দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২৭

দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২৭
#কলামে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদয় চুপ করে হৃদীতার দিকে তাঁকিয়ে আছে। ও কি সত্যিই চলে যাবে? যদি চলে যাবার ছিল তাহলে আবার কেনো ওর জীবনে ফিরে এসেছে ভেবেই হৃদয়ের চোখে পানি ছলছল করছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি টুপ করে ঝরে পড়বে। হৃদীতা মন খারাপ করে আছে ওর এখান থেকে যেতে ইচ্ছা করছে না কিন্তু ওদের দেশের নিয়মকানুন অন্যরকম। ওরা মানুষের সাথে বসবাস করতে পারেনা যদি কেউ নিময় ভেঙে মানুষের সাথে বসবাস করতে চলে আসে তবে তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। হৃদীতা বুঝতে পারছে না ওর কি করা প্রয়োজন এখন। ও আড়চোখে বারবার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখছে। লোকটা যে কষ্ট পাচ্ছে ও তা বুঝতে পারছে। হৃদয়ের মা গম্ভীর হয়ে আছে কিন্তু হৃদীতার বাবা মা হাসিখুশি মুখ নিয়ে বসে আছেন। হৃদয়ের মা বলে উঠলেন,

> আমার মনে হয় আপনাদের মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ভালো হবে। আপনারা বরং আজকের মধ্যেই ওকে নিয়ে যান। আমি আগামীকাল আমার ছেলের বিয়ে দিবো। আমি চাইনা আপনার মেয়ে আর কখনও আমার ছেলের জীবনের ফিরে এসে ওর জীবনটা বরবাদ করে দিকে।

> আপনি বারবার আমার মেয়েকে দোষারোপ কেনো করছেন? বলেছি না আপনারা ভুল করছেন আমার মেয়েকে আপনার ছেলে জোর করে উঠিয়ে এনেছে। যাইহোক এতো কথার কি আছে আমি এখুনি আমার মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছি।
> দেরী কেনো করছেন এখুনি নিয়ে যান।

হৃদীতার মা বেশ রেগে গেছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হৃদয় নির্বাক হয়ে বসে আছে ওর মনে হচ্ছে কথা বলার ভাষা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে হৃদীতার মা উঠে দাঁড়িয়ে হৃদীতার হাত ধরলেন,

> চলো তোমার ভয় নেই।আমার এসেছি তোমাকে নিয়ে যেতে। আর কখনও এদিকের ছায়াও তুমি মাড়াবে না।( রেগে)

> কিন্তু আম্মা এরা সবাই অনেক ভালো। আমি এখানে থাকতে চাই প্লীজ।( অনুরোধ করে)

> না হৃদীতা তোমার বিয়ের সব ব্যবস্থা আমারা করে নিয়েছি। আর তুমি খুব ভালো করেই জানো ওখানে তোমার প্রয়োজন। তুমি কোনো সাধারণ মেয়ে না যে নিয়ম ভেঙতে পারবে।

> কিন্তু….

> কোনো কিন্তু না চলো।

ভদ্রমহিলা ওকে জোর করে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো। হৃদয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো তারপর চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করলো। ওকে চলে যেতে দেখে তনুজা বেশ খুশি কিন্তু তন্ময়ার মন খারাপ ও কিছুই বুঝতে পারছে না এই এরা হঠাৎ কোথা থেকে আসলো ওর জানা নেই। হৃদয় জানালা দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। ও ইচ্ছা করলে হৃদীতাকে বাধা দিতে পারতো কিন্তু দেয়নি। ও সবটা নিজের ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছে। ভাগ্য থাকলে ওদের আবার দেখা হবে আর যদি না থাকে তাহলে কখনও হবে না। হৃদীতা কথা গুলো ভাবছিল তখনই হঠাৎ বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচি শুনে ও দ্রুত রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে ওর মা অসুস্থ। হৃদয় তাড়াতাড়ি উনাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। তারপর ডাক্তার উনাকে দেখে বলেন হঠাৎ অতিরিক্ত টেনশন করেছে তাই এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উনাকে আর টেনশন দেওয়া যাবে না। অনেক রাতে দীলারা বেগমের জ্ঞান ফিরে আসে। হৃদয় ওর মায়ের পাশেই আছে। তন্ময়া বেশ কান্নাকাটি করছে। বাড়ির সবাই হসপিটালে বসে আছে। জ্ঞান ফিরতেই হৃদয়ের মা হৃদয় কে কাছে ডাকলেন। হৃদয় এসে ওর মায়ের হাত ধরে পাশে বসতেই উনি বললেন,

> হৃদয় তুই আমার সব কথা শুনবি তো?

