নতুন তুই আমি পর্ব-১৩

0
2027

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-১৩……………………….
“সিয়াম,আমরা কোথায় যাচ্ছি??”
“তোর না লং ড্রাইভে যেতে খুব ভালো লাগে??”
“তাই!!!তুই আমায় নিয়ে অনেকক্ষণ ড্রাইভিং করবি।থ্যাস্ক সিয়াম।”
“তোকেও…..”
“আমাকে কেনো??”
“আমার পচ্ছন্দ মতো সাজার জন্য…….”
তামান্না একটু লজ্জা পেলো।
সোজা বাইরের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সিয়াম আড় চোখে দেখছে তামান্নাকে।
এই মুহুর্তে যদি তামান্নার লম্বা-ঘন-কালো চুলগুলো খোলা থাকতো!!!
সিয়ামের খুব ইচ্ছা করছে তামান্নাকে বলতে যেনো সে হিজাব টা খুলে ফেলে।
কিন্তু সাহসে কুলচ্ছে না।
ড্রাইভ করে চলেছে সিয়াম।
পদ্মার পাড়ে যাবে বলে ঠিক করেছে।
দেউলিয়া ঘাটের গরম ভাত তাঁর সাথে ভাজা ইলিশ আর শুকনো মরিচ ভাজা!!!
এটার যে কি স্বাধ!!
যে না খেয়েছে সে বুঝবে না।
সিয়াম জীবনে অনেকবার এসেছে।তবে তামান্না একবারও আসে নি।
সিয়াম তামান্নাকে আজ এই স্বাধ টা নেওয়াবে বলে দেউলিয়া ঘাটে নিয়ে যাচ্ছে।
!
প্রায় দু ঘন্টা গাড়ি চালানোর সিয়াম তামান্নাকে নিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছে।
তামান্না ঘাটে এসে একটু অবাক হয়েছে।
“কি হলো??জানালা দিয়েই সব দেখবি নাকি??নাম গাড়ি থেকে…..”
সিয়ামের কথায় গাড়ি থেকে নামলো তামান্না।
কি ব্যস্ত ঘাট!!!
সব মানুষ কি রকম ছুটছে।
কেউ লঞ্চে তো কেউ ফেরীতে উঠার জন্য তড়িঘড়ি করছে।
কত রকমের মালও টানছে।
সব এগুলো ফেরী পাড়াপাড় হবে।
তামান্নার এসব দৃশ্য বেশ ভালোই লাগছে।
বেচারী শুধু আশেপাশের দৃশ্যই দেখে চেলেছে।
এখনো এখানে আসার আসল কারণ টা ধরতে পারে নি।
তবে শুধু খাওয়ার জন্য আসা বললে ভুল-ই হবে।
সিয়াম তামান্নাকে ব্যস্ত পদ্মার পাড়ও দেখাতে এনেছে।
“কি রে কেমন লাগছে??”
“কি ব্যস্ত ঘাট!!!”
“হুম….শান্ত-ধারালো পদ্মা কত মানুষের জীবিকা।কত লোকের জীবন পাড়াপাড়ের মাধ্যম…..”
“সত্যিই অসাধারণ…..কোন ছোট বেলায় একবার এসেছিলাম।তখন তো ভালোভাবে খেয়াল করার বুদ্ধিই ছিলো না….”
“তোর কি মনে হয়??এখন তোর খুব বুদ্ধি হয়েছে??”
“মানে??সিয়াম!!!এখানে তুই আমাকে পঁচাস না তাহলে আমার রাগ চেপে যাবে আর ক্যালেঙ্কারী হবে এখানে…….”
“ওক্কে বাবা।সব বাদ।চল তোকে আজ নতুন কিছু খাওয়াই……”
“কি???”
