#ধোঁয়াশা
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz
.
.
.
ইরফানের দিকে এগিয়ে গিয়ে আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো নিয়ন্তা।
নিয়ন্তার এমন কান্ডে চমকে যায় ইরফান।
শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো-
কি হয়েছে নিয়ন্তা?
.
ইরফানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিয়ন্তা বলতে শুরু করলো-
আমি ভুল বুঝেছি তোমাকে। প্রিয়া আপুর পরিচয় দাওনি বলে আমি তার বাসায় গিয়েছিলাম আজ। উনার কাছে জানতে পারলাম উনি বিবাহিতা। একটা সন্তানও আছে তার। এখানে আসার পর থেকে উনি আর উনার হাসবেন্ড এর সাথে তোমার ভালো একটা সম্পর্ক হয়। আর তুমি তাদের আমার কথাও বলেছিলে।
এসব শুনে আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে ইরফান।
.
স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো ইরফান।
নিয়ন্তার মাথায় হাত রেখে সে বললো-
আরে সাহেবা ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যেভাবে রাগান্বিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন মনে হচ্ছিলো কি করে ফেলেছি আমি।
.
ইরফানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে নিয়ন্তা বললো-
কিছু করেন নাই আপনি?
-কি করলাম?
-কাল আমাকে প্রিয়া আপুর ব্যাপারে সব সত্যি কথা বললেই হতো। কেনো বলোনি?
-একটু চেতানোর জন্য তোমাকে।
-আমাকে চেতানোর জন্য! তাইনা?
-হুম। তাই।
-দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা।
.
কথাটি বলেই ইরফানের বুকের উপর কিল, ঘুষি মারতে থাকলো নিয়ন্তা।
.
নিয়ন্তার কান্ড দেখে ইরফান বললো-
এতোক্ষণ বুকের উপর মাথা রাখা হচ্ছে আর এখন কিল ঘুষি মারা হচ্ছে!
-মারবো। যখন ইচ্ছে হবে মারবো আর যখন ইচ্ছে হবে…..
-কি?
-কি?
-তুমি বলবা, কি?
-ঘি। সরো নাস্তা বানাবো। কাল তোমার রোমান্সের চক্করে রাতে খেতে পারিনি কিছু।
.
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ১০টা….
প্রিয়ার উদ্দেশ্যে আলিনা বলে উঠলো-
আব্বু এসেছে।
.
হাতে থাকা বইটা বন্ধ করে প্রিয়া বললো-
আব্বু তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে। যাও আব্বুর সাথে।
-তুমিও চলোনা। এক সাথে ঘুমাই আজ।
.
ভ্রুজোড়া কুচকে প্রিয়া বললো-
তুমি যাও। আমি বইটা পড়া শেষ করেই আসছি।
.
আলিনা রুম ছেড়ে চলে গেলো।
প্রিয়া টেবিলের উপরে থাকা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক ঢোক পানি খেলো।
আজ নিয়ন্তাকে দেখে মনে হয়েছে কোনো একটা চাপা কষ্ট বুকের মাঝে চেপে রেখেছে সে।
মেয়েটা বাসায় যতোক্ষণ ছিলো আলিনাকে নিজের কাছে আগলে রেখেছিলো। বাচ্চার প্রতি এতো টান কেনো নিয়ন্তার?
নিয়ন্তার ব্যাপারে সবটা কি তাকে বলেনি ইরফান?
.
নিয়ন্তাকে নিয়ে নানারকম চিন্তা ভর করেছে প্রিয়ার মাথায়।
.
.
.
রাতের ১০টা বাজলো। কিন্তু ইরফান কোথায় গেলো?
আপনমনে ইরফানের কথা ভেবে ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছে নিয়ন্তা।
.
হঠাৎ কলিং বেল এর শব্দ পায় সে।
দ্রুতবেগে হেটে সে দরজা খুলে দিলো।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো বাইরে কেউ নেই।
তাহলে কলিংবেল চাপলো কে!
.
-আমার ভেতরও বাহিরে,, অন্তরে অন্তরে,,
আছো তুমি,,
হৃদয় জুড়ে….
.
সেই পাগল করা সুর। হুম সেই একই সুর। সেই চিরচেনা গলার গান।
কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব!
.
ভাবতে ভাবতেই সামনের বাগানে নিয়ন্তা কাউকে পেছন দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।
.
সে যার কথা ভাবছে সে কি সেই?
ধীর পায়ে নিয়ন্তা এগিয়ে গেলো তার দিকে।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো সে-
কে এখানে? কে?
.
আচমকা সামনের দিকে ফিরে ইরফান বললো-
ভো…….
.
নিজের কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে মাটিতে বসে পড়লো নিয়ন্তা।
.
হাসতে হাসতে ইরফান তার পাশে বসে বললো-
ভয় পেলেতো?
.
চোখ জোড়া খুলে নিয়ন্তা বললো-
গান তুমি গেয়েছো?
-গান!
-হুম।
-ওহ নিয়ন্তা! আমি কি গান গাইতে পারি নাকি!
-কিন্তু আমি যে গানের গলা শুনেছি।
-পাশে কেউ গেয়েছে হয়তো।
-কিন্তু সেই গলা…..
-কোন গলা?
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিয়ন্তা বললো-
নাহ কিছুনা। কোথায় ছিলে?
-বন্ধুদের সাথে পাড়ায় ঘুরছিলাম।
-ওহ! ভেতরে চলো।
.
