#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_২০
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
রেস্টুরেন্টে বসে বসে অপেক্ষা করতে আর ভালো লাগছে না ফারহানের। সেই কখন অয়নন্দিতাকে বলা হয়েছে, কিন্তু সে এখনও আসেনি। ফারহান বার কয়েক ফোনও করেছে। এইতো আসছি — বলেই অয়নন্দিতা ফোন রেখেছে। কিন্তু আসা এখনও হয়নি। অফিসের বাকি কাজগুলো ফারাশকে বুঝিয়ে দিয়ে ফারহান বের হয়ে গেছে অফিস থেকে। পরিকল্পনা ছিল অয়নন্দিতাকে নিয়ে খানিকটা সময় ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু তা আর হলো কই।
রাঙামাটি থেকেই তাদের সম্পর্কটা মোটামুটি সুন্দর হতে শুরু করে। জীবনে কখনও না কখনও দ্বিতীয় সূচনার প্রয়োজন পড়ে। জরুরি নয় যে, জীবনে প্রথম সূচনা-ই থাকতে হবে। কখনও কখনও প্রথম সূচনা সমাপ্তের পর দ্বিতীয় সূচনার প্রয়োজন হয়। ফারহানের জীবনেও দ্বিতীয় সূচনার প্রয়োজন ছিল। যা ঘটে গেল অয়নন্দিতার আগমনের মাধ্যমে।
অয়নন্দিতাও তার মতো করে সম্পর্কটাকে গোছানোর চেষ্টা করছে। সেও আশাবাদী, তার জীবনটাও সুখে ভরে উঠবে। ফারহানের ক্ষতস্থানে ভালোবাসার লেপ লাগিয়ে তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবে।
রেস্টুরেন্টে পা রাখতেই কর্ণারের টেবিলে ফারহানকে বসে থাকতে দেখে অয়নন্দিতা। যদিও ফারহানের মুখ ওপাশে ছিল কিন্তু অয়নন্দিতা ফারহানের পেছনের সাইড দেখেও চিনতে পারে যে মানুষটা তার বর। অয়নন্দিতা ধীর পায়ে হেঁটে ফারহানের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।
ফারহান এক মনে ফোনে কী যেন দেখছে। পেছন থেকে উঁকি দিয়ে অয়নন্দিতা দেখতে পায় ফারহান ছবি দেখছে। অয়নন্দিতার ছবি। রাঙামাটিতে পাহাড়ের উপরে নীল শাড়ি পরা একটা ছবি। অয়নন্দিতার মনে পড়ে, ফারহানই তার ছবিটা তুলেছিল।
মুচকি হেসে ফারহানের কাঁধে হাত রাখে অয়নন্দিতা। এদিকে নিজের কাঁধে কারো স্পর্শ পড়ায় ফারহান মুহুর্তেই পেছনে তাকায়। অয়নন্দিতাকে তার সামনে দেখতে পেয়ে কিঞ্চিৎ আনন্দে হেসে ওঠে তার ওষ্ঠদ্বয়। অয়নন্দিতাও মুক্তোঝরানো হাসিমুখে তাকায় ফারহানের দিকে।
অয়নন্দিতা চেয়ারে বসতেই ফারহান প্রশ্ন করে,
‘এতক্ষণ লাগল এখানে আসতে?’
‘দুপুর টাইমে জ্যাম তো থাকবেই। তাই না। ব্যস্ত শহরে বসবাস আমাদের। ভুলে গেলে চলবে না।’
‘আমি আধাঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছি।’
‘অপেক্ষার ফল মিঠা হয়। যাই হোক, অর্ডার করেছেন?’
সম্পর্কে উন্নতি ঘটলেও সম্বোধনটা এখনও আপনিতেই আটকে রেখেছে অয়নন্দিতা। ফারহান অবশ্য আপত্তি করেনি। আপনি আজ্ঞেতেও এক ধরনের ভালোবাসা মিশে থাকে।
‘আন্দাজে কী অর্ডার করব?’
‘ইশ! আগেভাগে অর্ডার করে দিবেন না। অর্ডার করে দিলে এতক্ষণে খাবার দিয়ে যেত।’
‘প্রবলেম নেই। এখানে খাবার দ্রুতই দেয়া হয়৷’
খাবার অর্ডার দিয়ে ফারহান আর অয়নন্দিতা গল্পে মেতে ওঠে। দু’জনে সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী কিন্তু মেশে বন্ধুর মতো। অয়নন্দিতার মতে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কের ভীতটা শুরু হোক বন্ধুত্বের মাধ্যমে। অয়নন্দিতার সঙ্গে ফারহানও একমত পোষণ করে। সেও চায় তার আর অয়নন্দিতার সম্পর্কের প্রথম স্থাপনটা শুরু হোক বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দু’জন হাঁটতে থাকে ফুটপাতের রাস্তা ধরে। সাধারণ মানুষজনের চাইতে ফারহানের অর্থসম্পদ একটু বেশি তবে সে থাকতে চায় সাধারণ মানুষের মতো। আর এটা এই কয়েকদিনে সে অয়নন্দিতাকে দেখে শিখেছে। জায়গা বুঝেই নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ফারহান।
কিছুদূর যেতেই কিছু ফুলের দোকান দেখতে পায় ফারহান। অয়নন্দিতাকে সাথে নিয়ে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
ফারহানের এইভাবে ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়ানো দেখে অয়নন্দিতা খানিকটা ভড়কে যায়। তাকে আরও খানিকটা অবাক করে দিয়ে ফারহান একগুচ্ছ গোলাপ এনে সামনে ধরে। গোলাপগুলো অয়নন্দিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে ফারহান সপ্রতিভ হেসে বলে ওঠে,
‘লাল টুকটুকে গোলাপগুলো কেন যেন মনে হলো তোমার হাতেই বেশি মানাবে। বন্ধুত্বের ধাপটা না হয় ফুল দিয়েই শুরু হোক।’
চলবে……………………………..