#ধোঁয়াশা
#পর্ব_১
#Saji_Afroz
.
.
.
“আম্মু, আম্মু? উঠোনা। আমি এসেছি। আমার সাথে চলো আম্মু।”
.
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় কে যেনো ডাকছে নিয়ন্তা কে।
কে হতে পারে? কে?
ইরা?
নিয়ন্তার বুকের ধন ইরা!
সে এসেছে! ফিরে এসেছে!
এসব ভেবে নিয়ন্তা চিৎকার করে বলে উঠলো-
ইরা, আমি আসছি মা!
.
নিয়ন্তার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইরফানের।
তাড়াতাড়ি বিছানার পাশের টেবিলটার উপরে থাকা ল্যাম্প জ্বালিয়ে নিয়ন্তার উদ্দেশ্যে বললো-
কি হলো নিয়ন্তা?
.
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে নিয়ন্তা বললো-
ইরা এসেছে! ইরা।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ইরফান বললো-
ইরা কি করে আসবে? তুমি কি সব ভুলে যাচ্ছো?
-এতো কিছু আমি বুঝিনা। আমার ইরা আমায় ডাকছে। আমায় যেতে হবে।
.
কথাটি বলেই নিয়ন্তা বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইলে ইরফান তার হাত ধরে টেনে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসলো তাকে।
নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে চেপে ধরে ইরফান বললো-
পাগলামি করেনা। রাতের কটা বাজে খেয়াল আছে? রাত ২টা এখন। তাছাড়া ইরা কিভাবে আসবে তুমিই বলো?
.
ইরফানের কথা শুনে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে নিয়ন্তা।
ইরফান তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললো-
আমার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমোবে?
-হু।
.
লাইট বন্ধ করে বিছানায় নিজের শরীরটা এলিয়ে দিলো ইরফান। তার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো নিয়ন্তা।
নিয়ন্তার মনে জেগেছে নানারকম প্রশ্ন।
সে ভুল শুনেনি। ইরা তাকে ডেকেছে। কিন্তু কোথায় ইরা?
.
চোখ জোড়া বন্ধ করে বিড়বিড় করে নিয়ন্তা বললো-
কোথায় আছিস বলে যা মা।
আমি নিশ্চয় যাবো তোর কাছে।
.
.
.
ঘড়িতে সময় সকাল ৭টা……
পর্দার ফাঁকে চিকচিক আলোর ঝিলিক রুমের ভেতরে আসছে।
কিন্তু কেউ একজন পর্দাটা সরিয়ে দেয় যার কারণে রোদ নিয়ন্তার মুখের উপরে এসে পড়লো।
ভ্রু জোড়া কুচকে নিয়ন্তা বললো-
উহু ইরফান! পর্দা কেনো সরাতে গেলে! মুখের উপরে রোদ এসে পড়লো। কাল এতো খাটনির পরে আজ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠার কোনো মানে হয়?
.
ইরফানের কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে নিয়ন্তা আবার বললো-
কি হলো ইরফান? কথা কানে যাচ্ছেনা?
.
আবারো কোনো সাড়া না পেয়ে এপর্যায়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো নিয়ন্তা-
ইরফান!
.
পাশ থেকে ভাঙ্গা গলায় ইরফান বললো-
সকাল সকাল চেচাচ্ছো কেনো তুমি! ঘুমোতে দাওতো।
.
এপর্যায়ে চোখ মেলে নিয়ন্তা।
তার পাশেই দেখতে পায় ইরফান কে।
তাহলে পর্দা কে সরালো?
.
চোখ জোড়া কচলাতে কচলাতে শোয়া থেকে উঠে বসলো নিয়ন্তা।
মন দিলো জানালার দিকে।
পর্দা কিভাবে সরেছে তার মাথায় আসছেনা।
কোনোভাবে কি বাতাসের বেগে সরে গিয়েছে? হয়তো হ্যাঁ।
.
আপনমনে এসব ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে নিয়ন্তা।
গায়ে থাকা নাইটির ফিতা বেঁধে এগুতে থাকে রান্নাঘরের দিকে।
.
.
.
