নতুন তুই আমি পর্ব-১৬

0
1944

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-১৬……………………….
!
তামান্নার বাসার ড্রয়িং রোমে বসে আছে সিয়াম।
সামনে অনেক রকমের মিষ্টি দিয়ে গেছে তাঁর জেঠি শাশুড়ি।
কিন্তু সিয়াম এখনো শুরুই করে নি।
“কি ব্যাপার সিয়াম??খাচ্ছো না যে…..”
“না আসলে ভাবী পেটে একদম জায়গা নেই।”
“তা বললে তো মানছি না ভাই।একটা মিষ্টি হলেও তো খেতে হবে।”
“আচ্ছা।খাবো….আছি তো কিছুক্ষণ…..”
“সে খাও।কোনো সমস্যা নেই….তবে খেতে হবে।”
!
“আমি রেডি…..”
তামান্না এসে সিয়ামের সামনে দাঁড়ায়।তামান্নার কথায় তাঁকে খেয়াল করলো সিয়াম।
সিয়াম অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
এই চারদিনে তামান্না আরোও অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।
চেহারার উজ্জলতা মনে হচ্ছে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
“হা হা হা……..চোখ লেগে গেলো নাকি রে???”
বেশ একটা অস্বস্থিতে পড়ে যায় সিয়াম।
সাথে তামান্নাও লজ্জা পেয়ে গেলো।
সিয়াম তামান্নার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
“বাবা রে বাবা।সামনে এলেই নজর লেগে যায়।এতো দেখার কি আছে।আজ বাদে কাল তো সারা দিন তোমার সামনেই থাকবে তখন মন ভরে দেখো।
এই দু-দিন তো রুসো একটু…..”
“ভাবী।দেট ইজ নট ফেয়ার!!!”
“আরে কোনটা ফেয়ার দেখা যাবে আগে মিষ্টি টা খেয়ে নাও…..”
একটা মিষ্টি খাওয়ার পর সিয়াম সেখানে আর বসে নি।
তামান্নাকে তাড়া দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসার জন্য উঠে দাঁড়ায়।
“তুই এগো,আমি জাস্ট জেঠিমনি আর মাকে বলে আসছি…..”
“আরে কি আছে তাতে??ভাবী বলে দিবে তুই চল আগে……”
বলে সিয়াম তামান্নার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে আনলো।
আসার সময় তামান্না অবাক হয়ে একবার সিয়ামের দিকে তো আরেকবার পেছন ফিরে ওর ভাবীকে দেখছিলো।
তাঁর ভাবীর সে কি হাঁসি!!!
আর সিয়াম সে সোজা সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই-একটু থামারও নাম নেই।
“আরে আস্তে।পড়ে যাবো তো…..”
থামে নি সিয়াম।একদম গাড়ির সামনে গিয়ে হাত টা ছাড়লো।
“ওহু…মা গো।হাতে ব্যথা করিয়ে দিয়েছিস একদম।”
“গাড়িতে বস…..”
“এতো তাড়াহুড়ো কেনো কেনো করছিস??”
সিয়াম সজোরে একটা ধমক দিয়ে বলল,
“গাড়িতে বস…..”
চমকে উঠে তামান্না।
ভয় পেয়ে গেছে।
কি হলো হঠাৎ??এতো রাগ!!
ভেবেই পাচ্ছে না তামান্না।
“কি হলো উঠ গাড়িতে…..”
আর কোনো কথা না বলে তামান্না উঠে বসলো গাড়িতে।
সিয়ামও উঠলো।
তামান্না সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
আর সিয়াম বাইরের দিকে।
“আমায় ধমকালি কেনো??”
ফিরে তাঁকালো সিয়াম তামান্নার দিকে।
চোখে আর রাগ দেখতে পেলো না তামান্না।
“কি হলো??তাঁকিয়ে আছিস কেনো???”
সিয়াম এখনো দেখছে তামান্নাকে।
চোখে ঘোর ঘোর লাগছে।
কি অপরূপ স্নিগ্ধতা!!!
