দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_৩৭

0
1300

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৩৭
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

কেবিনে রাখা হয়েছে অয়নন্দিতাকে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে সে। ফারহান কেবিনে ঢুকতেই অয়নন্দিতাকে দেখতে পায়। হাতে সেলাইন পুষ করা। ডান পায়ে বেশ মোটা করে ব্যান্ডেজ করা। কপালের এক পাশে একটু খানি ব্যান্ডেজ৷ বাম হাতের কনুইতেও ব্যান্ডেজ। দেখে মনে হচ্ছে ভালো ব্যথা পেয়েছে। সাজি, রওশন বেগম, অয়নন্দিতার মামা, মামী, হাসানের বউ সবাই কেবিনের বাইরে বসে আছে। ফারহান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কেবিন থেকে বের হয়ে আসে। সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে সাজি আর রওশন বেগমকে প্রশ্ন করে,
‘এসব কী করে হলো?’
ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে সাজি বলে,
‘আমি আমার ঘরে ছিলাম। মা কিচেনে ছিল। ভাবী গাছে পানি দেবে বলে ছাদে যায়। দক্ষিণ দিকের ছাদটায় তো রেলিং নেই। কোনোভাবে পিছলে হয়তো নিচে,,,’
সাজি কথা শেষ না করতেই রওশন বেগম বলেন,
‘এরপরই দারোয়ান চিৎকার করে। আমি চিৎকার শুনে বের হয়ে দেখি অয়নি নিচে পড়ে আছে।’
ফারহান নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে। মনে মনে ভাবছে কেন অয়নন্দিতা ছাদে গেল। কী প্রয়োজন ছিল সেখানে যাওয়ার। মারাত্মক কিছু হয়ে যেতে পারত।
সাজি আবার বলে,
‘ভাগ্য ভালো দো’তলার ছাদে যায়নি। নিচতলার দক্ষিণ দিকের ছাদে গিয়েছিল। ডান পায়ে ব্যথা বেশি পেয়েছে। কনুই ছিলে গেছে অনেকটা। তবে ভয়ের কিছু নেই।’
সাজির প্রত্যেকটা কথা শুনে ফারহানের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। না জানি কতটা ব্যথা পেয়েছে। কিছুক্ষণ পর অয়নন্দিতার মামা বললেন,
‘ফারহান, বাবা চিন্তা কোরো না। ভয়ের কিছুই নেই।’
কারো কথার কোনো জবাব দেয়নি ফারহান। খোঁজ নিয়ে সেই ডক্টরের কেবিনে যিনি অয়নন্দিতাকে দেখেছে। ডক্টরের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডক্টরকেই বিরক্ত করে ফেলে ফারহান। বার বার প্রশ্ন করে ডক্টরকে অতিষ্ঠ করে ফেলে। অন্যান্য ডক্টর হলে এতক্ষণে রেগেমেগে আগুন হয়ে যেত। কিন্তু এই ডক্টর বুঝতে পেরেছে যে, ইনি তার বউয়ের চিন্তায় অস্থির। তাই এত প্রশ্নের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন। ফারহান ডক্টরের কেবিন থেকে বের হয়ে অয়নন্দিতার কেবিনে যায়।
চেয়ার টেনে পাশে বসে। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে। একটু আগে ডক্টরের সঙ্গে কথা বলার সময় জানতে পেরেছে অয়নন্দিতাকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। তাই ঘুমোচ্ছে। ফারহানের ভীষণ ইচ্ছে করছিল অয়নন্দিতার হাতটা ছুঁয়ে দিতে।

