দ্বিতীয়_সূচনা পর্ব_৪৬

0
1335

#দ্বিতীয়_সূচনা
#পর্ব_৪৬
লেখা – আফরোজা আক্তার
(কোনোক্রমেই কপি করা যাবে না)

নাস্তার টেবিলে ফারহানের নজর অয়নন্দিতার দিকে। গত রাতের ঘটনার জন্য হয়তো কষ্ট পেয়েছে অয়নন্দিতা। ঘুম থেকে উঠে অয়নন্দিতাকে কাছে পায়নি সে, তাই আর আলাদা করে কথা হয়নি তাদের। টেবিলের একপাশে ফারহান অন্যপ্রান্তে অয়নন্দিতা। সাজির সঙ্গে গল্পে মেতেছে সে। ফারাশ একবার নিজের ভাইকে দেখছে আবার অয়নন্দিতাকে দেখছে।
কিছুক্ষণ পর রমজান শেখ টেবিলে বসলে ফারহান নতুন অর্ডারের ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করে। ফারাশও সেই কথায় নিজের মতামত জানায়।
খাওয়া দাওয়ার পর ফারাশ এবং রমজান শেখ বের হয়ে যায়৷ ফারহান কিছুটা সময় টেবিলেই বসে থাকে। ততক্ষণে অয়নন্দিতা নিজের ঘরে চলে যায়। ঘরটা অগোছালো হয়ে আছে। যদিও ফারহান গোছালো মানুষ তবুও কেন জানি অয়নন্দিতা নিজ হাতে গুছিয়ে শান্তি পায়। ফারহানও নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়৷
ফারহানের রেখে যাওয়া তোয়ালেটা অয়নন্দিতা বারান্দার দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়। বারান্দায় রোদ এসেছে। সকালবেলার রোদটা বেশ মিষ্টি হয়। শরীরে মাখলে শরীরটা বেশ গরম হয়। এইভেবেই পাশে দাঁড়িয়ে আছে অয়নন্দিতা। মাথা নিচু করে রোদ পোহাচ্ছে সে।
ঘরে অয়নন্দিতাকে না পেয়ে এদিক-সেদিক তাকায় ফারহান। হঠাৎই অয়নন্দিতার ওড়নার কিছু অংশ দরজার ফাঁকে দেখা যায়৷ ফারহান বুঝে যায়, অয়নন্দিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় থাকা লকটা আটকে দেয় ফারহান। চুপি চুপি শব্দহীন ভাবে হেঁটে হেঁটে অয়নন্দিতার পেছনে তাকায়। অয়নন্দিতা কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তা করছিল তাই সে টের-ও পায়নি তার পেছনে জলজ্যান্ত একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান হালক ঝুঁকে অয়নন্দিতার ঘাড়ে ফু দেয়। হালকা বাতাস ঘাড়ের চুলগুলোকে নাড়িয়ে দিতেই অয়নন্দিতা পেছনে ঘুরে তাকায়। আর তখনই ফারহান তাকে জড়িয়ে ধরে। আচমকা এইভাবে জড়িয়ে ধরার কারণ বুঝতে না পেরে অয়নন্দিতা ফারহানের বুকে চুপচাপ থাকে। অয়নন্দিতার নীরবতা উপলব্ধি করতে পেরে ফারহান কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
‘মন খারাপ করে এখানে দাঁড়িয়ে আছো। আমার সঙ্গে কথাও বলবে না?’
‘আমি তো মন খারাপ করিনি।’
‘গতকাল রাতের জন্য সরি। তখন মাথাটা ভীষণ গরম ছিল। এর মধ্যেই তোমার ফোন। আমার ভুল হয়েছে। ফোনটা রিসিভ না করলেই পারতাম। সরি।’
‘সরি বলতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি।’
‘তুমি রাগ করে আছো অয়নন্দিতা। আমি বুঝতে পারি তোমাকে।’
‘আমি রাগ করিনি। সত্যি বলছি।’
‘তবে আমি আসার আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে কেন? আর সকালবেলাও আমার সঙ্গে কথা বলোনি। এটা রাগ না তো কী?’