সিয়ামের চাহনীতে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো তামান্না।
সিয়াম যেনো আরোও বড় একটা ধাক্কা খেলো।
লজ্জা পেলে তামান্নাকে আরও সুন্দর লাগে।
বহুগুণ সৌন্দর্য এসে ভীর করে ঐ মায়াবী চেহারায়।
নিজের অজান্তেই সিয়াম তামান্নার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
তামান্না বুঝতে পেরে রীতিমতো কাঁপছে।
ধীরে ধীরে তামান্নাও ফিরে তাঁকায় সিয়ামের দিকে।
দু জন দুজনের দিকে পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে আছে।
সিয়াম আরও এগিয়ে যাচ্ছে তামান্নার দিকে।
তামান্না ভয়ে চোখ বেটে ফেলেছে।
হঠাৎ পেছনে কোনো একটা গাড়ির হর্ণ বেজে উঠায় ঘোর কাঁটে সিয়ামের।
দ্রুত নিজের সীটে গিয়ে বসে যায়।
!
শপিংমলে আসা অবদি তামান্না-সিয়ামের মধ্যে কোনো কথা হয় নি।
তামান্না লজ্জায় কুকড়ে গাড়ির সাইডে গা লাগিয়ে বসে ছিলো।
সিয়াম ব্যাপার টা খেয়াল করেছিলো কিন্তু তামান্না যেনো আর বিরম্বনা বোধ না করে সেজন্য নিজে আর কথা বলতে যায় নি।
বরং মনে মনে তামান্নার এই জড়তার জন্য সে নিজেকেই দায়ী করছে।
যদি সে তামান্নার এতটা কাছাকাছি না ঘেষতে সেরকম ভাবে তখন তাহলে তামান্না নিশ্চয় স্বাভাবিক থাকতো।
আবার কিছু একটা ভেবে গাড়িতে আনমনেই হাঁসছিলো সিয়াম।তখন অবশ্য স্টেয়ারিং এর ডান পাশের গ্লাসটাতে তামান্নার কাঁচুমুচু মুখটা বেশ অন্য রকম লাগছিলো ওর কাছে।
তবে ভাবনা টা ছিলো সে দিন রাতে তামান্না নিজের ইচ্ছায় সিয়ামের বুকে হামলে পড়েছিলো।হোক সেটা ভয়ে।
আর কি সুন্দর ভরসা বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।
অবশ্য এই বিষয়টাতে তামান্না যে সিয়ামকে ভরসা করতে জানে সেটা সিয়াম শতভাগ বুঝে গিয়েছিলো।
ভালো লাগে এসব ভাবতে সিয়ামের।
অনুভুতিগুলো কুড়িয়ে নিজের মাঝে জমাতে বেশ লাগে আজকাল।
“কি রে??শুধু হাঁটবি ই নাকি কোনো দোকানে ডুকবি??”
তামান্না তাঁকালো সিয়ামের দিকে।
কোথায় যাবে কি বলবে কিছুই মাথায় আসছে না।
তামান্নাকে এরকম চুপ থাকতে দেখে সিয়াম বলল,
“এরকম হাবার মতো আমার দিকে তাঁকিয়ে না থেকে চল সামনের দিকে।থার্ড ফ্লোরে বেনারসির দোকান। চল…..”
এরকম ধমকের সুরে কথা বলায় আশেপাশের কিছু লোক ওদের দিকে তাঁকিয়ে কিছু একটা বুঝার চেষ্ঠা করলো।
বিষয়টা দুজনেরই খেয়ালে এসেছে।
তামান্নার এই মুহুর্তে খুব কান্না পাচ্ছে।সব সময় কি হয়!!!
এমন ধমকিয়ে কথা বলা লাগে!!
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই এমন উল্টাপাল্টা রাগ দেখানো হচ্ছে মেয়েটার উপর।
যখন-তখন যেখানে-সেখানে!!!
