#নতুন_তুই-আমি
Writer:Nargis Sultana Ripa.
পর্ব:-১৭……………………….
!
হঠাৎ সিয়ামের চোখ আটকে গেলো লাল টকটকে একটা বেনারসিতে।
পুরো শাড়িতে ছোট ছোট করে গাথাইভাবে হাতে ডিজানিং করা স্পেকটেকেলড পাথর।
লাল রঙ টা চোখ কেমন যেনো লেগে ধরছে এটা হচ্ছে কাপড়ের বিশেষায়িত্তের জন্য।
আলো বিকিরণ করছে কাপড় টা।তাই এমনটা চোখে বেঁধে আসছে।
সিয়াম এতক্ষণ তামান্নার কাঁধে ফেলে শাড়ি দেখছিলো।
কিন্তুতু হঠাৎ ওর কি হলো!!
সে শাড়িটা নিয়ে ভাঁজ খুলে তামান্নার মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিল।
তামান্নাও বেশ অবাক হলো।
তাঁকালো সিয়ামের দিকে।
সিয়াম নিজের চোখকে বিশ্বাবাস করতে পারছে না।
তামান্না তো রিং পড়ানোর দিনও জলকালো শাড়ি পড়েছিলো।
অসাধরণ তো সেদিনই লেগেছিলো।
কালো শাড়িতেও চমৎকার লাগছিলো।
কিন্তু এ লাল-শাড়িতে???
এটাকে কি বলা যায় ভেবে পাচ্ছে না সিয়াম??
শুধু তো ঘোমটা দেওয়া।
এই মুহুর্তে সিয়ামের মনে একটা প্রশ্নই উদিত হচ্ছে
‘জান্নাতের হুর দেখতে কেমন??’
আবারও মনের মধ্যে শিহরিত প্রশ্ন জেগে উঠে,
‘এই নারী কি জান্নাতী কোনো হুর??’
সিয়ামের এমন আবেগপরায়ণ দৃষ্টিতে লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে তামান্না।
সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে থাকতে না পেরে ফ্লোরের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
অথচ সিয়াম!!ওর যেনো খেয়াল নেই যে সে শপিং মলে।তারউপর পরিচিত একটা দোকানে!!
দোকানে আরও কিছু কাস্টমার ছিলো তারও সিয়ামের হাবভাব খেয়াল করে দোকানীদের সাথে সাথে মিটমিট করে হাঁসছিলো।
দোকানের মালিক অর্থাৎ সিয়ামের পরিচিত আঙ্কেল সিয়ামের কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে বলল,
“বাবা!!!শাড়ি টা কিন্তু বেশ মানাবে মামনিকে।”
ঘোর কাঁটলো সিয়ামের।
আশে পাশে তাঁকিয়ে দেখলো সবাই ওদের দুজনের দিকে তাঁকিয়ে হাঁসছে।
সিয়াম একটু আনইজি ফিল করলো। তবে সেটা অল্প কিছুখনের জন্যই।
তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে বুঝলো বেচারী লজ্জা না শুধু লজ্জায় নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে চাইছে হয়তো কোথাও।
মুখটা কেমন লাল হয়ে আসছে।
এই দৃশ্যটাও বেশ লাগলো সিয়ামের।
লজ্জা পেলে যে তামান্নাকে এতোটা অমায়িক লাগে সেটা সে বিয়ের পরেই বুঝতে পেরেছে।
অথচ এর আগে কত বছর একসাথে চললো-কখনো দেখে নি আর বুঝতে পারে নি।
কি অদ্ভুত!!!!
হঠাৎ পাশ থেকে ওদের বয়সী একটা মেয়ে এসে তামান্নার কাছে এসে বলল,
“আপু,সত্যিই আপনাকে এই শাড়িটাতে অনেক সুন্দর লাগবে।আপনি নিজেকে দেখতে চাইলে ট্রায়েল রোম থেকে পড়ে আসতে পারেন।
সত্যিই অনেক মানাবে আপনাকে।”
তারপর হেঁসে বলল,
“ট্রায়েলের সাথে সাথে বিয়ের আগে ভাইয়ারও একবার এই শাড়িতে দেখা হয়ে যাবে আপনাকে……..”
