ধূসর রঙে আকাশ পর্ব_৬১

0
1786

#ধূসর_রঙে_আকাশ
#পর্ব_৬১
লিখা: Sidratul Muntaz

আবদ্ধ রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে তোহা ফিসফিস করে শিউলির কাছে জানতে চাইলো,
” তোর ভাইজান রাতে খেয়েছে?”
শিউলি হাতের ইশারায় বললো,” না।”
তোহা মনখারাপের ভঙ্গিতে বললো,” খুব রেগে আছে তাইনা?”
শিউলিও মনখারাপের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললো,”হুম।”
” আমার নামে কিছু বলেছে তোকে?”
শিউলি ইশারায় কি যেনো বললো। তোহা বুঝলোই না। ভ্রু কুচকে বললো,
” উফফ, বুঝতে পারছি না। মুখ দিয়ে বল।”
শিউলি খুব সাবধানে বললো,” চেয়ারে লাথি মেরে বলেছে উনি মরে গেলেও যেনো আপনার কাছে খবর না যায়।”
তোহা জিভ কেটে বললো,” ইশশ, তাহলে তো খুব রেগে আছে।”
শিউলি অসহায়ের মতো মাথা নেড়ে তোহার কথায় সম্মতি জানালো।
তোহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো কাটায় কাটায় রাত বারোটা বাজে। আমীরের রেগে থাকাটা অস্বাভাবিক না। আজকে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়ঘন্টার মতো তোহার দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল সে। তোহা একবারের জন্যও দরজা খুলেনি। এমনকি কোনো কথাও বলেনি। অবশেষে আমীর ধৈর্য্য হারিয়ে নিজেই অন্যরুমে এসে দরজা আটকে বসে আছে। শিউলির কাছ থেকে জানা গেল সে রাতে খায়ওনি। তোহাও সারাদিন কিছু খায়নি। খাবে কি করে? সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভয়ানক এক দুঃসংবাদ পেয়েছিল। রিসার্চ সেন্টার থেকে টিজুয়ু ম্যাম ফোন করে বলেছেন আমীর আজ ক্লাবে আসেনি। সে তার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে। প্রমাণস্বরূপ তোহার ফোনে একটা ছবিও পাঠিয়েছিলেন উনি। একটা মেয়ে আমীরকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিচ্ছে। মেয়েটা এমনভাবে ওকে জাপটে ধরেছিল, তোহা নিজেও জীবনে আমীরকে ওইরকমভাবে ধরেনি। এসব দেখে তোহার সাথে সাথে কান্না পেয়ে যায়। মোবাইল আছাড় মেরে ডিসপ্লে ফাটিয়ে ফেলে। এক আছাড়ে মোবাইল সুইচ অফ হয়ে যায়। তারপর থেকে তোহা সেই যে দরজা বন্ধ করে বসে আছে আর একবারের জন্যেও দরজা খুলেনি। তোহার মোবাইল বন্ধ পেয়ে আমীর সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসে। তারপর তোহাকে অনেকক্ষণ ধরে অনুরোধ করে দরজা খোলার জন্য। অনেককিছু বুঝানোর চেষ্টা করে। তোহা তখন আমীরের একটা কথাও বিশ্বাস করেনি। তারপর আমীর যখন ধৈর্য্যহারা হয়ে রেগে গেল, চিল্লাচিল্লি করে নিজেও অন্যরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল। তার কিছুক্ষণ পরই টিজুয়ু ম্যাম ফোন করেন তোহার কাছে। ততক্ষণে ভাঙা মোবাইল কোনোমতে ঠিকঠাক করে নিয়েছিল তোহা। টিজুয়ু ম্যাম ফোন করে জানালেন, উনি তোহাকে সকালে যা কিছু বলেছেন সবই ঠাট্টা ছিল। আর যেই মেয়েটা আমীরকে রাস্তার মাঝখানে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছিল সে আসলে আমীরের খুব বড় ভক্ত। হঠাৎ আমীরের সাথে দেখা হওয়ায় মেয়েটা উত্তেজিত হয়ে রাস্তার মাঝখানে এমন সিন ক্রিয়েট করে বসে। এই ঘটনা দেখে টিজুয়ু ম্যামের খুব মজা লাগে। তাই উনি ছবি তুলে রেখেছিলেন। এরপর ভাবলেন ছবিটা দেখিয়ে তোহার সাথে একটু মজা নেওয়া যাক। তাই উনি এসব করেছেন। এগুলো শোনার পর তোহার মাথায় বাজ পড়লো। শুধু শুধুই না বুঝে আমীরের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে সে। এসব করার আগে অন্তত একবার আমীরের সাথে কথা বলে নিলেও হতো। তোহার এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে। আমীরের দরজায় কড়া নাড়তেও বুক কেঁপে উঠছে। সে এখন ভীষণ ক্ষীপ্ত। আমীর যদি ওকে ধমকায় অথবা রাগারাগি করে, তোহা সহ্য করতে পারবে না। যদিও দোষটা তারই। অন্য মানুষের প্ররোচনায় পড়ে নিজের স্বামীকে অবিশ্বাস করা কি উচিৎ? তোহা আমীরের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজাটা সরে গেল। মানে খোলাই ছিল৷ তোহা একটু হাফ ছাড়লো৷ এখন চাইলেই ভেতরে প্রবেশ করা যায়। কিন্তু ভয় লাগছে।বুকের মধ্যিখানে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে। তোহা খুব চাপাস্বরে বললো,
” আসবো?”
