#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ১৩
– রাতে আমরা সবাই ডিনার করছি এমন
সময় রোজ বলে উঠল, নাফিসা আমাদের
ডিপার্টমেন্ট থেকে সবাই ট্যুরে
যাচ্ছে। যাবি তুই!
– আমি আন্টির দিকে তাকালাম।
আন্টি বলল তুমি যেতে চাও নাফিসা?
.
.
.
– রোজ বলল MoM যাইনা আমরা!
তাছাড়া ভাইয়াও তোহ যাচ্ছে?
– রুপ চট করে বলে উঠল না আমি যাচ্ছি
না।
.
.
.
– রুপের কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে
গেল। আমি জানি আমাদের যাতে
যাওয়া না হয় এর জন্য খাটাস্ টা এই
কথা বলছে।
.
.
.
– আমি বললাম আন্টি আমরা যেতে চাই,
আমাদেরও পড়াশুনা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আর কোনদিন সুযোগ হবে কিনা
জানিনা বলেই রোজের দিকে
তাকিয়ে হাসলাম।
.
.
.
– আন্টি বলল ওকে ঠিক আছে। কবে
যাওয়া তোমাদের?
– রোজ বলল ১ সপ্তাহ পর।
– তাহলে MoM আমরা সপিং করে
ফেলি।
– মিনা বলল, As your wish
.
.
.
.
– রুপম বলল আমিও যাব তোমাদের সাথে।
রোজ বলল ছোট হয়ে বড়দের সাথে
যাওয়ার দরকার নেই।
.
.
.
– রুপম এসে বলল ওহ নাফিসা SiS
আমাকেও নিয়ে যাওনা তোমাদের
সাথে।
– আমি বললাম তোমার ওখানে allow
নেই তবে আজ তোমাকে আমরা
বাহিরে নিয়ে যাব।
.
.
.
– মিনা বলল রুপ তুইতো যাচ্ছিস।
– রুপ বলল sorry MoM আমি যাচ্ছিনা বলেই
উঠে চলে গেল।
.
.
.
– রুমে এসে রোজ কে বললাম, এই তোর
ভাইয়া নিজেকে কি মনে করে হুম।
– রোজ বলল আবার ভাইয়া কে নিয়ে
কেন পড়ে আছিস?
– আমি বলল তোহ কি করব শুনি সব সময়
গোমড়া মুখে থাকবে। আর কি বলল! MoM
আমি যাব না বলেই ভিংচি কাটলাম।
.
.
.
– আমার কেমন জানি রুপ কে খুব ভাল
লাগে, ওর কথা বলা, স্টাইল, ওর সব কিছু
ভাল লাগে। যদিও ওর কাছ থেকে আজ
অবদি ৪টা জোড়ে থাপ্পড়ই শুধু খাইছি।
.
.
.
– ঘর পোড়া গরু আমি তাই সিদুরে মেঘ
দেখলেই ডড়াই সেই রকম একটা অবস্থা
আর কি।
.
.
.
– রাতে রুপের রুমে গেলাম। দেখি রুপ
কি জানি কাজ করছে।
– আমায় দেখে রুপ বলল কিছু বলবা!
.
.
.
– আমি কি বলব ভেবেই পাচ্ছিনা শুধু চুপ
করে দাড়িয়েই আছি।
– রুপ আবার বলল কিছু বলবা?
– আমার চুপ করা দেখে রুপ এবার বিরক্ত
হয়ে চেচিয়ে ধমক দিয়ে বলল, এই মেয়ে
তোমার সমস্যা কি!
–
–
–
– ওর ধমক শুনে চোখে পানি এসে গেল
এবং আমি ফুফিয়ে কেদে উঠলাম।
.
.
– রুপ কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল এই তুমি
কাদছো কেন, আমি কি তোমায়
মেরেছি?
.
.
.
– আমি আর কোন কথা না বলে রুম থেকে
বের হয়ে আসি।
.
.
– মায়ের চিঠির কথা বলতে
গিয়েছিলাম কিন্তু কি যে হল উল্টা
বকুনি খেয়ে রুমে আসতে হল।
– এই ছেলে কি আমাকে একটুও বুঝবে
না।
.
.
.
– রাতে বিভিন্ন চিন্তা করতে করতে
ঘুমিয়ে পড়লাম
– সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে
নিলাম এবং রুম থেকে বের হয়ে ছাদে
গেলাম।
.
.
.
.
– ছাদে হাটাহাটি করছি এমন সময়
দেখলাম নিচে একটি মানুষ আমার
দিকে তাকিয়ে আছে।
– অদ্ভুত তার চাহনি দেখে বেশ ভয়
পেয়ে গেলাম।
– দৌড়ে ছাদ থেকে নামতে গিয়ে
রুপের সাথে ধাক্কা খেলাম।
– আউচ্ বলে রুপের দিকে তাকালাম
– আপনার চোখ কি পকেটে তুলে
রাখছেন? যে দেখতে পাননি! আমি
নিচে নামছি।
.