তারপর সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে আবার হাঁসলো।
কি যে লজ্জা লাগছে তামান্নার।
বিশেষ করে সিয়ামের পরিচিত লোক টা থাকার কারণে আরও বেশি লজ্জা লাগছে তামান্নার।
সে মেয়েটার সাথে ওর কিছু বান্ধবী ছিলো তারা তাদের বন্ধবীকে বলে ফেললো,
“আরে পাগল হলি না নাকী??কি বলছিস”
তারপর তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে মুঁচকি হেসে বলল,
“আপু-ভাইয়া চুস করেছে শাড়িটা।দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইয়া এটাই নিতে চাচ্ছে।তো এটাই নিয়ে নিন।আর প্লিজ একদম ট্রায়েল দিবেন না ভাইয়ার সামনে।স্পেশাল দিনটার জন্য জমা করে রাখুন। তারপর দেখবেন-ভাইয়া আপনাকে দেখে কতটা শক খায়!!!”
হো হো করে হাঁসতে লাগলো সবাই।
তামান্না না পারছিলো পালাতে না পারছিলো কিছু বলতে।
পুতুলের মতো জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছিলো পুরো।
সিয়াম বলল,
“ওকে আঙ্কেল।তাহলে এই শাড়িটাই নিতে চাচ্ছি আমি।আপুরাও যখন বলছে……”
“হ্যাঁ ভাইয়া এটাই বেস্ট হবে আপুর জন্য……”
সিয়ামের একবার ইচ্ছা হলো তামান্নাকে জিঙ্গাসা করতে কিন্তু করলো না।
ওর যে এই শাড়িটাতেই বধু বেশী তামান্নাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে তাই।
শাড়িটা কেনা হলো।
সিয়াম তামান্নাকে নিয়ে অন্য শপিং মলের উপরের তলাতে যাচ্ছে।তামান্না কিচ্ছু বলছে না।
বলবে কি করে??সে তো লজ্জাগুলোকেই কাঁটিয়ে উঠতে পারছে না।
একদিনে যদি এতো এতো কিছু হয় তাহলে কি আর স্বাভাবিক থাকা যায়।
কে জানে ভবিষ্যৎ এর দিনগুলোতে আরও কত কি অপেক্ষা করছে।
হাঁটতে হাঁটতে সিয়াম বলল,
“কি রে কিছু বলছিস না যে??!
তামান্না কিছু বলল না।
হাঁটছে শুধু সিয়ামের সাথে।
মুখ দিয়ে কথা আসছে না।
সিয়াম অবশ্য এবার রাগ করলো না।
কিছুটা হলেও মেয়েটার অবস্থা বুঝতে পারলো সে।
গাড়ি থেকে শুরু করে শাড়ির দোকান।শুধু লজ্জায় পড়ছিলো মেয়েটা।
মুঁচকি হাঁসলো সিয়াম।
না চাইতেও অনাকাঙ্খিত ভাবে বলে ফেলল,
“লজ্জা পেলে তোকে বেশ লাগে…….”
চমকে গেলো তামান্না।
চোখ ফেরালো সিয়ামের দিকে।
তবে কথাটা বলে নিজেকে বেশ ফুড়ফুড়ে আর হালকা লাগছে সিয়ামের।
ইশশশশ যদি নিজের সব অনুভুতিগুলো তামান্নাকে এভাবে সরাসরি বলে দেওয়া যেতো-বেশ হতো!!!
ভেবেই আবারও হাঁসলো।
তামান্নার মনে হচ্ছে ওর পা দুটো কাঁপছে।
কানের ভেতরে একটু আগে যে কম্পনের প্রবেশ হলো সেটা মস্তিক বেয়ে পাঁয়ের সমস্ত শক্তি কেড়ে নিচ্ছে।
তাই হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।
!
নিজেকে প্রাণপনে স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে তামান্না।
সিয়াম যে শাড়ির পরের দোকান টা তে কি কিনলো বলতেই পারবে না তামান্না।
সব গুলিয়ে গেছে তাঁর-এজন্য এমন হচ্ছে।
সিয়াম বারবার তামান্নার দিকে তাকাচ্ছে।
কিন্তু সেও কিছু বলছে না।
রাত হয়ে গেছে এটা নিয়েও তামান্না কিছু বলছে না সিয়ামকে।
হয়তো বেচারী খেয়ালই করে নি।
সিয়াম তামান্নাকে নিয়ে আরেকটা দোকানে ডুকল।
তামান্নার কাছে জানতে চাইল,
“তোর কি খারাপ লাগছে??”
