার চেষ্টা করেছি , যে আমি একটু সুমাইয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাই I বুবু বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়েছে, কোনো জবাব দেয়নি I ছোটবেলায় কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে যদি মজার বিস্কুট দেয়া হতো আর আমি লোভাতুর দৃষ্টিতে বিস্কুটের দিকে তাকিয়ে থাকতাম এবং পরমুহুর্তেই আপার দিকে তাকাতাম ,তখন যেরকম চোখ করে তাকাত I আজ ঠিক সেইভাবে তাকালো I যেন আমি খুব গর্বিত কোন আবদার করে ফেলেছি I কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর আমি বুবুর আশা বাদ দিয়ে সুরমা আপার কাছে গেলাম I সুরমা বয়সে আমার থেকে ছোটই হবে I কিন্তু সম্পর্কের খাতিরে তাকে আপা বলে ডাকছি I তাকে একবার বলাতেই তিনি ব্যবস্থা করে দিলেন Iএতক্ষণ অযথাই বুবুর পেছনে পড়েছিলাম I

ঘরে ঢুকে আমি সুমাইয়াকে খুঁজে পেলাম না I পানির শব্দ শুনে বুঝলাম বোধহয় গোসল করছে I ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম I খুব সাধারণ সাজ সজ্জা I তবে ভীষণ পরিপাটি আর গোছানো I জানালার পাশে বইয়ের টেবিল I তার ওপর অনেকগুলো বই রাখা I পড়ার বইয়ের পাশাপাশি অনেকগুলো উপন্যাস আর ধর্মীয় বই দেখলাম I বুঝলাম সুমাইয়া বই পড়তে পছন্দ করে I দরজার শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালাম I এইরূপে সুমাইয়াকে দেখবো কখনো ভাবিনি I পড়েই যাচ্ছিলাম কোনমতে আলমারিতে হেলান দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালাম I আমি বোধহয় পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি যে বিয়ের দিন সকালে সদ্যস্নাত ভাবি বধুকে দেখলাম I এবং দেখা মাত্রই তার তার প্রেমে পড়ে গেলাম I আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে হড়বড় করে বললাম
– সরি সুমাইয়া I আমার কোনো উপায় ছিল না I আমাকে বিয়ে করতে কি তোমার কোন সমস্যা আছে ?
সুমাইয়া কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল I তারপর বলল
– আমি আপনাকে সাহায্য করতে বলেছিলাম I আমাকে উদ্ধার করতে তো বলিনি I

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না I এ কি কথা ? কে কাকে উদ্ধার করছে ? মনে মনে বললাম রাশেদ মাথা ঠান্ডা কর I এখন ফাস্ট বোলিং এর সময় না I স্পিনিং এর সময় I আমি এক মুহূর্তের জন্য চোখ বুজে মাথা ঠান্ডা করে বললাম

– আমি তোমাকে উদ্ধার করছি না I তুমি বিয়েটা করলে আমি উদ্ধার হব I তোমাকে প্রথম দিন দেখেই আমার খুব ভাল লেগেছিল I এই কথাটা তোমাকে আজকেই বলব ঠিক করেছিলাম I এভাবে বলতে হবে ভাবিনি I আমি জানি তুমি আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো I কিন্তু আমি অত মহৎ মানুষ নই I অসম্ভব স্বার্থপর একজন মানুষ আমি I তার পরেও বলব তোমার যদি পছন্দের কেউ থাকে তাহলে আমাকে বলো Iআমি নিজে তোমাকে তার কাছে দিয়ে আসব I

– বাইরে যান
একনাগাড়ে এত গুলো কথা বলে এমনিতেই হাপিয়ে গিয়েছিলাম I বুকের মধ্যে হাতুড়িপেটা হচ্ছিল I সুমাইয়া ঠিক কি বলল বুঝতে পারলাম না I ও কি আমাকে ‘বেরিয়ে যান ‘ বলেছে যার ইংরেজি করলে দাঁড়ায় গেট আউট I আমি কোনমতে বললাম
– তুমি কি আমাকে বেরিয়ে যেতে বলছ ?
– হ্যাঁ
– মানে আমি ঠিক ….
– আপনি নিশ্চয়ই চান না আমি এই ভাবেই বিয়ে করি I আমাকে রেডি হতে হবে I আর আপাকে একটু পাঠিয়ে দিন I আমি শাড়ি পড়তে পারি না I
আমার মনে তখন খুশির দামামা বাজছে I বোধহয় খুশিতে মাথা ঠিক ছিল না তাই বলে বসলাম
– আমি কিন্তু খুব ভালো শাড়ি পরাতে পারি I বলেই বুঝলাম ফাউল করে ফেলেছি I ভেবেছিলাম সুমাইয়া হয়তো খুব রেগে যাবে I কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও হেসে ফেললো I তারপর বলল
– সেটা প্রমাণ করার অনেক সুযোগ পাবেন I এখন আপাকে পাঠিয়ে দিন I আর দুলাভাইকে কি করে ম্যানেজ করবেন ঠিক করেছেন ?
– আজকের ইনচার্জ আমি নই I আমার বুবু I চিন্তা নেই I
সুমাইয়া মিষ্টি করে হাসল I আমি বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম I এই হাসি দেখার জন্য ঐরকম সহস্ত্র দুলাভাইকে সাইজ করে দিতে পারবো I

চলবে………

গল্পটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে I আমার ধারণা এই গল্পটা অনেকেরই ভালো লাগেনি I আমার অনেক নিয়মিত পাঠককে খুঁজে পেলাম না I তবে যারা এতদিন ধরে সঙ্গে ছিলেন এবং সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করে আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছেন তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ I

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here