#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)
ফারহানের পাশে বসে অয়নন্দিতা ভাবছে ফারাশের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলার এমন ভালো সুযোগ আর হবে না। ফারাশ আর নায়া’র ব্যাপারটা ফারহানকে বলতে হবে। বললে হয়তো ফারহান কিছু একটা করতে পারবে। যেই ভাবা সেই কাজ। অয়নন্দিতা ফারহানের দিকে তাকায়। ফারহান অয়নন্দিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কিছু বলবে?’
‘হ্যাঁ, একটা কথা বলার ছিল।’
‘একটা কেন, যতটা মন চায় বলো। আমি এখন ফ্রী আছি।’
‘ফারাশ ভাইয়ার ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।’
ফারাশের নাম শুনে ফারহান কিঞ্চিৎ ভ্রু জোড়া কুঁচকে অয়নন্দিতার দিকে তাকায়।
‘ফারাশের ব্যাপারে কথা বলতে চাচ্ছো। কী হয়েছে?’
অয়নন্দিতা তার নিজের মতো করে ফারহানের কাছে ফারাশ এবং নায়া সম্পর্কে বলতে শুরু করে।
নিজের কেবিনে বসে অয়নন্দিতার কথা ভাবছে ফারহান। মেয়েটাকে যত দেখে ততই অবাক হয় সে। যত দিন বাড়ছে ততই অয়নন্দিতা তার দায়িত্বগুলো বুঝে নিচ্ছে। আর এক অদ্ভুত ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ফেলেছে তাকে। এই বন্ধন এমন এক বন্ধন যা থেকে বের হওয়া ফারহানের পক্ষে সম্ভব না।
রোজ সকালে স্যুট রেডি করা থেকে শুরু করে ওয়ালেটটা পর্যন্ত গুছিয়ে রাখে অয়নন্দিতা। ফারহান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সব কিছুই হাতের কাছে পায়। তার আর এক্সট্রা করে কিছু খুঁজে নিতে হয় না। অয়নন্দিতা তার সমস্ত টুকু দিয়ে চেষ্টা করে ফারহানকে ভালো রাখতে।
ফারহান ভাবে এমন একজন মানুষকে ছাড়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ভালো না বেসে থাকাও যাবে না। ভালো তো সে বাসেই তবে এই ভালোবাসা আরও দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেছে। ইদানীং ফারহানের একটা বদভ্যাস হয়ে গেছে। রোজ রাতে অয়নন্দিতার গলায় গান শোনা। রোজ রাতে ঘুমানোর আগে অয়নন্দিতাকে নিজের পাশে বসিয়ে আকাশের চাঁদ দেখায় ফারহান। যেদিন আকাশে চাঁদ থাকে না সেদিন দু’জন মিলে তারা গুনতে শুরু করে। আকাশ ভর্তি তারা তাদের দু’জনের পক্ষে গুনে শেষ করা সম্ভব না এটা দু’জনেই জানে। তবুও মিছি মিছি গুনতে আরম্ভ করে। এরপরেই শুরু হয় ফারহানের আবদার — অয়নন্দিতা, খোলা গলায় গান ধরো। প্রথম প্রথম না করত অয়নন্দিতা। কিন্তু এখন আর না করে না। ফারহান শুনতে চাইলেই সে গান শোনায়। কখনও রবীন্দ্রসংগীত কখনও বা আধুনিক। ফারহানের মনে হয় অয়নন্দিতা যদি গানটা কন্টিনিউ করত তবে অনেক নাম ডাক করতে পারত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ভাবে, নাম ডাক হয়নি ভালোই হয়েছে। নয়তো আমি তাকে কীভাবে পেতাম।