“আগে তো চল……”
তামান্না বীনাবাক্যে সিয়ামের সাথে হাঁটা শুরু করলো। ঘাটের জনবহুল এলাকা টুকু পাড় হয়ে নদীর নিচের দিকে যাচ্ছে ওরা।
অর্থাৎ পাড় থেকে নিচের দিকে গড়ে উঠা হোটেলগুলোতে ডুকছে ওরা।
সিয়াম তামান্নাকে নিয়ে দুজনের একটা টেবিলে গিয়ে বসলো।
হোটেল টা খুব বেশি বড় না।
নদীর পাড়ের হোটেল তো বেশ খোলামেলা। অনেক সুন্দর।কাঠের মাঁচার মতো করে পুরোটা হোটেল বানানো হয়েছে।
পদ্মার জলধোঁয়া পুরোটা বাতাস গাঁয়ে লাগবে এখানে যারা বসবে ওদের শরীরে।
একটা তীব্র প্রশান্তি কাজ করছে তামান্নার মনে।
সিয়াম বোধহয় আগেই অর্ডার করে রেখেছিলো।
তাই ওয়েটার এসে খুব সুন্দর ভাবে দুটো প্লেটে গরম গরম ভাত সাথে ইলিশ ভাজা-শুকনো মরিচ আর ঘি দিয়ে গেলো।
কি সুন্দর করে সাজানো সব।
প্রথমে তামান্না এটাকে একটা সস্তার ভাতের হোটেল ভেবেছিলো কিন্তু পড়ে সে বুঝতে পারলো যে তাঁর ধারণা পুরোপুরি ভুল।
এটা একটা দামী বরং অত্যন্ত ভালো মানের একটা রেস্টুরেন্ট।
খাবার দেখে তামান্না সিয়ামকে বলল,
“কি রে??তুই বললি নতুন কিছু খাওয়াবি।এটা বুঝি তোর নতুন কিছু??গরম ভাত আর ইলিশ ভাজা তো কত খেয়েছি….”
“আরে বোকা মেয়ে,এখানকার টা তো খাস নি।আর গরম ভাত ইলিশ খেয়েছিস সাথে এনন বড় শুকনো-মরিচ ভাজা আর ঘি কখনো পাতে তুলেছিলি??”
“তা করি নি।আচ্ছা,দেখি আগে খাই।খাবারের গন্ধে পেট আর কুলচ্ছে না……”
দুজনেই খাওয়া শুরু করলো।
সিয়াম একের পর এক মরিচ নিয়ে খাচ্ছে।ভাত শেষ প্রায় ওর।আবার ভাত-মাছ অর্ডার করলো সে।
তামান্নাও খাচ্ছে।ইলিশের এমন ভাজা গন্ধের সাথে ঘি আর শুকনো মরিচ যেনো খাবারের স্বাধ টা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তাই তামান্নাও নিজের প্লেট টা পুরোপুরিভাবে চেটেপুটে খালি করছে।
“আহ!!সিয়াম।জোশ……জাস্ট অমৃত…….”
“হুম বলেছিলাম না।নতুন মনে হচ্ছে তো??”
“আর বলতে!!আর কি কি আছে রে এইখানে??”
“এখানে ভাত আর মাছের ডিস ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না।পাবদা মাছ দিয়ে ভাত খাবি??”
“না না পেটে আর ভাতের জায়গা নেই।তুই আরোও খাবি??”
“না আমি এমনিতেই তিন প্লেট ভাত আর তিন পিস মাছ খেয়ে ফেলেছি আর হবে না……খুব রকেট মাছের ভুনা খেতে ইচ্ছা করছিলো,আজ আর হবে না……”
“বেশি খেতে মন চাইলে প্যাক করে নে…..”
“এই রেস্টুরেন্টে কোনো খাবার বাইরে থেকে আনতেও দেয় না-ভেতর থেকে বাইরে পাঠানোও হয় না……”
“ওওও……”
“আরেক দিন আসবো।তোকেও সাথে আনবো…..”
“সত্যি??”
“হ্যাঁ…এবার উঠ। আমি বিল দিয়ে আসছি…….”
সিয়াম বিল মিটিয়ে তামান্নার কাছে এলো।
তামান্না শাড়ির কুঁচিগুলো ধরে হাঁটছে।কাঠের মেঝে তো তাই একটু বেশি সাবধানতা পালন করছে।
কিন্তু হঠাৎ তামান্না সিয়ামের হাত টা খপ করে ধরে আঁতকে একটা চিৎকার করে উঠে।
সিয়ামও ভরকে যায়।
জানতে চায়,
“কি হয়েছে??”
তামান্না নিচের দিকে কিছু একটা দেখছে।
“কি হয়েছে??বলবি তো….”
