#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
!
পর্ব:-১৯……………………….
!
আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
নিজের কাছেই চমৎকার লাগছে নিজেকে।
যখন ব্যাগ টা খুলে-
এই শাড়িটা সাথে ডায়মন্ডের সে দুল,আর একটা ছোট্ট কাগজ।
শাড়িটা দেখেই চমকে গিয়েছিলো তামান্না।
তবে কাগজের ভাঁজ খুলে যখন সিয়ামের লেখাগুলো পড়লো তখন বুকের ভেতরের চমকানো বিদ্যুৎ
হঠাৎ করেই সমুদ্রের উথাল ঢেউরূপে বয়ে গিয়েছিল।
কাগজ টা আবার বের করলো তামান্না।
আবার পড়তে ইচ্ছা করছে।
তাই পড়ছে,
“অবাক হচ্ছিস তো??
হওয়ারই কথা।তবে আমার গিফ্ট চাই।আশা করি শুধ করবি তুই।আর প্লিজ চুল টা খোলা রাখিস।আমি ছাড়া তো আর কেউ নেই এখানে।………
গাড়িতে তো শাড়ি পড়তে পারবি না।বা পাশে তাঁকা দেখ ছোট একটা ঘর।যা জানার পরে জানিস,আগে আমার গিফ্ট টা চাই…….”
কাগজটা পড়ে ভাঁজ করে রাখলো তামান্না।
আয়নায় আবার নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
গিফ্ট চেয়েছে সিয়াম।
তা তো দিতেই হবে।তবে এই গিফ্ট টা সিয়ামকে স্বামী হিসেবে দিবে আজ তামান্না।
অনুভুতির গভীর অন্তরালের রহস্যময় আবেশের ছোঁয়া অনুভব করছে তামান্না।
সিয়ামের দেওয়া শাড়ি-গায়ে জড়িয়ে আছে সে;তাই!!
ঘর টা থেকে বের হওয়ার সাহস হচ্ছে না তামান্নার।
কি করবে??সিয়ামের সামনে যেতে এতো লজ্জা লাগছে???
তবে কি শুরু হলো প্রেম??
ভালোলাগার অনুভুতিগুলো কি ভালোবাসায় ছেয়ে গেলো??
প্রেম যদি না ই হবে তবে লজ্জা কেনো!!!
উত্তর খুজে পায় না তামান্না।
!
মেসেজের টুংটাং শব্দে ভাবনা থেকে ফিরে আসে তামান্না।
স্ক্রিনে চোখ ফিরিয়ে দেখল সিয়াম এসএমএস করেছে।
“I am waiting for my gift……”
মুঁচকি হাঁসলো তামান্না।
এতোটা উতলা হয়ে উঠেছে সিয়াম ওর জন্য!!
ভাবতেই অসম্ভব তৃপ্ততা কাজ করেছে।যা কখনো কাউকে কোনে ভাবে বুঝতে পারবে না তামান্না।
আর দেরী করল না সে।
চোখ বুঝে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বেরিয়ে এলো।
মাঠের দিকে চোখ যাওয়াতেই সিয়ামকে দেখতে পেলো।
উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হয়তো কচুরিপানা দেখছে মনোযোগ দিয়ে।
তামান্না যেতোই এগিয়ে যাচ্ছে ততই ভয় করছে তাঁর।
“কি হবে???আল্লাহ্ বাঁচাও আমায়….ভয় কেনো করছে???”
মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছে তামান্না।
সিয়াম এখনো বুঝতে পারে নি তামান্না ওর পেছনে দাঁড়িয়ে।
গলাটাও ঝাড়তে পারছে না তামান্না।
তা হলে হয়তো সিয়াম হয়তো বুঝতে পারতো যে তামান্না এসেছে।
কিন্তু সেটাও তো হচ্ছে না।
হঠাৎ এই মৃদু বাতাসের সাথে মিষ্টি একটা সুবাস পাচ্ছে সিয়াম।
কিন্তু কিসের সুবাস ঠিক ধরতে পারছে না সে।
হঠাৎ মাথায় তড়িৎ গতিতে কিছু একটা খেলা করল।
পেছন ফিরে তাঁকালো সিয়াম।
চাঁদের আলোয় খুব ভালোভাগে দেখতে পাচ্ছে তামান্নাকে।
চোখ লেগে যাচ্ছে সিয়ামের।
এ কাকে দেখছে সে!!!
