নতুন তুই আমি পর্ব-২০

0
1929

#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-২০………………………..
গাড়ি চলছে।সিয়াম সামনের দিকে তাঁকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
আর মাঝে মাঝে কিছু একটা ভেবে মুঁচকি হাঁসছে।যেটা তামান্নার দৃষ্টিতে পড়ছে না।
পড়বে কি রে???
সে তো জানালা খোলে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছে।
শহরের বুকে রাতের আঁধার কাটানোর জন্য কত আয়োজন!!!
তার পরেও যেনো আলো আধুরী ভাব রয়ে গেছে।
চাঁদ ও আছে আজ।
পূর্ণ না তবে আর কিছু দিন পরেই বোধহয় পূর্ণিমা লেগে যাবে।
রাত দশটার একটি বেশি।
এখন অবশ্য ঢাকা আস্তে আস্তে ব্যস্ততার অবসান ঘটাতে চলল।তাই বাস-টার্ম টাও কমতে শুরু করেছে।
জ্যামে পড়তে হচ্ছে না তাদের।
তামান্না খুব উপভোগ করছে জার্নি টা।এতো সুন্দর একটা পরিবেশের ছোঁয়ায় সে একটু আগে সিয়ামের আবেগসঞ্চার ছোঁয়ার কথাটাও ভুল গেছে এই মুহুর্তে।
তবে সিয়াম হয়তো জার্নির চেয়ে তামান্নাকে বেশি উপভোগ করছে।
তা না হলে বারবার সামনে থেকে চোখ ফিরিয়ে দেখতো না।খোলা চুল!!!বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ে যাচ্ছে।সিয়ামের প্রিয় দুল টাও তামান্নার কানে হালকা করে কেঁপে উঠছে-মিষ্টি একটা ঘ্রাণ!!!এসব কিছু উপভোগ করছে সিয়াম-বারবার বিমোহিত হয়ে উঠছে।
মনে হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে যেনো বিমোহিত মনটা বড্ড বেশী আকুপাকু করছে।
কিসের জন্য??
সিয়াম মুঁচকি হাঁসল।
মনে মনে বলল,”প্রেমে পড়লি নাকি রে মন???”
তারপর আবার তাঁকালো তামান্নার দিকে।সে এখনো জানালার বাইরে-ই মনোযোগ দিয়ে আছে।হাঁসলো সিয়াম।
বলল,
“কি দেখছিস??”
তামান্না উত্তর দিল না।
হয়তো শোনতে পায় নি।
তাই সিয়াম আবারও ডাকল,
“তামান্নু!!!!!”
এবার শোনেছে তামান্না।
একটু জোরে করে ডেকেছে সিয়াম।হঠাৎ করে এভাবে ডাক শোনে একটু চমকে উঠল তামান্না।
চমকে উঠে পাশ ফিরিয়ে বলল,
“হ্যাঁ……কিইই???”
“আরে!!!!ভয় পেলি নাকি??”
তামান্না নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“নাহ্…..না তো।”
“আচ্ছা!!!যেভাবে নেঁচে উঠলি সিটে বসে।তাই আর কি……”
তামান্না চোখ বড় বড় করে তাঁকালো সিয়ামের দিকে।
বলল,
“তুই!!!!!!সব সময়???তাই না??আমার সাথে না লাগলে তোর হয় না??”
শরীর কাঁপিয়ে হাঁসল সিয়াম।
তামান্নার রাগ আরও বেড়ে যায়।
“সিয়াম!!!!”
“আরে রাগিস না বইন…..রাগলে তোকে পেতনীর মতো লাগে একদম……হা হা হা….”
হাঁসির মাঝেই হঠাৎ করে হাঁসি টা বন্ধ করে ফেলল সিয়াম।
তামান্নাও কিছু একটা ভেবে সংকোচিত হলো।রাগ টা উধাও হয়ে সংকোচন বোধ চলে এসেছে।
আর সেটা হয়েছে সিয়ামের বলা একটা শব্দ ‘বইন’ যেটা ছোট বেলা থেকে অনেক ঠাট্টা মসকরা করার সময় সিয়াম বলে ফেলেছে।
তবে আজ এই শব্দ টা নিছক ই যে একটা ভুল প্রয়োগ হলো!!
সেটা ওরা দুজনেই বুঝতে পেরেছে।
গাড়ি চলছে।অথচ কেউ কোনো কথা বলছে না।
বারবারের মতোই সিয়ামকে কোনো কিছু আবার বেশীক্ষণ চুপ করিয়ে রাখতে পারে না।
সে যত রকমের সংকোচ ই হোক না কেনো!!!
