#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_৫০
লিখা: Sidratul Muntaz
তিরানের হাসি শুনে প্রফেসর ট্রুডোসহ প্রায় সবাই ভ্রু কুচকে ফেললো। অদ্ভুতচোখে তাকালো। এইরকম একটা ঘটনার সাথে তিরানের হাসির সম্পর্ক কারো বোধগম্য হচ্ছে না। তিরান তো যখন তখন হেসে দেওয়ার মতো বোকা মস্তিষ্কের মানুষ না। কোন পরিস্থিতিতে হাসি শোভা পায় এটুকু বোঝার দক্ষতা ওর আছে। রিম্মি চোখবড় করে তিরানের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার হাসি দেখে রিম্মির মেজাজ চূড়ায় উঠে যাচ্ছে। তিরান যখন রিম্মির দিকে তাকায় রিম্মি হাতের ইশারায় হুমকি দেওয়ার মতো বলে চুপ করতে। তিরান মুখে আঙুল ঠেকিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে চুপ হয় ঠিকই কিন্তু ওর চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক তখনো প্রকাশ পাচ্ছিল। আমীর তোহার সামনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তোহার কেন জানি মনে হচ্ছে আমীর লম্বায় আগের চেয়ে ছোট হয়ে গেছে। শপিংমলে, রিম্মিদের বাসার সিড়িতে যখন তোহা আমীরকে দেখেছিল তখন আরও একটু লম্বা ছিল সে। এখন মনে হচ্ছে সেই তুলনায় আমীর কিছুটা খাটো। এইটাও তোহার কি দৃষ্টিভ্রম? আমীর এখন পর্যন্ত চোখ তুলেও তাকায়নি তোহার দিকে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে এই অনাকাঙ্ক্ষিত চড়টি তার প্রাপ্য ছিল, এটা সে মেনেও নিয়েছে৷ তোহার রাগের মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সে অত্যন্ত উগ্র গলায় কথা বলতে শুরু করে। সবার মনে হয় প্রত্যেকটা শব্দ কণ্ঠে আনতে সে নিজের সাথে যুদ্ধ করছে হয়তো। থেমে থেমে তোহা বললো,
” বেইমান! এতোবড় বেইমানি করতে পারলেন? আপনি সত্যিই মানুষ তো? এই আপনাকে মানুষের সাথে তুলনা করা যায়? কখনও যায়না। আপনি একটা জানোয়ার। জঘন্য, হিংস্র,বেইমান জানোয়ার। ছিঃ! জানেন আপনার জন্য কিভাবে একটা মানুষের জীবনের প্রত্যেকটা সকাল কালো আধারে ঢেকে গেছে? এই মানুষটা কিভাবে বেঁচে ছিল আপনি জানেন? মৃত্যুর চেয়েও ভয়ানক দশা হয়েছিল তার। একজন মৃত মানুষ যেভাবে বাঁচে, সে জীবিত হয়েও তার চেয়ে করুণভাবে বেঁচে ছিল। প্রতিটা মুহূর্তে তার বুকের অসহ্য যন্ত্রণা, চোখ নিঃসৃত কোটি কোটি অশ্রুফোঁটা, নির্ঘুমে কাটানো একেকটা রাত, আপনাকে ফিরে পাওয়ার অসীম আশা নিয়ে কিভাবে অপেক্ষায় কাটিয়েছে কোনো ধারণা আছে আপনার? কিচ্ছু বোঝেন?বুঝবেন কিভাবে আপনি তো জানোয়ার!”
আমীর যন্ত্রের মতো বললো,” মৃত ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করা নিছক পাগলামী ছাড়া আর কিছু না। জানতেই তো আমি মৃত তাহলে অপেক্ষা কেনো করেছো?”