চিরচেনা মানুষের এতো মায়াবী একটা রূপ আছে??
আর একজন ছেলে হয়ে সে রূপ কখনো উপলব্ধি করতে পারে নি সে!!
আজ পারছে…..ভেতর টা ধুকধুক করছে সিয়ামের।
গলা শুকিয়ে আসছে।
উপহার চাচ্ছিলো সে।
কিন্তু সেই উপহারের যে এতো তেজী রূপ তা সে ভাবতেই পারে নি।
বেগুনী রঙের শাড়ি,কানের ডায়মন্ডের দুল,হাতে পাথরের ওরমামেন্ট,গলায় ছোট্ট একটা নেকলেস,খোলা চুল!!!
সব সিয়ামের চুস করা…..।
তবে তামান্না যে চুল টা এভাবে খুলে রাখবে ভাবতেও পারে নি সিয়াম।
ঢুক গিললো সিয়াম।
আর তামান্না তো লজ্জায় চোখ ই রাখতে পারছে না সিয়ামের দিকে।
সিয়ামের মাঝে একটা ঘোর কাজ করছে।
যে ঘোর টা আজকাল বড্ড বেশি তাড়া করে।
তামান্নাকে দেখলেই এননটা হয়।
কেনো যে হয়???বুঝেও যেনো সব এলোমেলো হয়ে যায় সিয়ামের।
একটু এগিয়ে গেলো সিয়াম।
খোলা হাওয়ায় তামান্নার খোলা চুলগুলো উড়ছে।
দেখে মনে হচ্ছে কোনো কেশকন্যা।
সিয়াম আলতো করে তামান্নার গালে হাত রাখলো।
সাথে সাথে চমকে উঠে তামান্না।
সিয়াম কমশ্র তার হাতটা তামান্নার গালে স্লাইড করে কানের পাশে নিয়ে যাচ্ছে।
পুরো শরীর শিউরে উঠছে তামান্নার।
মাটি থেকে চোখ সরিয়ে সিয়ামের চোখে চোখ রাখলো।
কেমন যেনো অন্য রকম দৃষ্টি!!
কি নেশাতুর!!!কি আবেগী!!!
না আর সাহস নেই তামান্নার।
পারবে না ঐ চোখে চোখ রাখতে।
আবেশে চোখ দুটো নিজে থেকে বন্ধ হয়ে এলো।
সিয়ামের খেয়াল হলো তামান্নার চোখে কি সুন্দর করে কাজল আঁকা।
মৃদু কাঁপছে তামান্নার শরীর সেটাও ধরতে পারছে সে।
তবে কি যেনো কি হয়ে যাচ্ছে সিয়ামের।
হারিয়ে যাচ্ছে সে।কোনো এক মায়াপুরীতে।
চোখ গেলো গোলাপী রঙের ঠোঁট দুটোতে।
ইশশ!!সিয়াম সব নিয়ে এসেছে কিন্তু লিপস্টিক টা আনে নি।
আনলে ভালো হতো।সেটাই ভাবলো সিয়াম।কিন্তু না!!
