নতুন তুই আমি পর্ব-৩৯

0
1830

#নতুন_তুই_আমি
Writer:Nargis Sultana Ripa.
পর্ব:-৩৯……………………………
“কিহ?”
সিয়াম তামান্নাকে ছেড়ে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে বললো,
“পিঠ টা আগে ভালো করে মালিশ কর আগে….”
“আহা রে!!বললি আর আমি ওমনি সুড়সুড় করে কাজটা করলাম তাই না???”
“কথা বাড়াস না রে তামান্নু!বেশী খেয়ে শরীর টা আসলেই কেমন লাগছে….”
“শুয়ে ঘুমা সব হজম হয়ে যাবে….”
সিয়াম তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে থেকে বলল,
“তার মানে তুই দিবি না??”
তামান্না বেশ জোড়ালো গলায় বলল,
“না দিবো না।”
“ওকে!তাহলে আমিই কিছু করছি……”
বলতে হয়তো একটু সময় লেগেছে কিন্তু তামান্নাকে একটানে নিজের কাছে এনে তার উপর শুয়ে পড়াতে সিয়ামের এতটুকু সময় লাগে নি।
তামান্না কিছু বলতে যাচ্ছিলো।
তার আগেই সিয়াম তামান্নার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছে।
তামান্না এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।
তাই অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় সে সিয়ামের পিঠে ইচ্ছামতো খামচি আর ঘুষি দিতে থাকে।
কিন্তু সিয়ামের তাতে যেনো কিছুই হচ্ছে না।
সে নিজের কাজ টা ঠিকই করে যাচ্ছে।
আর কিছুক্ষন পর পর তো বেশ জোড়ে কামড়ও দিচ্ছে।তামান্নার মনে হচ্ছে সে এখনি কেঁদে দিবে।
তবে কেনো যে তাঁর কান্না আসছে না সে ভেবে পাচ্ছে না!!!!
অবশেষে তামান্না মুক্তি পেলো।
সিয়াম তার ঠোঁটের উপর অত্যাচার বন্ধ করছে।
তামান্না সিয়ামের দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে।
সিয়াম তামান্নাকে চোখ টিপ দিয়ে বলল,
“সো সুইট।খাওয়ার পর এই মিষ্টি টা মিস ছিলো….”
“তুই!!!!!!”
তামান্না ক্ষেপে গিয়ে সিয়ামের বুকে ঘুষি দিচ্ছে।
“আমি ব্যথা পাই না!”
সিয়াম হাঁসতে হাঁসতে তামান্নার হাত দুটো ধরে বলল,
“ব্যথা তো আমি পাই তোর খামচিতে।”
“সর…কুত্তা….”
সিয়াম হাঁসি বজায় রেখে বলল,
“কুত্তা কিন্তু কামড় দিতে ওস্তাদ হয়।কামড় দিই আমি তোকে??”
তামান্না নিজের চুলগুলো সাইড করে ঘাড়ের পাশটা সিয়ামকে দেখিয়ে বলল,
“তাহলে এটা কি ভুতে করেছে!”
সিয়াম ডং করে বলল,
“ও মাই গড!!কি করো হলো রে এটা??”
বলে আবার সে জায়গায় একটা কামড় বসিয়ে দিলো।
“উহুহুহু………”
“হা হা হা……”
“সিয়াম!!!!ও মা…..উহুু….আসলেই তুই খারাপ।ব্যথা আমার সেখানেই ব্যথা দিচ্ছিস।উহুহু….জ্বলে যাচ্ছে…..”
“আচ্ছা ওয়েট ঠিক করে দিচ্ছি….”
সিয়াম আবারও কাছে টেনে নিলো তামান্নাকে।তারপর ঠিক কামড়ের জায়গাতেই একটা গভীর চুমু খেলো।
শিউরে উঠলো তামান্না।
সিয়াম মুঁচকি হাঁসলো।
তামান্না লজ্জায় চোখ নিচের দিকে নামিয়ে ফেলেছে।
সিয়াম হেঁসে বলল,
“এর চেয়ে ভালো ঔষধ মনে হয় আর পাবি না!!”
তামান্না আরো বেশী লজ্জা পেয়ে গেলো।
মু্ঁচকি হেঁসে সিয়ামের বুকে মুখ রাখলো সে।