মাথা নেড়ে না জানালো সে।
সিয়াম আর কিছু বললো না।
তামান্না এবার খেয়াল করল সিয়াম ওকে একটা ডায়মন্ড শপে এনেছে।
সিয়ামের দিকে তাঁকাতেই দেখল-সিয়াম একটা এয়ার রিং হাতে নিয়ে দেখছে।
খুব মনোযোগ দিয়েই দেখছে।
তামান্না এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে সিয়ামের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
অনেক করছে এবার সিয়াম!!
এসেছে শাড়ি কিনতে এখন আবার জুয়েলারি???
তবুও ডায়মন্ড।
তাই সিয়ামের হাত থেকে এয়ার রিং জোড়া নিয়ে বলল,
“কি করছিস তুই??”
অবাক হয়ে তাঁকালো সিয়াম।
তামান্না আবার বলল,
“শাড়ি কিনতে এসেছি তো??
শেষ আমাদের শাড়ি কেনা।এবার চল…..”
সিয়াম এয়ার রিং টা আবার নিজের হাতে তুলে নিলো।
সামনের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“তোকে মানাবে…..”
“কেনো শুধু শুধু আন্টির কার্ডের টাকা নষ্ট করতে চাস সব সময়।চল।”
সিয়াম চাপা স্বরে তামান্নাকে বলল,
“রিয়েক্ট করিস না। এটা কিন্তু দোকান….”
“তো???তুই রাখ….”
স্যালম্যান মেয়ে পাশেই ছিলো।
বলল,
“ম্যাম।স্যার চুস করছে।আপনি নিতে চাইছেন না??
এটা আপনাকে যে কেনো অকেশনে মানাবে।”
তামান্না মেয়েকটাকে কিছু না বলে সিয়ামকে আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,
“হ্যাঁ আমি জানি দোকান।
কিন্তু চল তুই।আমি নিবো না।”
সিয়ামও ধীর স্বরে তামান্নার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“আমি চাই তুই এই দুল টা পড়বি।ব্যাস,আর একটা কথাও বলবি না…….”
বলতে পারলো না আর কিছু মেয়েটা।শুধু দেখলো……
“আমরা এটা নিয়ে নিচ্ছি…..সো ট্রাক দিস….”
“ওকে স্যার…..”
!
“”স্যার,এইটি থাউজেন্ড…..”
“ওকে….কার্ড পে….”
“স্যার,প্লিজ……গো টু দেয়ার…..”
“সিউর….”
সিয়াম শপট্যালে গিয়ে পে করে আসলো।
হঠাৎ কি যে হলো ছেলেটার!!!
তামান্নাকে কিছু না বলেই-হাত ধরলো।
তামান্না কি বলবে??তার আগেই হেঁটে চলল সিয়াম তাঁর হাত টা ধরে।
!
গাড়িতে বসে আছে দুজন।
সিয়াম ড্রাইভ করছে।
তামান্না রাগী স্বরে বলল,
“বাড়তি আশি হাজার টাকা কেনো নষ্ট করলি??”
সামনে দিকে তাঁকিয়েই সিয়াম জবাব দিলো,
“তুই পড়বি।কোথায় নষ্ট হলো টাকা…..”
“হ্যাঁ খুব না??তাঁর পর বলবি ‘আমার মায়ের টাকা!!তুই নেওয়ার কে??’…..”
হাঁসলো সিয়াম।বলল,
“আমার মায়ের একমাত্র পুত্রবধু…..”
তামান্না থমকে গেলো আবারও।কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।
এমন সময় গাড়ি থামায় সামনের দিকে একটু হেলে পড়ল।আর কিছু বলা হলো না।
তবে বাইরে চোখ পড়তেই খেয়াল হলো ওরা কোনো মাঠে এসেছে।
অবাক হলো তামান্না!!
একে তো রাত হয়ে গেলো এতো এখন আবার সিয়াম কোথায় আনলো???
সে কিছু বলার আগেই সিয়াম বলল,
“নাম গাড়ি থেকে……..”