> আম্মু কথা বলো না এখন। আমি তো তোমার সব কথায় শুনি বলো? আর সব শুনবো কিন্তু এখন চুপ করো।

> তুই সকালেই তনুজাকে বিয়ে করবি আমি নয়তো মরেও শান্তি পাবো না। (কান্না করে)

> কি বলছো তুমি এইসব? আমি হৃদীতাকে ভালোবাসি আম্মু। (হাত ছাড়িয়ে নিয়ে )

> সব ভালোবাসা কি পূর্ণতা পাই তুই বল? ওকে ভুলতে তোকে তনু সাহায্য করবে। তুই আমার কথা শুনবি না তো? না শুনলে আমি কিন্তু মরে যাবো। (হুমকি দিয়ে )

>আম্মু ভুলভাল বকছো কেনো। আগে তুমি সুস্থ হয়ে উঠো তারপর ভাববো।

> তাহলে বল করবি?
> আচ্ছা তোমার মন যা চাই করবে আমি কিছু বলবো না।

হৃদয় তন্ময়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজী হয়ে গেলো। ভালোবাসার জন্য নিজের মায়ে মৃত্যুর দায় ও নিতে পারবে না। মনে করবে এটা ওর শাস্তি ছিল। একজন কে মনের মধ্যে রেখে অন্যজনের সাথে সংসার করা, হাসি মুখে ভালো থাকার অভিনয় করার মতো বড় শাস্তি আর হয়না। এটা একটা ভয়ংকর শাস্তি। অসহনীয় একটা ব্যাপার। রাতে যার মুখ দেখে ঘুমাতে হবে আবার সকালে তার মুখ দেখে দিনের সূচনা হবে সেই মুখটাকেই যদি না ভালোবাসা যায় তবে এমন বিবাহিত জীবন নরক যন্ত্রণার সমান। যেনে বুঝে বিষ পান করা হৃদয় না হয় এই তাই পান করবে নিজের মায়ের জন্য। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হৃদয় চোখ মুছে বাইরে চলে আসলো। ও চলে যেতেই দীলারা বেগম তাড়াতাড়ি উঠে বসে হাসিমুখে তনুজাকে কাছে নিয়ে বললেন,

> বলেছিলাম না আমার ছেলে আমার কথা শুনবে এখন বিশ্বাস হলো তো? তাড়াতাড়ি বাড়িতে যেতে হবে কতো কাজ বাড়িতে।আমার ছেলের বিয়ে বলে কথা।( খুশি হয়ে)

> ফুপি আমি ভিষণ খুশী। আমি কখনও তোমার এই ঋণ শোধ করতে পারবো না। (জড়িয়ে ধরে)

ওদের কথা শুনে তন্ময়া অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে। ভাবছে এরা কি করতে চলেছে। ভাইয়াকে রাজি করানোর জন্য আম্মু অভিনয় করলো অসুস্থতার? ভাইয়াকে বলতে হবে। এই মূহুর্তে ওর তনুজাকে অসহ্য লাগছে। স্বার্থপর একটা মেয়ে। নিজের জন্য অন্যদের কষ্ট দেই। কিন্তু দীলারা বেগম তন্ময়াকে ভাবতে দেখে কঠিন গলাই বললেন,

> তোমার ভাইয়াকে যদি এই সব কথা বলেছো তবে আমি কিন্তু অনর্থ করে ফেলবো। তোমার আম্মুকে তোমার জানা আছে আশাকরি।