সিয়াম তামান্নাকে আকড়ে নিয়ে বললো,
“আই লাভ ইউ…..”
তামান্না কিছু বললো না।
সিয়ামের বুকেই চুপটি মেরে রইলো।
!
রাত সাড়ে দশ টা……..
তামান্না-সিয়াম সহ সবাই ড্রয়িং রোমে বসে আছে।
তামান্নার বাবা কিছু একটা বলবেন বলে সবাইকে ডিনারের পর অপেক্ষা করতে বলেছেন।
তামান্নার জেঠি মনি সবাইকে দেখে বললো,
“খোকন(জেঠি মনি তামান্নার বাবাকে এই বলেই ডাকেন),সবাই তো আছে।কি বলবে বলো….”
“হ্যাঁ ভাবী।আসলে আমি তোমাদের সবাইকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি।”
সবাই এবার একটু বেশী মনোযোগ দিলেন মানুষটার কথায়।
তামান্নার বাবা আবারও বলা শুরু করলেন,
“আমার বড় ভাই মারা গেছেন আজ বিশ বছর।আমার একমাত্র ভাইপোর বয়স তখন মাত্র বারো বছর।ভাই আমার যাবার আগে আমাকে কিছু বলেও যেতে পারে নি।তবে ভাইয়ের ছেলে আর আমার মায়ের মতো ভাবীকে আমি কখনো আমার নিজের থেকে দেখি নি।”
এইটুকু বলতেই পরিবেশ টা কেমন থমথমে হয়ে গেলো।
তামান্নার জেঠি মনি বললো,
“এসব কেনো বলছো খোকন??”
“দরকার আছে ভাবী।তাই বললাম।এখন,কাজের কথায় আসি।আমারও আল্লাহ তা’আলা একটা মেয়ে দিয়েছে।আমার ভাইয়েরও একটা মাত্র সন্তান।আমার ভাই চলে যাওয়ার আগে যা সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন তা আমি আগেই ভাবীকে বুঝিয়ে দিয়েছি।কি ভাবী দিই নি??”
“খোকন!!কি হয়েছে তোমার বলো তো?”
“না ভাবী বলো তুমি??দিই নি??”
“হ্যাঁ দিয়েছো।বরং আরোও বেশিই দিয়েছো।”
“সেটুকু আমার দায়িত্ব ছিলো ভাবী।তা ছাড়া তুমি যেটাকে পরিমানে বেশী বলছে সেটুকু আমার ভালোবাসা।আর আমি আমার এই ভালোবাসা থেকেই আমার দুই সন্তানকে আমার স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তিতে যুক্ত করে দিয়েছি।
মানে তামান্না আর রাফিনের নামে একটা উইল করে দিয়েছি।আমি চলে যাওয়ার পর আমার সকল সম্পত্তি সমান ভাবে তামান্না আর রাফিন পাবে।”
সবাই যেনো রীতিমতো চমকে উঠলো।রাফিন সবচেয়ে বেশী।কারণ কোনো চাচা এমন হয় তার জানা ছিলো না।
যে কিনা ভাইয়ের এক আনা সম্পদও ভোগ করেন নি ভাই চলে যাওয়ার মতো।অথচ তাদেরকে বট গাছের মতো আলগে রেখেছেন সবসময়।
আর এখন!!তার নিজের সম্পত্তিও।যে সবে শুধু তামান্নার অধিকার।
না!না!এটা হতে পারে।
রাফিন কি করে তার ছোট বোনের সম্পত্তি নিতে পারে।
তাই সে দ্রুত বলে উঠলো,
“কাকা তুমি কি বলছো??ঠিক আছো তুমি!এটা হতে পারে না।আল্লাহ্ এর রহমতে তুমি কম করো নি আমাদের জন্য।তাছাড়া বাবার সম্পত্তিও তুমি যেভাবে ঠিক রেখে আমাদের দিয়ে গেছো তাতে তো।না কাকা আমি এটা পারবো না।
তোমার সমস্ত সম্পদে শুধু তামান্নারই….. ”
তামান্নার বাবা চেঁচিয়ে উঠলেন,
“রাফিন!!!!”
রাফিন আর কিছু বলতে পারলো না।চুঁপ করে বসে রইলো।
তিনি আবারও বললেন,
