ধর্ষিতা বউ পর্ব-১৫

0
4415

গল্প —- ধর্ষিতা বউ
লেখক —- মাহমুদ
পর্ব —- ১৫
**********************************

তূর্য সায়ানকে দেখে বলে
-সায়ান চৌধুরী?
-হ্যাঁ।আপনি?
-তূর্য রহমান।
নামটা শুনেই সায়ান তূর্যর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষন।তারপর বলল,
-আপনার সাথেই প্রাপ্তির বিয়ের কথা হচ্ছে তাহলে?
-জ্বী।
-আপনি জানেন না সব?
-হ্যাঁ আমি সবই জানি।
-তবুও ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন কেনো?আপনি তো ওর থেকে ভালো কাউকে পেতে পারতেন।
-প্রাপ্তি আমার ছোট বেলার বন্ধু।ওকে আমি অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।এখনো ভালোবাসি।তাই আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছি।
-বিয়ে করতে চাচ্ছেম নাকি করুনা করছেন,নাকি ওর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাচ্ছেন?
-How dare you Mr.Shayan Chowdhury??
-গলা নিচে।এটা রাস্তা।
-কেনো গলা নিচে করবো?
-আপনার সন্মান না থাকলেও আমার একটা আতসন্মানবোদ আছে।
কথাটা শুনেই তূর্য খিলখিল করে হেসে উঠলো।বলল,
-Come on Mr.Shayan.আপনার আবার আত্নসন্মান!!যে নিজের বউকে রাস্তার কুকুরের চেয়েও বেশ অবহেলা অবজ্ঞা করে,তাকে ভোগ করে,তাকে ধর্ষণ করে তার আবার আত্নসন্মান কিসের!!
কথাটা শুনেই সায়ান চুপসে গেলো।তূর্য বলল
-কি হলো চুপ করে গেলেন কেনো?
সায়ান কিচ্ছু বলে না।তূর্য আবার বলে
-এখন মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা?নিজেকে অনেক বড় ভাবেন আপনি তাইনা?আসলে আপনি একটা কাপুরুষ যে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে,তাকে মর্যাদা দিতে জানেনা।
-প্রাপ্তিকে দেখে রাখবেন।আমার দেওয়া কষ্টগুলো ভুলিয়ে ওকে নিয়ে ভালো থাকবেন।
কথাটা বলেই সায়ান গাড়িতে উঠে চলে গেলো।তূর্য অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।তারপর উপরে চলে গেলো।

