#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
সাজির গালের দাগটা সবার নজর এড়ালেও অয়নন্দিতার চোখ এড়ায়নি। সাজিকে দাঁড় করায় অয়নন্দিতা।
‘ভাইয়া কি তোমায় থাপ্পড় মারছে?’
‘নাহ।’
‘মিথ্যা বলো কেন?’
‘জানোই তো তাহলে। জিজ্ঞেস কেন করো?’
‘সাজি, আমি বুঝতেছি না তুমি কোন কারণে ভাইয়ার পেছনে পড়ে আছো। তুমি ভাইয়ার থেকেও ভালো ডিজার্ভ করো।’
‘নাহ। হাসানকেই ডিজার্ভ করি।’
‘তোমাকে যে কী করে বোঝাই আমি?’
অয়নন্দিতা চলেই যাচ্ছিল তখনই সাজি বলে ওঠে,
‘ভাবী জানো একটা বিষয় খেয়াল করেছি।’
অয়নন্দিতা পেছনে ফিরে তাকায়।
‘কোন বিষয়?’
‘তোমার ভাই পছন্দ করে। একটু হলেও পছন্দ করে।’
অয়নন্দিতার মনে হচ্ছে সাজি বোধ হয় হাসান হাসান করে পাগল হয়ে গেছে। পাগলের প্রলাপ বকতেছে। এই মুহুর্তে ওর হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না মেলানোই ভালো। তাদের আলাপচারিতার মধ্যেই নায়ার আগমন ঘটে। নায়াকে দেখে অয়নন্দিতা চোখের ইশারা করে। সাজিও নায়াকে দেখতে পায়। সাজির গালে আঙ্গুলের দাগ দেখে নায়া বলে,
‘পেয়ার ভি নেহি হুয়া অর থাপ্পাড় খাকে আয়া।’
নায়ার কথা শুনে অয়নন্দিতা মুচকি হাসে। সাজিও মুচকি হাসে। এরপর বলে,
‘সংলাপটা হয়নি ছোটো ভাবী। সংলাপটা হবে– থাপ্পাড় খায়ি তো কেয়া হুয়া পেয়ার তো হুয়া হ্যায়।’
নায়া চোখ বড়ো করে বলে,
‘পেয়ার হো গায়া। সাচ ম্যায় পেয়ার হো গায়া!’
অয়নন্দিতা নায়ার কাঁধে হালকা চাপড় মেরে বলে,
‘তুমিও ওর তালে তাল মেলাচ্ছো নায়া?’
‘আমি আর কোথায় তাল মেলালাম। শুনলে না ও বলল, পেয়ার হুয়া৷’
‘ও ইদানীং অনেক কিছুই বলে। ধরতে যেয়ো না।’
সাজি ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর দুই ভাবীর মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমি দরজা খুললাম, তোমার ভাই রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এরপর ঘরে ঢুকে অফিস ব্যাগটা আছাড় মারল। আমি তো চুপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারপর কিছু কথা বলল। আমিও ত্যাড়া জবাব দিলাম। আর তখনই ঠাটিয়ে এক চড়। আহ…. লেগেছিল অনেক।’
সাজির কথা শুনে অয়নন্দিতা আর নায়া চোখ বড়ো করে সাজির দিকে তাকায়। নায়ার প্রশ্নবিদ্ধ চোখ দেখে সাজি পরবর্তী পর্বতে যায়।
‘এরপর বয়ান দিল। আমি তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। রাগ হচ্ছিল ভীষণ। আমার গায়ে কখনও কেউ হাত তোলেনি। ফারহান ভাইয়া যদি জানে তাহলে তোমার ভাইয়ের হাত কেটে দিবে ভাবী। যাই হোক, এরপর বলল বের হয়ে যাও। আর আমি তখন,,,’
নায়া উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘তুমি তখন কী করেছ?’
‘কিস।’
কিস এর কথা শুনে অয়নন্দিতা খাটে বসে পড়ে। নায়ার চোখ যেন বের হয়ে যাবে এমন অবস্থা।
‘কিস!’
‘হ্যাঁ কিস। একদম ঠোঁটে। ইমরান হাশমি স্টাইলে। সে আমার গালে মেরেছে আর আমি তার দিলে মেরেছি। দিল মানে হার্ট মানে হৃদয়।’
‘তারপর তারপর।’
‘কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। সে ছাড়িয়ে নিতে চায় আর আমি শক্ত করে বেঁধে দিই। এরপর একটা সময় পর সেও ক্লান্ত হয়ে গেল আর আমিও। ছেড়ে দিলাম। বুঝলে গো রাজরানী, ছেড়ে দিলাম তোমার ভাইকে। তোমার ভাইয়ের ওই শান্ত হওয়াটাই আমায় জানান দিচ্ছিল, তার মনের দরজায় লাগানো তালাটা খুলে ফেলেছি আমি।’
সব শুনে অয়নন্দিতার গালে হাত। আর নায়া তো পারে না মেঝেতেই বসে পড়ে। এ যেন তারা কাহিনী শুনছে। সাজি ফুরফুরা মনে আয়নার সামনে বসল। ফাউন্ডেশনের বেস বসিয়ে গালের দাগ ঢাকছে। আল্লাহ পাক দুই ভাবীর বদলে তাকে দুই বোন দিয়েছে। কিন্তু ঘরের লোকগুলো মোটেও সুবিধার নয়। জানতে পারলে আস্ত রাখবে না৷
ঘরে ঢুকতেই ফারহান অয়নন্দিতাকে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ের দিকের চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয় ফারহান। অয়নন্দিতা ফারহানের গলা জড়িয়ে বলল,
‘আজ হঠাৎ এত প্রেম?’
‘প্রেম করতে মন চাইল।’
‘অফিস থেকে এত তাড়াতাড়ি চলে এলে যে?’
‘ফারাশ সাহেবকে বসিয়ে রেখে এসেছি।’
‘তুমি কি গো? তোমার উচিত ফারাশ ভাইয়াকে বাড়িতে পাঠানো। ঘরে তার বউ।’
‘বউ তো আমারও আছে। ফারাশ বিয়ের আগে প্রেম করেছে অনেক। আমি তো করিনি। তাই এখন আমি প্রেম করব আর সে কাজ করবে।’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতা হাসছে। মাঝে মাঝে ফারহান এত মজার ছলে কথা বলে যে, না চাইতেও তাকে হাসতে হয়। ফারহানকে জড়িয়ে ধরে অয়নন্দিতা ভাবছে, এভাবেই যেন আমি তোমার সঙ্গে থাকতে পারি ফারহান। অন্যদিকে হাসান ভাইয়া আর সাজিও যেন নতুন করে সব গোছাতে সক্ষম হয়।
চলবে…………………….