দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব-৫৭

0
1801

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৫৭
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

অয়নন্দিতা তার মামীকে সব বলে। ভদ্রমহিলা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছেন। ওতো বড়ো ঘরের মেয়েকে কি না তার ছেলে থাপ্পড় মেরেছে। বড়ো ঘর হোক কিংবা ছোটো ঘর, তার ছেলে একটা মেয়ের গালে হাত তুলেছে এটা শুনতেও কেমন জানি শোনাচ্ছে। এই শিক্ষা তো দেয়নি সে তার সন্তানকে। আয়শা বেগম অয়নন্দিতাকে বললেন,
‘তোর ননদটা যে কেন আসে বুঝি না আমি।’
‘তুমি বারণ করতে পারো না তাকে? বলতে পারো না যে, এই মেয়ে তুমি আর কখনও আমার বাসায় আসবে না।’
‘ছিঃছিঃ কীভাবে না করি। মেয়েটাকে দেখলে মিলির অভাব ভুলে থাকি। মেয়েটা আসে, টুকটুক করে এ ঘর ও ঘর হাঁটে৷ রান্নাঘরে যায়। আমার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তোর বোনদের সঙ্গে গল্প করে। যেন আমি মিলিকে দেখি ওর মধ্যে।’
‘দেখলে তো মামী, তুমিও চাও মেয়েটা আসুক। সে আসলে তোমার শান্তি লাগে। অথচ মুখে বলতে পারছ না।’
আয়শা বেগম চুপ হয়ে গেছেন। অয়নন্দিতা ফের বলে,
‘মামী, ও বাড়ির সবাইকে সাজি জানিয়ে দিয়েছে বিয়ে করলে হাসানকেই বিয়ে করবে সে। তাদের একমাত্র মেয়ে সাজি। আমার শ্বশুরের কী নেই বলো তো, অথচ মানুষটা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসান ভাইয়ার হ্যাঁ শোনার অপেক্ষায় আছেন। শাশুড়িও একই। ফারহানের একমাত্র বোন সাজি৷ বুঝতেই তো পারছ তাদের কাছে সাজি কতটা মূল্যবান। যাকে কখনও ফুলের আঁচ লাগতে দেওয়া হয়নি তাকে কি না ভাইয়া চড় মারল। ভাগ্যিস সাজি কাউকে বলেনি। টানা পাঁচ দিন সাজি মেকাপ করেছিল নানান বাহানায়। যাতে কেউ তার গালের দাগ না দেখে।’
‘আমি ইচ্ছামতো কথা শুনিয়েছি৷ ছেলে বলে, তোমাদের কারসাজি এইসব।’
‘একটা কথা বলো তো মামী, ভাইয়া যে এমন করছে এটা কি ঠিক? সে কি কখনও বিয়ে করবে না? সংসার করবে না? তার পুরো জীবনটা পড়ে আছে। মিলি চলে গেছে এটা যেমন সত্যি তেমন এটাও সত্যি যে মিলি কখনও ফিরে আসবে না। বাবা-মাও তো চলে গেছে, ফিরে এসেছে। বলো, ফিরে এসেছে। তাই বলে কি আমি বেঁচে থাকা ছেড়ে দিয়েছি?’
‘মিলিকে আমাদের সবার মনে আছে। সারাজীবন মনে থাকবে। তার মানে তো এই না যে, আমরা সবাই থেমে যাব।’
‘ভাইয়ার সঙ্গে আমি কথা বলব না। আপাতত বলব না। কারণ, ভাইয়া যা করেছে ঠিক করেনি। ভাইয়া ভুল করেছে। পারলে ভাইয়াকে বোঝাও।’

