#নতুন_তুই_আমি#
💜💜💜💜💜💜💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
!
পর্ব:৪৪………………………….
চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা সামনে।
সিয়াম-তামান্নার ব্যস্ত সময় কাটছে।সারা দিন নোট করা-ল্যাব এসব করে সময় যায়।
আর রাতের বেলা একটা-দুইটা-তিনটা পর্যন্ত পড়া।
অবশ্য সিয়াম ততটা পড়তে চায় না।একটা পর্যন্ত হাইয়েস্ট পরেছে সে।তবে তামান্নার জোড়াজোড়িতে দুটো অবদি বি সামনে বসে থাকে।
তবে সিয়ামের এবার অনেক সুযোগ।এই বেচারী সহজে কোনো নোট করে।
আগেও তামান্নার কাছ থেকে সব নোট নিতো।এবারও তাই।
তবে আগে যেমন তামান্নার বাসায় গিয়ে আনতে হতো এখন আর সেই কষ্টটুকু তাকে করতে হয় না।স্বয়ং তামান্না তার বাসায়!ব্যাপার টাই অন্য রকম।
দেড় টা বেজে গেছে।শহরের বুকে নিস্তব্ধ অন্ধকার।আলো গুলো সব নিভতে শুরু করেছে।
যাদের অবশ্য পরীক্ষা বা মেডিকেল হোস্টেলের লাইটগুলে এখনও জ্বলছে।
তামান্না টেবিলে বসে পড়তে পারে না।ছোট থেকে বিছানায় বসে পড়ার অভ্যাস তার।
সিয়াম এতক্ষণ সোফায় শুয়ে-বসে পড়ছিলো।এবার উঠে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
তামান্না শীট থেকে চোখ সরিয়ে সিয়ামের দিকে তাঁকালো।
“শুয়ে পড়লে যে??”
“দুটো বাজে ইয়ার।”
“সিয়াম!!আমাদের মাঝখানে পড়ালেখায় কত গ্যাপ গেছে।ঠিকআছে??”
সিয়াম তামান্নার হাত থেকে শীট টা কেড়ে নিয়ে সাইডে রেখে দিলো।
তারপর তামান্নার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে তামান্নাকে নিজের বুকে নিয়ে আসলো।
“চুপচাপ বুকে শুয়ে থাকবি এখন।আমি ঘুমাবো।”
“ছাড়ো তো।তুমি ঘুমাও আমি পড়বো।”
“আমাকে আগে ঘুম পাড়িয়ে দে।তারপর সারা রাত পড়িস।”
“তোমাস ঘুম পেয়েছে তো ঘুমাও তুমি কি বাচ্চা??”
“কথা বলে কেনো ঘুম টা নষ্ট করে দিচ্ছিস বল?একটু পাশে শুয়ে বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড় না।শান্তিতে ঘুমাই আমি।”
“উফফফফ….যতসব ঢং…..”
তামান্না বই-খাতাগুলো সরিয়ে সিয়ামের পাশে শুয়ে পড়ে।
সিয়াম তাকে আরো কাছে টানে।
“মাথা সরাও….”
“হুম??”
নৌশিন নিজের বালিশ টা দেখিয়ে বললো,
“তাহলে কি আমি এই বালিশে থাকবো??”
“ও….সরি সরি।”
“হুম…..”
“তামান্নু…..”
“কি??”
“তুই কি কখনো ভেবেছিলি আমার সাথে তোর এমন একটা সর্ম্পক হবে??”
“কখনো কল্পনাও করি নি।আমি যখন মাম্মামের কাছ থেকে বিষয় টা জানলাম তখন থেকেই একটা ভয় কাজ করতো।মনে হতো আমি কি করে তোমার সাথে থাকবো?ভয় হতো যদি ভালোবাসতে না পারি!”
“এখন কি ভালোবাসিস নাকি??”
তামান্না অবাক চোখে সিয়ামের দিকে তাঁকালো।
“কি বললে???”
“আরে দূরে সরে কেনো যাচ্ছিস।রাগের কি বললাম।”
“ছাড়ো।আমি আমার বালিশে শুবো।”
“ওকে আমি তোর বালিশে….”
