দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২৪

#দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২৪
#কলামে_লাবণ্য_ইয়াসমিন

হৃদীতার অস্থির লাগছে,আর কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে মনে হচ্ছে এখানে আশাটা ওর একদম ঠিক হয়নাই। কিন্তু ও তো ইচ্ছা করে আসনি ওকে জোর করে আনা হয়েছে। হৃদীতা একপা দুপা করে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। সামনে বিশাল মঠের শেষে জঙ্গল আর জঙ্গলের শেষে নদী সবটা ওর কাছে কেমন চেনা লাগছে কিন্তু মনে হচ্ছে আগে কখনও তো আসা হয়নি তবুও কেন এমন মনে হচ্ছে ওর জানা নেই।

কথা গুলো ও গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে । আর এলোমেলো বাতাসে ওর চুল গুলো আরও এলোমেলো করে দিচ্ছে। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে চুলগুলো বাধতে গিয়েও বাধলো না। মনে হলো থাকনা খোলা। এর মধ্যেই হৃদয় বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালো। চুল মুছতে মুছতে হৃদীতার দিকে তাঁকিয়ে ও দাঁড়িয়ে পড়লো। হৃদয় তন্ময় হয়ে দেখছে আজ কতোদিন পরে ও এই ঘরটাতে পা রেখেছে। ওর খোলা চুলের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। হৃদয়ের ইচ্ছা করছে ওখানে গিয়ে মুখ ডুবাতে। হৃদয় নির্বাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে ওর সৌন্দর্যের মুগ্ধতায়।ও আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। মনের মধ্যে থাকা অদম্য ইচ্ছা কে দমন করা ওর পক্ষে আর সম্ভব নয়। হৃদয় একপা দুপা করে হৃদীতার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর আনমনে নিজের হাতটা হৃদীতার চুলের উপরে রাখতেই হৃদীতার সারা মুখ বিরক্তিতে ভরে উঠলো। হৃদয়ের হাতটা ক্রমশ ওর চুল ছাড়িয়ে কাধের উপরে চলেছে। হৃদীতা এবার চুলের ঝাপটা দিয়ে পেছন ফিরে তাকালো। ওর এমন করে ঘুরে তাকানোর জন্য হৃদয়ের মুখে ওর চুলের বাড়ি লাগলো আর হৃদয় চোখ বন্ধ করে কিছুটা পিছিয়ে আসলো। মনে মনে ভাবলো তোর কি হয়েছিল হৃদয় এমন দুর্বল হলে তো তোকে চলবে না। শক্ত হতে হবে। দুবছরের সব কিছু তুই এক মূহুর্তে ভুলতে পারিস না।জানিস তো মেয়েটা মায়াবী। ও তোকে মায়া দিয়ে ভুলানোর চেষ্টা করছে আর তুই কিনা ভুলে যাবি? হৃদয় কে এমন চুপ থাকতে দেখে হৃদীতা ভ্রু কুচকে বলল,

> আপনার কি হয়েছে বলুন তো? কি করতে চলেছিলেন কোনো কমনছেন্স নেই দেখি আপনার।

> এমন ভাবে বলছো মনে হচ্ছে তোমাকে আমি চুমু টুমু দিতে চাইছি।এই শুনো তোমাকে আমি এই বাড়িতে আদর যত্ন করতে নিয়ে এসেছি ভাবলে ভুল করছো। সত্যি টা আমার জানা প্রয়োজন কি হয়েছিল সেদিন রাতে? কোথায় চলে গিয়েছিলে সবটা আমার জানার প্রয়োজন আছে। যতক্ষণ না বলবে এখানেই থাকবে। অনেক কষ্ট দিয়েছো আর না। (আমতা আমতা করে)

> আপনি তো আমার কথায় শুনছেন না। কতবার বলবো আমি কিছুই জানিনা। আপনাকে তো আমি প্রথমবার দেখছি। আর এই বাড়িটাও।

> সব মনে পড়বে দুঘা দিলেই পড়বে।

হৃদয় ওর সাথে আর কথা না বলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। শাফিন কে বলতে হবে। ওকে না বললে শান্তি হচ্ছে না। হৃদয় কথাটা ভেবেই ওকে ফোন দিলো। দুবার ফোন বাজার পর ওর ফোন তুলল।