.
.
– রুপ বেশ জোড়ে ধমক দিয়ে বলল এক্ষুনি
নিচে নেমে যাও।
– আমিতো নিচেই যাচ্ছি আপনি কেন
আমার সামনে আসলেন।
– Shut up কি বললাম তোমার কানে কথা
যায় নি?
.
.
.
– আমিতো হতবাক রুপ কি ভাবে এরকম
ব্যাবহার করতে পারল?
–
–
– আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে
সোজা রোজের রুমে গেলাম।
– দেখলাম শাঁকচুন্নি ঘুমাচ্ছে। ধাক্কা
দিয়ে ওকে জাগিয়ে দিলাম আর
বললাম দেখ! তোর ভাইকে আমি কবে
যেন খুন করে জেলে গিয়ে বসবাস করব।
– রোজ ঘুমের ভাব এখনও কাটেনি তাই
কিছু বুঝতে পারলনা
– হাই উঠিয়ে আবার ঘুমাতে যাওয়ার
সময় বলল কেন কি করেছে ভাইয়া?
.
.
.
– আমি এবার জোরেই বললাম তোর
খাবিস্ ভাইকে বলে দিবি আমাকে
যেন শাসন না করে এবং আমার পিছে
যেন না লাগে।
.
.
– রুপ রোজের রুমে এসে বলল ‘অকাজ’ না
করলে তোহ কেউ কাওকে শাসন করে
না। রোজ ওকে বলে দিস ও যেন আর
ছাদে না যায়।
.
.
– এবার যদি কথার অমান্য করে তাহলে
ঠাং ভেঙ্গে রুমে বসিয়ে রাখব বলেই
চলে গেল।
.
– রোজ এবং আমি ২ জনেই তোহ অবাক
রুপের কথা শুনে।
– এই ব্যাটা কে আমিও না দেখে
ছাড়ছিনা।
কত ধানে কত চাল হয় সেটা এবার
বুঝিয়ে দিতেই হবে।
.
.
.
– দুপুরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল আমি রোজ কে
বললাম চল ছাদে গিয়ে ভিজি।
– নারে যাব না ভাইয়া সকালে
নিষেধ করলনা! তুই ভুলে গেছিস। তাই
যাব না।
– ভাইয়া যে রাগী , যদি ওর কথা
অমান্য করি তাহলে ও আস্ত রাখবেনা।
– অনেক ছোট থাকতে একবার ওর কথা
না শুনে ওর জিনিসে হাত দিছিলাম।
এর জন্য পুরো দিন আমাকে চিলাকোঠা
রুমে বন্দী করে রাখছিল। DAD- Mom ও
ওকে কিছু বলে না।
.
.
.
– আমি বললাম তোর ভাইতো একটা
খচ্চর,খাটাস্, খাবিস্, ডেভিল, কুত্তা,
শেয়াল, বেজী, হাতি, জলহস্তী বলে
অনেক গুলো গালি দিলাম।
– ও কে এমন আসছে যে ওর কথা শোনা
লাগবে?
.
.
.
– আমি কি ওরে ভয় পাই? তুই তোর ভয়
নিয়ে থাক আমি গেলাম।
– রোজ বলল যাসনা। আজ কিন্তু তোর
কপালে দুঃখ আছে।
.
.
.
-আমি রোজের কথায় কান না দিয়ে
ছাদে গেলাম।
-সেই বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ নিচে চোখ
গেল আমার। যা দেখলাম তাতে আমি
অবাক হলাম। সেই লোকটি একই ভাবে
আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা
কিভাবে সম্ভব?
সকালেও তাকে দেখছি আর এখনও
দেখছি।
.
.
.
.
– আমি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে মনের সুখে
ভিজছিলাম।
– নিচে গাড়ির হর্ন শুনে তাকিয়ে
দেখি রুপের গাড়ি বাসায় ঢুকছে।
আমি একটু আড়ালে এলাম যাতে ও
আমাকে দেখতে না পায়।
.
.
.
.
– রুপ বাসায় ঢুকেই প্রথমে রোজকে বলল
নাফিসা কই?
– রোজ তো ভয় পেয়ে যায় আর মনে মনে
ভাবে দোস্ত তুই আজ গেছিস।
– রুপ বেশ জোড়েই ধমক দিয়ে বলে কি
হল! কথার উত্তর দিস না কেন?
.
.
.
– রোজ বলল আমি জানি না তো, দেখ
রুমে বোধহয় আছে। কেন কি হইছে?
.
.
.