‘আমি রাগ করিনি। আমার অভিমান হয়েছে।’
‘অভিমান!’
‘হ্যাঁ। অভিমান।’
ফারহান মুচকি হাসে।
‘অভিমান ভাঙাবো কী করে?’
‘শাস্তি পেতে হবে।’
‘কী শাস্তি বলো। তোমার জন্য সব শাস্তি মাথা পেতে নেব।’
‘আমার সঙ্গে রাত জাগতে হবে। আজ সারারাত গল্প করতে হবে। এটাই তোমার শাস্তি৷’
শাস্তিটা নেহাৎই ছেলেমানুষী। ফারহান একটু শব্দ করেই হাসে। এরপর বলে,
‘ঠিকাছে। আজকের রাতটা তোমার সঙ্গে জেগে কাটাবো। অনেক গল্প করব।’
‘লুডু খেলতে হবে। হেরে গেলে ৫০০ টাকা জরিমানা।’
‘৫০০ টাকা জরিমানা! টাকার পরিমাণটা একটু বেশি হয়ে গেল না?’
‘কিহ??’
‘হা হা। আচ্ছা, ৫০০ টাকার বদলে ৫০০ টা চুমু দেব। চলবে?’
অয়নন্দিতা চোখ জোড়া বড়ো করে ফারহানের বুকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে শুরু করে।
‘খারাপ লোক একটা।’
‘এভাবে মারলে তো মরে যাব। তখন কাঁদলেও আর ফিরে আসব না।’
ফারহানের কথাটা শুনে অয়নন্দিতার বুকটা কেঁপে ওঠে। ঠিক যেমনটা ছোটোবেলায় নিজের বাবা মায়ের মৃত্যুর খবরটা শুনে বুকটা কেঁপে উঠেছিল। মুহুর্তের মধ্যেই দু’চোখে পানি জমাট হতে শুরু করে। কথাটা বলার সময় ফারহান বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছে যে, সে ভুল মানুষকে ভুল কিছু বলেছে। অয়নন্দিতা অন্যান্য মানুষের মতো সাধারণ মানুষ না। তার ভেতরে যে কষ্ট লুকিয়ে আছে সেই কষ্টতে আরও খোঁচা দিয়েছে সে। অয়নন্দিতার গাল জোড়া চেপে ধরে কপালের সঙ্গে কপাল মেলায় ফারহান।
‘আই এম সরি। আমি কিন্তু মজা করেছি।’
‘এমন মজা কখনও কোরো না আমার সঙ্গে। জানো তো, এই মজাটা আমার সঙ্গে আমার বাবা মাও করেছে। তারা ফিরে আসেনি। আমার জীবনে তারা ফিরে আসেনি।’
ফারহান মজা করতে গিয়ে অয়নন্দিতার কলিজায় আঘাত করেছে। সে বুঝতেও পারেনি অয়নন্দিতা কষ্ট পাবে৷ অন্যদিকে অফিসেরও দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফারহান অয়নন্দিতার কপালে চুমু দিয়ে বিদায় জানাতে চায়৷ অয়নন্দিতাও অনুমতি দেয়।
নিচে নেমে কী মনে করে যেন ফারহান উপরে তাকায়৷ বারান্দায় তখন অয়নন্দিতা দাঁড়িয়ে। মুচকি হেসে হাতের ইশারায় ফারহানকে বিদায় জানায় সে। ফারহানও হাসিমুখে হাতের ইশারা করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কয়েক সেকেন্ড পর ফারহানের গাড়িটা গেইটের বাইরে চলে যায়। আর অয়নন্দিতা পথের দিকে তাকিয়ে থেকে চাপা নিঃশ্বাস ছাড়ে। আকাশের দিকে এক নজর তাকায় সে।
‘আমার কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছ তুমি। এই মানুষটাকে কিন্তু আমি চাইনি। এই মানুষটাকে কিন্তু তুমিই দিয়েছ আমায়। যাকে দিয়েছ তাকে কখনও নিয়ে যাওয়ার কথা ভাববে না। নয়তো আমি এবার পাথর হয়ে যাব। যেই পাথর ভেঙে কোনো সরঞ্জামও বানাতে সক্ষম হবে না কেউ৷’

চলবে………………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here