> ওই তুই কি এমন কাজ করিস একটু বলবি আমাকে? যতবার ফোন দেয় কিছু না কিছু করতেই আছিস, ফোন তোলার নাম নেই। তোর ফোনটা এবার আমি ভেঙে দিবো দেখিস। (রাগ করি)

> আরে ভাই আমার তো আর তোর মতো বাবার অফিসে নেই যে ইচ্ছা হলে গেলাম আর না হলে গেলাম না। পরের অফিসের চাকরি বুঝলি না? (হতাশ কন্ঠ )

> ছেড়ে দিয়ে আমার অফিসে চলে আসতে বলেছিলাম তা তো করবি না। মর ওখানে আমি কিছু আর বলবো না।

> রাগ করিস না। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো এবার এটা ছেড়ে দেওয়ার । এবার তো বল এতো জরুরি তলব কেনো?

> শাফিন হৃদীতা ফিরে এসেছে। (শান্ত কন্ঠে)

> কবে, কখন, কিভাবে? তুই আমাকে আগে কেনো বলিসনাই? এখন কোথায় ও? আমি আসছি।( উত্তেজিত হয়ে)

> আগে শান্ত হয়ে আমার কথা গুলো তো শোন তারপর সব বলছি।

> হুম বল।

> আম্মু ওকে একসেপ্ট করছে না। আব্বুকে আমি ম্যানেজ করেছি কিন্তু আম্মুকে ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছে না। চিৎকার চেচামেচি করছে। এখন বল কি করবো?

> একটু তো সমস্যা হবেই তুই একদম ভেঙে পড়বি না।আমি বোঝাবো আন্টি কে। কিন্তু সেই মহারানী কোথায় এখন?

> জানালায় দাঁড়িয়ে হাওয়া খাচ্ছেন। মহারানী তো আমাকে চিনতেই পারছেন না। স্মৃতি হারানোর নাটক শুরু করেছেন। মেজাজ খারাপ হলে দেখবি দুম করে মেরে দিবো আমাকে তো জানিস। এমনি দুবছরে প্রচণ্ড জ্বলেছি আর না। আমি ও তো মানুষ নাকি? একটা বিয়ে করেই আমার জীবন শেষ আম্মু আবার আমার বিয়ে নিয়ে ভাবছে জানিস? (মন খারাপ করে)

> হুম সব তো শুনলাম। যাইহোক মাথা ঠান্ডা রাখ আমি এখুনি আসছি। আর বাড়িতে কোনো ঝামেলা করিস না। আন্টির ও তো কোনো অন্যায় নেই। উনি ঠিক আছেন উনার দিক থেকে। এসে সব শুনবো আর বলবো। আল্লাহ হাফেজ।

> হুম আল্লাহ হাফেজ।

হৃদয় ফোনটা রেখে বিছানায় এসে বসলো। এতোক্ষন হৃদীতা কান পেতে শুনছিল হৃদয়ে কথাগুলো। হৃদয়ের বেশ দুর্বল লাগছে গতকাল তো শুধু কফি খেয়েই দিন গেলো। সারারাত ঘুম হয়নি। আর মজুমদারের ব্যপার টা উফফ কি ভয়ংকর একটা ব্যাপার। একজন মৃত মানুষ তার মালিকের জন্য চা তৈরী করে আনছে। জানি না ওই চায়ে কি ছিল। আচ্ছা মজুমদার যে পাওনাদারদের জন্য আত্মহত্যা করেছে হৃদীতা কেমন করে জানলো?। মজুমদার বাড়ি ঘর ফেলে এই বাড়িতে পড়ে থাকতো। ও খুব একটা বাড়ি থেকে বের হতো না। হৃদয়ের মনের মধ্যে নানা রকম কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে ও মজুমদারের ঋণ পরিশোধ করে দিবে। লোকটা আগে যদি বলতো তাহলে ও এমন হতেই দিতো না। কিন্তু কি করবে ওর মৃত্যু হয়তো এভাবেই লেখা আছে তাই হয়তো হয়েছে । হৃদয় আপাতত মাথা থেকে কথা গুলো বের করে দিলো কারণ এখুনি যদি ও খাবার না খাই তাহলে হয়তো ও মারাই যাবে। পেটে যে ইদুর দৌড়াচ্ছে। হৃদয় বিছানা থেকে উঠে দরজা পযর্ন্ত এসে আবার ভাবলো আমি একা খেলে হবে নাকি ওকে ও তো নিয়ে যেতে হবে। জানিনা আম্মু ওকে খাবার দিবে কিনা। যদি না দেয় তবে ওর জন্য বাইরে থেকে খাবার আনতে হবে যাইহোক নিয়ে তো যায়। কথাটা ভেবে ও হৃদীতার পাশে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো

> তো মহারানী খাবেন তো? নাকি এই জানালা দিয়ে আসা হাওয়া খেয়েই থাকবেন?

