দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_৪৫

0
1693

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৫
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

গাড়ি মধ্যম গতিতে এগিয়ে চলছে। পাশের সিটে বসে আছে অয়নন্দিতা। আজ তিনদিন পর বাড়ি ফিরছে তারা। ফারহান চুপচাপ ড্রাইভ করছে। অয়নন্দিতার নজর বার বার ফারহানকে দেখছে। সে উপলব্ধি করতে পারছে ফারহানের মনের কষ্টগুলো। কাউকে এত গভীরভাবে ভালোবাসার পরেও কোনো মানুষ কী করে পারে এইভাবে ছেড়ে চলে যেতে। অয়নন্দিতা ভাবছে, ওই মানুষটা এমন কেন যে, নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এতখানি কষ্ট দিয়ে দূরে চলে গেল। আল্লাহ পাক কি তার মনে একটুও দয়া মায়া দেয়নি।
বার কয়েক ডাকার পরেও অয়নন্দিতার সাড়া না পেয়ে অয়নন্দিতার হাতে নিজ হাত রাখে ফারহান। স্পর্শ অনুভব করতে পেরেই ফারহানের দিকে তাকায় অয়নন্দিতা। ফারহান ঠিক ধরতে পেরেছে অয়নন্দিতা কোনো কিছু ভাবছে। অত্যন্ত গভীর কিছু ভাবছে। নয়তো পাশে বসে ডাকটা ঠিকই শুনতে পেত। ফারহান এক পাশে গাড়ি থামায়। অয়নন্দিতাকে নিয়ে বের হয়ে আসে গাড়ি থেকে। এইভাবে রাস্তার মধ্যিখানে গাড়ি থামানো দেখে অয়নন্দিতা ফারহানকে প্রশ্ন করে,
‘গাড়ি দাঁড় করালে যে? বাড়ি যাবে না?’
অয়নন্দিতার হাত জোড়া আঁকড়ে ধরে ফারহান। গাঢ় নজরে তাকিয়ে থাকে অয়নন্দিতার সরল চোখের দিকে। অয়নন্দিতা আবারও প্রশ্ন করে,
‘কী হয়েছে, এইভাবে তাকিয়ে আছো যে। কী দেখছ?’
‘কী হয়েছে অয়নন্দিতা? এইভাবে অন্যমনস্ক হয়ে কী ভাবছিলে?’
‘কিছু ভাবছি না তো।’
‘পাশে বসে কয়বার ডেকেছি তোমায়। তোমার ধ্যান অন্য কোথাও ছিল। তাই হয়তো শুনতে পাওনি।’
আসলেই অয়নন্দিতা অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। হয়তো ফারহান তাকে ডেকেছে আর সে শুনতে পায়নি। যার জন্য ফারহানের সন্দেহ হচ্ছে। আর তার সন্দেহ যে সঠিক এটা অয়নন্দিতা ভালো করেই জানে।
‘তুমি কি বন্দনাকে নিয়ে ভাবছিলে অয়নন্দিতা?’
ফারহানের করা প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর নেই তার কাছে। অস্বস্তিবোধ করছে অয়নন্দিতা। চোখ অন্যত্র সরিয়ে ফেলে সে। আর তার রি আচরণটাই ফারহানকে আরও বিশ্বাস করিয়ে দেয় যে, সে এতক্ষণ বন্দনাকে নিয়েই ভাবছিল। ভীষণ রাগ হচ্ছে এখন তার। মেজাজও খারাপ হচ্ছে৷ নিষেধ করার পরেও অয়নন্দিতা বন্দনাকে নিয়ে ভেবে যাচ্ছে।
‘এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছ অয়নন্দিতা। তুমি এমন করবে জানলে আমি তো কিছুই বলতাম না।’
‘আসলে আমি…’
‘আসলে নকলে বাদ দাও। প্লিজ অয়নন্দিতা। আমি অনেকদিন পর ভালো থাকতে শুরু করেছি। ভালো থাকতে দিবে না আমায়?’
নির্বাক চেয়ে থাকে অনেকক্ষণ অয়নন্দিতা। ঠিকই তো, ফারহান অনেকদিন পর ভালো থাকতে শুরু করেছে। ভালো থাকুক না ফারহান। সে কেন মিছেমিছি এইসব ভেবে নিজের এবং ফারহানের ভালো থাকাটা নষ্ট করবে। একদমই না। তারা এখন থেকে ভালো থাকবে। অয়নন্দিতা ফারহানের ডান হাতটা শক্ত করে ধরে।
‘আমি আর ভাবব না এইসব৷ কথা দিলাম, ভাবব না। আমরা ভালো থাকব। ভীষণ ভালো থাকব৷’
ফারহান অয়নন্দিতার কপালে আলতো চুমু দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। অয়নন্দিতাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়।