সিয়াম খেয়াল করলো কাঠের ভেতরে তামান্নার জুতা ডুকে সেটা ভেঙে গেছে।
“ও….শীট!!এটাই হওয়ার ছিলো……”
তামান্না অসহায় ভাবে সিয়ামের হাতের কজ্বি ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়াম তামান্নার মুখ টা দেখছে।কি সুন্দর সে সিয়ামের হাত টা ধরে সিয়ামের উপর নির্ভর করছে।
তামান্নারও খেয়াল হয় বিষয় টা।কিভাবে সে একটা ছেলের হাত ধরে প্রতিরক্ষার মতো তাঁকে ব্যবহার করছে।
হাত টা যেই তামান্না ছাড়তে নিয়েছিলো ওমনি পড়ে যাচ্ছিলো। সাথে সাথে সিয়াম ধরে ফেললো তামান্নাকে।
জুতা ভেঙে গেছে।শাড়ি পরিহিতা তামান্না এখন কিছুতেই একা হাঁটতে পারবে না।তাই সিয়াম নির্ধায় ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
গাড়ি টা একটু দূরে।
ঘাটের পাশেই মুঁচির দোকান দেখেছিলো সিয়াম।
তাই তামান্নাকে একটু সাইডে দাঁড় করিয়ে ওর জুতাটা হাতে নিয়ে ঠিক করার উদ্দেশ্যে গেলো সিয়াম।
যাওয়ার আগে তামান্নাকে বারবার বলে গেছে ও যেনো ঠিক এই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। ফোন দুটো ই গাড়িতে-হারিয়ে গেলে খুঁজবে কি করে!
সিয়াম মুঁচির দোকান টা খুজচ্ছেছে।ঠিক কোন পাশে বসা ছিলো লোকটা সিয়াম সেটা মনে করতে পারছে না।
এদিকে তামান্না এক জুতা পায়ে থাকায় সেটাও খুলে সাইডে রাখলো।
কিছু কিছু লোক তামান্নাকে দেখে মিটমিট করে হাঁসছে।
তামান্না ভাবছে হয়তো জুতা একটা সাইডে তাই হাঁসছে।
কিন্তু পরমুহুর্তেই যখন একটা মধ্যবয়স্ক লোক তামান্নার সামনে পাঁচশত টাকার একটা নোট ধরে বলল,
“হবে নাকী এতে???”
তখন তামান্নার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
তামান্না কিছু না বলে মাথা নিঁচু করে থাকায় লোকটার সাথে থাকা আরেকজন বলল,
“কি খাসা মাল মামা। নতুন মনে হয়,কাস্টমার খুঁজে।তাই এই মোড়ে এমন কইরা খারাইসে।”
তামান্না আন্দাজ করতে পারছে ওরা তামান্নাকে কি ভাবছে।
কান্না পাচ্ছে ওর। কেনো লোকগুলো এমন বলছে।
আর সিয়াম ই বা কোথায় এখনো আসছে না কেনো।
তামান্না কোনো সারা দিচ্ছে না দেখে লোকদুটো চলে গেলো।
আর যাওয়ার আগে ঐ মাঝ বয়সী লোকটাই বলে গেলো,
“পাঁচশতে না হইলে কি হাজার ভরবি নাকি মাগি।এতো টাকা নাই…..খারাইয়া থাক বড়লোক আইলে ধরিস……”
তামান্নার পুরো পৃথিবী অন্ধকার। কি ভাষা বলে গেলো লোকটা!!!
কেঁদে ফেললো তামান্না।
এমন সময় খুব মোটাসোটা শ্যামামতন একটা মহিলা খুব করে সেজে আছে-তামান্নার সামনে এসে দাঁড়ায়।
“কি রে মাগি??কাস্টমার পাস না??তাই কান্দস???”
তামান্না রাগে এবার চেঁচিয়ে উঠলো,
“কি বলছেন কি হ্যাঁ??ভদ্র ভাবে কথা বলুন…..”
“ওরি মা।ভদ্র ভাবে কথা বলবো তোমার সাথে??তাইলে এইনে জুতা খুইলা দাঁড়াইছো কে মা??তোমার কোন নাগররে খুঁজো??কত দাম দিয়া ঠিক করছে??”
“কিসব বলছেন আপনি??
আমি এখানে জুতো খুলে দাঁড়িয়েছি মানে??কি সব বলছেন??আমার জুতা ভেঙে গেছে আমার হাসবেন্ড সেটাই ঠিক করতে গেলো।তাই আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।আর আপনারা সেই কখন থেকে কিসব দাম-কাস্টমার কি সব বলছেন???প্লিজ এসব বলবেন না।আমি এমন মেয়ে নই। আমি আমার বরের সাথে এখানে এসেছি……প্লিজ এমন করবেন না……”
তামান্নার কান্না আর কথার ভাব ভঙ্গিতে মহিলাটা বুঝতে পারলেন তামান্না কোনো বাজে মেয়ে না।
তাই তিনি তামান্নাকে বললেন,
“তোর মরদ কি গাঁধা নাকি রে???”