.
.
রাত ১১টা….
রাতের খাবার শেষে
নিয়ন্তা ড্রয়িং রুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গোনার বৃথা চেষ্টা করছে।
হঠাৎ বেড রুম থেকে ইরফান উচ্চশব্দে বলে উঠলো-
নিয়ন্তা কোথায় তুমি? একটু এদিকে আসো।
.
স্বামীর ডাকে সে জবাব দিলো-
আসছি।
.
কিন্তু পেছনে ফিরে এক পা বাড়াতেই থমকে যায় সে।
মনে হচ্ছে পেছন থেকে তার উড়না কেউ ধরে রেখেছে।
.
সাহস করে পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলো, একটা কাটা রক্তাক্ত হাত তার উড়না ধরে রয়েছে জানালার ওপাশ থেকে।
.
এমন একটা দৃশ্য দেখে ১সেকেন্ড ও দেরী না করে নিয়ন্তা চেঁচিয়ে স্বামীর উদ্দেশ্যে বললো-
বাঁচাও ইরফান…..!
.
নিয়ন্তার গলার আওয়াজ শুনে ড্রয়িংরুমে দৌড়ে এলো ইরফান।
দেখতে পেলো নিয়ন্তা ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।
ইরফান নিজের কোলের উপর নিয়ন্তার মাথা রেখে বললো-
নিয়ন্তা? কি হয়েছে তোমার?
.
নিয়ন্তার কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে তাকে পাঁজকোলে তুলে নিয়ে সোফায় শুইয়ে দিলো ইরফান।
ড্রয়িংরুম থেকে পানির জগটা এনে হাতের মুঠে পানি নিয়ে নিয়ন্তার চোখেমুখে ছিটাতে লাগলো সে।
.
ধীরেধীরে চোখ জোড়া খুললো নিয়ন্তা। এক লাফে বসে পড়লো সে।
ইরফান তার পাশে বসতেই নিয়ন্তা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
ইরফান আমি দেখেছি, স্পষ্ট দেখেছি।
.
বিস্ময় ভরা কণ্ঠ নিয়ে ইরফান প্রশ্ন করলো-
কি দেখেছো?
-কাটা হাত।
-মানে!
-সেই কাটা হাত ইরফান!
-আমি বুঝছিনা নিয়ন্তা।
.
ইরফানের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিয়ন্তা বললো-
আমার উড়না জানালা দিয়ে ধরেছে। একটা কাটা হাত ধরেছে। আর ওই হাত আর কারো নয়।
-কার?
.
চুপ হয়ে গেলো নিয়ন্তা।
শান্ত গলায় বললো-
কিছুনা।
.
ইরফান তাকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিয়ে বললো-
তোমার ভুল হচ্ছে কোথাও।
-হু।
-আমি ছাড়া তোমার উড়না টানার সাহস কারো নেই সাহেবা।
পাগলি একটা।
.
.
.
রাত ১টা…
ইরফান ঘুমিয়ে গেলেও নিয়ন্তার চোখে ঘুম নেই।
সে কি দেখেছে এটা!
সত্যিই কি এটা মনের ভুল? আর যদি ভুল না হয় তাহলে কিভাবে কি সম্ভব!
.
-আম্মুই? এদিকে আসোনা আম্মুই?
.
ইরার গলার স্বরে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো নিয়ন্তা।
.
ড্রয়িংরুম থেকে ভেসে আসছে ইরার ডাক।
দেরী না করে নিয়ন্তা এগিয়ে যেতে থাকলো ড্রয়িংরুমের দিকে।
.
.
-ইরা? মামুনি কোথায় তুমি?
-আমি এদিকে।
.
সোফার ওদিক থেকে শব্দ পায় নিয়ন্তা। কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছেনা সে।
দ্রুতপায়ে হেটে রুমের লাইট জ্বালালো সে।
কিন্তু কোথাও ইরাকে দেখতে পেলোনা।
কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো-
ইরা? মা আমি এসেছি, আম্মুকে এভাবে জ্বালাতন করতে নেই মা। দেখা দাও।
.
উচ্চশব্দে হেসে ইরা বলে উঠলো-
আমি এইদিকে আম্মুই।
.
গলার স্বর শুনে উপরে তাকাতেই নিয়ন্তা দেখতে পেলো, ফ্যানের উপরে বসে আছে ইরা।
.
বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে নিয়ন্তা প্রশ্ন করলো-
তুমি ওখানে কি করছো? কিভাবে উঠেছো?
.
বিকট শব্দে হেসে ইরা বললো-
বলবো না।
.
ইরার হাসি দেখে ভয়ার্থ কণ্ঠে নিয়ন্তা বললো-
এইরকম বিশ্রি ভাবে হাসেনা। আমার আম্মুর মুচকি হাসিই অনেক মিষ্টি। আসো মা, নেমে এসো।
.
এপর্যায়ে কেঁদে উঠলো ইরা।
কাঁদতে কাঁদতেই বললো-
আমি কিভাবে নামবো? এতো উঁচু থেকে আমি নামতে পারি? আম্মুই, আমি নামবো। আমাকে নামাও না।
.
অসহায় দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিয়ন্তা বললো-
আমি দেখছি মা। কি করা যায়।
.
পেছন থেকে কেউ একজন শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো-
আমি সাহায্য করবো?
.
গলার স্বর শুনে পেছনে না তাকিয়েই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে নিয়ন্তা বললো-
কে? বর্ণ?
.
(চলবে)