> কিন্তু আম্মু এটা তো ঠিক না। তুমি জোর করে মনে করছো কেনো আমি বুঝতে পারছি না। আর ভাইয়াতো এখনো বিবাহিত। (বুঝিয়ে )

> ও হাদীতা নয় ওর মা এটা আমাকে বলেছে। ও অন্যকেউ। যাইহোক আমি চাইনা এই রুমের কথা বাইরে যাক।

তন্ময়া কিছু না বলে বাইরে চলে আসলো। এদের সাথে কথা না বলাই ভালো। তন্ময়া বাইরে এসে দেখলো হৃদয় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে কিছু একটা ভাবছে। ওকে ভাবতে দেখে তন্ময়া ওর কাধে হাত রেখে বলল,

> ভাইয়া আমি বাড়িতে যাবো তুমি আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দাও।( মন খারাপ করে)

> আম্মুকে নিয়ে একবারে ফিরবো।

> আম্মু চলে আসবে তুমি যাবে কিনা বলো? যদি না যাও তবে আমি একাই চলে যাবো।( রাগ করে)

> অনেক রাত হয়ে গেছে একটা যাওয়া ঠিক হবে না আচ্ছা চল তোকে রেখে আসছি। (উঠতে উঠতে)

> হুম।

তন্ময়াকে হৃদয় বাড়িতে রেখে আবার হসপিটালে যেতে চাইলো কিন্তু তন্ময়া যেতে দিলো না। বলল আব্বু নিয়ে আসবে। হৃদয় ও কিছু একটা ভেবে আর গেলো না। ওর কথা বলতেই ইচ্ছা করছে না কারও সাথে। একা থাকতে পারলে ভালো লাগবে তাই ও রুমে এসে আবারও দরজা বন্ধ করলো। ওরা ফিরে আসতেই দীলারা বেগম ও ফিরে আসলেন। উনি ফোন করে বিয়ের সব ব্যবস্থা প্রায় করে ফেলেছেন। হৃদয়ের চুপ করে বসে আছে। এই মুহূর্তে কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না। সোফায় চোখ বন্ধ করে ভাবতে ভাবতেই ওর চোখ দুটো লেগে গেলো। হৃদয় ঘুমিয়ে পড়লো।

মাঝ রাতে হঠাৎ নিজের বুকের উপর কারো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। হৃদয় তাড়াতাড়ি উঠে বসতে গেলো কিন্তু পারলো না। একটা মেয়ে ওর বুকের ওপর মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। হৃদয় ভ্রু কুচকে নিজের হাতটা ওর মাথার উপরে রেখে প্রশ্ন করলো,

> কে?

হৃদয়ের প্রশ্নের উত্তর আসলো না তবে কান্নার গতিবেগ আরও বেশি হলো। মেয়েটার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার জন্য সোফা পযর্ন্ত নড়ে নড়ে উঠছে। হৃদয়ের এবার প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। মেয়েটা ওকে প্রায় চাপা দিয়ে রেখেছে উঠতেই দিচ্ছে না। এমন করলে ও উঠবে কেমন করে আর দেখবেই বা কেমন করে। হৃদয় বারবার চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শূণ্য। এমন করে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো তারপর মেয়েটা ওর বুক থেকে উঠে ওর পাশে গিয়ে বসলো। হৃদয় ও সাথে সাথেই উঠে বসলো। হৃদয় উঠে সামনে তাকিয়ে অবাক।হৃদীতা বসে আছে ওর চোখ মুখ কান্নাকাটি করে ফুলে গেছে। হৃদীতা ঘনঘন নাক টানছে। হৃদয় ওর দিকে অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থেকে বলল,

> তুমি এখানে?

হৃদীতা কোনো কথা না বলে আবারও জড়িয়ে ধরলো। হৃদয় ওকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে ভাবছে হঠাৎ কি হলো এর? আর ওকি তাহলে আবার ফিরে এসেছে? কিন্তু মেয়েটা যে কথায় বলছে না। না বললে জানবে কেমন করে। ও এবার জোর করে হৃদীতাকে নিজের বুক থেকে আলগা করে ওর কাধে হাত রেখে বলল,

> না বললে বুঝবো কেমন করে শুনি কি হয়েছে? আর এতো কান্নাকাটি কেনো করছো বলবে? তখন তো নাচতে নাচতে চলে গেলে তাহলে আবার যে ফিরে আসলে?

> আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আমি সেদিন বাসর ঘরে আপনাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলাম। আপনি তো কিছুই জনেন না। (কাঁদতে কাঁদতে)

> কী জানিনা আমি? আর তোমার সব কিছু মনে পড়েছে? কখন কিভাবে?( উত্তেজিত হয়ে)

> পরে বলবো কিন্তু আগের কথাগুলো শুনবেন তো?

>বলো

> যখন আপনি আমার বললেন হৃদীতা আমার ঘুম পাচ্ছে একটু ঘুমিয়ে নেই বলে ঘুমিয়ে পড়লেন তখন হঠাৎ আমার সারা শরীর প্রচণ্ড ব্যাথা করে উঠলো আমি বাইরে বেরিয়ে গেলাম ওই জানালা দিয়ে। আপনি তো জানেন না আমি প্রায় রাতে বাইরে যেতাম আমার শরীরে যখন যন্ত্রণা করতো আমি চিৎকার করে কাঁদতাম। কিন্তু যন্ত্রণা কমে গেলে আমার কিছু মনে থাকতো না। নদীর ওপারের আপনি আমাকেই দেখেছিলেন। সেদিন রাতেও আমার এমন হয়েছিল। পূর্ণিমা রাত ছিল সেদিন। আমি ওই নদীর তীরে আমার পরিবর্তন নিজের চোখে দেখেছিলাম। তখন আপনার কথা আমার কিছুই মনে ছিল না। তখনই চারদিকে আমার মতো অনেকেই এসেছিল আমাকে নিতে। ওর আমাকে নিয়ে ওদের রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিল। ওই রাজ্যে পা রাখতেই আমার মনে হতে লাগলো ওখানের সবাই আমার আপনজন। আমার বাবা মা আমার পরিবার ফিরে পেলাম। ওরা পাথর ছিল কিন্তু আমার ছোয়ায় সবাই প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। আমি ওখানেই থেকে গেলাম। ওদের নিয়ে বেশ ভালো ছিলাম কিন্তু মাঝে মাঝেই আমার কেমন যেনো অনুভব হতো মনে হতো আমার কেমন দম আটকে আসছে। তারপর একদিন বন্ধুদের নিয়ে যখন মানুষের মধ্যে ঘুরতে এলাম তখন অনেক ভালোলাগলো। তখন থেকেই আমরা আসতাম ঘুরতাম কিন্তু ওইদিন আপনি দেখে ফেললেন। আর আমাকে নিয়ে আসলেন।( একদমে)

> আমি কিছুই শুনতে চায়না তোমার সব কিছু মনে পড়েছে এটাই অনেক। কিন্তু তুমি ফিরে আসলে কি হবে আমার যে সকালে বিয়ে। মন (খারাপ করে)

> আপনি আমাকে ফেলে বিয়ে করবেন? এমন টা করতে পারলে আপনি? (ঠোঁট ফুলিয়ে )

> ওই কি করেছি আমি? নিজেই চলে গিয়েছিলে।আবার আমাকে বলছো।( রেগে)

> আপনি ভালো না। আপনি আমাকে পছন্দ করেন না তাই জন্য এমন করবেন আমি বুঝেছি আপনি আমাকে দেখতেই পারেন না।( কান্না করে)

> আবার সেই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছো? (ধমক দিয়ে )

> হুম আপনি আমার, আপনার সব কিছুই আমার। এই ঘরটাও আমার। আমি ছেড়ে গিয়েছিলাম আবার ফেরত চাই।

> সে আর কতক্ষণ তোমার থাকবে বলো? আর
তোমার ও তো বিয়ে তোমার আম্মু বলে গেলেন।

> উনি মিথ্যা বলেছেন। আমাকে ফিরিয়ে নেবার জন্য। ওখানে আমি আর ফিরবো না। আমি নিজের ইচ্ছাই সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছি। (চোখ মুছে)

