দৃষ্টির_অগোচরে পর্ব_৪
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
হৃদয় জানালা দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবছে এগুলো কি আমার চোখের ভুল নাকি অবচেতন মনের কল্পনা মাত্র। এই মেয়ের জন্য আমি পাগল হচ্ছে যাচ্ছি নাতো?। তারপর ভাবলো যে হয় হোক ওখানে,আমার কি তাতে। এটা ভেবে ও গাড়ি ছেড়ে দিলো। গাড়ি চলছে বাড়ির দিকে। হৃদীতা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। হৃদয় মাঝেআঝে ওর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে এই মেয়েটা কথা বলছে না কেনো। অন্যদিন যে মুখে খই ফুটে যায় আর আজ মুখে কথা নেই। এক রাতেই এই অবস্থা। ভাবতে ভাবতেই হৃদয় গাড়িটা বাড়ির পেছনে দাড় করিয়ে ওর হাত ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গিয়ে দীলারা বেগমের সামনে দাড় করালো। দীলারা বেগম হৃদয়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে হৃতীদার দিকে তাকালো। তারপর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
> ওর হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি মা। নিজের মা মনে করে আমাকে ক্ষমা করো।যা হয়েছে হয়ে গেছে কিছু মনে করোনা। ওর একটু রাগ বেশি তাই এমন করেছে।।( হাত জোড় করে)
হৃদীতা অবাক হয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আছে। ও বিশ্বাস করতেই পারছে না হৃদয়ের মা এমন ভালোমানুষ হতে পারেন। আগে কখনও হৃদীতা উনাকে দেখেন নাই আজ প্রথম দেখছে। কিন্তু এই প্রথম দেখাতেই এমন ভালো ব্যবহার ও আশাকরেনি। ও আবেগপূর্ণ হয়ে দীলারা বেগমের হাত ধরে নিলো।
> ক্ষম চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না আন্টি। আপনি আমার গুরুজন হন আর আপনি কেনো ক্ষমা চাইছেন? অন্যায় তো আমি করেছি এতিম হয়ে। আজ যদি আমার বাবা মা থাকতো তাহলে কখনও এমন হতো না আমার সাথে।
হৃদীতার কথা শুনে হৃদয় রেগে গেলো। এই মেয়েটা লেকচার দিতে শুরু করলে আর থামার নাম নেয় না।রেগে ও কথা বলতে গেলো কিন্তু দীলারা বেগম পাশ থেকে ওকে ইশারা করলো কথা না বলতে। তারপর উনি কঠিন ভাষায় হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
>ওকে ঘরে নিয়ে যা আমি ওর কাপড়ের ব্যবস্থা করছি। আমি যেনো কোনো ঝামেলা না শুনি। যদি শুনেছি তাহলে কিন্তু খবর আছে।
> কোন রুমে নিয়ে যাবো? (ভ্রু কুচকে)
> কোন রুমে আবার অবশ্যই তোর রুমে।
> আম্মা আমি পারবো না। তন্ময়ার বলো ওকে ওর সাথে রাখতে। আমি একে সহ্য করতে পারবো না। কখন দুম করে মেরে বসবো কিন্তু।
> ও তোর বউ। বিয়ে তুই করেছিস তাই ও তোর রুমেই থাকবে। বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করছি না এখন। ওকে নিয়ে যা। বাইরে লোকজন আছে এখুনি সব ভেতরে চলে আসবে তাই আমি আর কোনো ঝামেলা চাইনা।
হৃদয় ওর মায়ের কথার উপরে কথা বলতে পারলো না তাই উপায় না পেয়ে হৃদীতাকে বলল ওর পেছনে পেছনে আসতে। হৃদয় ওকে নিয়ে রুমে চলে এসলো। হৃদীতা অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সব কিছু। খুব সুন্দর করে গোছানো রুমটা। মনে হচ্ছে খুব সৌখিন মানুষের কাজ এগুলো। দেওয়ালে একটা সুন্দর ছবির ফ্রেম রাখা। হৃদীতাকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদয় ওর মুখে সামনে হাত নেড়ে বলল,
> জীবনে কখনও দেখছো এই সব? ছিলে চাকরানী কিন্তু আমার ভুলে হতে গেছো রাজরানী। খুব চালাক মেয়ে তুমি। তোমাকে তো আমি কখনও ছাড়বো না। আমার রুমের কোনো কিছুতেই তুমি হাত দিবে না। রুমে থাকতে দিয়েছি এটাই অনেক বুঝেছো?