আমীরের উত্তরে তোহার তেজ কিছুটা কমে যায়। আশাহত হয়ে এক কদম পিছিয়েও দাঁড়ায়। তারপর নিচুগলায় বললো,
” জানেনা কেনো অপেক্ষা করেছে সে। কখনও মনকে বুঝাতে পারেনি। তার বেহায়া মনটা কিছুতেই মানতে চাইতো না যে আপনি মৃত। আপনার লাশ দেখে নিজেকে অন্ধ মনে হতো তার, আপনার বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা যখন শুনতে না পেলে নিজেকে বধির মনে হতো তার, হাউমাউ করে কাঁদলেও যখন কেউ ছুটে এসে তার মাথাটা বুকে নিতো না তখন নিজেকে বড্ড অসহায়, বড্ড আশ্রয়হীন লাগতো। এই তোহা, আপনার কণ্ঠে এই শব্দটুকু শুনতে না পাওয়ার তৃষ্ণায় তার দম বন্ধ হয়ে আসতো প্রতিনিয়ত।”
আমীর কণ্ঠে হালকা রোষ মিশিয়ে বললো,” বেইমানের জন্য এতো বিরহ কেনো? এতো কষ্ট কেনো পাবে? তাহলে বলতেই হয় এসব কোনো ভালোবাসা না। এসব তোমার ছেলেমানুষী, পাগলামি।”
নীলাভ্র এবার ক্রোধান্বিত হয়ে উত্তর দিল,
” ও হ্যালো মিস্টার সাইন্টিস্ট, তখন কি ও জানতো আপনি যে বেইমানের সর্দার? আপনি তো মরার আগে স্যরি, মরার নাটক সাজানোর আগে খুব সুন্দর নিজেকে ইনোসেন্ট বানিয়ে প্রেমের চিঠি দিয়ে গিয়েছিলেন ওকে। সেই চিঠি পড়ে যেকোনো স্বাভাবিক মানুষ পাগল হতে বাধ্য আর এই মেয়েটা তো আপনাকে আগে থেকেই পাগলের মতো ভালোবাসতো তাহলে ওর কি অবস্থা হবে?”
আমীর খুব আশ্চর্য হয়ে ভ্রু কুচকালো। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে উচ্চারণ করলো,
” প্রেমের চিঠি? আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু সেটা তো একমাস পরের কথা। তার আগে তো ও অন্য আরেকটা চিঠিও পেয়েছিল। অন্তত সেই চিঠি পড়ে ওর বোঝা উচিৎ আমি স্বার্থবাজ মানুষ। আর স্বার্থবাজ মানুষের জন্য কষ্ট বিসর্জন দিয়েও লাভ নেই।”
নীলাভ্র বললো,” একমাস-দুইমাসের হিসাব বুঝলাম না। কিন্তু আপনার মৃত্যুর দিন তোহার বিছানার পাশের টেবিলে যে চিঠিটা পাওয়া গেছিল ওই চিঠিতে আপনি নিজেকে মোটেও স্বার্থবাজ উপস্থাপন করেননি। বরং অসহায় এক প্রেমিক উপস্থাপন করেছেন। সেই চিঠির মূল কথাই ছিল এমন যে কোনো এক বাস্তব কারণে তোহার সাথে আপনার বিচ্ছেদ অবধারিত। সেই জ্বালা সহ্য করতে না পেরেই আপনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। এইটা জানার পর কোন মেয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারবে বলুন? সবাই কি আপনাদের মতো পাথর?”
আমীর খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নীলাভ্রর দিকে। সে যেই চিঠিটার কথা বলছে সেটা তো একমাস পরে পৌছানোর কথা ছিল তোহার কাছে। কিন্তু নীলাভ্রর কথা শুনে মনে হচ্ছে ওই চিঠি তোহা প্রথম দিনেই পেয়ে গেছিল। আচ্ছা কোনোভাবে চিঠি অদল-বদল হয়ে যায়নি তো? কিন্তু এতোবড় ভুল তো হওয়ার কথা না। চিঠি সংক্রান্ত বিষয়ে যথেষ্ট সাবধান ছিল আমীর। তবুও এটা কিভাবে হলো? বড্ড আফসোস হচ্ছে এবার। তোহার মুখের দিকে আক্ষেপভরা দৃষ্টিতে আমীর তাকায়। মেয়েটার চেহারার অমায়িক সৌন্দর্য্য বিলীন হয়ে গেছে। এখন ওকে কঠিন কোনো অসুখে আক্রান্ত রোগীর মতো দেখায়। ভরাট চেহারার উজ্জ্বলতা, ঠোঁটে সারাক্ষণ মিষ্টি হাসির আভাস, দুই চোখভরা দুষ্টুমী,বাচ্চামী কোনোকিছুর ছিটেফোঁটাও এখন নেই। বাচ্চা মুখটা জুড়ে শুধু বিষণ্ণতার ভার। কিন্তু আমীর তো এটা চায়নি। সে চেয়েছিল প্রথম চিঠির মাধ্যমে তোহার মনে নিজের জন্য ঘৃণার জন্ম দিতে। গোটা একমাস তাকে ঘৃণা করতে করতে তোহা দিব্যি স্বাভাবিক হয়ে উঠতো। একমাস পর দ্বিতীয় চিঠি পেয়ে হয়তো তার মন থেকে মৃত আমীরের জন্য ঘৃণা কেটে সামান্য মায়া জন্মাতে পারতো। তোহার সেই মায়াটুকু পাওয়ার লোভ আর নিজের মনে জমানো ভালোবাসাময় ব্যথাগুলো প্রকাশের লোভ আমীর সামলাতে পারেনি। তাই দ্বিতীয় চিঠিটা লিখেছিল৷ কিন্তু সেই চিঠির জন্য তোহার এমন সর্বনাশ হবে জানলে সে জীবনে কখনও চিঠি লিখতো না।
প্রফেসর ট্রুডো রিম্মিকে ইশারা দিলেন তোহা আর নীলাভ্রকে রুমে বন্দী করতে। রিম্মি তৎক্ষণাৎ তোহাকে ধরে রুমে ঢুকালো। নীলাভ্রকেও ধাক্কা মেরে ভিতরে ঠেলে দিল। নীলাভ্র বললো,
” আমাদের আবারও কেনো আটকে রাখা হচ্ছে? আর কি চাও আমাদের কাছে?”
