#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:-৩৭…………………………….
সকাল দশটার কাছাকছি।
তবুও ছাদে ভরদুপুরের মতো কড়া রৌদ।
আর তামান্না সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়াম তামান্নার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
পেছন থেকে বলে উঠে,
“রোদে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?চল ক্লাসে দেরী হয়ে যাবে।”
তামান্না কোনো কথা বলল না।
আগের মতোই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো।
সিয়াম বলল,
“কি করে চল….”
তামান্না এবারও কোনো কথা বলল না।
তাই সিয়াম তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
আর আচমকায় সিয়াম চমকে গেলো।
কারণ তামান্নার সারা মুখ লাল হয়ে একদম যা তা অবস্থা।আর সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ যাবত কান্না করছিলো।
সিয়াম কিছু বলতে যাবে তার আগেই তামান্না ছাদের অন্য সাইডে চলে গেলো।
রোদে তামান্নার এর্লাজি।
আর তাই তার মুখ এতো লাল হয়ে গেছে।
সিয়াম জানে সেটা।
আর কান্নার কারণটাও তার জানা।
সিয়াম আবারও তামান্নার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
নরম সুরে বলল,
“এর্লাজি হয়ে যাচ্ছে তোর।রোদে দাঁড়িয়ে থাকিস না।”
তামান্না মুখ খোললো এবার,
“হোক আমার এর্লাজি।তোর কি তাতে??”
“অসুস্থ হয়ে যাবি তো…চল।জেদ করিস না….”
সিয়াম হাত ধরলো তামান্নার।
কিন্তু তাতে লাভ হলো না।
তামান্না আস্তে করে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“কি মনে হয় আমাকে তোর??
আমি ছেলেদের দেখিয়ে বেরাই??
তাই না??বিয়ের কথা না হয় বাদ দিলাম।
তুই আমার হাজবেন্ড সেটাও না হয় বাদ।একজন বন্ধু হিসেবে বল তো!!আমাকে তো তেরো-চৌদ্দ বছর ধরে দেখছিস-কখনো আমি এমন ভাবে চলাফেরা করেছি যাতে অন্যরা আমার প্রতি দুর্বল হয়?আর কি বললি তুই চুল তাই না চুল??”
তামান্না নিজের খোপা করা চুলটা টান দিয়ে খোলে বলল,
“এই চুল না তুইও দেখিস নি।বিয়ের পর দেখেছিস।মনে পড়ে প্রাইমারিতে পড়ার সময় এই চুলগুলো দেখেছিস তারপর আর দেখা হয় নি।কারণ আমি কাউকেও দেখায় নি আমার এই সৌন্দর্য।আমার নিজের স্বামীরই একমাত্র অধিকার এসব।আর সে তুই কিনা এভাবে বললি আমায়??”
কেঁদে কেঁদে সব বলে ফেলল তামান্না।
সিয়ামের এই মুহুর্তে কি করা উচিত সে বুঝতে পারছে না।আর ও এভাবে কখনো তামান্নাকে কাঁদতেও দেখে নি।
অন্য সময় হলে তো ক্ষেপানো যেতো।
কিন্তু এই মুহুর্তে না।
এমনিতে তামান্না কষ্ট পেয়েছে।
এখন প্রথমে তাঁকে ঠান্ডা করতে হবে।
তারপর বাকী কাজ।
সিয়াম আবারও তামান্নার হাত ধরলো।
তবে আগের চেয়ে শক্ত করে।
যেনো তামান্না ছাড়াতে না পারে।
তামান্না হাত ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে।কিন্তু পারছে না।
“হাত ছাড় আমার…..”
“রোমে চল….”
“তোর ক্লাস আছে না??তুই ক্লাসে যা…..”
“আমার আছে তোর নেই??”
“আমি মা বাসায় আসলে মাম্মামের কাছে যাবো।তুই যা ভার্সিটিতে….”
সিয়াম হচকচিয়ে বলল,
“ঐ না।মাম্মামের কাছে যাবি মানে??এই তো এক সপ্তাহ হলো এলি।”
“তো??আমি আজ যাবো।”
“আচ্ছা যাস।বাট রোদ থেকে চল।”
“আমি যাবো না।যা তুই….”