আর তামান্নার সামনে তো চুপচাপ থাকার প্রশ্নই উঠে না।
তাই কিছুদূর আসতেই একা একা বিনা কারণে হাঁসতে শুরু করল সিয়াম।
অবাক হয়ে তাঁকায় তামান্না।
এরকম হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া হাঁসির কি মানে হতে পারে-সেটা বুঝতে পারছে না সে।
বাধ্য হয়ে সংকোচ কাঁটিয়ে জানতে চাইল,
“পাগল হলি নাকি তুই??এভাবল হাঁসছিস কেনো??”
সিয়াম হাঁসি বন্ধ করল না।
এমনিতে আগে রেগে ছিলো তামান্না।তারউপর এমন গা জ্বালানো হাঁসিতে মেজাজ টা আরও ধরে যাচ্ছে মেয়েটার।
শেষমেষ না পেরে দু হাতে ঘুষি দিতে শুরু করল সিয়ামের হাতে।
সিয়ামের হাতটা স্টেয়ারিং এর উপর ছিলো।তাই বারবার গাড়ি এদিক-সেদিক ঘুরতে লাগল।
সিয়াম হাঁসি বজায় রেখেই বলল,
“আরে কি করিস!!!আস্তে…….”
“খারাপ!!কু্ত্তা!!বিলাই!!চিকা!!ইঁদুর!!রামছানা!!!….কেনো হাঁসছিস এভাবে তুই???বদমা……আআআআ”
আঁতকে উঠে তামান্না।
এতক্ষণে সিয়ামের হাঁসি মুখ টা অন্যরূপে রূপান্তরিত হলো।
কোনো মতে হাল টা ধরে ফেললো সিয়াম।
তামান্নার ঘুষিগুলোতে মজা নিচ্ছিলো সিয়াম আরও বেশি।
আর স্টেয়ারিং টা তো এলোমেলো হচ্ছিলোই।
তারউপর সিয়াম তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে হাঁসতে গিয়ে অমনোযোগী হয়ে প্রায় রাস্তার একদম সাইডে চলে এসেছিলো।
সেজন্যই ঘটনা বুঝা মাতই আঁতকে উঠে তামান্না।
আর সিয়াম চিন্তিত হয়েও ঠিক সামলে নেয় সবটা।
গাড়ি টা সাথে সাথে দাঁড় করালো সিয়াম।
তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে বুঝল-মেয়েটা ভয় পেয়েছে।
“কি রে ভয় পেয়েছিস??”
সিয়ামের দিকে তাঁকাল না তামান্না।বাইরের দিকে মুখ করে শাড়ির আঁচল ধরে আঙ্গুলে পেঁচাতে লাগলো।
“কি রে??সরি…..আমি অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম।”
তামান্না কিছু বলল না।
একবার তাঁকালোও না।
সিয়াম বলল,
“আমার উপরি কেনো চাপ দিচ্ছিস??ঘটনা কি পুরোটাই আমার জন্য হলো??তোরও দোষ আছে….তুই আমার হাতের উপর যা নির্যাতন করছিলি….এমন তো হওয়ার ই কথা…..”
এবার তাঁকাল তামান্না।
শুধু তাঁকায়ই নি-তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছে একদম।
“কি বললি??কি বললি তুই??আমার দোষ তাই না???তুই বোধহয় এক হাতে কার ড্রাইভ করিস নি আগে??তুই তো দু হাতে আজ বেশ স্টেয়ারিং টা ধরে রেখেছিলি।হঠাৎ এতো হাঁসি কোনো শুরু করলি???আর চোখ সামনে রেখে গাড়ি চালানো যায় না???সবচেয়ে বড় কথা হলো তুই তো নিজেই বললি-অমনোযোগী ছিলি তুই।তাহলে??”
সিয়াম কোনো কথা না বলে তামান্নার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাঁকিয়ে আছে।
“কি!!!!এই কত্তা!!আমি তোকে বলছি….কানে যাচ্ছে তোর।হা করে তাঁকিয়ে কি দেখছিস???”
ঘোর কন্ঠে সিয়াম বলে উঠল,
“তোঁকে……”
বুকের ভেতর ছোট্ট একটা হাতুরী বারি দিয়ে গেলো তামান্নার।
সিয়ামের গলা থেকে ঘোর টা তার গলাতেও এসে গেলো।
বলল,
“মানে????”
সিয়াম-চোখের পলক না ফেলেই বলল,
“রাগলে তোকে বেশ লাগে…….”