ফারাশ ইদানীং বেশ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফূর্তিতে মেতে থাকা ছেলেটা এখন বিজনেসে পা রেখেছে। তার জন্য তো সব কিছু কঠিন মনে হবেই৷ কিন্তু বাবার কড়া আদেশ। এবার থেকে ব্যবসা দেখাশোনা করতে হবে। রমজান শেখ নিজে যা কিছু অর্জন করেছেন তার সবটুকুই তিন ছেলেমেয়ের জন্য। সাজিকে বিয়ে দেওয়ার পর সাজির পাওনাগণ্ডা সাজিকে বুঝিয়ে দেবেন৷ বাকি যা আছে তা সমান ভাগে বন্টন করে দেবেন দুই ছেলের মাঝে। যদিও তারা দু’জনের একজনও কখনও ভাগ বাটোয়ারার পক্ষে যাবে না। কারণ, তিনি ছেলেদের তেমন ভাবেই মানুষ করেছেন৷
ফারহান গত তিন দিন ছিল না বলে ফারাশ নিজে অফিসে বসেছে। তবে ফারহান আর তার মাঝে বিস্তর ফারাক। একজন গম্ভীর অন্যজন হাসিখুশি প্রাণবন্ত। অফিসে সবার সঙ্গে বেশ হাসিখুশি ভাবেই কাজ করেছে। স্টাফরা কেউ বুঝতেই পারেনি ফারাশ মালিক তারা কর্মচারী। জরুরী একটা মেইল চেক করছিল ফারাশ। এমন সময় কেউ একজন দরজায় নক করে। ফারাশ মুখ তুলে তাকাতেই নিজের ভাইকে দেখতে পায়। হাসিমুখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
‘ভাইয়া, তুমি! চলে এলে?’
‘আর কত থাকব। বাবা নেই, তুই একা হাতে সবটা সামাল দিচ্ছিস।’
‘গেলা ঘুরতে তাও আবার রাজরানীকে নিয়ে। আরও কয়েকটা দিন ঘুরে আসতে। আমি তো সামলে নিচ্ছিলাম।’
‘তুই অয়নন্দিতাকে রাজরানী বলে ডাকিস কেন? ও রাজরানী হলো কীভাবে?’
‘ও মা, ওকে কি রাজরানীর মতো লাগে না?’
‘তা বলিনি, জিজ্ঞেস করলাম মাত্র।’
‘ভেবে নাও শেখ ভিলা একটা রাজ্য। ওইখানে আমাদের রাজত্ব চলে। ওই রাজ্যের মহারাজা তোমার আমার বাপ মানে রমজান শেখ। তাহার সহধর্মিণী মিসেস রওশন শেখ রাজ্যের মহারানী। তাদের আবার দুই রাজপুত্র এক রাজকুমারী। তাদের মধ্যে বড়ো রাজপুত্র মানে তোমার বধূ অয়নন্দিতা। হলো না সে রাজরানী।’
‘পুরো ইতিহাস ঠুকে দিয়েছিস তুই।’
‘হা হা।’
‘আলী ব্রাদার্স এন্ড সন্স এর ফাইলটা চেক করেছিলি? ফাইলটায় কিছু ভুল ছিল।’
‘হ্যাঁ, চেক করা শেষ। ভুলগুলো ঠিকও করে দিয়েছি।’
‘ফাইলটা নিয়ে একটু রুমে আয়। নেক্সট মিটিংটা তুই করবি।’
‘আমায় আবার টানছ কেন?’
‘এই না বললি নিজে সব সামলে নিবি। আর না টানলে ঘরে দ্বিতীয় রাজরানী আসবে কী করে? শুনেছি দ্বিতীয় রাজরানীর বাপ আবার মহা হিটলার।’
ভাইয়ের কথার ধাঁচে ফারাশ বুঝে যায় যে, অয়নন্দিতা তার ভাইকে সব বলে দিয়েছে। অয়নন্দিতা মেয়েটার প্রতি তার সম্মান দিন দিন বেড়েই চলেছে। সে চায় নায়াও অয়নন্দিতার মতো সব দিক সামলে নিবে। অথবা সব দিক না সামলালেও অয়নন্দিতার মতো আচরণ করবে।