রিম্মি জবাব না দিয়ে মুখের উপর দরজা আটকে দেয়। প্রফেসর সবাইকে ইশারা করলেন মিটিংরুমে আসার জন্য। সবাই বাধ্যের মতো প্রফেসরের পেছন পেছন যেতে থাকে।
প্রায় চারঘণ্টা কেটে যায়। তোহা ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে উল্টো অবস্থায় গাঁ ছেড়ে শুয়ে আছে। শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। নীলাভ্র তোহার মাথার নিচে একটা সাদা রঙের ফোম দিয়ে তৈরী গদি রেখে দিল। তোহা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সামান্য নড়লোও না। যেনো ও টেরই পায়নি। এই রুমে এমন গদি আরও চার-পাঁচটা আছে। নীলাভ্র নিজেও কিছুটা দূরে গিয়ে আরেকটা গদিতে শুয়ে রইল। পূরনো স্মৃতিগুলো মনে আসলেই গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠছে নীলাভ্রর। চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে। নীলাভ্র অন্যমনস্ক হয়ে অতীতের মুহুর্তগুলো নিয়ে যতবার ভাবছে ততবারই অজান্তেই ওর দুই চোখের কোণ বেয়ে অঝোরে অশ্রুধারা বইছে। মাঝে মাঝেই রিম্মির মন ভুলানো বাণীগুলো কানে বেজে উঠে। তখনি বুকটা নিদারুণ যন্ত্রণায় ভেঙে খান খান হয়ে যেতে চায়। হঠাৎ দরজা খুলে প্রবেশ করলো তিরান। ওর পেছনে চারটা রোবট। নীলাভ্র আতঙ্কে উঠে বসলো। ওরা তোহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তিরান তোহার কাছে গিয়ে খুব আলতো হাতে ওর কপাল ছুঁয়ে বললো,
” তোহা! ক্যান ইউ হিয়ার মি?”
নীলাভ্র বললো,” ওকে ডাকছো কেনো? কোথায় নিয়ে যাবে?”
তিরান মুখ দিয়ে একটু বিরক্তির মতো শিষ বাজিয়ে নীলাভ্রর দিকে এক মুহুর্তের জন্য তাকায়। তারপর আবার তোহাকে ডাকতে ব্যস্ত হয়। তোহার যখন সম্বিৎ ফিরলো আর সে তাকিয়ে তিরান আর পেছনে রোবটগুলোকে দেখলো, সাথে সাথেই আঁতকে উঠলো ভয়ে। শোয়া থেকে এক ঝটকায় উঠে দেয়ালের সাথে লেগে বসলো। ওর শরীর স্টিলের মতো শক্ত হয়ে যায় আতঙ্কে। বড় বড় চোখে সবাইকে দেখে৷ তিরান একটু কাছে গিয়ে পকেট থেকে চকলেট বের করলো। চকলেটের প্যাকেটের রঙ লাল। তোহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” ওয়ান বাইট প্লিজ।”
তোহা একবার চকলেটের দিকে তাকালো, একবার তিরানের দিকে তাকালো তারপর আবার ভীত দৃষ্টিতে রোবটগুলোর দিকে তাকালো। তিরান বললো,
” ওরা চকলেট খায়না। নাও, তুমি খাও।”
তোহা কোনো উত্তর দিল না। নিচে তাকিয়ে কি একটা ভাবছে। তিরান আরেকটু এগিয়ে বললো,
” আমি কিন্তু সবার মতো না। এখানে সবাই আমার বেস্টফ্রেন্ড। আচ্ছা তুমিও কি আমার বেস্টফ্রেন্ড হবে?”