পর মুহুর্তে ভাবলো লিপস্টিক আনলে হয়তো এই প্রাকৃতিক গোলাপের পাপড়ি দুটোর প্রকৃত নন্দন সে পেতো না।
ঘোর টা যেনো বেড়ে যাচ্ছে।
সিয়াম তামান্নার এতোটা কাছে যে তামান্নার ভারী নিশ্বাসগুলো সে উপলব্ধি করতে পারছে।
সিয়ামের বাকী হাত টা তামান্নার কমড়ে চলে গেলো।
শাড়ির উপর দিয়ে হলেও কমড়ে সিয়ামের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে তামান্না।
খোলা চুলগুলো খেলা করছে তামান্নার গালের উপর এসে।
সিয়াম ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিতেই তামান্না আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।
বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে চমকে উঠে সিয়ামের থেকে একটু দূরে সরে গেলো।
আর একটু হলেই বোধহয় হয় মরে যেতো বেচারী।
এমনটাই ভাবছে সে।
মনে হচ্ছিলো সিয়ামের ফুঁ দেওয়ার সাথে সাথেই তার শ্বাস আটকে গেছে।
তাই জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে এখন।
আর সিয়াম!!!কি হলো তার সাথে-বুঝতে একটু সময় নিয়ে নিয়েছে।
তামান্না যে এভাবে সরে যাবে ও বুঝে উঠে নি।বুকের মাঝে একটা ধমকা হাওয়া সজোরে আঘাত করছে।
তামান্না সরে যাওয়ার সময় ওর লম্বা চুলগুলো বুকের মাঝে এমনভাবে আচড় কেটে গেছে সিয়ামের মনে হচ্ছে বুকে কোনো প্রেমাতালী কেশবতী রাজকন্যা ঝড় তুলে দিয়ে গেছে।
সিয়াম মুঁচকি হেঁসে তাঁকিয়ে আছে তামান্নার দিকে।
মুখ টা দেখতে পারছে না।
তবে পেছন ফিরে থাকায় চুলের সৌন্দর্য টা সিয়ামকে আবারও সেই প্রথম দিনের মতো মহোমিত করছে।
!
কিছুক্ষণ পর সিয়াম নিজেই তামান্নার কাছে চলে গেলো।
তামান্না এখনো সেই আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে।
পেছন থেকে সিয়াম তামান্নার দু হাতের উপর হাত রেখে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো।
শিউরে উঠলো তামান্না।
“কি করছে সিয়াম!!
তাহলে তো মরেই যাবো…..”
ভাবতেই চুলের মাঝে গরম নিশ্বাস উপলব্ধি করলো।
সিয়াম তামান্নার চুলের গন্ধ নিচ্ছে।খুব গভীর ভাবে না খুব হালকা করে নাক টা ছুইয়ে রেখছে।
তবে ইচ্ছা হয় এই চুলে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে।
কিন্তু কেনো যেনো সাহস হয় না।তামান্না যদি কিছু উল্টো ভাবে!!!!
তাই অপেক্ষা করবে সেই দিনের জন্য।
নিজেকে ঠিক সামলাতে চেয়েও পারছে না সিয়াম।
বারবার হার মেনে যাচ্ছে এমন রূপবতীর রূপমায়ায়।
তবে এত আর্কষণ কেনো হচ্ছে???
ভালোবাসে বলে!!!
হয়তো তাই হবে।
আর দেরী করতে চায় না সিয়াম।
নিজের সুপ্ত অনুভতিগুলো জানতে চায়।
সিয়াম এসব ভাবতে ভাবতে
নিজের মাথায় হঠাৎ অন্য কিছু নিয়ে আসলো।
মুঁচকি হেঁসে,
তামান্নার চুলগুলো একসাইডে নিয়ে কানের সাইডে একটা কচুরিপানার ফুল গুজে দিলো।
“আমাকে আমার গিফ্ট টা দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোকে।তার জন্য এবার এই রির্টান গিফ্ট টা দিলাম…..”
সিয়াম এতোটাই কাছে এসে কথাগুলো বলছিলো যে প্রতিটা শব্দ চয়নে তামান্না কেঁপে উঠছিলো।
সিয়াম তামান্নার বন্ধ করা চোখ দুটোর দিকে তাঁকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
তারপর তামান্নাকে ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।
দু চোখে ফুঁ দিয়ে বলল,
“চোখ তো খুল এবার।আর কত লজ্জা পাবি????”