সিয়াম আর কিছু বলল না।
তামান্নাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কোলে তুলে নিলো তাঁকে।
এতে তামান্না আরো ক্ষেপে গেলো।
“ছাড় সিয়াম….”
“চুপ কর না রে বাপ….”
“আমি নামাতে বলছি আমায়….”
সিয়াম তবুও নামালো না।
রাগে ক্ষোভে সিয়ামকে খামচি দিতে শুরু করল তামান্না।
রোমে নিয়ে তামান্নাকে ধপাস করে বিছানায় ফেলে দিলো সিয়াম।
“আওওও…..উফফফ…”
ব্যথা পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে তামান্না।
সিয়াম দরজা টা লক করে এসে তামান্নার সামনে দাঁড়ায়।
রাগে গিজগিজ করছে তামান্না।
সিয়াম তামান্নাকে টান দিয়ে নিজের কোলের উপর শুইয়ে বলল,
“খালি তো পারিস খাঁমচি দিতে।বৌ-ভাতের দিন যে কয়টা দাগ করছিস হাতে।রাক্ষসী একটা। আজকে আবার একই কাজ করছস…”
“তুই ছাড়বি আমায়??না হলে কামড় দিবো এবার।”
“এতো রাগ কেন তোর??কি বলছি এমন!”
“না তুই কিছু বলিস নাই।সর তো….”
“আস্তে। কি এমন শক্তি তোর যে জোরাজোরি করছিস!আর রাগে তো কাঁদছিসও না এখন।তখন তো ঠিকই কাঁদলি।”
“তোর কি??আমার যা ইচ্ছা তাই করবো।তুই তো তোর যা ইচ্ছা তাই বলে যাস….”
“আচ্ছা বাবা সরি।ভুলে বলে ফেলেছিলাম।”
“লাগবে না তোর সরি।”
আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো তামান্না,
“আমাকে তুই বাজে মেয়েদের মতো করে বলছিস…..”
সিয়াম তামান্নাকে সাথে সাথে নিজের বুকে চেঁপে ধরে বলল,
“ঐ চুপ।একদম না।আমার তামান্নুকে বাজে মেয়েদের সাথে টেনে কথা বলবি না।”
তামান্না সিয়ামের থেকে নিজের ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে আর কাঁদছে।
সিয়াম তামান্নাকে সামলাতে তাঁকে আরও জোরে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
“কাঁদবি না আর।মুখে গুটি গুটি হয়ে গেছে কিছু মুহুর্তেই।রোদে গিয়ে দাঁড়াতে হয়!”
“ছাড়।এখন আর ঢং করতে হবে না।”
সিয়াম দুষ্টুমি করে হাঁসলো।
বলল,
“আহা রে।রাগী তামান্নু!!”
“তোর মতো না….”
সিয়াম তামান্নাকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে পড়ল।
“শোন না।আজ ক্লাস বাদ। চল তোর রাগ কমাই।সাথে লজ্জাও….”
তামান্না রাগী ভাব নিয়ে সিয়ামের দিকে তাঁকালো।
সিয়াম সেটা দেখে মুঁচকি হাঁসলো।
তারপর তামান্না আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দু হাতে তামান্নার গাল চেপে ধরে ওর মুখটা নিজের কাছে টেনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলালো।
তামান্না কই মাছের মতো ছটফট করতে শুরু করলেও সিয়াম ছাড়ালো না তাঁকে।
প্রায় দশ মিনিট ধরে তামান্নার ঠোঁটে সার্জারি চালিয়ে গেলো বেচারা।
তামান্নাকে ছাড়তেই সে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো।
সিয়ামও হাঁপিয়ে গিয়ে তামান্নার বুকে শুয়ে পড়ে।
তামান্না নিজেকে একটু সামলে নিয়েই সিয়ামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসল।
ঠোঁট চেঁপে ধরে বলল,
“খুব তো আমাকে রাক্ষসী বলিস।তুই নিজে যে একটা রাক্ষস সেটা তো বলিস না।উফফ,আমার ঠোঁট টা কেটে গেছে একদম।”
সিয়াম হাঁসতে হাঁসতে উঠে বসল।বলল,
“দেখি…কতটা কাটছে!”