> বাহ চমৎকার। দেখো কি করবে সকালেই আমার বিয়ে। আমি এখন একটু ঘুমাবো।

> ঘুমাবেন তাই না আমাকে টেনশনে রেখে? (কান্না করে)

> হুম।

হৃদয় হুম বলতেই হৃদীতা ওর পায়ের উপরে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। হৃদয় ওর মাথায় হাত রেখে সোফায় হেলান দিলো। ওর মনে এক অনাবিল আনন্দ কাজ করছে।মনের মধ্যে গুঞ্জন হচ্ছে একটা কথায়” অবশেষে তাকে পেলাম “। হৃদয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে হৃদীতা। ও ভাবছে এই মানুষ ওর জন্য কতো কষ্ট সহ্য করেছে। কিন্তু সকালে কি হবে? এই বিয়ে ওকে যেভাবেই হোক অটকাতে হবে কিন্তু কেমন করে। হৃদয় কে ও কিছুতেই হারাতে পারবে না। হৃদয়ের জন্য ও নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গেছে আর তাকে ছেড়ে দেওয়া প্রশ্নই আসে না। হৃদয়ের জন্য ও সব কিছু করতে পারে। বাকি রাত ওদের এভাবেই কাঁটলো। সকালে ঘুম ভাঙতেই হৃদয় সোজ হয়ে বসলো। হৃদীতা এখনো ওর কোলের উপরেই ঘুমিয়ে আছে। হৃদয় ওকে ডাকলো উঠার জন্য। হৃদীতা চোখ মুছতে মুছতে উঠে বলো।,

> ডাকছেন কেনো? একটু ঘুমাতে দিন। হামি *ছাড়তে ছাড়তে)

> আজা আমার বিয়ে। বিয়ের দিন এতো ঘুমাতে হয় না। আমি বাইরে যাচ্ছি।( উঠতে উঠতে)

> আপনার দেখি বিয়ের জন্য তর সইছে না। আমি সবাইকে বলবো বউ থাকতে আবার আপনি বিয়ে করছেন। *হুমকি দিয়ে )

> আচ্ছা।

হৃদয় ওর সাথে কথা বলতে বলতে বাথরুম চলে গেলো। হৃদীতা ভাবছে বিয়েটা কেমন করে ভাঙা যায়। অন্যদিকে হৃদয় ভেবেছে হৃদীতা নিজের অধিকার নিজেই বুঝে নিবে ওকে আর ও কোনো সাহায্য করবে না। ও বেশ মাজা লাগছে হৃদীতাকে এমন চিন্তাই ফেলে। হৃদয় বাথরুম থেকে বের হয়ে বাইরে চলে আসলো। সব কিছু সাজানো হচ্ছে। হৃদয় নিচে আসতেই দীলারা বেগম হাসিমুখে কুসুম কে বললেন,

> এই কুসুম তোর তনু আপা কে ডেকে বল আমি ওকে ডাকছি। অন্যদিন তো উঠে পড়ে কিন্তু আজ উঠছে না কেনো।

কুসুম আচ্ছা বলে উপরে চলে গেলো। ও চলে যেতেই হৃদয় ওর মায়ের পাশে গিয়ে বসলো তারপর নরম সুরে বলল,

> আম্মু এই বিয়েটা তুমি ভেঙে দাও। হৃদীতা ফিরে এসেছে।

>মানে কি বলতে চাইছিস তুই? তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিস হৃদয়। (রেগে)

> দেখো আম্মু এই বিয়েটা করলে আমাদের কেউ হ্যাপী হবো না। প্লীজ আম্মু একটু ভাবো আমার কথা।

> আমি তনুকে কথা দিয়েছি। ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে।

> আম্মু…..

> এমন করে লাভ নেই। যাও প্রস্তুতি নাও।

ওদের কথার মধ্যেই কুসুম চিৎকার করে বলে উঠলো খালা আম্মা তনু আপা আর নেই। ওর কথা শুনে হৃদয় আর দীলারা বেগম ছুটতে ছুটতে উপরে দৌড়ে চলে আসলো।

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। আগামী পর্বে গল্পটা শেষ করতে চলেছি।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here