অবশ্য সিয়াম আগেও এমন করতো তামান্নার সাথে।
যে বিষয়ে রাগ হলে সেটার প্রভাব একটু হলেও তামান্নার উপর পড়তো।
তবে বিয়ের কথা উঠার পর থেকে সিয়ামের রাগ গুলো যেনো কারণ ছাড়া হয়ে গেছে।
সব সময় তামান্নাকে ধমকানো ওর দায়িত্ব ই হলে গেলো নাকি কে জানে।
ধমক খেয়ে কোনো কথা বলল তামান্না।
এমনিতে ও কারও রাগের সময় কথার উত্তর দেয় না।
তার উপর তো এটা শপিংমল সে তো জোড়ে কথাই বলবে না।
তাই চুপচাপ এগিয়ে গেলো সিড়ির দিকে।
সিয়ামও সাথে চললো।
সিয়াম-ই ওর চেনাশোনা একটা দোকানে নিয়ে গেলো তামান্নাকে।
দোকান টা শপিং মলের মাঝে বেশ বড়।বেনারসির দোকান হয়তো সেজন্য।
“আরে,সিয়াম যে।কি খবর ব্যাটা???”
“এই তো আঙ্কেল ভালো।কেমন আছেন??”
“আলহামদুলিল্লাহ। তা হঠাৎ মলের এই শপে???সাথে কে??”
ধুক করে উঠলো তামান্নার ভেতরটা।
সিয়াম কি উত্তর দিবে তাই ভেবে।
সাথে সাথে আবারও ভেতরে একটা আলোড়ন বয়ে গেলো সিয়ামের উত্তর শোনে।
কারণ মধ্যবয়সী দোকান মালিকের প্রশ্নের উত্তরে সিয়াম মাথা চুলকে মুঁচকি হেঁসে উত্তর দিয়েছে,
“ওয়াইফ………”
“ও মাই গড।কি বলে???”
মুঁচকি হাঁসলো সিয়াম।
তামান্না লজ্জায় রাঙা হয়ে নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
অদ্ভুত রকমের ভালো লাগছে সিয়ামের মুখ ‘ওয়াইফ’ শব্দ টা শোনে।
“দাওয়াত পেলাম না।কবে কি হলো??”
“আসলে আঙ্কেল শুধু এনগেজেমেন্ট টা।ওয়েডিং এর দাওয়াত ঠিক পৌঁছে যাবে।সামনের বিশ তারিখ।কার্ড পেয়ে যাবেন।ওর জন্য বিয়ের শাড়ি কিনতেই এখানে আসা।”
“ও আই সি……..বেশ বেশ।দুজনে মিলে চুস করার ডিসিশন!!ভেরি গুড……তা মামনি নাম কি তোমার??”
তামান্না সিয়ামের দিকে একবার তাঁকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার লোকটার দিকে তাঁকালো।
গলটা একটু চেপে বলল,
“জ্বী।সিদরাতুল মুনতাহা তামান্না।”
“বাহ্…খুব ভালো।আর কিছু জিঙ্গাসা করছি না মা।লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।বিয়ের দিন তোমাদের বাবা মায়ের কাছেই সব আলাপ করে নিবো বাকী টা।তোমরা শাড়ি দেখো……”
লোকটা দোকানের স্যালম্যানদের সবচেয়ে ভালো বেনারসিগুলো ওদের দেখাতে বললেন।
তামান্নার একে তো মন খারাপ ছিলো সিয়ামের ব্যবহারে।
তারপর সিয়ামের চেনা লোকের দোকানে শাড়ি দেখা।
নিজের বিয়ের শাড়ি!!!!
লজ্জা লাগছে এবার এদের সামনে।
কি আর শাড়ি দেখবে??
নিজেকেই তো ঠিক করে রাখতে পারছে না তামান্না।
কিন্তু সিয়াম খুব মনোযোগ দিয়ে শাড়ি দেখছে।
কোন শাড়ি টা তাঁর ইচ্ছেপাখিকে সব চেয়ে বেশী মানাবে সে শাড়িটাই বেছে নিতে চাইছে এতো শাড়ির ভীরে।
💜💜💜💜💜💜💜💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here