> আপনার আম্মু আমাকে খাবার দিবেন না। নিচে উনি এই আলোচনায় করছেন আপনার বোনের সাথে। সেই আপনার আম্মুকে বলেছে আমার খাবার যেনো না দেওয়া হয়।

> এই শুনো একদম না জেনে আমার আম্মুর নামে বাজে কথা বলবে না। তুমি আগে তো এমন ছিলে না। জানোনা মানুষের নামে খারাপ কথা বলতে হয়না? (ভ্রু কুচকে)

> আগে পরে আমি এমনি ছিলাম আপনি আমাকে চিনতে ভুল করেছেন। আপনার স্ত্রী আমি নয়। আর চলেন বাইরে গিয়ে প্রমাণ হোক আপনার আম্মু আমাকে খাবার দেন কি না।

> তোমাকে চিনবো না। খুব চিনি একেবারে হাড়েহাড়ে চিনি।

> এতো চিনির জন্যই হয়তো আমি এতো মিষ্টি যাইহোক এবার তো চলুন।

হৃদয় আগে আগে চলে আসলো হৃদীতা ওর পেছনে পেছনে আসলো। ওরা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে খাবার টেবিলের দিকে গেলো সবাই সকালের নাস্তা নিয়ে বসেছে কিন্তু ওরা যাবার আগেই দীলারা বেগম চিৎকার করে বলে উঠলো

> ওর জন্য রান্না হয়নি। তনুজা ওকে বল এই বাড়িতে ওর জন্য কোনো রান্না হবে না।

> কিন্তু আম্মু ও খাবে কি? ওর তো ক্ষুধা পেয়েছে। (হৃদয় )

> ওর ক্ষুধা পেয়েছে বলে তোর খুব দরদ হচ্ছে তাইনা। এতোদিন যে ওকে ছাড়া তুই পথে পথে ঘুরেছিস তার বেলা কিছুনা। আমি ওকে আমার সামনে দেখতে চাইনা হৃদয়। তুই আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু তনুজা কে নিয়ে বাড়ি ছাড়বো।( হুমকি দিয়ে )

হৃদয় ওর মায়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে ভাবলো আম্মুতো একদম মিথ্যা কথাও বলছে না ঠিক বলছে। ওর কষ্টের সময় হৃদীতা কোথায় ছিল তখন? তখন তো ও আসেনি। তাহলে এখন ও কেনো ওকে নিয়ে ভাববে। হৃদয় কঠিন গলাই হৃদীতাকে উপরে চলে যেতে বলে নিজে খাবার নিয়ে বসলো। হেদীতাও আর কোনো কথা না বলে চুপ করে উপরে চলে আসলো। হৃদয় প্লেটে খাবার নিয়ে বারবার নাড়াচাড়া করছে কিন্তু মুখে তুলছে না। কেনো জানি খাবার মুখে উঠছে না। তাই ও না খেয়ে উঠে আসলো। ওকে উঠে আসতে দেখে তনুজা অনেক রিকুয়েস্ট করলো খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু হৃদয় ওর কথা কানে না তুলে উপরে চলে আসলো। উপরে দরজা দিয়ে ঢুকতেই হৃদয়ের চোখ পড়লো সোফায়। এটা দেখে হৃদয়ের চোখ ছানাবড়া। হৃদীতা প্লেটে খাবার নিয়ে বসে আছে। হৃদয় ভ্রু কুচকে ওর সামনে গিয়ে বলল,

> এগুলো তুমি কোথায় পেলে?

> চুরি করেছি আপনাদের রান্না ঘর থেকে। কষ্ট পাবেন না আমি আপনার জন্য ও এনেছি। আসুন খাবেন। দেখলাম কিছুই তো খেলেন না।

> তুমি শেষ পযর্ন্ত আমার বাড়িতে চুরি করলে?

> ডায়ালগ দিবেন না। এমন ভাব করছেন যেনো মনে হচ্ছে বিশাল কিছু করে ফেলেছি। খাবেন কি না? যদি না খান তবে আমি নিচে গিয়ে বলবো আপনি আমার জন্য এগুলো চুরি করে এনেছেন তারপর বুঝবেন কি হয়। এবার বলুন খাবেন তো?