দিন যাচ্ছে। রাতগুলো পার হচ্ছে। সময় বয়ে যাচ্ছে। তাদের দাম্পত্য জীবনে এখন আর আগের মতো দূরত্ব নেই৷ আছে শুধু ভালোবাসা। দু’জনের প্রতি দু’জনের অগাধ বিশ্বাস। আর কী চাই। ফারহান এখন ভালোই আছে। আগের ক্ষতগুলো এখন আর তাকে জ্বালায় না তেমন। অতীত তাড়া করলেও অতীতকে তাড়া করে না ফারহান। অতীতকে পেছনে ফেলে বর্তমান নিয়ে সামনে এগোচ্ছে সে। অয়নন্দিতারও এখন তেমন মন খারাপ লাগে না। স্বামী সংসার নিয়ে বেশ ভালো আছে। অন্যদিকে পড়াশোনাতেও এগোচ্ছে। মাঝে মাঝে মামা বাড়ি ঘুরে আসে। তবে এখন আর রাতে থাকে না সেখানে। কারণ এখন যে সে ফারহানকে ছাড়া থাকতে পারে না।
কে বলেছে মানুষ একবার হেরে গেলে দাঁড়াতে পারে না। জীবন মানুষকে দ্বিতীয়বারও সুযোগ দেয়। ফারহানকে নতুম করে ভাবতে শেখানোর জন্য জীবন তাকে অয়নন্দিতার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। অয়নন্দিতার সঙ্গে দ্বিতীয় সূচনা করে ভুল করেনি সে। সে যে ভুল ছিল তা এখন সে ক্ষণে ক্ষণে বুঝতে পারে। সব নারী তো এক হয় না। কিছু নারী ব্যতিক্রমও হয়। সেই ব্যতিক্রম নারীই হচ্ছে অয়নন্দিতা।
ফোনের শব্দে হঠাৎ ধ্যান ভাঙে ফারহানের। মোবাইলের স্ক্রিনে মায়ের নাম্বারটা ভাসছে। মায়ের নাম্বার থেকে ফোন আসায় ফারহানের কপালে ভাজ পড়ে। কারণ, সাধারণত এই সময়ে তার মা ফোন করে না। আর তাছাড়া ঘন্টা খানেক আগেই তো অয়নন্দিতার সঙ্গে কথা হয়েছিল তার। ফারহান ফোন রিসিভ করতেই রওশন বেগম কেঁদে ওঠেন। কান্নার শব্দটা শুনতে পেয়ে ফারহানের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। কান্নার শব্দগুলো যেন বলছে কারো বিপদ হয়েছে। ফারহান উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে,
‘মা, কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?’
ছেলের মুখে প্রশ্ন শুনে রওশন বেগম কান্নার মাত্রা বাড়িয়ে বললেন,
‘ফারহান, অয়নন্দিতা পড়ে গেছে।’
‘পড়ে গেছে! মানে কী? কীভাবে পড়ে গেছে?’
‘গাছে পানি দিতে গিয়ে পড়ে গেছে।’
রওশন বেগমের কান্নার জন্য ফারহান কিছুই বুঝতে পারে না। এই মুহুর্তে ফারহান চোখের সামনে অন্ধকার দেখছে। ফারহান অফিস থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সাজির ফোন পায় ফারহান। হন্তদন্ত হয়ে ফোনটা রিসিভ করে সে।
‘ভাইয়া, বাসায় যেও না। সোজা মেডিকেলে চলে আসো।’
‘কী হয়েছে, একটু বলবি?’
‘হাইপার হয়ে গাড়ি না চালিয়ে ঠান্ডা মাথায় গাড়ি চালাও। ভাবী সুস্থ আছে এখন। মা ঘাবড়ে গিয়েছিল তাই কান্নাকাটি করেছে বেশি।’
‘কীভাবে পড়েছে?’
‘হসপিটালে এসো। এরপরই বলছি।’
সাজির ফোন কেটে ফারহান পাগলের মতো গাড়ি চালাতে শুরু করে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হবে তাকে। যত দ্রুত সম্ভব অয়নন্দিতার কাছে যেতে হবে তাকে। কে জানে কেমন আছে সে।
চলবে……………………….