দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_৪০

0
1243

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪০
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

দুই গ্লাস পানি এনে রাখা হয়েছে টেবিলের ওপর। অয়নন্দিতা পানির গ্লাসগুলো দেখছে। গ্লাসের ভেতরে থাকা পানির রঙটা কেমন অন্যরকম লাগছে অয়নন্দিতার কাছে। ফারহান তাকে ইশারা করে পানিটা খাওয়ার জন্য। তখনই অয়নন্দিতা প্রশ্ন করে,
‘পানিটা দেখতে এমন লাগছে কেন?’
‘খেয়ে দেখ৷ ভালো লাগবে।’
এমন সময় ঘরে প্রবেশ করে একজন বয়স্ক মহিলা যাকে ফারহান ফুপু বলে ডাকে। তিনি অয়নন্দিতার কথা শুনতে পেয়েছেন। তিনি এসে হাসিমুখে বলেন,
‘বউ, এডা লেবুর শরবত। লগে পুদিনা পাতার রস আছে। একটু ট্যাংও মিশাইছি। খাও। ভাল্লাগব।’
শরবতের বর্ণনা শুনে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল অয়নন্দিতার কাছে। সে এক গ্লাস হাতে নিল। এক চুমুক দিতেই পুরো মুখ জুড়ে স্বাদ ছড়িয়ে যায়৷ বেশ তৃপ্তি নিয়ে পুরো শরবতটা খেয়ে নেয় অয়নন্দিতা। ততক্ষণে মহিলা চলে যান। অয়নন্দিতা বলতে শুরু করে,
‘তোমাদের যে ফার্ম হাউজ আছে আগে তো বলোনি।’
‘তোমাদের না এটা আমার ফার্ম হাউজ। আমি নিজে ডিজাইন করে বানিয়েছি।’
‘আসলেই?’
‘জি ম্যাডাম। আসলেই। নকলে না।’
‘খুব সুন্দর। চারপাশটা এত সুন্দর লাগছে।’
‘এখন তো সন্ধ্যা প্রায়। কাল সকালে দেখবে আরও সুন্দর লাগবে।’
‘কেমন একটা গ্রাম গ্রাম ফিলিংস পাচ্ছি।’
‘এটা তো গ্রাম-ই। তবে অজপাড়া গাঁ হলো আরও ভেতরে। আমি একটু সামনেই জায়গা কিনে বানিয়েছি।’
‘বেশ সুন্দর হয়েছে।’
‘ফুপুরা কিন্তু মাটির চুলায় রান্না করে। আমার খাওয়ার অভ্যাস আছে। তুমি খেতে পারবে তো?’
‘তুমি মাটির চুলার রান্নাও খাও?’
‘হ্যাঁ। আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি সব কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারি।’
‘বিজনেস টাইকুন ফারহান শেখ এত কিছু মানিয়ে নিতে পারে এটা তো জানা ছিল না।’
অয়নন্দিতার কাছ থেকে এমন কথা শুনে ফারহান একটু স্তব্ধ হয়ে যায়। হাতে থাকা শার্টটা বিছানায় রেখে অয়নন্দিতার খুব কাছে চলে আসে। অয়নন্দিতা ফারহানের এমন আচরণে ভড়কে যায়। চোখ জোড়া কুঁচকে ফারহানের দিকে গাঢ় নজরে তাকায়। ফারহান অয়নন্দিতার একদম কাছে চলে আসে। থুতনিতে হাত রেখে ফারহান বলে,
‘বিজনেস টাইকুন এই ফারহান শেখ এমন অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে পারে যা তুমিও পারবে না। বুঝলে মেয়ে।’
ফারহানের কথা শুনে অয়নন্দিতা মুচকি হেসে গলা জড়িয়ে ধরে। বলে ওঠে,
‘আমিও পারতে চাই।’
ফারহান একটু শব্দ করে হেসে অয়নন্দিতার গালে চুমু দিয়ে বলে,
‘পারতে হবে না। আপনাকে নিয়ে আমার চিন্তা হয়। কখন কোথায় পড়ে যাবেন। পরে আমার রাতের ঘুম হারাম।’
ফারহান বেশ মজা করে কথা বলতে পারে। কথার ছলে হাসাতে পারে সবাইকে। বিশেষ করে তাকে।

গ্রাম সাইডে বেশ ঠান্ডা পড়ে। অয়নন্দিতা শাল জড়িয়ে ছাদে বসে আছে। ফারহানও তার পাশে বসে আছে। চারপাশে জোনাকপোকা ডাকছে। শীতের সন্ধ্যায় কুয়াশা পড়ছে। কিছুক্ষণ আগে এসে একজন গরম গরম ভাপা পিঠা দিয়ে গেছে। ফারহান আর অয়নন্দিতার এখানে আসা উপলক্ষে ভাপা পিঠা বানানো হয়েছে।
পাশে বসে ফারহান অনেক কথা বলছে। অয়নন্দিতা গালে হাত দিয়ে চুপচাপ শুনে যাচ্ছে ফারহানের কথাগুলো। ফারহানের সঙ্গ অয়নন্দিতার বেশ ভালো। সংসার জীবনে অয়নন্দিতা কিছু পাক বা না পাক ফারহানের মতো একজন স্বামীরুপে বন্ধু পেয়ে সে ভীষণ খুশি।
ফারহান কথা বলতে বলতে অয়নন্দিতার দিকে তাকায়। অয়নন্দিতার পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে ফারহান তুড়ি মেরে অয়নন্দিতার চোখ পলক নামায়।
‘এইভাবে তাকিয়ে আছো যে?’
‘এমনি।’
‘এমনিতে কেউ তাকিয়ে থাকে বুঝি?’
‘আমি থাকি। বিশেষ করে তুমি যখন কথা বলো।’
‘ঠান্ডা বেশি লাগছে না তো?’
‘শাল জড়িয়ে আছি তো। ঠান্ডা বোঝা যাচ্ছে না।’
‘ওকে।’
কিছুক্ষণের নীরবতা। ফারহান সিগারেট টানছে। অয়নন্দিতা কিছু একটা ভেবে ফারহানকে জিজ্ঞেস করে,
‘কিছু মনে না করলে তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘করো।’
‘বন্দনাও কি এখানে এসেছিল?’
এমন পরিবেশে এমন প্রশ্ন ফারহান আশা করেনি। অয়নন্দিতা কখনও বন্দনাকে তেমন প্রশ্ন করেনি। ফারহান সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। এরপর স্মিত হেসে বলে,
‘এই ফার্ম হাউজটা বন্দনার কথা ভেবেই বানানো হয়েছিল অয়নন্দিতা।’
কথাটা শুনে অয়নন্দিতার বুকে মোচড় দিয়ে ওঠে। চোখ জোড়া এতক্ষণ উজ্জ্বল থাকলেও এখন সেই চোখ জোড়ায় পানি এসে জমাট বেঁধেছে। গভীর দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে অয়নন্দিতা। ফারহান কী যেন ভেবে অয়নন্দিতার দিকে তাকায়।

চলবে……………………..

[বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আমি এই কয়দিন প্রুফ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। তাই গল্প দিতে পারিনি। দুঃখিত সবাইকে এত অপেক্ষা করানোর জন্য। এখন থেকে গল্প দেওয়া হবে। নতুন বই রাজশ্রী তোমার জন্য এর প্রি অর্ডার শুরু হবে খুব দ্রুতই৷ আশা করব সবাই বইটি সংগ্রহ করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here