তিরান হ্যান্ডশেকের মতো হাত বাড়িয়ে বললো,” ফ্রেন্ডস!”
তোহা শুধু তাকালো। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও বুঝতেই পারছে না তিরান কি বলছে। তিরান বললো,
” ভয় নেই। আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করলে তুমি ঠকবে না। এ পর্যন্ত কেউ ঠকেনি। আমি খুব ভালো ফ্রেন্ড হতে পারি। সো ফ্রেন্ডস!”
তোহা কি মনে করে যেন তিরানের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। তিরান বললো,
” ওয়েল ডান। এবার চকলেট?”
তোহা কি ভেবে যেন একটু চকলেট ভেঙে হাতে নিল। তিরান উৎসাহী কণ্ঠে বললো,” খাও!”
তিরানের তাগাদায় তোহা চকলেট মুখেও দিল। যদিও ওর খাওয়ার একফোঁটা ইচ্ছে নেই। চকলেট মুখে নিয়েও ও কোনো স্বাদ অনুভব করলো না। শুধু খেয়ে নিল। তিরান বললো,
” এবার চলো, তোমাকে আমার বেস্টফ্রেন্ডের কাছে নিয়ে যাই।”
তোহার চোখে প্রশ্নের উদ্রেক ফুটে উঠলো। সে প্রশ্ন করার আগেই তিরান উত্তর দিল,
” তুমি যেমন আমার বেস্টফ্রেন্ড, আমীরও আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর আমীর আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে ওর কাছে নিয়ে যেতে। না যেতে চাইলে উঠিয়ে নিয়ে যেতে।”
তিরান একথা বলে সহজ-স্বাভাবিক একটা হাসি দিল। তোহা লক্ষ্য করলো ছেলেটার হাসি অসম্ভব মিষ্টি। কিন্তু আমীরের নামটা কানে বাজতেই সে সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণ গলায় উচ্চারণ করলো,” আমি যাবো না!”
তিরান বললো,” স্যরি, কিন্তু যেতে হবে। কারণ চকলেটে ট্রাঙ্কুলাইজার মেশানো ছিল৷ একটু পরেই তুমি স্লিপিং বিউটি হয়ে যাবে৷ তারপর তোমাকে রোবটরা দোল খাওয়াতে খাওয়াতে আমার ব্রেস্টফ্রেন্ডের কাছে নিয়ে যাবে। ”
তিরান কথাটা শেষ করার কয়েক মুহুর্ত পরেই তোহা অজ্ঞান হয়ে যায়। রোবট চারজন আটহাত বিছিয়ে তোহাকে তুলে নেয়। তোহা বিছানায় শুয়ে থাকার মতো ওদের হাতে শুয়ে থাকে। রোবট চারজন একসঙ্গে বের হয়ে যায়। নীলাভ্র কিড়মিড় করতে করতে বললো,
” তোমাদের এই অত্যাচার থামবে কবে?”
তিরান নীলাভ্রর একটু কাছে গিয়ে বললো,
” তুমি কি আমার বেস্টফ্রেন্ড হবে?”
নীলাভ্র গম্ভীরমুখে তিরানের হাতের চকলেটের দিকে তাকালো। তিরান বললো,
” ভয় নেই। চকলেট খেতে বলবো না। তুমি শুধু পারমিশন দিবে, তোমার সুইটহার্টকে যেন ইমপ্রেস করতে পারি।”
” আমার সুইটহার্ট?”
তিরান জিহ্বা দিয়ে কেমন অদ্ভুত একটা শব্দ করলো। তারপর একচোখ টিপে বেরিয়ে গেল। নীলাভ্র বোকার মতো চেয়ে থাকে। তিরানের কথা তার মাথায় ঢোকেনি।
আমীরের ল্যাবরুমে একটা লম্বা-চওড়া বিছানা আছে। সেখানে রোবটগুলো ঘুমন্ত তোহাকে শুইয়ে দিল। আমীর আনমনে তাকিয়ে থাকে তোহার মুখের দিকে। সবাইকে ইশারায় বললো, চলে যেতে। তিরান জিজ্ঞেস করলো,
” আমিও চলে যাবো?”
আমীর বললো,” অবশ্যই যাবি।”
তিরান বললো,” কেনো আমি কাবার্ডে ঢুকে থাকি?”
আমীর চোখ গরম করে বললো,
” কাবার্ডে ঢুকবি মানে?”