হাসান অফিসে বসে আছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সাজির কথা মনে পড়ছে। সেদিন মেয়েটাকে এইভাবে থাপ্পড় মারা উচিত হয়নি তার। ভুল করেছে সে। জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে সে। কিন্তু হাসান এটা ভেবে অবাক হচ্ছে যে, সাজি কাউকে বলেনি। বললে নিশ্চয়ই এতদিন এমন শান্তিতে থাকা যেত না। ভাবছে, সাজিকে কি একটা বার সরি বলবে সে।
সাজির নাম্বারটা আছে তো তার ফোনে। একবার কি ফোন করবে সাজিকে? ফোনের স্ক্রিনে সাজির নাম্বারটা দেখছে হাসান। কল দিবে কি না ভাবছে সে। সময় দেখে হঠাৎই খেয়াল হয় তার, সাজি এই সময় ক্যাম্পাসে থাকে। সে সরাসরি ক্যাম্পাসেই চলে যাবে। আজ আর রিক্সায় যাবে না। বাইক নিয়ে এসেছে সাথে। দ্রুতই পৌঁছে যাবে।
হাসান বাইকের চাবি নেয় ফোনটা পকেটে ঢুকায়। অফিস থেকে বের হয়ে বাইক স্টার্ট দেয় হাসান৷ স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে। মনটা অশান্ত হয়ে আছে এইভেবে যে, হয়তো মিলিও দূর থেকে তার ওপর নারাজ। কারণ, সে অন্যায় করেছে। একজন নারীকে মেরেছে সে। এতে মিলি খুশি হবে না।
বাইক থামিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে হাসান। আশেপাশে তাকাচ্ছে হাসান। কিন্তু সাজিকে দেখা যাচ্ছে না। তবে কি সাজি আজ ক্যাম্পাসে আসেনি। ব্যর্থতা নিয়ে বের হয়ে যাবে এমন সময় একটা ছেলে তাকে ডাক দেয়।
‘এক্সকিউজ মি।’
হাসান ফিরে তাকায়। ছেলেটা বলল,
‘আপনার নাম হাসান৷ তাই না?’
হাসান বেশ অবাক হয়। জবান দেয়,
‘জি। আমি হাসান।’
‘সাজির কাছে এসেছেন?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু আপনি আমায় কীভাবে..?’
‘আমি আপনাকে কীভাবে চিনি, তাই তো? সাজি আপনার কথা রোজ-ই বলে। আপনার ছবিও দেখায় আমাদের। আর আপনাকে এর আগেও দু’দিন ক্যাম্পাসে দেখেছিলাম বাই দ্য ওয়ে, আমি মোমেন। সাজির ফ্রেন্ড।’
হাসান মোমেন নামের ছেলেটার সঙ্গে হাত মেলায়। প্রশ্ন করে
‘সাজি আজ আসেনি?’
‘এসেছে তো। সাজি ক্লাসে। আজ প্রেজেন্টেশন ছিল আমাদের। আমি বের হয়েছি। ও কিছুক্ষণ পরেই বের হবে। আপনি আসুন না, আসুন।’
‘খুব বেশি দেরি হবে ওর?’
‘নাহ নাহ। আপনি আসবেন সাজি জানে?’
‘নাহ। আসলে আমি… ’
‘ওহ হো। বলতে হবে না। বুঝেছি। সারপ্রাইজ দিতে এসেছেন। গুড গুড। আসুন, আজ সাজিকে সারপ্রাইজ দিব। চলুন আপনি।’
মোমেন ছেলেটা একটু বেশিই অ্যাডভান্স। সে হাসানকে নিয়ে গেল ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে। হাসান তার পুরো কথাটা শেষও করতে পারল না।
পনেরো মিনিট পর মোমেনসহ আরও অনেকেই সাজিকে ধরে বেঁধে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে। সাজি এসবে বিরক্ত। এমনিতেই মন মেজাজ ঠিক নেই।
‘এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু মোমেন। অলয়েজ এমন করিস তুই। এমন টানাটানি কেন করিস?’
‘টানাটানি কি আর সাধে করি। ঘটনা তো ঘটিয়ে বসিয়ে আছিস।’
‘মানে? কিসের ঘটনা?’
‘দেখ কে এসেছে?’
‘কে এসেছে?’
মোমেনের ইশারায় সাজি সামনে তাকায়। সাজিকে দেখে হাসান ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। অন্যদিকে সাজি হাসানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। সে যেন ঝাপসা দেখছে। চোখটা কয়েকবার অন অফ করল। এরপর বুঝতে পারে, নাহ, ভুল দেখার চান্স নেই। সত্যিই হাসান তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সাজি এটা বুঝতে পারছে না হাসান এখানে কী করছে? আর মোমেন-ই বা হাসানকে এখানে কেন নিয়ে এসেছে? সাজি এগিয়ে যায় হাসানের দিকে। ভারী গলায় প্রশ্ন করে,
‘আপনি এখানে?’
হাসান কিছু বলতে যাবে তখনই সাজির বন্ধুরা সবাই মিলে ইয়েএ বলে চিৎকার করে ওঠে। হাসান ওইদিকে তাকায় আর সাজিও তখন পেছনে তাকিয়ে ইশারায় ওদেরকে চুপ করতে বলে। এরপর আবারও প্রশ্ন করে,
‘আপনি এখানে কেন? কী হয়েছে? আবার মারতে এসেছেন নাকি?’
হাসানের গলা কাঁপছে। কাঁপা গলায় বলল,
‘সরি বলতে এসেছি।’
‘সরি বলতে? কিসের জন্য?’
‘সেদিনের জন্য।’
‘ওহ আচ্ছা। থাপ্পড় মেরেছিলেন সেইজন্য।’
‘আই অ্যাম সরি।’
‘সেদিন কী করেছিলাম মনে আছে?’
হাসানের মনে পড়ে৷ সেদিন সাজি তাকে কিস করেছিল। হাসানের চোখ বড়ো হয়ে যায়। ভাবছে, ওইরকম কিছু করবে না তো এখানে? সাজি হালকা হেসে বলে,
‘সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বললে সবাই চোখ বন্ধ করবে। আর সবাই চোখ বন্ধ করলে কী হবে জানেন?’
‘কী?’
‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।’
হাসান এবার নিশ্চিত। এই মেয়ে ডেঞ্জারাস। যখন তখন কিস করে বসবে। এখান থেকে চলে যাওয়াই শ্রেয়। হাসান পা বাড়ালে সাজি তার হাতটা ধরে নেয়।
‘ভালোবাসি তোমাকে আমি হাসান। আগেও বলেছি। এখনও বলছি। পারলে আপন করে নাও। কথা দিলাম, মিলির জায়গা চাইব না কখনও।’
হাসান আজ অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাকিয়ে আছে সাজির চোখের দিকে। আজ সে সাজির চোখে নিজের জন্য যথেষ্ট ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।

চলবে………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here