কথাটা বলার সময় ওর কণ্ঠনালী তিনবার কেঁপেছে। কণ্ঠস্বরটাও কেমন যেনো অদ্ভুত শোনালো। তোহা গলা পরিষ্কার করে স্পষ্টভাবে আরেকবার বললো,
” আসবো?”
আমীর পিসিতে বসে কিছু একটা টাইপ করছিল৷ কোনো উত্তর দিল না। তোহা সাহস করে আবার বললো,
” আমি কি ভিতরে আসবো?”
তোহার বারংবার প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হয়েই আমীর বললো,
” এসো।”
তোহার কেমন যেনো লাগছে। সে ঘরে প্রবেশ করেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। আমীর ওর দিকে একবার তাকাচ্ছেও না। তোহা আয়নায় তাকিয়ে দেখলো ওর চোখ দুটো ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। সারাদিন দরজা আটকে কাঁদার ফল। আমীর কিছু বলছে না দেখে তোহা নিজে থেকেই বললো,
” আমি এসেছিলাম আপনাকে স্যরি বলতে।”
” স্যরি দিয়ে আমি কি করবো?”
তোহা থতমত খেয়ে বললো,” না মানে, আমি আপনাকে অযথাই ভুল বুঝেছি৷ সেজন্য স্যরি।”
” আমার থেকে বাহিরের মানুষের কথায় তোমার অগাধ বিশ্বাস থাকবে৷ এটাই তো স্বাভাবিক।”
তোহা অদ্ভুত কান্ড করলো। হুট করে গিয়ে আমীরের পা জড়িয়ে বললো,” প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। আর কখনও এমন হবে না। কান ধরলাম৷ যদি বলেন ফ্লোরে নাক ঘষবো৷ তাও মাফ করে দিন। ”
আমীর শ্বাস ফেলে তোহার দুইহাতের বাহু ধরে বললো,” ওঠো।”
তোহা উঠলো। ওর মুখটা কাঁদো কাঁদো। আমীর ভ্রু কুচকে কিছুটা নরম সুরে বললো,
” কেনো এতো সন্দেহ করো তোহা? এখনও এতো অবিশ্বাস আমার প্রতি? অবশ্য অবিশ্বাস থাকাই স্বাভাবিক। জীবনে তো কম ধোঁকা দেইনি তোমাকে।”
তোহা ভেজা কণ্ঠে বললো, ” প্লিজ এসব বলবেন না। আমি স্যরি বললাম তো। আপনাকে আমি অনেক বিশ্বাস করি।”
” হ্যা সেই নমুনা তো দেখলাম। কত বিশ্বাস করো। একবারের জন্য দরজাটা খুলে আমার কথাগুলো শোনার ধৈর্য্য হলোনা।”
” মানছি আমি ভুল করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আজকে আমি যেটা করেছি সেটা কোনো সন্দেহ থেকে না ভয় থেকে করেছি।”
” কিসের ভয়?”