“না। আসতে হবে না।ভালোবাসি না তো তাহলে আসবেন কেনো আপনি??”
“আরে রাগ করছিস কেনো।এমনিতে বলেছি।আই নো না ইউ লাভ মি??”
“জানলে আর প্রশ্ন করা লাগতো না।”
“আচ্ছা বাবু সরি।”
“কিহ??”
“সরি….”
“জ্বী না।বাবু বলছেন আমাকে আপনি??আমি কবেকার বাবু??আমি এখন এডাল্ট।আর কিছু দিন পর আমার নিজেরই বাবু হবে।সেখানে আমি কি করে বাবু হই??”
সিয়াম তাঁকিয়ে আছে তামান্নার দিকে একটু রাগ করলেই তামান্নার ফর্সা গাল কেমন লাল হয়ে যায়।
ফুলা ফুলা গাল দুটো যেনো আরো ফুলে উঠে।বেশ লাগে তখন।
সিয়াম তামান্নার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
“ছাড়ো….”
“কি বললি??”
“ছাড়ো…”
“উমহু…তার আগে কি যেন বললি??”
“কই??কি বললাম?”
“আর কিছু দিন পর তোরই নাকি বেবী হবে??”
“হ্যাঁ।হবে না?বিয়ে করেছি বাচ্চা না হয়ে থাকবে নাকি??”
“আর ইউ সিউর??”
“এখানে সিউর হওয়ার কি আছে??তোমার কি কোনো সন্দেহ আছে-যে আমার কোনো প্রবলেম আছে??”
“কিহ??”
“হুম।তা না হলে এমন প্রশ্ন করতে না।”
সিয়াম তামান্নার গালে গাল রাখলো।
বলল,
“ম্যাডাম।আমি বুঝে বলছি।কিন্তু তুই কি সত্যিই কিছু দিন পর বেবী নিবি নাকি??”
এবার তামান্নার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে।কি বলছিলো সে উত্তেজিত হয়ে।
আল্লাহ!!কিছুদিন পর বেবী!!
তবে তামান্নার খুব শখ ছিলো কিশোরী বয়স থেকেই যে তার গুলুমুলু একটা বেবী হবে।
বিয়ের কথা মাথায় যতটা না আসতো তার চেয়ে একটা কিউট বেবীর চিন্তা অনেক বেশী আসতো।
তামান্নার ভাবনায় ছেদ পড়ে যখন তার কামিজের ভেতর দিয়ে তার পেটে হাত রাখে সিয়াম।সিয়াম আলতো করে তামান্নার পেটে স্লাইড করছে।
তামান্নার না এই বিষয় টা তে খুব সুরসুরি লাগে।তাই সে একটু নড়াচড়া করছে।
সিয়াম বললো,
“বেবীর বাবার একটু ছোঁয়াতেই তোর যা লাফালাফি শুরু হয়।আর বেবী যখন তোর বুকের দুধ খাবে তখন না জানি কি করিস তুই!!!!”
“কিহ???অসভ্য কোথাকার।সরো।”
“অসভ্যতার তো কিছু দেখি না আমি।রিয়েল কথা….”
“আহা রে কি আমার রিয়েল বান পুরুষ!”
“অবশ্যই।ঐ আজকে থেকে উইথ আউট প্রকেটশন। কেমন??”
তামান্না কথাটা ধরতে পারে নি।বললো,
“কিসের প্রটেকশন??”
“আজকে থেকেই বেবীর প্রসেসিং শুরু করতে পারি আমি।”
তামান্নার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো।মনে হচ্ছে অক্ষিকোটর থেকে বেরিয়েই আসবে।
সে দ্রুত বলল,
“সব প্রটেকশন হবে।নো প্রসেসিং।আমি ঘুমাবো।”
ততক্ষনাৎ চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে সে।এতো লজ্জার মধ্যে চোখ খোলে রাখা যায় নাকি।
“ঐ।এটা করলে হবে না তো।তুই প্রথমে বেবীর কথা তুলেছিস।আমার এখন বেবী চাই……”
তামান্না চোখ খোলে,
“তোমার না ঘুম পেয়েছে??”