তূর্য উপরে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি খাচ্ছিলো।পাশে ওর মা ওকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিলো।তূর্য ওর পাশে চেয়ার টেনে বসলো।বলল
-আচ্ছা তোর সমস্যাটা কি বল তো?আমাদেরকে কিছু বলিস না চুপ চুপ থাকিস!এইভাবে হলে চলবে?বাচ্চাটার কথা ভাব একটা বার।নিজের জন্য না হলেও ওর স্বার্থে তো আমাদেরকে কিছু বলতে পারিস নাকি?
-হুম সবার তো এই বাচ্চাকে নিয়েই চিন্তাভাবনা।আমাকে নিয়ে কে ভাবে!
-দেখ প্রাপ্তি কথা উলটা বুঝবি না।তোকে কোন দিক থেকে আমরা কেয়ার কম দিচ্ছি বল তো!আন্টি আপনি ওকে একটু বুঝান!
-আমি কি আর কম বলি বাবা?ও না বুঝলে কি করবো এখন বলো তো!(মা)
প্রাপ্তি আর কিছু বলে না।চুপচাপ খেয়ে রুমের দিকে হেটে যায়।তূর্য কিছুক্ষন প্রাপ্তির মায়ের সাথে কথা বলল।তারপর প্রাপ্তির রুমের দিকে গিয়ে দেখে ও শুয়ে আছে।
-কিরে এইভাবে শুয়ে আছিস যে?খারাপ লাগছে?
-না তেমন কিছুনা।(উঠে বসতে বসতে)
-উঠতে হবে না।শুয়েই থাক।
কিছুক্ষন চুপ থেকে তূর্য বলল
-নিচে সায়ানের সাথে দেখা হয়েছিলো আসার সময়।
-কি বলল তোকে?
তূর্য সব খুলে বলল।তারপর প্রাপ্তি বলল,
-এইভাবে বলে গেলো কেনো শেষ কথাটা?
-জানিনা।এগুলা নিয়ে ভাবিস না তুই।আর শুন কালকে সকালে রেডি থাকিস,তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
-আজকেই তো মেডিকেল থেকে আসলাম।
-আরে ওইট তাও নরমাল।তুই তো আর চেকাপ করাস নি আজকে।তাই কালকে চেকাপ করিয়ে আসবি আমি নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর তূর্য প্রাপ্তির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।প্রাপ্তির মায়ের থেকে বিদায় নিচ্ছিলো,
-আন্টি আমি এখন আসি।
-সেকি এই সময়ে আসছো কিছু না খেয়েই চলে যাবা?
-হ্যাঁ আন্টি।
-রাতে ডিনার করে যেও একবারে।থাকো।
-না আন্টি কালকে সকালে আসবো আবার।প্রাপ্তিকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো চেকাপ করাতে।
তারপর প্রাপ্তির মা তূর্যের আরেকটু আছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলো।বলল
-আমার মেয়েটা সত্যি অনেক ভাগ্যবতী।এতো বড় একটা দূর্ঘটনার পরেও কেউ ওকে বিয়ে করতে চাইছে,ওর এতোটা খেয়াল রাখছে প্রতিটি মূহুর্তে।(চোখে পানি টলমটল করছিলো)
-ওমনি আমি কেউ হয়ে গেলাম?জামাই বলে ডাকবেন এখন থেকে।(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
-কিন্তু মেয়েটা যে এখনো রাজি হচ্ছে না। সেদিন বলছিলো ও কখনো বিয়েই করবে না।
-আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না।ওকে আমি রাজি করাবো।এখন আসি আন্টি।
-হুম জামাই ডাকতে বলে এখন নিজেই আমাকে আন্টি বলছো!
তূর্য সামান্য লজ্জা পেয়ে বলল-আচ্ছা বলবো।
তারপর তূর্য চলে গেলো।রাতে প্রাপ্তি বসে পড়ছিলো।তখন মাথায় কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো।তাকিয়ে দেখে ওর দাদী।দাদী বলল
-কিরে এত রাত পর্যন্ত কি পড়ছিস?
-তেনন কিছু না দাদী।এতক্ষন ভালো লাগছিলো না তাই শুয়ে ছিলাম।একটু আগেই পড়তে বসেছি।
-বেশি রাত জাগিস না দিদিভাই।শরীর খারাপ করবে।একটা কথা বলি দিদিভাই?
-হ্যাঁ দাদী বলো।
-এদিকে আয়।
প্রাপ্তির দাদী ওকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বেডে বসালো।তারপর নিজেও ওর পাশে ওর দিকে ফিরে বসলো।তারপর বলল
-আমি জানতাম না রে দিদিভাই যে সায়ান এতটা খারাপ ব্যবহার করবে তোর সাথে।তোর ফুফু তো তোকে খুব আদর করে তাইনা?
-হ্যাঁ দাদী
-আমি জানি।কিছু সায়ান যা করলো তার কারনেই হয়তো তোর মনে রাগ।আমি জানি ও তোকে অবেক বেশি কষ্ট দিয়েছে।
-বাদ দাও না ওসব দাদী।
-আমার কথাটা শুন দিদিভাই।একবার তোর জীবনটাকে আমরা সবাই মিলে নরকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম এখন আবার আমরাই বলছি আরেকবার বিশ্বাস কর আমাদেরকে।তূর্য কে বিয়ে করে নে দিদিভাই।ও তোকে খুব ভালোবাসে।সেটা তো তুই ভালো করেই জানিস।ভেবে দেখিস দিদিভাই।আর ঘুমিয়ে পড়।অনেক রাত হয়েছে।বাচ্চার খেয়াল রাখ কোনো সমস্যা হলে আমাদেরকে বলিস।আমি আসি।
তারপর দাদী চলে গেলেন।প্রাপ্তি উঠে বই খাতা গুলো গুছিয়ে রাখলো।তারপর শুয়ে পড়লো।হালকা ঠান্ডা পড়ছে।প্রাপ্তি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।ও একবার সায়ানের কথাগুলো ভাবে আবার বাকী সবার কথা।