আনুমানিক দশ মিনিট পর।
অয়নন্দিতা চোখ খুলে পাশে ফারহানকে দেখতে পায়। চোখ খোলার পর ফারহানকে দেখতে পাবে ভাবেনি সে। অয়নন্দিতার মনে হচ্ছিল দারুণ একটা ঘুম দিয়েছে সে। কিন্তু হাতটা নাড়াতে গিয়েই প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে সে। পা টা যেন কত কেজি ওজন হয়ে আছে। নাড়ানোর ক্ষমতা নেই এই মুহুর্তে। ফারহান অয়নন্দিতার হাতটা ধরে। হালকা হেসে প্রশ্ন করে,
‘পুরো চার ঘন্টা ঘুমিয়েছ।’
অয়নন্দিতা হেসে বলে,
‘আমি চার ঘন্টা ঘুমিয়েছি তুমি সেটা গুনেছ?’
দাম্পত্য জীবনের সম্পর্কটা যেমন এগিয়েছে তেমনি অয়নন্দিতার আপনি আজ্ঞে বলাটাও ঘুচেছে। এখন অয়নন্দিতার মুখে তুমি শব্দটাই বেশি সুন্দর লাগে। হাসপাতালের বেডে অয়নন্দিতাকে এইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ফারহানের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল। তবুও সে নিজেকে শক্ত করে বসিয়ে রেখেছি। অয়নন্দিতা ফারহানের চোখের দিকে চেয়ে বুঝতে পেরেছে যে, ফারহাম ভালো নেই। শুধু ভালো থাকার খানিক অভিনয় করছে মাত্র।
‘তুমি কখন এসেছ?’
‘যখনই আসি। এখন কেমন লাগছে?’
‘মোটামুটি। তবে ততটা ভালো নেই।’
‘খুব ব্যথা হচ্ছে, তাই না?’
‘হ্যাঁ। যখন পড়েছি তখন মনে হচ্ছিল আমার শরীরের ভেতরের সব কিছু নড়ে গেছে। পায়ে ব্যথা লেগেছে। হাতের অবস্থাও হয়তো ভালো না।’
‘কে বলেছিল ছাদে যেতে?’
‘আমি তো প্রায়ই যাই। সাবধানেও থাকি। আজ কেন যেন সাইডে গেলাম আর ধপাস। একদম নিচে।’
‘কষ্ট হচ্ছে তোমার কথা বলতে। এরপরেও মজা করছ। কী বোঝাচ্ছ তুমি আমায়? তুমি ভালো আছো? তুমি ভালো নেই অয়নন্দিতা। ভালো নেই।’
‘তুমি আছো তো। ভালো হয়ে যাব।’
‘তুমি তো জানো অয়নন্দিতা, তোমায় আমি কতটা ভালোবাসি। যদি কিছু হয়ে যেত?’
‘আমায় ভালোবাসো?’
‘বাসি না বলছ?’
‘কে জানে।’
‘কিছু খাবে?’
‘নাহ। তুমি বসে থাকো। আমার ভালো লাগছে।’
‘বসে থাকলেই হবে? কিছু খাবে না তুমি? কিছু নিয়ে আসি।’
‘কিচ্ছু আনতে হবে না। বসো এখানে তুমি।’
বন্ধ কেবিনে অয়নন্দিতার পাশে বসে ফারহান কথা বলে যাচ্ছে। অয়নন্দিতাও ফারহানের কথা শুনছে। বন্ধুর মতো দু’জনে গল্প করে যাচ্ছে। সময়ের কোনো বাঁধাধরা নেই। কোনো তাড়া নেই।

রাতের বেলায় অয়নন্দিতাকে খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। হসপিটাল থেকে বাসায় আসতে আসতে রাত নয়টা পার হয়ে যায়। তিন ভাই বোন মিলে অয়নন্দিতাকে নিয়ে বাসায় আসে। ফারহান নিজ দায়িত্বে অয়নন্দিতাকে তার কাছে নিয়ে আসে।
অয়নন্দিতার পাশে শুয়ে ফারহান ভাবতে শুরু করে, জীবন কেন এমন ভাবে ঘুরে যায়। অয়নন্দিতার কিছু হয়ে গেলে বেঁচে থাকা দায় হয়ে যেত। আমার জীবনে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে অয়নন্দিতার থাকাটা ভীষণ জরুরী। আমি কোনোভাবেই চাইব না অয়নন্দিতা হারিয়ে যাক। আমি কখনও চাইব না পুরনো ব্যথাটা নতুন করে শুরু হোক। অয়নন্দিতা, আমি চাইব না তুমি কখনও দূরে চলে যাও। তুমি আমার হয়ে থেকো, সারাজীবন। কারণ এই মন তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে। অয়নন্দিতা তোমার সমস্ত দুঃখ, সমস্ত ব্যথা আমি আমার করে নেব। বন্ধু যখন হতে পেরেছি। ভালো যখন বেসে ফেলেছি তখন সমস্ত দুঃখ গুলোও আমার করে নেব। দ্বিগুণ ভালোবাসা দেব তোমায়। যেই ভালোবাসার সুতো কাটতে তোমার হাজার জনম পার হয়ে যাবে।

চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here