“উমহু।ঘুম চলে গেছে।এখন তুই বেবী দিবি আমাকে।”
“কিসব বলো??আজব!!”
“কোনো কথা না।বেবী চাই আমার।আমার মনে হচ্ছে এখনি আমাদের মাঝখানে আমার বেবী শুয়ে আছে।আমাকে বাবাই বাবাই বলে ডাকছে।”
তামান্না চোখ সিয়ামের দিকে তাঁকায়।
“কি বলো পাগলের মতো মাথা ঠিক আছে??”
“১০০%।দে না রে….”
“উফফ।রাত আড়াইটায় শুয়ে শুয়ে এটা কি ধরনের কথা??আমি বেবী কোথায় পাবো??”
“তুই বলেছিস…..”
“সিয়াম!!!!বেবী কি খাবার জিনিস আমি তোমাকে বানিয়ে দিবো।কমছে-কম নয় মাস লাগবে আমার।”
সিয়াম তামান্নার দিকে হা করে তাঁকিয়ে তাকে।তারপর হাবার মতো বলে,
“ওহ্।তাই তো।”
“যতসব।নিজে ঘুমাও আর আমাকেও ঘুমাতে দাও।”
তামান্না চোখ বন্ধ করে আবার।
“এই শোন না।তামান্না।শোন।একটু তাঁকা।”
“উফফ কি??পড়তে বসলে ঘুম পায় এখন ঘুম কোথায় গেলো তোমার??”
“সত্যি বলছি আমরা কিন্তু চাইলে বেবী নিতে পারি।আম সিরিয়াস।”
তামান্না তাঁকিয়ে রইলো শুধু কিছু বলল না।
সিয়াম বললো,
“তোর তো একুশ বছর রানিং।আর তুই খাসও কম প্রবলেম হবে??”
তামান্না চুপ।
সিয়াম বলল,
“কি রে??”
তামান্নাও এবার কথা বলে,
“আমি কি করে বলবো??”
“তবুও।বেবী নিতে গেলে তোর বিষয় টাই বেশী ইমর্পোটেন্ট।”
“কারও কারও পনেরো ষোলো বয়সেও বেবী হয়।”
“আরে সেটা রিস্কি।আমি তোর ক্ষেত্রে রিস্ক তো নিবো না।”
সিয়াম কিছু একটা ভাবলো।
তারপর বললো,
“নাহ্।বেবী বাদ।আরও সময় লাগবে।”
সিয়াম তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো।
কিন্তু সিয়ামের বলা শেষ কথাটা যেনো তামান্নার কেমন লাগছে।সে কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর মনে মনেই বলল-ইশশশ বললেই হলো আমার সময় লাগবে না।আমার বেবী চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।আগে পরীক্ষা টা দিই।তারপর।আহ্-কি সুন্দর ছোট্ট বাচ্চা!ভাবতেই ভালো লাগে।
তামান্না সিয়ামের দিকে তাঁকায়।কি সুন্দর চোখ বন্ধ করে আছে।আচ্ছা বেবী টা হলে কি সিয়ামের মতো কিউট হবে নাকি আমার মতো দেখতে।তামান্না ভেবে পায় না।
তবে সে চায় বেবী টা যেনো সিয়ামের মতো হয়।এমন একটা ছেলে হলে তামান্না সবচেয়ে খুশি হবে।সিয়ামের মতো চোখ হবে।সিয়ামের হাঁসি টাও চরম।শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে।তামান্না তার ডান হাত টা সিয়ামের গালের উপর রাখলো।আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো সিয়ামের গালে।
সিয়াম ঘুমায় নি তাই চোখ মেলে তাঁকালো।তামান্না চট করে হাত সরিয়ে আনলো।
সিয়াম মু্ঁচকি হাঁসলো।তামান্নার হাত টেনে নিয়ে আবারও নিজের গালে চেপে ধরলো।তামান্না তাঁকালো সিয়ামের দিকে।চোখে চোখ রাখলো।কোনো ছেলের চোখ যে এতটা সুন্দর হতে পারে তামান্নার জানা ছিলো না।
এ চোখে চোখ রেখে ও তো সারা জীবন ডুবে থাকতে পারবে।