গল্প —- ধর্ষিতা বউ
লেখক —– মাহমুদ
পর্ব —– ১৪
******************************************
পার্ট ১৩ এর পর
ছাদে তারা একপাশ দুইজন দুইজনের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো।তারপর প্রাপ্তি তূর্যকে বলল,
-দেখ তূর্য তুই তো সবই জানিস।কিন্তু তারপরেওক কেনো আমায় বিয়ে করতে চাস?
-প্রাপ্তি তুই তো জানিস সেই ছোট্টবেলা থেকেই আমি তোকে কতটা পছন্দ করি।আমাদের বিয়ের জন্যও বলেছে মা।কিন্তু তোর বাবা মা-ই রাজি হয়নি।
-হ্যাঁ আমি জানি।কিন্তু….
-কোনো কিন্তু না প্রাপ্তি আমি তোকে ভালোবাসি।আর তোর সাথেই সারাজীবন থাকতে চাই।
-সায়ান মিন্তু এখনো ডিভোর্স পেপারে সাইন করে নি।ও তো পরে ঝামেলা পাকাবে অনেক।
-তার জন্য আমি আছি তো নাকি?তুই রাজি কিনা খালি সেটা বল।
-তূর্য বুঝার চেষ্টা কর।তুই আরো বেটার কাউকে পাবি।
-আমার বেটার কেউ লাগবে না।আমার তোকেই লাগবে।
-তোর মাথাটা আছে না গেছে?সায়ান যদি আমাকে ডিভোর্স দিয়েও দেয় তুই একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করবি?একটা বার ভেবেছিস মানুষ কি বলবে?
-Don’t be silly Prapti..সেদি তো খুব বড় বড় করে বলছিলি সমাজ নিয়ে।তাদেরকে তুই কেয়ার করিস না।এখন এই একথা বলছিস?
প্রাপ্তি আর কিছু বলে না।তূর্য বলে
-কিছু বলবি না?
-নিচে সবাই ওএট করছে। নিচে চল।
তারপর দুইজনে নিচে গেলো।তারপর তূর্য আর ওর মা খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলো।বিকালে মোনা প্রাপ্তিকে কল দিলো,
-হ্যালো প্রাপ্তি,কেমিন আছো?
-এইতো আপু ভালোই আছি।তুমি কেমন আছো?
-এইতো ভালোই।তোমাকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি।
-কি কথা আপু?
-সায়ান আমাকে কল দিয়েছিলো গতকাল।
-কি বলল?
-ও তোমাকে ওর ঘরে তুলে নিতে চায়।তুমি নাকি ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছো।ও ডিভোর্স দিবেনা বলছে।আমাকে বলল তোমাকে বুঝিয়ে বলার জন্য।
-ওহহ।
-এতগুলো কথার উত্তর শুধু ওহ?কিছু বলার নেই?
-কি বলবো?আমি ওর কাছে ফিরে যেতে চাইনা আপু।তুমি তো সবই জানো এর কারণস্বরূপ।
-হ্যাঁ।তো এখন কি করবে তুমি?আমিও চাইনা তুমি ওর কাছে ফিরে যাও।
-তূর্যের সাথে বিয়ের কথা চলছে!!
-ওহ গ্রেট!ছেলেটা খুব ভালো যতটুকু বুঝলাম।
-আমার ইচ্ছে নেই আপু।
-কেনো?কি প্রব্লেম?
-আমি এখন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনা আপু?
-ও না তোমার ছোট বেলার বন্ধু?
-হ্যাঁ।কিন্তু সেও তো সায়ানের মতো পুরুষ।
-চিন্তা ভাবনা করে করো যা করার।
-হ্যাঁ আপু দোয়া করো।
-আচ্ছা রাখছি তাহলে।
কিছুদিন পর,
প্রাপ্তিদের বাসায় একটা ডাক চিঠি আসলো।খামটা খুলে প্রাপ্তি অনেকটাই অবাক হয়ে গেলো। সায়ান ডিভোর্স লেটারে সাইন করে দিলো।এতো জলদি!!বিষয়টা প্রাপ্তির মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিলো।ওর মা জিজ্ঞেস করলো কিসের এটা।ও বলল সায়ান ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে।প্রাপ্তির মা খুশি হয়ে গেলেন।প্রাপ্তি তূর্যকে কল দিয়ে বলল
-হ্যালো তূর্য..
