নতুন তুই আমি পর্ব-২৭

0
1988

#নতুন-তুই-আমি
Writer:Nargis Sultana Ripa
পর্ব:-২৭…………………………………
তামান্নাকে পার্লারে নেওয়া হয়েছে।
দু বাড়িতেই খুব তোড়জোড় শুরু হয়েছে সকাল থেকে।প্রায় চার ঘন্টা ধরে সাজানো হয় তামান্নাকে।সঙ্গে ওর ভাবী শুধু।
বারবার কেউ না কেউ সেন্টার থেকে ফোন করছে।বর যে এসে গেছে অথচ বউ এখনো পার্লারে।তামান্নার পুরো সাজ কম্পিট করে ভাবী তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
গাড়িতে উঠার আগেই ড্রাইভার তামান্নাকে দেখে হেঁসে ফেলল,
“মাশাল্লাহ!মাশাল্লাহ্…..মা মনি এক্কেবারে আসমানের চান্দের মতন লাগতাছে তোমারে!”
ভাবী বলল,
“চাচা,একদম ঠিক বলেছেন।”
“হ আমগোর তামান্না মা কি চান্দের চেয়ে কোন অংশে কম!”
লজ্জা পেয়ে মুঁচকি হাঁসল তামান্না।
ড্রাইভার বলল,
“বউমনি চলো চলো।দেরী হয়ে গেছে……”
বউ রওনা দিলো সেন্টারের দিকে।
বুক ধুকপুক করছে তার।
এর মধ্যে ভাবী ফিসফিস করে কানের কাছে বলল,
“কিরে??কেমন ফিল করছিস??”
তামান্না বেখেয়ালী ভাবে জানতে চাইল,
“হুম??”
“বলছি,কেমন ফিল করছিস??”
তামান্না শক্ত করে ভাবীর হাত টা চেপে ধরল।ভয় ভয় চোখে ভাবীর দিকে তাঁকিয়ে বলল,
“ভাবী!!কেমন জানি লাগছে।”
“ও মা!!কেমন লাগছে মানে?আনন্দ হওয়ার কথা তো তোর।”
“সেটা একদম হচ্ছে না বরং ভয় লাগছে।”
“ইসসস।ভয়ের কি আছে?এখনি তো আর সিয়াম এসে তোকে ঝাপটে ধরছে না…..”
তামান্না চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে ভাবীর দিকে তাঁকাল।
তারপর ড্রাইভার চাচাকে আড়চোখে দেখে বলল,
“চাচা আছে কিন্তু….”
চাপাস্বরে ভাবী উত্তর দিল,
“চাচা শোনবে না।আমি আস্তেই বলেছি।
উমমম!তোর ভয় পাওয়ার কারণ আছে অবশ্য।তোকে আজ যা সুন্দর লাগছে!!দেখ,সিয়াম আবার তোকে দেখে সেন্সলেন্স না হয়ে যায়”
“ভাবী!!!!”
“হা হা হা…..”
“হাঁসবে না বলছি।আর শোনো তোমাকে না আমার চেয়ে দশগুণ বেশী সুন্দর লাগছে।
আমার তো মনে হয় তোমাকে দেখে আমার ভাইয়া সেন্সলেস হয়ে যাবো।”
“আহা রে!!হলে তোর ভাইয়া হবে আমার কি?”
“বাব্বাহ!!তোমার কি??
ঢঙ কতো!!সেই তো আমার ভাইয়াকেই লাগে….”
“আমার বর তো লাগবে না আমার?”
“তাহলে আবার বল কেনো-আমার কি??”
“আমারই তো।আমাকে দেখে যদি তোর ভাইয়া সেন্সলেন্স হয় তবে আমি না খুশিতে নাঁচবো।বুঝলি??”
তামান্না হা করে ভাবাীর দিকে তাঁকিয়ে রইল।কিছু বলল না।
গাড়ি সেন্টারের সামনে দাঁড়াতেই চারদিকে হিরিক পড়ে গেল,
“কনে আসছে।কনে এসে গেছে।এই তোরা চল বউ এসে গেছে।”
সিয়ামের মা সবার আগে গাড়ির কাছে এসে পৌঁছায়।
তার পিছু পিছু রাইয়ান,তামান্নার মা সবাই এসে ভীড় জমায়।
তামান্না গাড়ি থেকে নামতেই সিয়ামের মা তাঁকে জড়িয়ে ধরল,
“মা রে!!কত্ত সুন্দর লাগছে তোকে!!!”
“ভাবীইইইই……..”