ইশশ আবারও ফুঁ!!!
তামান্নার কি যেনো হয় এতে।মনে হয় পুরো শরীরে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
এবার রীতিমতো কাঁপছে তামান্না।
সিয়াম দুষ্টু হেঁসে আবার তামান্নার খুব কাছে এসে দাঁড়ালো।
আবারও চোখের পাতায় ফুঁ দিচ্ছে….তবে একটু না অনেক সময় নিয়ে ধীরে ধীরে দিচ্ছে।
তামান্নার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
কমশ্র কম্পন টা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
পারছে না আর!!!!
কিন্তু এভাবে তো চোখও খুলতে পারছে না।
আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না বেচারী।
সম্ভব না।
তাই ঝাপটে ধরলো সিয়ামকে।
মুখ লুকালো সেই রাতের মতো।সে দিন ভয় আর ভরসায়।
আর আজ লজ্জায়!!!
তামান্না জড়িয়ে ধরা মাত্রই সিয়াম বুঝতে পারলো তামান্নার শরীর অসম্ভব রকম কাঁপছে।
সে ও তামান্নার পিঠে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো।
তবে এবার আরও বেশি করে বুঝতে পারলো যে মেয়েটা কাঁপছে।
হাঁসলো সিয়াম।
পরম আবেশে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো।
এই প্রথম কোনো পুরুষের বাহুডোরে বন্ধি হলো তামান্না।
এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে তার মাজে।
‘মাম্মাম তুমি ঠিক বলছো।আমি পাল্টে যাচ্ছি।তুমি তো বলেছিলে আমি নাকি সিয়ামের ছোয়ায় বদলে যাবো,মায়া পড়ে যাবো ওর।ওর সাথে বিয়ে হওয়ার পর নাকি আমার সমস্ত চিন্তা জোরে শুধু সে ই থাকবে…তাই হচ্ছে মাম্মাম…তোমার মেয়েকে বদলে দিচ্ছে এই ছেলে।চিন্তা জোরে বসবাস শুরু করছে মাম্মাম।’
মনে মনে ভাবছে তামান্না।
পরম শান্তি লাগছে সিয়ামের বাহুডোরে।
!
কিছুক্ষণ পর সিয়াম কি যেনো কি ভেবে ছেড়ে দিলো তামান্নাকে।
তামান্নাও সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
মনটা তামান্নার একটু খারাপ হয়ে গেলো।
নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সিয়ামের দিকে তাঁকানো যাবে না এই মুহুর্তে।
‘ইশশশ।কি হতো আর একটু সময় বুকে রাখলে!!বদমাইশ একটা…..’
মনে মনে বকতে শুরু করলো তামান্না।
সিয়াম ফোন টা বের করে দেখলো সাড়ে নয় টা বাজে।
তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো সাথে সাথে।
এই মেয়ের দিকে বেশি নজর দেওয়া মানেই আটকে যাওয়া।
তাই বেশীক্ষণ তাঁকানো যাবে না-বলে ঠিক করলো সিয়াম।
গাড়ির দিকে চোখ রেখে তামান্নাকে বলল,
“সাড়ে নয়টা বাজে।অনেক রাত হয়েছে।চল……”
বলে সিয়াম এগিয়ে গাড়ির দিকে।
তামান্নাও আর দাঁড়ালো না।
সিয়ামের পিছু পিছু গাড়িতে গিয়ে বসলো।
“ইশশ!!সত্যিই অনেক রাত হয়ে গেছে নিশ্চয় মাম্মাম টেনশন করছে…..”
কিন্তু যেই না নিজের ফোন টা হাতে নিলো।ওমনি তামান্নার পুরো ধারণাটা বদলে গেলো।
‘আজব তো!!বাসা থেকে নো কল??কেউ ফোন করলো না।
না মাম্মাম,না ভাইয়া!!কেউ না???’
অবাক হয়ে ভাবছে তামান্না।
আর সিয়াম খুব ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেইন রাস্তার দিকে।