মানিক সাহবে চেয়ারে বসে আছেন। তার পাশে ফারাশ। ফারাশের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন আরেকজন কর্মকর্তা। নিজ চেয়ারে বসে ফাইল ঘাটছে ফারহান। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। ফারাশ সবকিছু বুঝতে পেরেই এদিক-সেদিক একবার তাকিয়ে ভাইয়ের চোখে চোখ রাখে। স্টাফদের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। তাই ঘুরিয়ে বলে,
‘ভাইয়া, ব্যাটার হয় আমরা যদি একটা সলিউশনে যাই।’
মানিক সাহেবও ফারাশকে সমর্থন করে বলেন,
‘স্যার এটাই ভালো হবে মনে হচ্ছে।’
ফারহান এবার ক্ষেপে যায়। মাথার প্রতিটা রগ যেন ছিঁড়ে যাবে। ফারাশ দু’জন স্টাফদের চলে যেতে বলে ফারহানের সামনে বসে।
‘তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন?’
‘হোয়াট ইজ দিস ফারাশ, হোয়াট ইজ দিস?’
‘আই নো। প্লিজ, শান্ত হও। স্টাফরা কী ভাববে?’
‘অর্ডার ক্যান্সেল করে দে।’
‘মাথা খারাপ হয়েছে তোমার। কাদের সঙ্গে মিলেছে দেখেছ? আমাদের রেগুলার ক্লাইন্ট এরা। ক্যান্সেল করার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। আমি বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। বাবা আজকে রাতের ফ্লাইটেই ঢাকা ঢুকবে। আগামীকাল সবকিছু নিয়ে আলাপ করা যাবে। প্লিজ, নিজে শান্ত হও।’
‘বিশ লাখ টাকার অর্ডার ফারাশ। এমন না যে আমি দিব না কিংবা দিতে ভয় পাব। বাট, আমার মনে হচ্ছে তারা অর্ডার নিয়ে ঝামেলা করবে। যেইভাবে নিচে নামানো যায় আর কি।’
‘এত সোজা! ব্যাবসা জগতে এতদিন রমজান শেখ এব্যতার বড়ো ছেলে ছিল। এখন ছোটো ছেলেও হাজির। এত সহজে বাঁকা করতে পারবে না।’
‘সাহস হয় কীভাবে, এটাই ভাবছি আমি, ওর সাহস হয় কীভাবে?’
‘সাহসটা তো আগে থেকেই পেয়ে গেছে। এটা বোঝো না?’
‘নতুন করে নাটক করার কোনো মানে নেই৷ ফাঁদে ফালানোর জন্যই এমন নাটক সাজিয়েছে।’
‘যতই নাটক সাজাক, ভিলেন হিসেবে আমিও কম যাই না। ওইদিকে লিড রোলে যদি সে থাকে তবে এইদিকে লিড রোলে আমি ভিলেন হিসেবে পারফেক্ট। কী বলো?’
ফারহানের মনে হচ্ছে ফারাশ কিছু একটা করবেই। তাই আগে থেকেই তাকে সাবধান করতে হবে।
‘এমন কিছুই করবি না তুই। যা হবে দেখা যাবে। বাড়তি কিছু করতে যাস না।’
ফারাশ তার ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

রাত বারোটা পার হবার ফারহান বাড়ি ফেরে। ততক্ষণে অয়নন্দিতা ঘুমিয়ে পড়েছে। ফারহান পূর্বের ন্যায়ে ধীর পায়ে অয়নন্দিতার পাশে দাঁড়ায়। একদম নিঃশব্দে বিছানায় বসে সে। অয়নন্দিতা হাত ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। এগারোটার পর একবার অয়নন্দিতা তাকে ফোন করেছিল৷ প্রচন্ড মেজাজ খারাপ থাকায় ফোন রিসিভ করে একটু কঠিন স্বরে কথা বলেছিল। কষ্ট পেয়েছে কি না জানে। অয়নন্দিতার ঘুমন্ত মুখটাকে মায়াবী লাগে। ফারহান একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখতে থাকে অয়নন্দিতাকে। ফারাশের কথামতো সেও স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে আসলেই অয়নন্দিতা এই রাজ্যের রাজরানী। তার মুখশ্রীতে রাজরানী রাজরানী ভাবটা আছে। তার রাজ্যের রানী সে। তার রাজত্বে বসবাস হবে এই রাজরানীর। অ
ফারহান আলতো হাতে অয়নন্দিতার একটা গাল ছুঁয়ে দেয়। ঘুমন্ত অয়নন্দিতা স্পর্শ অনুভব করতে পেরে হালকা নড়ে উঠতেই ঘাবড়ে গিয়ে ফারহান দু’কদম পিছিয়ে যায়। পাছে তার স্পর্শে রাজরানীর ঘুম ভেঙে যায়।

চলবে……………….

[বিঃদ্রঃ অনেকদিন পর গল্প দিলাম। এবার মনে হয় গ্যাপটা বেশ বড়ো হয়ে গেছে। ইনশাআল্লাহ এবার থেকে রেগুলার গল্প পাবেন। যেহেতু এবার আপনাদের অনেক বেশি অপেক্ষা করিয়েছি সেইজন্য আপনাদের সবার জন্য একটা সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছি। সারপ্রাইজটা হচ্ছে– যারা আমার ‘রাজশ্রী তোমার জন্য’ বইটা প্রি অর্ডার করবেন তাদের মধ্য থেকে লটারি করে ভাগ্যবান তিনজনকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ এ আমার প্রকাশিত পরবর্তী উপন্যাস গিফট হিসেবে দেওয়া হবে। এই সুযোগটা হাত ছাড়া না করে এখনি আপনার কপিটি অর্ডার করে ফেলুন।
বুকশপে অর্ডার লিংক–

★★ https://www.facebook.com/boikunjo.shop/

★★https://www.facebook.com/GrontoMohol.bd/

★★https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=449076133457210&id=108082340889926

★★ প্রকাশনীর পেইজ– https://www.facebook.com/Prohelika-Prokashon-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%A8-107654618273632/ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here