“শান্ত হও।আমি যা করেছি ভেবে চিন্তে করেছি।আর আমি তামান্নার মায়ের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেছি।ওনার কোনো আপত্তি ছিলো না।বরং সে এতে আরো বেশী খুশি হয়েছেন।”
রাফিন নম্র স্বরে আবারও বললো,
“কাকা।তুমি!!!”
তামান্নার বাবা মায়া ভরা কন্ঠে বললেন,
“বাবা রে।আমি তোকে আমার ছেলে হিসবেই মানুষ করেছি।আর তুই কি ভাবছিস আমি তোর বোনকে ঠকাচ্ছি???কেনো ভাবছিস বলতো??তুই কি আমার তামান্নাকে নিজের বোনের মতো দেখে রাখবি না??আমি না থাকা কালীন ওর দায়িত্ব পালন করবি না??”
“কাকা!!কি বলছো তুমি।ও আমার একমাত্র বোন।”
“তাহলে?আী প্রশ্ন কিসের।আমি আমার ছেলে মেয়ের মাঝে সমান ভাগ করে দিলাম সব।আশা করবো তোমরা দুজনেই আমার এতদিনের সমস্ত মান-সম্মান ঠিক রেখে সব কিছু আলগে রাখবে।”
তামান্না এতোক্ষণ হা হয়ে সব কিছু শুনছিলো।এবার হঠাৎ করে বলে ফেললো,
“কিন্তু বাবা!!আমি এতো সম্পত্তি দিয়ে কি করবো বলো তো??আমার তো মাথাতেই আসছে না।”
সিয়ামও এবার মুখ খোললো,
“আঙ্কেল,যদিও আমার এসবল কথা বলা উচিত না।তবুও আমি বলছি।তামান্নার এসবের কি দরকার বলুন!আল্লাহ তা’আলা তো আমাদের….”
সিয়াম আর কথা শেষ করতে পারলো না।তামান্নার বাবা বললো,
“বাবা রে।আছে আছে।আমি জানি আমি আমার মেয়ে সৎ পাত্রে দান করেছি।তবে আমার মেয়েরও তো একটা অধিকার আছে।তাছাড়া সম্পদ হচ্ছে আল্লাহর দান।এটা কাজে লাগে বাবা।বিপদের সাথী,সুখের সম্বল।”
সিয়াম আর কিছু বললো না।
এখানে আর কিছু বলারও থাকে না।
তামান্নার বাবা এবার তামান্নার দিকে তাঁকিয়ে বললো,
“আমার কাজে কি তুমি খুশি হও নি।তোমার কি কোনো আপত্তি আছে।”
তামান্না চোখ দুটো বড় বড় করে বললো,
“বাবা!!তুমি কি বলতে চাইছো??”
“মানে তোমার ভাইয়াকে….”
“মাম্মাম!!!!বাবাকে চুপ করতে বলো কিন্তু।কি শুরু করেছেন ওনি।বেশী বেশী।রাফিন সাহেব একাই ওনার ছেলে আমার ভাই নয়!!”
তামান্নার বাবা হাঁসলেন।
সস্থির হাঁসি।
“আমি জানতাম আমার মেয়ের মতামতা এমটাই হবে।”
কেউ আর কিছু বললো না।
সবাই কেমন যেনো একটা ঘোরে চলে গিয়েছিলো তামান্নার বাবার কাজে।
তামান্নার জেঠিমনি ছলছল চোখে বললো,
“আল্লাহর কোন বিশেষ রহমতে যে তোমার মতো ভাই পেয়েছিলাম!”
“ভাবী!!আর একটা কথাও না…..ওখানেই থেমে যাও।”
হাঁসার চেষ্ঠা করলেন জেঠিমনি।
রাফিন উঠে গিয়ে তার কাকাকে জড়িয়ে ধরলো।
সিয়াম অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে।সে তামান্নার সাথে এতদিন চলে ভেবেছিলো-তামান্না কেনো এতটা উদার।
আজ সিয়াম তার উত্তর পেয়ে গেছে।
যে মেয়ের বাবা এতো মহান সে বাবার মেয়ে কি বিশাল না হয়ে পারে!!!
একটা জিনগত ব্যাপার তো থেকেই যায়।💜💜💜💜💜💜

লেখিকার গ্রুপ : https://facebook.com/groups/646951215765318/

_—–___–_-___________——-_____——

সেরা সব গল্পের লিংক পেতে :https://www.facebook.com/SeraGolpo500/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here