তামান্না একটি সরে বসল।
“থাক।আর দেখতে হবে না তোর।”
উঠে আসতে চাইলো তামান্না।
কিন্তু সিয়াম বাঁধা দিলো।
তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“লাভ ইউ তামান্নু…..”
কথাটা তামান্নার বুকে গিয়ে লাগলো।কয়েকবার-ই শোনা হয়েছে সিয়ামের মুখে।
কিন্তু তবুও প্রতি মুহুর্তে একটা অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে তামান্নার মাঝে।মনে হয়ে বুকের ভেতর কেউ অসংখ্য ভালোবাসার তীর ছুড়ে মারছে।
যার রক্তরক্ষণ শুধু ভালোবাসা দিয়েই পূরণ করা যায়।
তবে এই মুহুর্তে তামান্নার মাঝে কোনো রাগ বা ক্ষোভের ছায়া দেখতে পারছে না সিয়াম।
এই জিনিস টাই সবচেয়ে বেশী ভালো লাগে সিয়ামের।
কত সহজেই মেয়েটাকে মানিয়ে নেওয়া যায়।
সিয়াম আবারও চুপিচপি বলল,
“আমি কিন্তু আমার উত্তর আজও পাই নি……”
তামান্না কোনো কথা বলল না।
সিয়াম আবারও বলল,
“এতো লজ্জা পাস কেনো তুই!!লজ্জা পেলে তোকে খুব করে আদর করতে ইচ্ছা করে বুঝিস তুই এটা??”
সিয়াম কথাটা বলেই তামান্নার খোলা চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকলো।একটা মিষ্টি সুবাস যেনো সব সময় ভীর করে তাকে এই কালোকেশগুলোতে।যার মাধুর্যতা সিয়ামকে আরো অনেক বেশী আবেগপ্লুত করে তুলে।
তামান্না অনুভব করছে সিয়ামকে।সিয়াম ধীরে ধীরে তার ডান হাতটা তামান্নার কামিজের ভেতর দিয়ে নিয়ে পেটে রাখল।
শিউড়ে উঠলো তামান্না।
পেটে আতলো করে চাপ দিয়েই অস্ফটুস্বরে তামান্না আওয়াজ করল,
“উওও……”
সিয়াম হয়তো কোনো সমর্থন পেয়ে গেলো আরো দুষ্টু খেলায় মেতে উঠায়।
তাই সে চুল গুলো আস্তে করে সরিয়ে তামান্নার ঘাড়ে মুখ গুজলো।
দিশেহারা তামান্না দুহাতে সিয়ামের পায়ে খামচে ধরলো।কারণ এই মুহুর্তে আর কোনো আশ্রয় তার হাতের কাছে নেই।
সিয়াম মোটিমোটি জোরেই তামান্নার ঘাড়ে একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
আর তামান্না সেটা সহ্য করতে না পেরে স্বজোরে আওয়াজ করল,
“আওওও…..”
সিয়ামও দেরী করে নি।সে হাত বাম হাত টা তামান্নার হাত থেকে সরিয়ে তার মুখ চেপে ধরল।
তারপর কানের উপর ঠোঁট ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
“এতো জোরে চিৎকার করার কি আছে?হুমম!!বেশী কিছু তো করি নি।”
তামান্না লজ্জায় সিয়ামের দিকে তাঁকাচ্ছে না।
সিয়াম তাঁমান্নার এই লজ্জামাখা মুখ দেখে আরও বেশী প্রেমে পড়ে যায়।বারবার!হাজার বার!
সিয়াম মুঁচকি হেঁসে তামান্নাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো।
দু গালে হাত রেখে কপালে আলতো করে চুমু দিলো সে।
“চোখ খোলতে পারিস।এতো লজ্জা পাস না।তা না হলে কিন্তু…..”