হৃদীতা ভয়ে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে যে প্রতি মূহুর্তে হৃদয়ের এমন হুমকি আর টর্চার সহ্য করতে হবে এটা ওর জানা আছে। হৃদয় ওকে আরও কিছু বলতে গেলো কিন্তু পারলো না তার আগেই একটা মেয়ে এসে দরজায় নক করলো। হৃদয় পেছনে তাকিয়ে দেখলো ওদের কাজের মেয়ে কুসুম দাড়িয়ে আছে। হৃদয় ওকে ইশারা করলো ভেতরে আসতে। কুসুম হৃদীতার হাতে কিছু কাপড় আর জুয়েলারি ধরিয়ে দিয়ে বলে গেলো দ্রুত পড়ে বাইরে যেতে। হৃদীতা কাপড় গুলো নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর ভাবছে ও তো আগে কখনও শাড়ি পড়েনি তাহলে আজ কেমন করে পড়বে? স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে ও কখনো উপস্থিত হতে পারতো না।জীবনে কখনও যে শাড়ি পড়তে হবে এটাও ভাবেনি। হৃদীতা ভাবলো কিছু তো একটা উপায় হয়ে যাবে। তাই ও হৃদয়ের কাছে শুনলো বাথরুম কোথায়।
> চোখ আছে দেখে নাও। আমাকে হুকুম করছো তুমি? তোমার এতো সাহস কে দিয়েছে? (ধমক দিয়ে )
হৃদীতা ওর কথার উত্তর না দিয়ে বাথরুম খুজে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। এই ছেলেটা সহজ ভাবে কিছু বলতেই পারেনা। সব সময় ইগো দেখাবে। হৃদীতা গোসল শেষ করে কাপড় পড়ে নিলো কোনো রকম। খুব ভালো হয়নি পড়া তবুও হয়েছে কোনো রকমে। হৃদীতা ধীরগতিতে পা ফেলে বাইরে চলে আসলো। হৃদয় এতোক্ষন জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো হঠাৎ খট করে দরজা খোলার শব্দে ও পেছনে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা দাড়িয়ে আছে। হৃদয়ের চোখ ওর দিকে আটকে গেলো। কি দেখছে এটা। টুকটুকে গোলাপী রঙের শাড়ি আর ভেজা চুলে হৃদীতাকে অপরূপ লাগছে। হৃদয়ের মনে হলো এমন দৃশ্য ও আগে কখনো দেখেনি। এই মেয়েটাকে ওর আগে কখনও এতো ভালো করে দেখা হয়নি। সামান্য একখানা শাড়িতে কোনো মেয়েকে এমন ভয়ানক সুন্দর লাগতে পারে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। নিশ্চয়ই এই মেয়েটা মানুষ না হয়তো পরী। হৃদীতা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ভয়ে। ও ভাবছে আমি কি আবার কোনো ভুল করলাম? এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো আবার বকবকনি করবে ভেবেই ওর কান্না পাচ্ছে। হৃদয় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের অজান্তেই একপা দুপা করে সামনে এগিয়ে গেলো। হৃদয় ওর দিকে এগিয়ে আসছে আর হৃদীতা পিছিয়ে গেলো। এমন করে এক সময় হৃদীতা পা পিছলে পড়ে যেতে গেলো আর হৃদয় দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেললো। হৃদয়ের নিশ্বাস ওর মুখের উপর ছড়িয়ে পড়ছে। মেয়েটার চোখ পানিতে ভিজে আছে। হৃদয় এক হাত দিয়ে ওকে ধরে রেখে অন্য হাতে ওর মুখের উপর থেকে চুলটা সরিয়ে দিলো। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। হৃদয় তাড়াতাড়ি ওকে সোজা করে দাড় করিয়ে ওর থেকে সরে আসলো। হৃদয় নিজের উপর বিরক্ত হয়ে গেলো।ভাবলো কি ভুলটাই না করতে চলেছিলাম। এই মেয়েটা এই রুমে থাকলে নিজের উপর নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো মনে হচ্ছে।তাই ও নিজের রাগটা হৃদীতার উপরেই ঝাড়লো।
> এই মেয়ে সাবধানে চলতে পারোনা? একটু হলেই তো পড়ে যেতে আর আমার বদনাম হতো।
> বদনামের ভয় আপনার আছে?