” অনেক ভয়। আমার প্রতিনিয়ত ভয় হয়। মনে হয় আপনি আমাকে ছেড়ে অন্যকারো মায়ায় জড়িয়ে পড়বেন। সুদর্শন জামাই নিয়ে সংসার করার যে কি যন্ত্রণা সেটা আপনাকে বুঝাই কিভাবে? প্রত্যেক মিনিটে আপনাকে হারিয়ে ফেলার আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয় আমায়। এই বুঝি কেউ আপনাকে ছিনিয়ে নিলো আমার থেকে। মানলাম মেয়েটা আপনার ভক্ত ছিল, সে আপনাকে হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরলে এখানে আপনার কোনো দোষ নেই। কিন্তু যদি ওই জায়গায় তখন আমি থাকতাম তাহলে সত্যি কেঁদে ফেলতাম।”
তোহার কথায় আমীরের হাসি পেল। একটু হেসে তোহার থুতনিতে হাত রেখে বললো,
” আমারও তো সুদর্শনা বউ। আমি সংসার করছি না? কই আমি তো কখনও তোমাকে নিয়ে ভয় পাইনা! কারণ আমি তোমাকে সন্দেহ করিনা তোহা। তোমার উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তুমি হয়তো ততটুকু বিশ্বাস এখনও আমাকে করতে পারোনি। এজন্যই ভয় পাও।”
” আপনিও ভয় পান। নাহলে নিয়াজ, সামি, হাসাদ, ওদের পরিণতি এতো ভয়ংকর হলো কেনো? আপনি আমাকে নিয়ে ভয় পান বলেই তো ওদের শাস্তি দিয়েছেন।”
আমীর অবাক হয়ে বললো,” তুমি কোন জায়গার কানেকশন কোথায় লাগাচ্ছো তোহা? এইটা কি নিয়াজ, সামি কিংবা হাসাদের মতো ব্যাপার ছিল? একটা সিম্পল বিষয় ছিল। আর আমি ওদেরকে শাস্তি দিয়েছি কারণ ওরা তোমার সাথে অন্যায় করেছে। শুধু ওরা কেনো, যে তোমাকে নিয়ে খারাপ চিন্তা করার দুঃসাহস দেখাবে আমি তাকে এভাবেই শাস্তি দিবো। কিন্তু সেজন্য কি তোমার সাথে কখনও খারাপ ব্যবহার করেছি আমি? আর কেনোই বা করবো? যেখানে তোমার কোনো দোষই নেই! আমি যেটা করি সেটা কোনো সন্দেহ না। পজেসিভনেস বলা যেতে পারে। কিন্তু তুমি তো আমাকে সন্দেহই করো।”
তোহা এবার বলার জন্য কথা খুঁজে পাচ্ছে না। একহাতে কান চুলকিয়ে বললো,
” স্যরি, আর কখনও সন্দেহ করবো না।”
আমীর বেপাত্তা গলায় সামনে ঘুরে বললো,” বিশ্বাস করলাম না।”
” কি করলে বিশ্বাস করবেন?”
” যদি পঞ্চাশবার কান ধরে উঠ-বস করতে করতে বলো, তাহলে বিশ্বাস হতে পারে।”
তোহা চোখ বড় করে বললো,” কি? এই অবস্থায় আমি কান ধরে উঠ-বস করবো? তাও পঞ্চাশবার? আপনার মাথাখারাপ?”
” কেনো? কি অবস্থা তোমার?”
তোহা মিষ্টি করে হেসে লাজুক মুখে বললো,” কিছু না। আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। ডিনারের পর বলবো।”
আমীর শুধু ভ্রু কুচকে তাকালো। আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। তোহা ডিনারের পর বেশ হাসিখুশি একটা ভাব নিয়ে বললো,
” বাসায় মেহমান আসছে।”
” কিসের মেহমান? বাংলাদেশ থেকে কেউ?”
” আরে নাহ।”
” তাহলে?”
” খুব ছোট্ট মেহমান। যাকে আপনি-আমি কোনোদিন দেখিনি। কিন্তু সে আমাদেরই অংশ।”
তোহার কথা পরিষ্কার হলেও আমীর ধরতে পারছে না। কারণ তোহা যে বিষয় বলতে চাচ্ছে সেটা আমীর কখনও কল্পনাতেও আনেনি। আমীর ঠোঁট উল্টে বললো,
” বুঝলাম না।”
আমীরের নাদানি দেখে তোহা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
” আরে গাধারাম, এখনও বুঝেননি?”
” বুঝিয়ে বলো।”
ওরা দু’জনেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। চারদিকে ফুরফুরে বাতাস। তোহার শাড়ির আঁচল উড়ছে। চুলগুলোও এলোমেলোভাবে উড়ছে। সে আমীরের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরলো। আমীর ধরলো তোহার পিঠ। তারপর আদুরে কণ্ঠে বললো,
” বলো।”
তোহা আমীরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
” আমি প্র্যাগনেন্ট। আমাদের অনাগত বাচ্চার কথা বলছি। এবার বুঝেছেন বুদ্ধু?”
আমীরের চেহারা থমথমে। কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইল। তোহা আমীরকে ছেড়ে ওর চেহারার দিকে ভালো করে তাকিয়েই বুঝলো আমীর এই সংবাদে একটুও খুশি নয়। তোহা অবশ্য এটা আগেই জানতো৷ সে প্র্যাগনেন্সির ব্যাপারটা টের পেয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। কিন্তু নিশ্চিত ছিল না। তিনদিন আগে নিশ্চিত হয়েছে।আমীরকে জানানোর সাহস করতে পারেনি। খুব ভয় লাগছিল। কারণ আমীর এই বিষয়ে খুব সচেতন৷ সে এতো জলদি বাচ্চা নিতে একদমই আগ্রহী নয়। এর মধ্যে আবার তোহাদের পাশের এলাকাতেই তোহার সমবয়সী একটা মেয়ে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। সেই থেকে আমীরের আরও ভয়। সে খুব কড়াভাবে তোহাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল বাচ্চা যদি কখনও ভুল করেও চলে আসে তাহলে তোহাকে অ্যাবর্শন করতে হবে। আজকে পূরবী তোহাকে বলেছে আমীরকে বাচ্চার কথাটা জানাতে। এমনিতে তো জানতেই হবে পরে জানালে আরও প্রবলেম হতে পারে৷ তাছাড়া হঠাৎ সুখবর পেলে আমীরের মন বদলেও যেতে পারে। তোহাও ভেবেছিল আমীর হয়তো সন্তানের খুশিতে সব ভুলে যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমীর একদমই খুশি হয়নি। সে কঠিনগলায় বললো,
” এটা কিভাবে হলো তোহা? এতো সাবধান থাকার পরেও এটা কিভাবে হলো?”