এখানে সবটায় নতুন নিয়ন্তার কাছে।
কাল সন্ধ্যায় মাত্র এসেছে তারা এই বাসায়।
তবে ইরফান অনেক যত্ন সহকারে বাড়িটা নিয়ন্তার জন্য সাজিয়েছে বলা যায়।
খুব বড় না হলেও দেখতে ভারী সুন্দর একটা বাড়ি।
ড্রয়িং, ডাইনিং, রান্নাঘর, আর ২টা বেড রুম আছে।
ডাইনিং রমের পাশেই একটা বাথরুম। আরেকটা বাথরুম ইরফানের বেড রুমে।
ড্রয়িং রুমটায় এক সেট সোফা, সোফার সামনে রাখা কাচের গোল ছোট টেবিল আর সোফার পেছনেই বড় বড় কয়েকটা ফুলের টব আছে।
ডাইনিং রুমে ডাইনিং টেবিল আর ছোট একটা ফ্রিজ ছাড়া কিছু নেই।
অন্য বেড রুমে একটা খাট আর একটা ওয়ারড্রব আছে।
জিনিসপত্র বেশিরভাগই ইরফানের রুমে।
একটা খাট, খাটের এক পাশে ছোট্ট একটা টেবিল, অপরপাশে বেতের সোফা, সামনের দেওয়ালে লাগানো একটা ওয়াল টিভি, তার পাশেই আলমারি, জানালার পাশে ড্রেসিংটেবিল, এসব দিয়েই সাজানো রুমটা।
ইরফানের রুমে একটা বারান্দা আছে। অনেকটায় খোলামেলা বারান্দাটা। একটা ইজিচেয়ার রাখা আছে তাতে।
.
তবে নিয়ন্তার সবচেয়ে যা দেখে ভালো লাগলো তা হলো রান্নাঘর।
অনেকটায় গোছানো রান্নাঘরটা।
দেখলে মনেই হবেনা কোনো ছেলে গুছিয়েছে।
.
নিয়ন্তা চা বানানোর জন্য চা পাতা খুঁজতে লাগলো।
চোখ যায় কেবিনেট এর দিকে।
কেবিনেট খুলতেই সে দেখতে পেলো নানারকমের ছোট ছোট বক্স রাখা আছে তাতে।
একটা হাতে নিয়ে দেখলো বক্সের উপরে লেখা আছে-
মরিচ।
.
তার মানে ইরফান করে রেখেছে এমন! যাতে নিয়ন্তার কিছু খুঁজে পেতে কষ্ট না হয়!
.
কেবিনেট এর ভেতরে হাত দিয়ে একে একে চা পাতা, দুধ, চিনি লেখা বক্স বের করে নিয়ন্তা।
.
মুচকি হেসে আপনমনে বললো সে-
ভালোবাসি তোমায় ইরফান।
.
.
.
ট্রে হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো নিয়ন্তা।
ছোট টেবিলটার উপর ট্রে রেখে ইরাফানের পাশে বসলো সে।
খানিকক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে সামান্য ঝুকে কপালে ঠোঁট জোড়া ছুঁয়ে দিলো নিয়ন্তা।
নিয়ন্তার ঠোঁটের ছোয়া পেয়েই চোখ খুললো ইরফান।
মৃদু হেসে নিয়ন্তার উদ্দেশ্যে বললো-
রোমান্টিক মুড বুঝি তোমার?
-নাহ সাহেব, আপনাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্যই এটা করা।
.
নিয়ন্তাকে টেনে নিজের বুকের মাঝে এনে ইরফান বললো-
কিন্তু আমার মুডটাই যে রোমান্টিক হয়ে গেলো?
.
মুখ টিপে হাসতে থাকে নিয়ন্তা।
আচমকা ইরফান উপুড় করে শুইয়ে দিলো নিয়ন্তাকে। তার উপরে নিজের শরীরের ভার ফেলে হাত দিলো নাইটির ফিতায়।
নিয়ন্তা তার হাত ধরে বললো-
চা কিন্তু ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
-হোক না।
-আমি কিন্তু আর বানিয়ে দিবোনা।
.
ইরফান উঠে বসলো।
চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললো-
একটা কাপ কেনো!
তুমি খাবেনা?
-আমি খালি পেটে চা খেতে পারিনা।
-খালি পেটে চা খাওয়ার মজাই আলাদা।
.