হৃদয় ওর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাঁকালো। এই হৃদীতাতে ওর সত্যি অচেনা মনে হচ্ছে। কিন্তু খাবার গুলো ও কখন নিয়ে আসলো? দেখলাম না তো। হৃদয়ের ভাবতে দেখে হৃদীতা আবার হুমকি দিলো দেখে হৃদয় খাবার নিয়ে বসে পড়লো। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছিল ওর তাই কিছু না ভেবে খাবার গুলো গুছিয়ে খেয়ে নিলো। তারপর সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। এয়ারপোর্ট যেতে হবে তন্ময়া ফিরছে আজ। ওকে আনতে যাবার কথা ছিল কিন্তু হৃদীতাকে রেখে ও যাবে কেমন করে। এই সুযোগে যদি মেয়েটা পালিয়ে যায় তখন। না না এমন টা হতে দেওয়া চলবে না কিছুতেই না। আবার ওকে নিয়ে যাওয়া ও যাবেনা আম্মু ঝামেলা করবে শেষ পযর্ন্ত কিছু একটা ভেবে হৃদয় ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে পায়ে শিকল দিয়ে দিলো। হৃদীতা অনেক বোঝালো ও এই দুদিন কোথাও যাবে না। এখানেই থাকবে কিন্তু হৃদয় ওর কথা বিশ্বাস করলো না। হৃদয় ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বের হয়ে দরজা লক করে দিলো। ও চাইনা হৃদীতার সাথে অন্যকেউ দেখা করুক বা ওকে বকাবকি করুন। যা করবে হৃদয় নিজেই করবে। হৃদয় দ্রুতগতিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে গেলো। ওর চলে যাবার দিকে তাঁকিয়ে আছে তনুজা আর দীলারা বেগম। ও চলে যেতেই তনুজা ভ্রূ কুচকে বলল,

> ফুপি এই সুযোগে মেয়েটাকে যদি আমার তাড়িয়ে দেই তাহলে কেমন হবে?

> খুবই খারাপ হবে তনু। তোর কি মনে হয় আমার ছেলে খুবই বোকা?

> কিন্তু কেনো?

> ও রুম লক করে রেখেছে যাবি কেমন করে? আর ওকে যদিও বা আমরা তাড়িয়ে দেই তবে হৃদয় ভীষন রেগে যাবে। ওকে আমি অন্যরকম ভাবে বোঝাবো তুই ভাবিস না।

> তোমার ছেলে বুঝবে না। বুঝলে এতদিন বুঝতো।

>হুম

তনুজা চুপ করে বসে ভাবছে কিছু একটা তো করতেই হবে। কিন্তু কি করবে এটা ভেবেই ও কুলকিনারা পাচ্ছে না। এদিকে হৃদয় শাফিন কে রাস্তা থেকে গাড়িতে তুল নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে ছুটলো। গাড়ি চলছে হৃদয় গম্ভীর ভাবে ড্রাইভ করছে। ওর মন পড়ে আছে বাড়িতে হৃদীতার কাছে। না জানি ও কি করছে। হৃদয় কে এমন চুপ করে থাকতে দেখে শাফিন মিষ্টি করে হেসে বলল,

> তাহলে হৃদয় শুকনো বসর এবার নতুন ফুলে সাজিয়ে তোলার ব্যবস্থা করি কি বলিস? আমি তো সেই খুশি।

> বাজে কথা বললে কিন্তু এখানেই নামিয়ে দিবো। ওই মেয়েটাকে আমি কখনও ক্ষমা করবো না। (রেগে)

> সে আমি জানি, তাইতো চলে যাবে সেই ভয়ে পায়ে শিকল পড়িয়ে রেখে এসেছিস। আমার কাছে বিষয়ে টা দারুণ লেগেছে। একদম সিনেমার মতো। শোন রাগ করিস না। তন্ময়া আমি আর আঙ্কেল মিলে বোঝাবো আন্টিকে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।

> কিছুই ঠিক হবে না। আগের সেই সরল হৃদীতার এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সবতো বলেছি তোকে গতকাল ওই বাড়িতে ভুত থেকে শুর করে আজ সকালে খাবার চুরির বিষয় পযর্ন্ত সব।