> ওই কি বলতে চাইছো তুমি? আমাকে চিনো তুমি? আমার বাবার অর্থসম্পদ কতো আছে তোমার কোনো আইডিয়া আছে? (ভ্রু কুচকে)
হৃদীতা চুপ করে ভাবছে এই ছেলেটার নিজের বলতে আছে এক ঝুড়ি রাগ আর এক বালতি ইগো। বাকি সব পিতৃ প্রদত্ত। তবুও ভাবেন ষোলো আনা উনার। তাই এর সাথে কথা বলাটাই বোকামি হবে। হৃদয় বকবক করতে করতেই বাইরে চলে গেলো। এখানে থাকাটা নিরাপদ না। এই মেয়েটা নিজের রুপ দিয়ে ওকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে এটা ও কখনো হতে দিবে না। দেখতে সুন্দরী তাতেই কি ওর লেভেল ভালো হয়ে যাবে?। কাজের মেয়ে কাজের মেয়েই থাকবে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ও সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসলো। ওকে একা দেখে দীলারা বেগম ওর দিকে ইশারা করে জানতে চাইলো হৃদীতা কোথায়। কারণ বাড়ির মধ্যে অনেকেই চলে এসেছে।তার মধ্যে কিছু মিডিয়ার লোক আর কিছু আত্মীয় আছে। হৃদয় দ্রুত ওর মায়ের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো
> আম্মু ওটা তো মনে হয় শাড়ি পড়তে জানেই না। জিবনে কখনও শাড়ি চোখে দেখেছে কি সন্দেহ। ওরে তুমি সাধারণ একটা থ্রী পিচ দিতে পারতে তা না দিতে গেলে শাড়ি।
> শোন আমার থেকে বেশি বুঝতে যাস না। আমি বুঝবো বিষয় টা। যা ওদের সাথে কথা বল আমি দেখছি।
দীলারা বেগম সবাইকে আসছি বলে উপরে চলে গেলেন। হৃদীতা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল চিরুনি করছিল। আজ ওর শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। ওর জানা নেই হঠাৎ ওর কাধে প্রচণ্ড ব্যাথা কেনো হচ্ছে। আবার গায়ের তাপমাত্রা ও বেড়েছে হয়তো জ্বর আসবে। হৃদীতা কথা গুলো ভাবছিল গভীর ভাবে। হঠাৎ দীলারা বেগম রুমে ঢুকে পড়লেন। উনি তাড়াতাড়ি হৃদীতার কাছে গিয়ে দাড়ালেন। উনি অবাক হয়ে গেলেন হৃদীতাকে দেখে। মেয়েটাকে বেশ মানিয়েছে শাড়িতে।মেয়েটা যদি কোনো ভালো পরিবারের হতো তাহলে একে নিয়ে উনার তেমন কোনো সমস্যাই ছিল না। উনাকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে হৃদীতা আস্তে করে বলে উঠলো।
> কিছু বলবেন?
> হুম। তোমাকে শাড়ি পড়াতে এসেছি। নিচে লোকজন এসেছে তোমাকে খুঁজতেছে। হৃদয় বললো তুমি শাড়ি পড়তে জানো না তাই।
দীলারা বেগম ওর শাড়ি ঠিক করতে করতে কথা বললেন। আর হৃদীতা ভাবছে বাহ লোকটা তো বেশ বুদ্ধিমান বলা লাগলো না কিছুই এমনি জেনে গেলো।তবে ভালো বুদ্ধি কম বদ বুদ্ধিই বেশি। লোকটাকে বন মানুষ থেকে মানুষে পরিণত কবে হবে কে জানে। ওর ভাবতে ভাবতেই শাড়ি পড়ানো হয়ে গেলো। ওকে শাড়ি পড়িয়ে জুয়েলারি দিয়ে সাজিয়ে দীলারা বেগম মনে মনে ভাবলেন কাজের মেয়ে কথাটা চাপা দিতে হবে। এতো সুন্দর একটা মেয়ে ওকে দেখে কখনও কেউ বুঝতেই পারবে না কিছু। টাকা পয়সার তো অভাব নেই।এতো মিষ্টি একটা মেয়েকেই তো চেয়েছিলাম হৃদয়ের বউ হিসেবে। উনি কথাটা ভেবে বেশ আনন্দ পেলেন মনের মধ্যে। মনে হলো অনেক চাপা একটা কষ্ট নিমিষেই দূর হয়ে গেলো মন থেকে। উনি হাসি মুখে হৃদীতার হাত ধরে বললেন।
> নিচে চলো। আর আমি যা বলবো তাতে শুধু তুমি সাড়া দিবে কথা বলবে না ঠিক আছে?
