দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব-৬

0
1673

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

‘কোনো সমস্যা? আপনি কাঁদছেন কেন?’
পাশ থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনতে পায় অয়নন্দিতা। চোখের পানি মুছতে-মুছতে অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহানকে দেখেই সে দাঁড়িয়ে যায়।
‘নাহ। কোনো সমস্যা না।’
‘আপনি শুধু-শুধুই কাঁদছিলেন?’
‘কাঁদিনি তো।’
‘জলজ্যান্ত মিথ্যা বললেন। আপনার চোখে এখনও পানি। আর বলছে আপনি কাঁদছেন না।’
‘আচ্ছা অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আমার যাওয়া উচিত।’
‘আমিও হোটেলেই ফিরব। চলুন যাওয়া যাক।’
‘আচ্ছা।’
দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করে অয়নন্দিতা। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ফারহান যাতে তাকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না পায়। হাঁটতে-হাঁটতে ফারহান বলল,
‘মিস অয়নন্দিতা, ধীরে হাঁটুন। ভয় নেই, আমি আপনাকে এক্সট্রা কোনো প্রশ্ন করব না।’
‘আসলে তা না। দেরি হয়ে গেছে তো, যেন তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারি সেইজন্যই হাঁটছি।’
‘এখান থেকে হোটেল খুব বেশি দূরে নয়। অথচ আপনি হাঁটছেন যেন মনে হচ্ছে হোটেল বহু দূরে। যাই হোক, ধীর গতিতেই হাঁটুন। সমস্যা নেই।’
অয়নন্দিতা বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে। সে যে মূলত এই কারণেই দ্রুত পায়ে হাঁটছিল তা ফারহান বুঝে গেছে। আর সে বুঝে যাওয়াতেই অয়নন্দিতার লজ্জা। তাই নিঃশব্দে হাঁটাই শ্রেয় মনে করে অয়নন্দিতা।
লবি পর্যন্ত পৌঁছে অয়নন্দিতা ফারহানকে বলে,
‘আমি আগে যাই। আপনি কিছুক্ষণ পর আসুন।’
‘একসাথে গেলে সমস্যা কোথায়?’
‘সমস্যা আছে।’
‘কোথায় সমস্যা?’
‘আমরা এক সঙ্গে ভেতরে গেলে অনেকেই ব্যাপারটাকে দৃষ্টিকটু ভেবে বসবে।’
‘এক সঙ্গে ভেতরে ঢোকাটা দৃষ্টিকটু?’
অয়নন্দিতা বাড়তি আর কিছু না বলেই — আপনি প্লিজ পরে আসুন বলেই লবির ভেতরে প্রবেশ করে। ফারহান সেখানেই দাঁড়িয়েই কিছু কথা ভাবতে শুরু করে, এক সঙ্গে ভেতরে ঢোকার ব্যাপারটা কী করে দৃষ্টিকটু হতে পারে? মেয়েটা তখন ওইভাবে কেঁদেও কেন বলল, সে কাঁদছিল না। দ্বিতীয়বার তাকে কোনো প্রশ্নেই জবাব না দিতে হয় সেইজন্য এত দ্রুত হেঁটেই বা কেন গেল? আর সব থেকে বড়ো ব্যাপার, সব কিছু অনায়াসে লুজিয়েই বা গেল কেন? অদ্ভুত আচরণের মেয়ে তো সে। আবার ভাবে তার বন্দনার মতো কেউ হতে পারে না। কখনও হবেও না।

রাত প্রায় দেড়টা। সাগরের গর্জন শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল ঢেউগুলো একটা আরেকটার ওপর আছড়ে পড়ছে। নিস্তব্ধ রাতে সাগরের গর্জন খুব স্পষ্টভাবেই কানে লাগে। অয়নন্দিতার ধারণা এটা ঢেউগুলো একে অপরের সঙ্গে মিলিত হতেই বেশি পছন্দ করে। তাই তো তাদের মিলনে এত গর্জন।
শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না অয়নন্দিতার। সমুদ্রের গর্জন তো কানে শোনা যাচ্ছে। তাদের মিলন যে দেখতে ইচ্ছে করছে অয়নন্দিতার। শাম্মি ঘুমে মাতাল হয়ে আছে। শাম্মির ঘুম এত গভীর যে তার পাশে কাউকে খুন করে ফেললেও সে টের পাবে না। তার নিজের বেলাতেও একই উদাহরণ গ্রহণযোগ্য। তাকে কেউ ঘুমের মধ্যে খুন করে ফেললেও তার হুশ ফিরবে না। তাই এই মুহুর্তে শাম্মিকে জাগানোও যাবে না। সব দিক চিন্তা করে অয়নন্দিতা নিজেত রুম থেকে বের হয় ঢেউয়ের মিলন দেখবে বলে।
ওড়না দিয়ে বুক ঢেকে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় অয়নন্দিতা। হোটেলের অবস্থান একদম সরাসরি বলেই সাগর এবং তার আশেপাশের জায়গা অনায়াসেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। অয়নন্দিতা ব্যালকনিতেই দাঁড়িয়ে সাগরের বুকে আছড়ে পড়া ঢেউগুলোকে দেখছে। তাকিয়ে থাকার মধ্যেও একটা শান্তি কাজ করে। মনে জমে থাকা সমস্ত দুঃখ, সমস্ত বেদনা সব এক দৌড়ে পালিয়ে যায় ওই ঝাউবনে।
হঠাৎই সিগারেটের কড়া স্মেল নাকে আসে অয়নন্দিতার। এত রাতে সিগারেট খাচ্ছে কে? আশেপাশে তাকায় অয়নন্দিতা। কিছুটা দূরে ফারহানকে দেখতে পায় অয়নন্দিতা। ফারহান সিগারেট টানছে। নজর ফোনের দিকে৷ বোঝা যাচ্ছে কিছু দেখছে আর সিগারেট টানছে। সে। কিন্তু কি এমন দেখছে ফোনে? অয়নন্দিতা সন্দেহজনক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অয়নন্দিতার তাকিয়ে থাকার মাঝেই ফারহানের নজর যায় অয়নন্দিতার দিকে। চোখাচোখির এক পর্যায়ে অয়নন্দিতা চোখ নামিয়ে নেয়। কিন্তু চোখ নামিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সে যে ফারহানকে পর্যবেক্ষণ করছিল তা ফারহান বুঝে গেছে। হালকা হেসে হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অয়নন্দিতার দিকে পা বাড়ায় ফারহান।
ফারহানের এগিয়ে আসা দেখে অয়নন্দিতার পা জোড়া কেঁপে ওঠে। ভাবছে, উনি এদিকে আসছে কেন? উফ, তাকানোর কী প্রয়োজন ছিল ওনার দিকে? নিশ্চয়ই বুঝে গেছে আমি তাকে দেখছিলাম তাও আবার সন্দেহজনক চোখে। তাই হয়তো এগিয়ে আসছে। এখন এসে যদি প্রশ্ন করে আমি তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে ছিলাম কেন? তবে কী জবাব দেব আমি?
সে ভাবনার মাঝেই ফারহান তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অয়নন্দিতার ভাবনা বাস্তবে রুপ নেয়। ফারহান প্রশ্ন করে তাকে,
‘এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কী করছেন আপনি?’
অয়নন্দিতা হাফ ছেড়ে বাঁচে। প্রশ্ন তাকে করা হয়েছে তবে অন্যটা। এটাতেই শান্তি।

চলবে…………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here