– রুপ কিছু না বলে নিজের রুমে গেল।
সবে ওয়াসরুমে যাবে এমন সময় গেটের
সামনে দাড়ানো লোকটার কথা মনে
পড়ল। যেকিনা একদৃষ্টিতে তাদের
ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
.
.
.
– রুপ ড্রেস খাটের উপর ছুড়ে মেরে এক
দৌড়ে ছাদে গেল।
– যা আশংকা করেছিল তাই হল। দেখল
নাফিসা ছাদের ধারে রেলিং এর
উপর বসে ভিজছে।
.
.
– রুপ কে এবার পায় কে একদম সোজা
নাফিসার কাছে চলে গেল।
– রুপ কে দেখে নাফিসা চমকে উঠল
এবং রেলিং থেকে নিচে নামল।
– রুপের চোখ ২ টি লাল দেখে
নাফিসা ভয় পেয়ে গেল।
.
.
.
– রুপ বলল আমি বারণ করেছিলাম না
ছাদে উঠতে বলেই এক চড় মারল।
– রুপ বলল এক্ষুনি নিচে যাও।
.
.
.
– নাফিসা গালে হাত দিয়ে বলল
আমি যাবনা।
– রুপ কিছুুটা শান্ত ভাবে বলল, কি হল
আমি কি বললাম কথা কি কানে যায়
না?
.
.
.
– নাফিসা বলল আমি যাবনা Sir…..
আমি আরও ভিজব।
.
.
– রুপ বলল তুমি পাগল হয়ে গেছ। তোমার
পাগলামি just অসহ্য লাগে।
– নাফিসা এবার বেশ রেগে গিয়ে
বলল আমি পাগল হুম আমি পাগল বলে
নিচে বসে পড়ল।
.
.
.
– রুপ কিছু না ভেবে এক ঝটকায় কোলে
তুলে নেয় নাফিসাকে এবং নিচে
তাকিয়ে দেখে লোকটি তাচ্ছিল্য
সহকারে হাসছে।
.
.
– রুপ একপ্রকার দৌড়েই নাফিসা কে
নিয়ে নিচে নেমে আসল।
– নাফিসাও পা ছুড়াছুড়ি করছে। রুপের
বুকে কিল,আচর, খামচি সহকারে যত্ত
এতদিনে রাগ ছিল সব ঝাড়ছে। বিড়াল,
কুত্তা, কাঠবিড়াল সহ নানা পদবি ইতি
মধ্য সব রুপের নামের পাশে যোগ হল।
সেদিকে রুপের খেয়াল নেই।
.
.
.
– নাফিসার রুমে এনে ঐ অবস্থায় ওকে
খাটে
ফেলে দিল।
– নাফিসা ঐ ভাবেই শুয়ে আছে আর মুখ
দিয়ে গালি আউরাচ্ছে।
– ওয়ার্ড ড্রপ থেকে কাপড় বের করে ওর
গায়ে ছুড়ে মেরে রুপ রুম থেকে বের
হয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় দরজা বাহির
থেকে লাগিয়ে দিয়ে যায়।
.
.
.
.
– রোজ কে বলল ওর দরজা যেন আমার হুকুম
ছাড়া খোলা না হয় বলেই নিজের
রুমে চলে গেল।
.
.
.
– রুপ বেশ চিন্তায় আছে। কারন বাসার
সামনের লোকটিকে ২ বার দেখল এবং
at last যে হাসিটা দিল সেটা বেশ
ভয়ঙ্কর ছিল।
লোকটা সাধারন কোন মানুষ না সেটা
রুপ দেখেই বুঝতে পেরেছে।
– সন্ধায় রুপ ডাইনিং রুমে বসে আছে।
– রুপম এসে রুপ কে বলল ভাইয়া SiS কে
আটকায় রাখছ কেন?
.
.
.
– রুপ বলল কই নাতো! কে তোকে বলল?
.
– রুপম বলল আমি বাসায় এসে SiS এর রুমে
যেতে চাইলে রোজ আপু নিষেধ করল
যে ও ঘরে নাকি যাওয়া নিষেধ!
.
.
.
– রুপ নাফিসার কথা মনে হতেই রোজ
কে ডাকল।
– রোজ ভয়ে এসে বলল কি হইছে?
– নাফিসার রুম খুলে দেসনি এখনও।
– রোজ বলল তুই তো নিষেদ করেছিস।
– রুপ রেগে বলল আমি নিষেধ করছি বলে
কি জিবনে আর খুলে দিবি না।
.
.
.
– এই কথা শুনে রোজ দৌড়ে গিয়ে
দরজা খুলে ভিতরে গিয়ে দেখে
নাফিসা শুয়ে শুধু কেপে যাচ্ছে
অচেতন অবস্থায়।
.
.
.
– রুপম নিচে এসে রুপ কে বলল ভাইয়া SiS
কেমন জানি করছে…….
চলবে…..