“কেনো??”
এমন সময় জুতা হাতে সিয়াম ওদের কথাগুলো শুনতে পায়।
“আপনি???”
“হ আমি।তা শালা কোন মাগীর কাছে গেছিলি জুতার দোহাই দিয়া??”
“মানে???আর ঐ তুই কাঁদিস কেনো??”
তামান্না কিছু বলল না।দৌঁড়ে এসে সিয়ামের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।
তামান্না বুকে এসে ঝাপটে পড়ায় সিয়ামের বুকে এক অজানা ঢেউ বয়ে গেলো।
সমুদ্রের উথাল-পাথাল জোয়াড়গুলো এলোপাথারীভাবে আচড়ে পড়তে শুরু করলো সিয়ামের বুকে।
নিজেকে সংযত করে এক হাতে তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কি হয়েছে??কাঁদছিস কেনো??”
পাশে থাকা মহিলাটা তামান্নার সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা টা বললো।
আর বলল,
“শালা!গাধাঁ দেউলিয়া ঘাট নাম জানো।খাবারের গন্ধ জানো।’দেউলিয়া পাড়া’ নাম জানো না।এইনে যে ব্যাশ্যা পাড়া এইডা জানো না?আর তোমার মাগী রে জুতা ছাড়া খাড়া কইরা রাখছিলা।মাইনষের কি দোষ??আমরা যারা শরীর বেঁচি ওরা তো জুতা ছাড়া ই খারাইয়া থাহি।জুতা পায়ে থাকলে লোকে বুঝে ব্যাশ্যা না বালা মাইয়া মানুষ।আর খালি পা হইলো ব্যাশ্যা প্রতীক।এইডা জানস না???এইজন্যই তো তোর বউরে বেডা রা দাম জিগাইছে।ও গো কি দোষ।ওরা ভাবছে তোর বউ ও আমগোর মতো ব্য…..”
“ব্যাস।আর বলতে হবে না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ওকে বুঝার জন্য।”
সিয়াম তামান্নাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেই পকেট থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে মহিলাটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এই নিন।এটা আপনি রাখুন কাজে লাগবো…..”
“ইশশশশি রে….আসছে আমার টাকা ওয়ালা।এমনে টাকা নেই না।লাগলে ক এক রাইত তোরে দেই….পরে টাকা দে…..”
“আরে!!!কি সব……”
“হ বুঝছি।তোর যা সুন্দরী বউ।এমন বউ রাইখা কি আমগর লগে শুইবি……”
সিয়াম আর কথা বাড়ালো না।
তামান্নাকে জুতো টা দিয়ে তামান্নাকে ধরে ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে এলো।
তামান্নার পাশের দরজা টা খুলে তামান্নাকে বসতে বলল।
আর তামান্না ওমনি সিয়ামের বুকে কিল-ঘুষি-চড় দেওয়া শুরু করলো।
“কেনো বললো লোকগুলো ওমন করে।কি বিশ্রী করে বলছিলো।তুই কেনো আমায় একা রেখে গেলি???বল কেনো গেলি??”
সিয়াম তামান্নাকে থামানোর চেষ্ঠা করছে কিন্তু পারছে না।
তামান্না রেগে-মেগে কান্না করে পুরো একাকার অবস্থা।
“প্লিজ শান্ত হ…..আমি জানতাম না এখানে এসব হয়….জানলে কি তোকে একা রেখে কখনো যেতাম??বল??”
তামান্না সিয়ামের বুকে মুখ লুকালো।পরম ভরসা পেয়েছে বোধহয় তামান্না এইবুকে।
তা না হলে দু দুবার এই বুকে এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তো না।
সিয়াম মুঁচকি হেঁসে জড়িয়ে ধরলো তামান্নাকে।
এক হাতে জড়িয়ে রেখেই দুজনে এক দরজা দিয়েই গাড়িতে ডুকলো।
সিয়াম তামান্নাকে বুকের একপাশে জড়িয়ে রেখেই গাড়ি চালাচ্ছে।
আর তামান্না কি জানি কি সুখ পেয়েছে সিয়ামের বুকে।
মাথা তুলছেই না একদম।
সিয়ামও বারণ করছে না।
বরং মাথা টা খুব শক্ত করে নিজের বুকের সাথে আগলে রেখেছে।
খুব শান্তি পাচ্ছে সিয়াম এভাবে। এমন করে সারা জীবন একহাতে গাড়ি চালাতেও সিয়াম রাজি আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here