আমীরের প্রশ্নে তোহা হতভম্ব। আমীর কি এখন ওকে অ্যাবর্শন করাতে বলবে? তোহা কিছুতেই করবে না। প্রয়োজনে যদি আমীরকে ডিভোর্স দিতে হয়, তাও দিবে। ছি, সে এসব কি ভাবছে? আমীরকে ছেড়ে থাকার কথা তোহা কখনও কল্পনাও করতে পারেনা। আমীর বললো,
” কতদিন ধরে লুকিয়ে রেখেছো? কয়মাস হয়েছে?”
তোহা তোতলানো গলায় বললো, ” আড়াইমাস।”
আমীর জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে রাগান্বিত স্বরে বললো,
” কিচ্ছু শুনতে চাইনা। কালকে তুমি আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে আর এই বাচ্চা ফেলে দিবে। কথা শেষ। ”
তোহা বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ। মুখ কুচকে ধিক্কারের স্বরে বললো,
” ছি, এতো নিষ্ঠুর আপনি? নিজের বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চান?”
” আমি শুধু তোমাকে বাঁচাতে চাই।”
” আপনি কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে বাচ্চা জন্ম দিতে গেলে আমি মরবোই?”
” আমি রিস্ক নিতে চাইনা৷ এতো জলদি বাচ্চা জন্ম দেওয়া খুব রিস্কি তোহা। বুঝার চেষ্টা করো। আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি। এই বাচ্চা আমরা রাখবো না।”
” আচ্ছা, অ্যাবর্শন করার সময়ও তো আমি মরে যেতে পারি। অনেক জায়গায় দেখেছি, বেবি ওয়াশ করার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে হতে মেয়েরা মারা যায়।”
আমীর দেয়ালে আঘাত করে চিৎকার দিয়ে বললো,
” তুমি বাচ্চার কথা আমাকে আরও আগে কেনো জানালে না তোহা?”
তোহা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। এই বাচ্চা নিয়ে এবার কত কেয়ামত সহ্য করতে হবে আল্লাহ মা’বুদ জানেন। সত্যিই বাচ্চাটা নিয়ে ওদের মধ্যে অনেক ঝামেলা হয়। কিন্তু তোহা নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। সে মরে গেলেও বাচ্চা খুন করবে না। এই বাচ্চা সে পৃথিবীতে আনবেই, সেজন্য যদি নিজের জীবন দিতে হয় তাও দিবে। আমীরকে হারাতে হলে হারাবে। আমীর একদিন হঠাৎ একটা ডিভোর্স পেপার এনে তোহাকে বললো সাইন করে দিতে। সে আর তোহার সাথে থাকতে চায়না। তোহা আমীরের আচরণে স্তব্ধ হয়ে যায়। হুট করেই মানুষটাকে বড্ড অচেনা মনে হয়। ভাবতেই ঘৃণা লাগে এই মানুষটাকে আকড়ে ধরে রাতের পর রাত পার করেছে সে। যার মিষ্টি স্পর্শ পেয়ে একসময় নিজেকে সর্বসুখী মনে হতো আজ-কাল তারই বিষাক্ত আচরণে মরে যেতে ইচ্ছে করে। আমীরের দিকে তাকাতেও ঘৃণাবোধ হয়। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেয় তোহা। আমীর অবাক হয়ে যায়। সে কখনও চিন্তা করেনি না দেখা, না চেনা একটা অনিশ্চিত অস্তিত্বসম্পন্ন সন্তানের জন্য আমীরকে নির্দ্বিধায় ডিভোর্স দিয়ে দিবে তোহা। এটা কিভাবে করলো তোহা? সে কি ভুলে গেছে তাদের ভালোবাসার অমূল্য মুহুর্তগুলোর কথা? আমীর কখনও ভাবেনি তোহা এতো শক্তকাজ করতে পারে।আমীরের প্রচুর রাগ হয়। রাগে-অভিমানে চিৎকার করতে ইচ্ছা করে। তোহাকেও মেরে ফেলতে ইচ্ছা করে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here