> আমার ও কেমন খটকা লাগছে। আচ্ছা তুই ওকে ভালো করে জিঞ্জাসা করবি। তুই তো ওর কোনো কথায় শুনতে চাইছিস না। আগে ওর থেকে সবটা জানার চেষ্টা তো করতে হবে।

> হুম।

ওরা কথা বলতে বলতে এয়ারপোর্ট চলে আসলো। এখানে এসে ওদেরকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তন্ময় চলে আসলো। হৃদয় বোনকে পেয়ে আনেক খুশি। ওরা কথাবার্তা বলে গাড়িতে উঠলো বাসাই ফেরার উদ্দেশ্যে। তন্ময়া সবার কথা শুনছে কে কেমন আছে এইসব। ও এখনো জানেনা হৃদীতা ফিরে এসেছে। ও হৃদীতার কথা বলতে গিয়েও বলল না। নতুন করে হৃদীতার নাম নিয়ে ভাইয়ের মন খারাপ করতে ও চাইছে না। অবশেষ ওরা বাড়িতে ফিরে আসলো। তন্ময়াকে পেয়ে দীলারা বেগম খুশিতে কান্না করে দিলেন।
হৃদয় ওকে রেখে উপরে চলে আসলো। বাইরে ছিল সারাদিন কিন্তু মন ছিল এই ঘরটাতে। হৃদয় দরজা খুলে ভেতরে এসেই দেখলো হৃদীতা ঘরে নেই। ও বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো। ওকি তাহলে আবারও পালিয়ে গেলো কথাটা ভেবে ও তাড়াতাড়ি বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো ও বাইরে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে হৃদয় শান্ত হলো কিন্তু রেগে গেলো। ওকে যে বেধে রাখা হয়েছিল কে খুলে দিলো?। হৃদয় দ্রুত গিয়ে হৃদীতার কাধ শক্ত করে ধরে বলল,

> বাধন কে খুলেছে?

> আরে দূর হাত না বেধে আপনি পা বেধেছেন। ও আমি নিজেই খুলেছি। এ আর এমনকি কঠিন কাজ। (নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে )

>চাবি ছাড়া তালা খোলা সহজ জানতাম না তো।

> হৃদয় সাহেব আপনাকে কিছু বলার আছে আমার। আপনি যদি আমার কথা গুলো গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন তবে আমার আর আপনার দুজনেই জন্য ভালো হতো। আপনি দয়াকরে রাগ করবেন না।

> কি কথা?

> রুমে চলুন বলছি।

হৃদয় ওর পেছনে পেছনে রুমে এসে বসলো। হৃদীতা ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

> আপনি কি জানেন আমি কে আমার পরিচয় কি?

> জানি তুমি আমার বউ হৃদীতা যে আমাকে ঠকিয়ে দুবছর আগে বাসার রাতে পালিয়ে গিয়েছিলো সেই হৃদীতা।

> আপনি ভুল জানেন। আমি কোনো সাধারণত মেয়ে নয়।

> জানি তো যারা ঠকাতে পারে তারা কখনও সাধারণ হয়না। ওরা অসাধারন হয় যেমন তুমি।

> হৃদয় আপনি কিন্তু আমাকে বলার সুযোগ দিচ্ছে না। আমি কিছু বলতে চেয়েছিলাম।

> কি বলবে যতো সব আজগুবি কথা?

হৃদয় রাগ করে চোখ বন্ধ করে হাতে মুঠো শক্ত করে ভাবছে এই মেয়েটা আর কত মিথ্যা বলবে আল্লাহ জানে। ওকে আমি কি করবো। ওর ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ হাদীতা শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

> চোখ খুলে তাকিয়ে দেখুন আপনার উত্তর আপনার সামনে।

হৃদয় এবার বিরক্ত হয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে অবাক হলো ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সত্যি কোনো সাধারণ মানুষ না। সাদা গাউনের সাথে সাদা রঙের জুয়েলারি পরিহিত হৃদীতাকে অন্যরকম লাগছে তারথেকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো ওর দুটা পাখা আছে। হৃদয়ের মুখ থেকে অজান্তেই আস্তে করে একটা শব্দ উচ্চারণ হলো
> পরী

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটা কাল্পনিক ভৌতিক গল্প তাই যারা পড়বেন আশাকরি তাঁরা এটাকে গল্পের মতো করেই দেখবেন দয়াকরে বাস্তবের সাথে মিলিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না। ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here