কথাটি বলেই ইরফান চায়ের কাপে চুমুক দিলো।
নিয়ন্তা শোয়া থেকে উঠে বসে বললো-
তাই নাকি! তোমার কাপে একটা চুমুক দিতে পারি?
.
মৃদু হেসে ইরফান বললো-
হু।
.
.
.
ট্রে হাতে নিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো নিয়ন্তা।
বেসিনের পাশে গিয়ে এঁটো কাপ ধুয়ে নিলো সে।
.
চা এর পাতিলটা ধোয়ার জন্য এগিয়ে যায় চুলার দিকে। ওখানেই রেখে গিয়েছিলো সে।
কিন্তু এখন সেটি চুলার উপরে দেখা যাচ্ছেনা।
এদিক ওদিক তাকিয়ে নিয়ন্তা দেখতে পেলো চা এর পাতিলটা রান্নাঘরের কোণায় থাকা আরএফএল র্যাকের উপরে রাখা আছে।
সেদিকে এগিয়ে গিয়ে পাতিলটা হাতে নিলো নিয়ন্তা।
অবাক করার বিষয় হলো পাতিলটা একেবারেই পরিষ্কার!
কি করে এটা সম্ভব হতে পারে নিয়ন্তার মাথায় আসছেনা।
তাহলে সে কি পাতিলটা ধুয়েই গিয়েছিলো?
হয়তো হ্যাঁ।
নাহলে এমন হওয়ার কথা নয়।
.
-নিয়ন্তা? এদিকে আসো।
.
ইরফানের ডাকে ঘোর ডাকে নিয়ন্তার।
হাত মুছে সে এগিয়ে যায় বেড রুমের দিকে।
-কি হলো?
-কি করছো তুমি?
-নাস্তা বানাতে গিয়েছিলাম।
-বানাতে হবেনা।
-তাহলে কি খাবে শুনি?
-দোকান থেকে কিছু নিয়ে আসি।
নানরুটি দিয়ে ঝোল খাবা?
-পরোটা আর ভাজি পাওয়া যাবেনা?
-যাবে। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি নিয়ে আসছি।
.
ইরফান বেরিয়ে যেতে থাকে।
হঠাৎ থেমে পেছনে ফিরে বললো-
দোকান কিন্তু খুব বেশি কাছে নয়। দরজাটা আঁটকে দিও। আমার একটু সময় লাগবে আসতে।
-ঠিক আছে।
.
.
.
দরজা আটকিয়ে নিয়ন্তা বেড রুমে আসলো।
চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকলো পুরো রুমটা।
ইরফানের সব এখন থেকে তার ভাবতেই মনের মাঝে আলাদা একটা শান্তি অনুভব হয়।
আবার কতো বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে ইরফানের সঙ্গ পেতে হয়েছে মনে পড়লেই একটা অজানা ভয় কাজ করে মনের মাঝে।
.
চোখ জোড়া বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস ফেললো নিয়ন্তা।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো সে আলমারির দিকে।
আলমারি থেকে একটা হালকা কমলা রঙের শাড়ি বের করে সে। শাড়ির সাথে যা যা পরতে প্রয়োজন সবই বের করলো নিয়ন্তা।
আলমারি বন্ধ করতেই তার চোখ যায় আয়নার দিকে।
নিজেকে ভালোভাবে কিছুক্ষণ দেখে নিলো সে।
আয়নার উপর হাত রেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো-
আমি কি খুব সুন্দরী? মনেতো হয়না। তবে যে সে……
আর কিছু বলতে ইচ্ছে করলেও বললোনা নিয়ন্তা।
চোখ জোড়া মুছে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।
.
.
.
অনেকক্ষণ যাবৎ দরজার কড়া নাড়ছে ইরফান।
নিয়ন্তার কোনো সাড়া না পেয়ে তার মনটা ছটফট করছে।
করছেটা কি মেয়েটা ভেতরে! ভুলে ফোনটাও সাথে নেয়নি ইরফান।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘরের ভেতর থেকে নিয়ন্তার চিৎকারের শব্দ শুনতে পেলো ইরফান।
ইরফানও চেঁচিয়ে বলে উঠলো-
নিয়ন্তা….?
.
(চলবে)
.
বি:দ্র: এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।