-হ্যাঁ প্রাপ্তি বল।
-সায়ান….
-কি করেছে সায়ান?বল?
-সায়ান ডিভোর্স লেটারে সাইন….
-ওসব নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।ও সাইন করে দিবে।আমি তো আছি নাকি?এতো…
-আমার কথাটা তো শেষ হতে দিবি?
-আচ্ছা বল।
-ও ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে।একটু আগেই পিয়ন এসে দিয়ে গেলো সেটা!
-কি??এতো সহজে?
-সেটাই বুঝতে পারছি না।
-আচ্ছা আমি এখন মিটিংয়ে আছি।আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর বিকালে তূর্য প্রাপ্তিদের বাসায় গেলো।প্রাপ্তি আর প্রাপ্তির সাথে বসে কথা বলল।সায়ানের এতো সহজে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগছিলো তাদের কাছে।যা-ই হোক তূর্য বলল
-এবার তো তুই রাজি?
-কে বলল আমি রাজি?
-মানে তুই বিয়েতে রাজি না?
-না।
-কেনো প্রাপ্তি?
-তূর্য এখন যা তুই আমার ভালো লাগছে না।
-প্রাপ্তি তুই কি বেশি বাড়াবাড়ি করছিস না?সবকিছুতে এমন করছিস কেনো তুই?(মা)
প্রাপ্তি কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।রাতে নিজের পড়াশুনো শেষ করে ডিনার করতে গেলো।তখন প্রাপ্তির বাবা বলল
-কিরে কোনো সিদ্ধান্ত নিস নি এখনো?
-কিসের সিদ্ধান্ত বাবা?
-তূর্যর সাথে বিয়ের কথা চলছে ভুলে গেছিস?
-বাবা প্লিজ!তোমরা সবাই আমাকে এইভাবে প্রেসার দিও না।আমার ভালো লাগেনা আর এসব।
বলেই প্রাপ্তি অর্ধেক খাবার রেখেই রুমে চলে গেলো।
রাতে সায়ান কল দিলো।সাথে সাথেই প্রাপ্তি রিসিভ করলো,
-এতো সহজে পেপারে সাইন করলেন,আবার কোন প্ল্যানিং করছেন আমাকে খুন করার?
-প্রাপ্তি আমি তোমাকে ভালোবাসি!
কথাটা শুনেই প্রাপ্তি একটা অট্টহাসি দিয়ে বলল
-ভালোবাসা??এই শব্দটা আপনার মুখে মানায় না সায়ান চৌধুরী। ভালোবাসা মানে বুঝেন তো?
-এইভাবে বলছো কেনো প্রাপ্তি?
-আপনার কাছে ভালোবাসা মানে শারীরিক চাহিদা,নিজের স্ত্রীকে বৈধভাবে ধর্ষণ করা,আর অন্য মেয়েদের নিয়ে রাত কাটানো।
-প্লিজ প্রাপ্তি এইভাবে বলো না।
-আপনি কি জানেন আমি আপনার কি হই?
-তুমি আমার বিবাহিতা বউ প্রাপ্তি।যদিও এখন আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-ভুল বললেন মিস্টার সায়ান চৌধুরী।আমি আপবার বউ না।আমি আপনার ধর্ষিতা বউ ছিলাম।যে কিনা নিয়মিত তার স্বামী দ্বারা বৈধভাবে ধর্ষিত হতো।কি করে ভাবেন আমাকে আবার সেই নরকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য?আমাকে খুন করার চেষ্টা পর্যন্ত চালিয়েছেন।তবুও কি আপনার স্বাধ মিটে নি।
-প্রাপ্তি চুপ করো!আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি।আমি চাই তুমি যার সাথেই থাকো ভালো থাকো।
বলেই সায়ান ফোন কেটে দিলো। সায়ানের কথাটা প্রাপ্তিকে খুব তাড়া করছিলো।প্রাপ্তি ভাবছিলো “তারমানে সায়ান জানে আমার আর তূর্যর বিয়ের কথা চলছে!”