রাইয়ান একদম জাপটে ধরল তামান্নাকে।
তামান্নার মা ছলছল তোকে মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
আজ তাঁর ছোট্টট মেয়েটাকে যে লাল বেনারসিতে পরীর মতো লাগছে।
তামান্নাকে স্টেজে বসানো হয়েছে।
বিয়ে বাড়ির সবার নজর তামান্নার দিকে।
সিয়াম দূরে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা কথা বলছিল।
তামান্নাকে যে আনা হয়েছে স্টেজে দূরে থাকায় তারা কেউ টের পায় নি।
হঠাৎ কয়েকজনের নজর পড়ল স্টেজের দিকে।
তামান্নাও এদিক সেদিক তাঁকিয়ে ওদের খুজচ্ছিলো।
বন্ধুরা তামান্না দিকে তাঁকিয়ে একেকটা হা হয়ে আছে।
আজকে যে তামান্নাকে চেনাই যাচ্ছে না।
সিয়াম উল্টো দিকে তাঁকিয়ে থাকায় এখনো দেখে নি তার প্রিয়সীকে।
আকাশ(বন্ধু) সিয়ামের পাশে এসে সিয়ামের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“মামা!!পরে কথা বল।আগে ওদিকে দেখ….”
“কি??”
“তাঁকা একবার পেছনে….”
সিয়ামে পেছন ফিরল।
নজর পড়লো স্টেজের ঠিক মধ্যখানে বসে থাকা লালপরীর দিকে।
স্তব্ধ হয়ে যায় সিয়াম।
লাল বেনারসি,গা ভর্তি গয়না,ঝমকালো সাজানো চোখ,ঠোঁটে টকটকে রাঙানো লাল লিপস্টিক।সব গয়নার মাঝে নাকের নথ আর মাথার টিকলি টা ধরে একদম খাচ্ছে তামান্নাকে।
সিয়ামের চোখ লেগে যাচ্ছে।
বুকের ভেতর শো শো করে একটা দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।
তার দেওয়া লাল বেনারসীতে তামান্নাকে মানবে সে জানতো।কিন্তু তাই বলে এতটা!!
সিয়াম কখনো ভাবতে পারে নি।একটা মানুষ এতো সৌন্দর্যের অধিকারী কি করে হতে পারে??
ভাবতে পারছে না সিয়াম।
!
বন্ধুরা হিরিক দিয়ে তামান্নার কাছে ছোটে যায়।
সবাইকে এরকম দৌঁড়ে আসতে দেখে হাঁসি ফুটে উঠে তামান্নার মুখে।
“ওয়াও দোস্ত,দারুণ লাগছে তোকে……”(আকাশ)
“একদম পুতুলের মতো লাগছে…..”(ঐশী)
“মাই গড!!বউ সাজে তোকে এতো সুন্দর লাগবে!ভাবতেই পারছি না আমি…..”(রিহি)
“এই থাম তো তোরা!!পাগল হয়ে গেছিস না কি সব কটা??”
দৌঁড়ে এল রাইয়ান।সবার মাঝ দিয়ে একেকজনকে ধাক্কা দিয়ে তামান্নার পাশে এসে দাঁড়ায় সে।
“ভাবী!!শুধু তোমার বন্ধুরা না ভাইয়াও পাগল হয়ে গেছে তোমাকে দেখে…..”
পাশ দিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে সিয়ামকে দেখিয়ে বলল,
“দেখো…কেমন করে হা হয়ে আছে।তোমাকে দেখে হুশ চলে গেছে হয়তো।”
তামান্না দেখল রাইয়ান ঠিক বলছে।সিয়াম পলকহীন ভাবে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সিয়ামের দিকপ নজর পড়তে তামান্নাও যে বেশ বড় সড় একটা ধাক্কা খেল।
কালো রঙের ঝমকালো শেড়য়ানী,চুরিদার নীল রঙের পায়জামা,একহাতে মাথার পাগড়ীটা।
তামান্না চোখ ফিরিয়ে নিলো।
ক্রাশ খেয়েছে সিয়ামকে দেখে।হজম করতে একটু সময় লাগবে।
কিন্তু সিয়াম!!আশেপাশের সবাই যে তাঁকে দেখে হাঁসছে সে কি বুঝতে পারছে না!!
হঠাৎ সিয়ামের বাবা কোথা থেকে এসে ছেলের পাশে দাঁড়ায়।
কাঁধে হাত দিয়ে হেঁসে বলল,
“বাবা!!পড়েও দেখতে পারবি….”
সিয়াম চমকে উঠে বাবার কথায়।বেশ লজ্জায় পড়ে যায়।
চারপাশে তাঁকিয়ে বুঝতে পারল এতক্ষণ তার হাবলার মতো তাঁকিয়ে থাকাটা সবাই উপভোগ করছিল।
বাবা বলল,
“যা স্টেজে গিয়ে বস।সবাই তোদের দুজনকে একসাথে দেখবে বলে ওয়েট করছে…..”
সিয়াম বাবার কথায় স্টেজে গিয়ে বসে।
চারপাশ থেকে অনেকেই বর-বউয়ের পাশাপাশি বসার পিক আপলোড করছে।
বন্ধুরাও এক একজন ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়াম বারবার তামান্নাকে দেখছে।দূর থেকে যতটা সুন্দর লাগছিলো কাছ থেকে তার চেয়ে আরও অনেক বেশী সুন্দর লাগছে।
রাইয়ান তো তামান্নার পাশ থেকে উঠছেই না।
অথচ তাঁর দিকেও যে কেউ একজন বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here