নতুন তুই আমি পর্ব-১৫

0
1896

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-১৫……………………….
!
সামনের বিশ তারিখ সিয়াম-তামান্নার বিয়ে।
দুজনেই বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান।
তাই দুই বাড়িতেই আয়োজন টা হচ্ছে চরম প্রকারের।
স্বাভাবিক ভাবেই কাটছে সিয়াম-তামান্নার দিনকাল।
ঘুড়তে যাওয়ার পর থেকে সিয়ামের মনে আবেগগুলো যেনো বেশী রকম খেলা করছিলো।
সেই খোলা চুল থেকে শুরু করে বুকে ঘুমিয়ে থাকার দৃশ্য-গ্রাস করে নিচ্ছে সিয়ামকে।
রোজকার অতি সাধারণবেশী তামান্নাকে আজকাল অসাধারণ লাগে।
চোখ টা বারবার না চাইতেও ঐ নিষ্পাপ মুখটার দিকে চলে যায়।
আর অপর দিকে তামান্না!!!
চুপচাপ খুব সিয়ামের সামনে।
বিশেষ কারণ লজ্জা তবুও যখন দুজন একসাথে থাকে দুজনেই ভুলে যায় যে ওরা স্বামী-স্ত্রী।
বন্ধুর মতোই হাঁসি-ঠাট্টা আর ঝগড়াতে মেতে উঠে।
কিন্তু যখন দুজনে আলাদা থাকে।বিশেষ করে রাতের গভীরতায়-মনের মাঝে কোথাও দুজনেরই অন্য রকম এক সারা জাগে।
মৃদু বাতাস যেমন প্রকৃতিতে হালকা করে নাড়িয়ে দেয় ঠিক তেমনি সিয়াম-তামান্নার অনুভুতিগুলোও ওদের দুজনের মনে মৃদু আলোড়ন তৈরী করে।
যার কারণ দুজনে খুব করে খুঁজেও পায় না।
অনেক ভাবার পরও ভালোলাগা যে শুরু হচ্ছে সেটা ধরতে পারে না।
হয়তো ভালোবাসার প্রথম সোপান এমনি হয়।
অবেচন মনের গোপ্ত ভালোলাগার মৃদু-মিষ্টি অনুভুতি।
!
আর মাত্র দুই দিন পর সিয়াম-তামান্নার বিয়ের কাজ শুরু হবে।
অর্থাৎ আঠারো তারিখ।
দুদিন আগে থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হবে বিয়ের।
এমনটাই তো হয়।
সিয়াম-তামান্নার ক্ষেত্রেও তাই হবে।
আজ ষোলো তারিখ।
আর মাত্র দু দিন পর গায়ে হলুদ।তারপর মেহেন্দি।
আর এসব ঘিরেই সপ্তাহ খানেক ধরে দু বাড়িতে বিশাল রকমের ব্যবস্তা।
বিশেষ করে তামান্নার বাড়িতে।
বিয়ে সেন্টারেই হবে কিন্তু হলুদ আর মেহেন্দি হবে বাসায়।
তাই দুই বাড়ি সেজে উঠছে বিয়ের সাজে।
তামান্নাকে এই সপ্তাহের প্রত্যেক দিন (চার দিন হলো) পার্লারে নিয়ে যাচ্ছে ওর ভাবী।
যদিও তামান্নার রূপের কোনো কমতি নেই।
তবুও পুরো সপ্তাহ ভার্সিটি বাদ তামান্নার।শুধু রূপ চর্চাই করিয়ে যাচ্ছে ওর ভাবী।
তামান্না পুরো সপ্তাহ মানে এই চার দিন থেকে ক্লাস মিস দিলেও সিয়ামের ক্লাস মিস হচ্ছে আজ থেকে।
তামান্নার সাথে আজ চার দিন দেখা নেই।
ক্লাস করছে না কেনো একথা অনেকবার জানতে চেয়েছে ফোনে সিয়াম কিন্তু তামান্না লজ্জার কারণে বলতেই পারে নি।
কি বলবে??বলবে-রূপচর্চা করানো হচ্ছে-তাই যাচ্ছে না???
কি করে বলবে??
লজ্জাতেই তো মরে যাবে বেচারী।
তবুও কাল রাতে যখন বারবার সিয়াম জিঙ্গাসা করছিলো-‘কেন আসছিস না ক্লাসে?’
তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই তামান্না উত্তর দিয়েছিলো,
“বাসা থেকে ক্লাস করতে দিচ্ছে না এই কয়েকদিন….”