কিছুক্ষন পরেই মোনা কল দিলো।বলল,
-প্রাপ্তি আমি সায়ানকে সব খুলে বলেছি।তুমি নাকি ওর ফোন রিসিভ করো না ঠিকমতো তাই আমি বললাম ওকে সব বুঝিয়ে।ও বলেছে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবে।
-আপু সায়ান সাইন করে দিয়েছে।কিন্তু বিয়ের কথাটা কেনো বললে ওকে?
-কেনো কোনো সমস্যা?
-আমি বিয়েতে রাজি না।আমার ইচ্ছা নেই আর কারো ঘরে বউ হয়ে যাওয়ার।
-প্রাপ্তি পাগলামী করো না।সায়ান তোমাকে মুক্তি দিয়েছে।তূর্য তোমাকে ওর করে নিতে চায়।এখন তো কোনো বাধা নেই আর।
-কিন্তু এইযে বাচ্চাটা!!তূর্য যদি পরে কখনো এসব নিয়ে আমাকে খোটা দেয় বা কিছু বলে?
-তুমি তো ওকে আমার থেকে ভালো জানো।ছোট বেলা থেকেই চিনো ওকে।
-হ্যাঁ আমি জানি ও ওমন না।কিন্তু….
-ভেবেচিন্তে কাজ করো।তোমার অনাগত সন্তানও আর কারো কথার সম্মুখীন হবে না যে তোমার বাবা কে।তোমাকে সমাজ মেনে নিতে বাধ্য।ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো সবকিছু।রাখছি।
প্রাপ্তি আবার দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলো।কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলো।তারপর ভার্সিটি তে গেলো প্রাপ্তি।ভার্সিটি থেকে দুপুরে ফেরার পথে হঠাৎ করেই প্রাপ্তি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
চোখ মেলেই প্রাপ্তি নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে।উঠে বসার চেষ্টা করে।তখনই সায়ান এসে ওকে যত্ন করে উঠিয়ে বসায়।পেছনে বালিশ উঁচু করে দিয়ে প্রাপ্তিকে হেলান দেওয়ায়।প্রাপ্তি সায়ানকে দেখেই রেগে যায়।বলে
-আপনি এখানে কি করছেন?আর আমি এখানে কেনো?কি হয়েছিলো আমার?
-শান্ত হও প্রাপ্তি।এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
-আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন আগে।
-তুমি মাথা ঘুরে পড়ে গেছিলে রাস্তায়।মানুষের ভীড় দেখে আমি গাড়ি থামালাম।তারপর তোমাকে দেখি সেখানে।
-আপনি ওই সময় ওখানে কি করছিলেন??
-তেমন কিছু না।
-বুঝেছি।আমাকে ফলো করছেন তাইনা?
ডাক্তার এসে বলল,
-আপনার ভাগ্য ভালো আপনার হাজব্যান্ড সময়মতো আপনাকে নিয়ে এসেছেন।সকাল থেকে মনে হয় কিছুই খান নি আপনি!তাই এমন হয়েছে।
-খেয়েছিলাম সকালেই।
-এখন এতো কম খেলে চলবে না।আপনার ভেতরে আরেকটা প্রান আছে।তারও খাবারের প্রয়োজন।তাই কিছুক্ষন পরপরই আপনাকে খেতে হবে সামান্য পরিমানে।৫ মাস চলছে এখন।সে হিসেবে বাচ্চা খুব একটা ডেভেলপ করছে না।
-মানে?আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
-হ্যাঁ বাচ্চা ঠিক আছে আল্লাহ্র রহমতে।কিন্তু আপনাকে আরো সচেতন হতে হবে।মেন্টালি ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে হবে,সময়মতো খাওয়াদাওয়া করতে হবে।
-জ্বী খেয়াল রাখবো।আমি কি এখন বাসায় যেতে পারবো?