চোখ খুললো তামান্না।একটু আগে কেঁদেছিলো তাই চোখ দুটো এখনও লাল।আর রোদে থাকায় এর্লাজিও উঠে গেছে মুখে।
সিয়াম বলল,
“রাগ করে যদি আর কোনো দিন রোদে গিয়ে দাঁড়াস তাহলে একদম নর্দমায় ফেলে আসবো।বুঝলি??”
তামান্না মুখটা ঘুরিয়ে নিলো।
কিছু বলল না।
সিয়াম তামান্নার থুুতনীতে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,
“একটা ইমপরটেন্ট কথা বলার ছিলো।”
তামান্না মুখে কিছু না বলে জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাঁকাল সিয়ামের দিকে।
“কথাটা তোর জন্য খুব জরুরী……”
তামান্না ধীরসুস্থেই জবাব দিলো,
“কি কথা??”
“এই কথাটা তোর অনেক আগেই জানা উচিত ছিলো।কিন্তু আমার মনে হয় এই কথাটা এখনি তোর জানা উচিত তা না হলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।”
তামান্না একটু বিরক্তিভাব ফুটিয়ে বলল,
“ভয় দেখানোর চেষ্ঠা করিস না তো বল কি কথা??”
“তোর কথাটা শোনে কেমন লাগবে আমি জানি না।তবে আজ আমি বলবো….”
“উফফ!!এতো মহীমা না করে বলবি তুই?”
সিয়াম তামান্নার গা ঘেষে বসলো।এক হাতে তামান্নাকে জড়িয়ে নিজের বুকের কাছে নিয়ে বসে একরকম প্রস্তুতি নিয়ে নিলো সে।তারপর বলল,
“আসলে…..”
তামান্না সিয়ামের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে।তার অবশ্য একটু একটু ভয়ও লাগছে।
কি এমন বলবে সিয়াম যার জন্য এতো কথার প্যাঁচ দিচ্ছে!
“সত্যি বলতে…..”
তামান্না চোখ বেটে তাঁকালো সিয়ামের দিকে,
“সত্যি বলতে কি??”
সিয়াম হাঁসলো একটু।
তারপর তামান্নার চোখে চোখ রেখে ধুম করে তামান্না মুখের উপর বলে ফেলল,
“সত্যি বলতে ওড়না ছাড়া তোকে খুব সুন্দর লাগে।”
তামান্না চমকে উঠলো।
তারপর খেয়াল হতেই দেখলো তার গায়ে ওড়না নেই।
সিয়ামের সামনে যদিও এটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কথা না।
তবুও তামান্না লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।আর তার মুখ ফসকেই বেড়িয়ে এল,
“কিহ!!”
এতে যেনো সিয়াম আরো বেশী সুযোগ পেয়ে যায়।
সে তামান্নাকে নিজের বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে একটা আঙ্গুল দিয়ে তামান্নার কপাল থেকে কমশ্র বিলি কেঁটে বুকের কাছে এনে বলল,
“Truely to say!now u r looking so sexy……”
তামান্না রীতিমতে আঁতকে উঠলো।কি বলে সিয়াম এসব!
এসব যে তামান্নার কানও একঘুয়ে করে তুললো।
তামান্না কিছু বলার আগেই সিয়াম তামান্নার বুক মাথা রাখল।চমকে উঠলো তামান্না।
সরে যেতে চাইলেও সিয়াম সরতে দিলো না।
মুখ তুলে বলল,
“আমি সত্যি কথাটা তো বলেছি।তোর আমার জিনিস টা তো চাই আমার……”
বলেই সিয়াম তামান্নার বুকে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো।তামান্না বাঁধা দিতেও সফল হলো না।
সিয়াম তাঁকে শুইয়ে দিলো।
জামার চেইন টা একটানে খোলে সে যেনো মেতে উঠলো কোনো এক নেশায়।
যে নেশা শুধুমাত্র তামান্না-ই মিটাতে পারে।আর কেউ না!
যদি মনের নেশা ভালেবাসায় মিটে তো মিটুক না।ক্ষতি কি তাতে!!তামান্না যে এই ক্ষতিটুকু পুষিয়ে নিতে আবারও সিয়ামের মত্ত কোনো ভালোবাসার সারাকেই আগমন জানাবে।