তিরান বললো,
” কিছুনা থাক, চলে যাচ্ছি।”
তিরান বেরিয়ে যেতেই আমীর তোহার সামনে হাটু গেড়ে বসলো। আর মাত্র কিছুসময়, তারপর হয়তো অনন্তকালের জন্য ওরা আলাদা হয়ে যাবে। আমীরের মনে হচ্ছে তোহার মাথাটা বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে পারলে ওর খুব ভালো লাগতো।
তোহাকে আমীরের ল্যাবরুমে রেখে তিরান যখন বের হচ্ছিল তখন রিম্মি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। তিরান রিম্মির দিকে না তাকিয়েই সামনে হেটে যায়।রিম্মি তিরানের টি-শার্টের কলার ধরে ওকে দাঁড় করালো। ধমক দিয়ে বললো,
” এই ডেভিলিশ,দাঁড়া।”
তিরান নাক কুচকে বললো,
” ডেভিলিশ?”
” মানে শয়তানের বড়ভাই। এটা কেনো বললাম জানিস?”
তিরান ইনোসেন্টের মতো ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়লো। যেন ওর চেয়ে ভালো মানুষ এই দুনিয়ায় নেই। রিম্মি বললো,
” সত্যি করে বল, তোহাকে আমি এখানে নিয়ে আসবো এই খবর প্রফেসরের কাছে তুই দিয়েছিস? তোর জন্যই প্রফেসর একদিন আগে আমেরিকা থেকে চলে এসেছে তাইনা?”
তিরান নির্বিকারভাবে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে মাথা নাড়লো। রিম্মির ইচ্ছে হলো একটা চটকানা দিতে। কিন্তু একে চটকানা দিয়ে লাভ নেই। এই ছেলে দেখতে বাচ্চা হলেও বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবে না। বরং পরবর্তীতে রিম্মিকেই এর জন্য কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। যেমন আজকে সকালে সে একটা বাঁশ খেলো। এমন বাঁশ আরও খেতে হবে। নিজের পায়ে কুড়াল মারার ইচ্ছে নেই বলেই তিরানকে চড় মারলো না রিম্মি। রাগ সংবরণ করে বললো,
” আচ্ছা আমার সাথে তোর কিসের শত্রুতা একটু বলতো ভাই। আমি কি তোর বড় কোনো ক্ষতি করেছি? তুই আমাকে সহ্য করতে পারিস না কেনো?”
রিম্মি তিরানের কাঁধে হাত রাখে৷ তিরান কাঁধ ঝাকিয়ে সেই হাত সরিয়ে দিল। তারপর রূঢ় কণ্ঠে বললো,” ফার্স্টলি আই এম নট ইউর ভাই। এন্ড সেকেন্ডলি ইউ আর আ ডাম্ব।”
” ডাম্ব কেনো? আমি কি করেছি?”
” আমার মতো এমন হ্যান্ডসাম ছেলে সামনে থাকতেও তুমি ইগনোর করো। কারণ তুমি ডাম্ব।”
রিম্মি অবাক হয়ে কয়েকবার দ্রুত চোখের পলক ফেললো। তারপর তিরানের মাথায় গাড্ডা দিয়ে বললো,
” ওই, তোর আর আমার বয়সের ডিফারেন্স জানিস? আমি তোর থেকে আটবছরের বড়।”
তিরান ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দারুণ বিরক্ত গলায় বললো,” স্টুপিড!”
তারপর চলে গেল। রিম্মি পেছন থেকে ডেকে বললো,
” ওই , স্টুপিড কাকে বললি?”
তিরান উত্তর তো দিলোই না, পেছনেও তাকালো না। ছেলেটার মধ্যে রোবট রোবট একটা ভাব আছে। রোবটদের মতো ওর চাল-চলন। রিম্মি কোমড়ে হাত দিয়ে কয়েক মিনিট চিন্তা করে, তিরান তাকে কেনো স্টুপিড বললো?
চলবে
( তিরান ক্যারেক্টারটা এখন হয়তো বুঝতে প্রবলেম হতে পারে। কিন্তু পরে সবাই বুঝবে। আর গল্পটা কিন্তু আমি টেনে টেনে লম্বা করছি না। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই লিখছি। এই গল্পের সবচেয়ে স্পেশাল হচ্ছে এন্ডিং পার্ট। একটা চমৎকার এন্ডিং এর জন্য আমাকে ধৈর্য্য ধরে অনেককিছু ভেবে লিখতে হচ্ছে। আপনাদেরও ধৈর্য্য ধরতে হবে। কারণ এই গল্প নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস। সাইন্স ফিকশনের আসল মজাটা আপনারা সামনে পার্টগুলোতে পাবেন।)