-হ্যাঁ পারবেন।
তারপর তারা হসপিটাল থেকে বের হলো।প্রাপ্তি একাই চলে যাচ্ছিলো।সায়ান ওর হাত চেপে ধরে বলে
-আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।প্লিজ একা যেও না।তোমার শরীর ভালো নেই।
-আমার হাত ছাড়ুন।
বলে প্রাপ্তি ঝাড়ি দিয়ে ওর হাত ছাড়িয়ে নিলো।তারপর বলল
-আমার জন্য আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবেনা।আমি এখন আপনার কেউ না।আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ কিন্তু তোমার গর্ভের বাচ্চাটা তো আমারও।
-মোটেই আপনার না।এই বাচ্চাটা শুধু আমার।ওর উপরে আপনার কোনো অধিকার নেই।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি চলে যাচ্ছিলো।সায়ান দৌড়ে ওর সামনে পথ আগলে দাঁড়ালো। ওকে বারবার আটকাচ্ছিলো।প্রাপ্তি বলল
-দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।আশেপাশে লোকজন দেখছে।
-লোকজনকে দেখানোর দরকার কি প্রাপ্তি।প্লিজা গাড়িতে উঠো।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠলো।সারাটা রাস্তা ও চুপ করেই বসে ছিলো বাসার সামনে আসা মাত্রই প্রাপ্তি নেমে যেতে নিলো।কিন্তু দেখে গাড়ি লক করা।সায়ানকে বলল,
-লক খুলুন।আমি বাসায় যাবো।
-আমার কথা শুনো প্রাপ্তি প্লিজ।
-আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।প্লিজ খুলুন।
তারপর সায়ান লক খুলে দিলো।প্রাপ্তি গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে গেলো।বাসায় গিয়ে দেখে তূর্য বসে আছে ড্রইং রুমে।তূর্য প্রাপ্তিকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,
-কোথায় ছিলি তুই?আমি পুরা ভার্সিটি খুজে এলাম তোকে।তোর নাম্বার বন্ধ কেনো?
প্রাপ্তি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তূর্য আবার বলল
-কথা বলছিস না কেনো?তুই এখন কি অবস্থায় আছিস তার কোনো ধারনা আছে তোর?কোথায় ছিলি তুই?বল?
তারপর প্রাপ্তি কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো।নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
বসে বসে সায়ানের কথাগুলো ভাবছিলো।সায়ান কি সত্যি চেঞ্জ হয়ে গেছে নাকি আমার বাচ্চাটাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য এমন ভালো হওয়ার অভিনয় করছে!!নাকি আবার আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে ও!!এগুলো চিন্তা করতে করতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়লো নিজেও জানেনা।
বিকালে অনেকবার দরজায় নক করার পরে প্রাপ্তির ঘুম ভাঙে। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে।দেখে সায়ান আর প্রাপ্তির মা। সায়ানকে দেখেই প্রাপ্তির আবার রাগ লাগলো।
প্রাপ্তির মা বলল
-দুপুরে তোর কি হয়েছিলো এজটু জানানোরও প্রয়োজন মনে করলি না?আমরা কি তোর কেউ না?তোর এই অবস্থায় আমরাই তো তোর খেয়াল রাখবো। আর তুই যদি এইভাবে চুপসে থাকিস তাহলে আমরা বুঝবো কিভাবে?সায়ান যদি এখন এসে না বলতো তাহলে তো আমরা জানতেই পারতাম না এসব কিছু।
-মা আমি ঠিক আছি।
-তোর ফোন বন্ধ কেনো?
-জানিনা।চার্জ নেই মনে হয়।
-আয় খেয়ে নে।দুপুরে এসেই রুমে ঢুকে পড়েছিস।
-ডাক্তার এইভাবে বলার পরেও তুমি কিছু খাওনি এখনো?কেনো এমন পাগলামী করো প্রাপ্তি?
-দয়া করে আপনি এখান থেকে চলে যান।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন প্লিজ!!
সায়ানের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো প্রাপ্তির প্রতিটি কথার আঘাতে,অবহেলা,অবজ্ঞায়।
সায়ান অসহায়ের মতো চলে গেলো বাসা থেকে।নিচে নামতেই তূর্যের সাথে সায়ানের দেখা হলো।সায়ান তূর্যকে দেখে না চিনলেও তূর্য সায়ানকে ঠিকই চিনেছে।
পার্ট ১৫ এর অপেক্ষায়……….