> জ্বী আন্টি আচ্ছা।
> আর শোনো ওখানে অনেকেই আছে সবার সামনে আমাকে আন্টি বলবে না। আম্মু বলবে। শাশুড়িকে আম্মু বলতে হয় বুঝেছো?
হৃদীতা মাথা নিচু করে মাথা ঝাকালো। ওর চোখের কোনে পানি এসে গেছে। মাকে তো ও কখনও দেখেনি। মায়ের বয়সী সবাইকে ওর মা বলতেই ইচ্ছা করে কিন্তু ওর মতো একজন কাজের মেয়ের মা হতে সহজে কেউ রাজি হয় না।তবুও একজন নিজের ইচ্ছায় ওর মা হতে চেয়েছে তাকে ফিরিয়ে দেবার সাধ্য ওর নেই। ওই বাড়িতে আম্মু বলা নিয়ে রিয়া ওকে অনেক মেরেছিল একবার। বলেছিল কাজের মেয়ে হয়ে ওর মা কে মা বলে ডাকার অধিকার ওকে কে দিয়েছে। বামন হয়ে চাঁদে হাত দেবার মতো গৃহীত অপরাধ করেছিল মনে হয়েছিল। হৃদীতা কথা গুলো মনে করছে আর দীলারা বেগমের হাত ধরে হেটে চলেছে।
ওরা সিঁড়ির কাছে আসতেই অনেকেই ওদের ঘিরে ধরলো। হৃদীতা ঘাবড়ে গেছে অনেক মানুষ দেখে। হৃদয় ওর কাছের দুজন বন্ধুর সাথেই শুধু সেয়ার করে সব কথা আর ওরাই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল তাই ওরাও এসেছে কি হচ্ছে না হচ্ছে খোজ নিতে। হৃদয় এতোক্ষন ওদের সাথে কথা বলছিল হঠাৎ হৃদীতাকে আসতে দেখে ও থমকে গেলো। ওকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে শাফিন বললো।
> দোস্ত ভাবীকে অনেক সুন্দর লাগছে। তুই কিন্তু দারুণ একটা কাজ করেছিস এমন হুট করে বিয়ে করে। এই একটা কাজে তোকে সাহায্যে করে আমি অনেক হ্যাপী।
> সাজলেই কি কাক কোকিল হয়ে যায়? কাজের মেয়েকে বউ হিসেবে কখনও মানবো না আমি। (হুত মুঠো করে)
> তাহলে যা রিয়ার কাছে। ওকে বিয়ে করলে না তোকে সতীন নিয়ে ঘর করতে হবে বলে দিলাম। ওর চালচলন আমার মোটেই সুবিধার মনে হয়না।
> রিয়ার নামে একদম বাজে কথা বলবিনা। আধুনিক মেয়ে ও তাই দু এক জন ছেলে বন্ধু ওর থাকতেই পারে। আমার ও অসংখ্য মেয়ে বন্ধু আছে।এর মানে কী আমি সবাইকে বিয়ে করে ঘরে তুলবো?