সায়ানের কথা ভেবে লাভ নেই।কারন আমি চাইনা দ্বিতীয়বার ওই নরপিশাচ কে বিশ্বাসের জায়গাটা দিতে।তূর্য কতো খেয়াল রাখে আমার।কত যত্ন নেয়।পাশাপাশি আমার পরিবারের সবারও কত খেয়াল রাখে ও।ওকে তো আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি।অনেক আগে থেকেই আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে ও।উফফফ আমার মাথায় কিছু আসছে না।এসব নিয়ে আর ভাবতে চাইনা।

এগুলো ভাবতে ভাবতেই যে কখন প্রাপ্তি ঘুমিয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না।সকালে তূর্যর ডাকে ওর ঘুম ভাঙল। প্রাপ্তি চোখ খুকেই দেখে তূর্য ওর পাশে বসে ওকে ডাকছে।ঘুম জড়ানো চোখে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিরে এতো সকালে তুই এখানে কি করছিস?
-ম্যাডাম আজকে কোথায় যাওয়ার কথা মবে আছে কিছু?
-আজ তো শুক্রবার।ভার্সিটি বন্ধ।কোথায় যাবো আর!
-প্রাপ্তি তুই আগে ভালো করে চোখ মেলে দেখ।এতো ঘুম তোর চোখে!!
তারপর প্রাপ্তি উঠার চেষ্টা করলো।তূর্য সাথে সাথে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তিকে যত্ন করে উঠিয়ে ওর পেছনে একটা বালিশ রেখে হেলান দিয়ে বসালো।তারপর বলল
-কি মহারানীর ঘুম গফহে নাকি এখনো আছে?
-সকাল সকাল ফাজলামো করিস না তো তূর্য!
-যা বাবা কি করলাম আবার।এতো খিটখিট করছিস কেনো তুই?(রাগী স্বরে)
-কি আমি খিটখিট করছি?যা এক্ষুনী বের হ আমার রুম থেকে।অসভ্য কোথাকার।
-ধ্যাত!!যা গেলাম আর আসবো না।
তূর্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ড্রইং রুমে বসে ছিলো।প্রাপ্তির মা কে বলল
-মা প্রাপ্তিকে তৈরি হয়ে নিতে বলুন।আমি বসছি কিছুক্ষন।
-কিছু মনে করো না বাবা।আমি দেখেছি ও তোমার সাথে কেমন আচরন করেছে।আসলে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এমন হয়।আর তুমি তো জানোই ও এখনো ওর অতীতকে ভুলতে পারেনি।
-কি যে বলেন না মা।আমি বুঝি।আর ওর কথায় আমি কখনো রাগ করিনা।আপনি নিশ্চিত থাকুন।

দুইজনে বের হলো একসাথে।প্রাপ্তি বলল
-আমি গাড়িতে যাবো না।
-কেনো?
-ইচ্ছা করছে না।
-তাহলে কিসে যাবি?
-রিক্সা নে।
-হ্যাঁ এই ঢাকার ভাঙা চুরা রাস্তা দিয়ে এই অবস্থায় তোরকে রিক্সা করে নিয়ে যাবো আমি না?আমায় কি পাগল পাইছিস?
-চিল্লাবি না আমার সাথে।আমি রিক্সা দিয়েই যাবো।
-প্লিজ প্রাপ্তি বোঝার চেষ্টা কর।তোর পেটে আঘাত পাবি।
কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে প্রাপ্তি গাড়িতে উঠে বসলো।চুপচাপ দুজনেই গাড়িতে।কেউ কোনো কথা বলছে না।

সব চেকাপ শেষ করে ডাক্তার বলল
-আপনার সব কিছুই ঠিকভাবে যাচ্ছে।তবে আরেকটু সচেতন হতে হবে।
-সচেতন বলতে কেমন?(তূর্য)
-মানে উনি হয়তো মেন্টালি একটু ডিপ্রেসড।আর খাওয়া দাওয়া সমস্য মতো করেন না।
তূর্য আড় চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকালো।তারপর আবার ডাক্তারকে বলল
-আপনি একটা চার্ট করে দিন।সে অনুযায়ী চলবে এখন থেকে।
-ওএট দিচ্ছি।খেয়াল রাখবেন যেনো বাইরের খোলা খাবার না খায়।

মেডিকেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় প্রাপ্তির চোখ পড়ে ফুচকা স্টলের দিকে।তূর্য কে বলল
-তূর্য দেখ ফুচকা!!
-হ্যাঁ তো কি হয়েছে?
-আমি খাবো।প্লিজ আয় না।
-ডাক্তার কি বলল ভুলে গেলি?বাইরের খোলা খাবার খাওয়া নিষেধ।
তারপর হঠাৎ করেই প্রাপ্তির মন খারাপ হয়ে গেলো।
-কিরে খেতে না করলাম বলে রাগ করলি আবার??
-না।চল বাসায় যাবো।(গাড়িতে উঠতে উঠতে)
তূর্য গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।প্রাপ্তির চোখে পানি এসে পড়েছিলো।তূর্য বলল
-কি হয়েছে বলবি তো!
-সেদিন এই ফুচকা খাওয়ার পরেই সায়ান আমাকে…
-ব্যাস!আর কিছু বলতে হবেনা।ভুলে যা ওসব আজ ৫ টা মাস হয়ে গেলো।তোর বাচ্চাটার জন্য অন্তত তোর মনে সাহস থাকাটা জরুরি।

বাসা এসে গেছে। প্রাপ্তিকে তূর্য বাসায় দিয়ে চলে গেলো।

অন্যদিকে আজকাল সায়ান সারাদিন মদ,সিগারেট খায়।যদিও এখন কোনো মেয়ের নেশ নাই।সারাদিন অফিস করে এসে মদ সিগারেটে এখন নিজের ভালো থাকা খুঁজে নেয়।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছিলো।হালকা শীত লাগছিলো।প্রাপ্তি কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে আছে। প্রায় রাত ১১:৩০ এর দিকে প্রাপ্তির ফোন এ কল আসলো। ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সায়ানের নাম্বার।তাই রিসিভ করে নি।বেশ কয়েকবার কল বাজার পর প্রাপ্তি রাগে ফোন টা রিসিভ করে বলল
-প্রব্লেম কি আপনার?কেনো কল দিচ্ছেন আমাকে এইভাবে বারবার?ডিভোর্স হয়ে গেছে আমাদের আর কি চান এখন আবার?
-প্রাপ্তি শান্ত হ।কি যা তা বলছিস।আমি তূর্য।
প্রাপ্তি চুপ হয়ে গেলো।বলল
-সরি।এতক্ষন সায়ান কল দিচ্ছিলো।আমি ভাবলাম এটাও..
-It’s ok… আচ্ছা শুন একটা ছাদে যেতে পারবি?
-এতো রাতে ছাদে?১২ টা বাজে এখন।
-যা না প্লিজ!!
-কেনো সেটা তো বলবি।
-তুই গেলেই বুঝবি।যা।আর সাবধানে যাবি।লিফটে করে যা সমস্যা হবেনা।আর চাদর মুড়িয়ে নিবি ভালো করে শরীরে।ঠান্ডা পড়ছে হালকা।
-আচ্ছা যাচ্ছি।
-ফোন টা সাথে নিয়ে যাস কিন্তু।
-ওকে।
এতো রাত তাই ছাদের গেট লক করা ছিলো।প্রাপ্তি ছিটিকিনিতে হাত দিতেই সেখানে একটা চিরকুট পায়।নীল চিরকুটে কালো কালিতে লেখা ছিলো “দরজাটা খুলে ছাদে ঢুকতেই হাতে বাম পাশে তাকাবি”
প্রাপ্তি দরজা খুলে বাম পাশে তাকাতেই দেখে আরেকটা লাল চিরকুট।সেখানে কালো কালিতে লেখা ছিলো “একটু আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ”
প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকাতেই দেখে এক ফালি ফানুস উড়ে বেড়াচ্ছে রাতের এই হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে।আহ কি অপূর্ব মনোরম দৃশ্য।কি রোমাঞ্চকর। চোখের পলক পড়তে চায়না যেনো।তারপর একটু সামনে এগুলোতে প্রাপ্তি আরেকটা নীল চিরকুট পায়।সেখানে লেখা ছিলো “আমি কি তোর অনাগত বাচ্চার বাবা হতে পারবো?”
প্রাপ্তির চোখে পানি টলমল করছিলো।চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।হঠাৎ পেছন থেকেই ও কারো উপস্থিতি অনুভব করে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here