তারপর কোনো রকম কথা পেঁচিয়ে ফোন রেখে দেয়।
আজ সিয়ামও ক্লাসে যায় নি।
যায় নি বলতে ভুল হবে,বলতে হবে ওর মা যেতে দেয় নি।
সিয়াম যে বাসায় থেকে খুব একটা লাভ হয়েছে তা না।
বাসার কোনে কাজে ওর নজর নেই।সেই সকাল এগারোটায় ঘুম থেকে উঠেছে তারপর শুধু গোসল করে খেয়েছে।ব্যাস তারপর থেকেই ইন্টারনেটে পড়ে আছে।
এখন বিকাল তিনটা তবুও ওর নজর লেপটপ স্কিনে।
“কি রে বাবা??তোর কি কোনো বুদ্ধিসুদ্ধি কোনো কালেই হবে না??”
“কেনো মা??”
“এই যে,আমার সাথে কথা বলছিস কিন্তু তোর খেয়াল তবুও লেপটপে।কি করছিস এতো??একটু তো কাজ করলেও পারিস।তোর কি আরোও পাঁচটা ভাই আছে যে বাসার কাজ করবে??তোর বাবা আর খালু কি এসব ডোকেরেশনের এতো কিছু বুঝে??কোথায় আজকাল কার ছেলে তুই!!নিজের বিয়েতে নিজের বাড়ির সাজ টা তো একটু দেখিয়ে দিতে পারিস।তোকে তো হাতে হাতে কাজ করতে হচ্ছে না শুধু সামনে থাকলি আর দেখিয়ে দিলি।সেটাও যদি তুই না করিস।তাহলে কি করে হবে বাবা বল তো??”
সিয়াম এবার লেপটপ টা বন্ধ করলো।
শুয়া থেকে উঠে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“মাই ডিয়ার মা,বাদ দেই না সেসব।থাকুক বাড়ি বাড়ির মতো।সাজানো তো হচ্ছে।ডেকোরেশনের লোকরা তো আর খারাপ সাজাবে না??তাই না??”
“হ্যাঁ।তুমি সেই ভরসাতেই থাকো।আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে আর আমি কি আলাদা কিছু আশা করতে পারি না??”
“মা,মা!!!মন খারাপ কেনো করছো??সব তো ভালোই হচ্ছে…..”
“হ্যাঁ হচ্ছে।তুমি শুধু বিছানায় শুয়ে থাকো।আমার তো অন্য রকম একটু স্বাধ আছে রে বাবা….”
“তা কি স্বাধ শুনি??”
“তুই আজকে এখন তামান্নাকে নিয়ে বের হবি…….”
সিয়াম থ।মা কে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বসলো।
“হ্যাঁ।অবাক হওয়ার কি আছে??”
“তুমি এইকথা বলার জন্য এতো কষ্ট করে এতসব কথা সাজিয়ে এনেছিলে??”
“চুপ কর তো……।দেখেছিস তো বিয়ের সব কেনাকাটা শেষ শুধু আমার বৌ-মায়ের বেনারসি টা বাকী আছে।ওরা ওদের বাড়ির মেয়ের জন্য কিনেছে।তাতে কি??আমাদের বাড়ি থেকে তো যাবে।তো আমি চাচ্ছি সেটা তুই আর তামান্না দুজনে পচ্ছন্দ করে কিনবি।”
“মা!!তুমি ঠিক আছো তো…..”
“একদম।যা বলছি তাই হবে।আমি তামান্নার মাকে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছি…..”
“কিন্তু মা……..”
“এই নে কার্ড।কোনো গন্ডগোল যেনো না হয়।বাসায় গিয়ে ড্রপ করে নিয়ে যা তামান্নাকে…….”
আর দাঁড়ায় নি সিয়ামের মা।
সোজা রোম থেকে বেরিয়ে এলেন।
সিয়াম আর কি করবে।
কতক্ষণ দম ধরে বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ায়।
চিনে ওর মাকে সে।যে মহিলা!!
যা বলবে সেটা করিয়েই ছাড়বে।
তাছাড়া অনেক দিন তামান্নার মিষ্টি মায়াবী মুখটাও দেখা হয় না।
সব-মিলিয়ে মায়ের চাপ আর নিজের ইচ্ছার ভিত্তিতে সিয়াম রেডি হয়ে নিলো।
গাড়ি বের করে দিতে বলেছে কিন্তু চালাবে সে নিজে।
গন্তব্য ইচ্ছেপাখির বাসা।
💜💜💜💜💜💜💜💜💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here