তামান্না চোখেচোখ রেখে বুঝার চেষ্ঠা করতে গিয়েও পারছে না।কেমন ঘোর লাগে তার।সামলাতে পারে না।
তবুও সিয়ামের দিকে তাঁকিয়ে আছে-চোখের দিকে চোখ রাখার সাহস গুজাতে চাচ্ছে।
সিয়াম আবারও বলল,
“জানতে চাইছিলি না কেনো হাঁসছিলাম??”
তামান্না বলল,
“হুমম…..”
“সত্যি???”
“হ্যাঁ…..”
সিয়াম এগিয়ে গেলো তামান্নার দিকে।
আর তামান্না ভয়ে আরোষ্ঠ হয়ে গাড়ির বডির সাথে একদম লেগে গেলো।
আর একটু চাপতে যাবে গাড়ির সাথে তার আগেই সিয়াম আচমকা তামান্নার কমড়ের দু সাইডে হাত রেখে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো।
ইশশশ!!কি হচ্ছে কু আজ এসব!!!যেনো সব আবোল-তাবোল মেলা হয়ে যাচ্ছে দুজনের মাঝে।
“সিয়াম!!!!”
“হুশশশশশশ……”
সিয়াম একদম তামান্নার কাছাকাছি।কমড়ের দু সাইডে দু হাত এখনো একি ভাবে আছে।
তামান্না কাঁপা গলায় বলল,
“ছাড় প্লিজ…..”
“কেনো শুনবি না-হাঁসছিলাম কেনো??”
“হুমমম…..”
“তাহলে??”
“বল….”
“তোকে ‘বইন’ বলে আগের মতো মজা করেছিলাম তাই হেঁসে ফেলেছি।এখন আর যেভাবেই তোর সাথে মজা করি না কেনো-বইন আর ডাকা যাবে না।কজ….এখন তুই আমার একমাত্র বউ।”
চোখে চোখ রেখে মনের কথা বুঝার জন্য যে চেষ্ঠা চালচ্ছিলো তামান্না।সেটা এবার পুরোপুরি শেষ করে দিলো সিয়াম ‘বউ’ শব্দ টা উচ্চারণ করে।
তামান্না কিছু বলতে পারছে না।
সিয়ামের হাতের স্পর্শে শরীরের ভেতর একটা মৃদু মরণবাতাস বয়ে যাচ্ছে।
তারউপর আবার কিসব বলছে সিয়াম!!!চিরচেনা কন্ঠেও বলছে না সেসব-কেমন ঘোর লাগা কন্ঠস্বর।
সব মিলিয়ে তামান্না যেনো কোথায় কোনো অজানায় হারিয়ে যাচ্ছে।
সিয়াম আবারও বলল,
“জানতে চেয়েছিলি তো আমার চোখ গাড়ির সামনে কেনো ছিলো না??”
তামান্না নিশ্চুপ।
সিয়াম বলল,
“গাড়ির সামনে কি করে থাকে বল তো??পাশে যদি এমন রূপতেজস্বী থাকে???”
ইশশশ!!!কি বলল সিায়াম???
তামান্না অবাক হয়ে চোখে চোখ রাখল সিয়ামের।
আর মনের মাঝে শারদীয় দূ্র্গা পূজার মতো ঢাক বাজতে লাগল।
“অবাক কেনো হচ্ছিস??
সত্যি বলছি।তুই পাশে ছিলি তো গাড়ির সামনে চোখ যাচ্ছেই না আমার।কি করবো বল???
ও,হ্যাঁ…বললি না মনোযোগ কোথায় ছিলো আমার???
বিশ্বাস কর!!তোর রাগী লোকে চোখ টা বেঁধে গিয়ে মনোযোগ টা কেড়ে নিয়েছে।চোখ যে দিকে মনেযোগ সে দিকে…..”
তামান্না শেষ।
আবারও কাঁপছে সে।
মাঠের মতো সিয়ামও এবার বুঝল যে তামান্না কাঁপছে।
কিন্তু!!মাঠে সিয়াম সেভাবে কিছু মনে করে নি।
কারণ কম্পন টা কম ছিল।
কিন্তু এবার সিয়াম বেশ ভালে করে বুঝতে পারছে-যে তামান্নার শরীর টা খুব তীব্র কারণে কাঁপছে।
তবে কেনো?????কেনো কাঁপছে তামান্না??
সিয়াম তো ভেবে পাচ্ছে না।
আপনারা প্লিজ সিয়ামকে একটু সাহায্য করুন……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here