ওদের এমন কথা কাটাকাটির মধ্যেই দীলারা বেগম হৃদয় কে ডাকলেন হৃদীতার পাশে বসার জন্য। হৃদয় অনিচ্ছা শর্তেও গিয়ে হৃদীতার পাশে বসলো। হৃদীতা ভয়ে মাথা নিচু করে শাড়ির এক আচল মুঠ করে রেখেছে। অনেকেই ওকে নানা রকমের প্রশ্ন করছে ও শুধু মাথা নাড়ছে। আর হৃদয়ের আম্মু পাশ থেকে সব উত্তর বলে দিচ্ছে।
ওদের বেশ কিছু ছবি নিলেন সাংবাদিকরা। তারপর দীলারা বেগম কথা না বাড়িয়ে সবাইকে বিদাই করলেন। ওরা যেতেই হৃদয় ওর বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। দীলারা বেগম হৃদীতাকে খাবার খেয়ে দিলেন কিন্তু হৃদীতা খাবার মুখেই নিতে পারলো না। একবার মুখে নিয়ে ওর মনে হলো একটুও ভালো না। মুখে কোনো স্বাদ নেই। হৃদীতা সংকোচ করেই ওর শাশুড়ি কে বলে ফেলল,
> আম্মু আমার শরীর খারাপ লাগছে আমি খাবো না। আপনি আমাকে রুমে দিয়ে আসেন।
>কেনো কিছুই তো খেলে না? শরীর কি খুব খারাপ?
> তেমন কিছুই না। এখন খেতে মন চাইছে না। বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
> আচ্ছা তাহলে রুমে যাও। আমি কুসুম কে বলছি।
দীলারা বেগম কুসুম কে বলে ওকে রুমে পাঠিয়ে দিলেন।। হৃদীতা রুমে এসে বসে পড়লো। ক্রমশ হাতের ব্যাথা টা প্রচণ্ড বেশি হচ্ছে। হৃদীতা রুমের দরজা বন্ধ করে মেঝেতে শুয়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো। ব্যাথা ওর যতই বাড়ছে ও ততই চিৎকার দিচ্ছে। ওর চিৎকার চার দেওয়ালে লেগে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করছে। এমন করে কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ ওর ব্যাথা আর জ্বর একদম ভালো হয়ে গেলো। হৃদীতা অবাক হয়ে বসে পড়লো। ও বুঝতেই পারছে না এমন কেনো হলো। তারপর ওর মনে পড়লো সেদিনের সেই স্বপ্নের কথা। এমন করেই তো ব্যাথা হয়েছিল। কথাটা মনে হতেই ভয়ে ভয়ে ও পিঠে হাত দিয়ে দেখলো সত্যি সত্যিই ডানা গজিয়েছে কিনা। কিন্তু তেমন কিছুই ওর হাতে বাধলো না।। দৃষ্টির অগোচরে কিছু কথা ওর অজানাতেই রয়ে গেলো।
অন্যদিকে হৃদয় ক্লাবে বসে একমনে সিগারেটের ধোয়া উড়িয়ে চলেছে। বন্ধুরা সবাই মজা করছে কিন্তু ও শান্তি পাচ্ছে না। হঠাৎ শ্রাবণী নামের একটা মেয়ে ওর কাছে এসে বললো
> হৃদয় শুনলাম তুমি একটা কাজের মেয়েকে বিয়ে করছো? শেষ পযর্ন্ত কাজের মেয়ে? দেশে কি মেয়ের অভাব ছিল?
কথাটা শুনেই হৃদয়ের কপালের রগ খাড়া হয়ে উঠলো। ওর ব্যক্তিগত ব্যপারে নাক গলানো ও একদম পছন্দ করে না। তাই ও পেছনে ঘুরেই জোরে একটা থাপ্পর বাসিয়ে দিলো ওর গালে। তারপর চিৎকার করে বলে উঠলো।
> আমার বউ কাজের মেয়ে হোক আর যায় হোক তোর কি? আমার ব্যাপার আমি বুঝবো।
ওর এই কান্ডে ক্লাবের সবাই চুপ হয়ে গেলো।। শ্রাবণী রেগে সবাইকে বলে দিলো হৃদয় একটা কাজের মেয়ে বিয়ে করছে। হৃদয় ওকে আবার থাপ্পড় দিতে গেলো কিন্তু শাফিন ওকে আটকিয়ে জোর করে বাইরে নিয়ে আসলো।
> ওকে মেরে আরও কথাটা রাষ্ট্র করলি। তুই জানিস না ও কেমন মেয়ে। সবাই এখন ঝামেলা করবে।
> আমি কাউকে ভয় পাই নাকি। কাজের মেয়ে ওই মেয়েটা তাতে আমার কি।ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি ওকে কালকেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবো।
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি কাল্পনিক ভৌতিক গল্প। ভালো না লাগলে দয়াকরে বাজে মন্তব্য না করে ইগনোর করবেন